কুখ্যাত মিহির সর্দারের ডেরা থেকে 'দুর্গেশনন্দিনী'র মন্দির, কেন এত জাগ্রত হুগলির সিদ্ধেশ্বরী কালী?
Siddheswari Temple, Hooghly: কালক্রমে সিদ্ধেশ্বরী কালী হয়ে উঠেছিল ডাকাতদের আরাধ্য দেবী। সেই মন্দিরবক্ষেই আশ্রয় পেত ডাকাতদল। যেমন হুগলির গোঘাটের এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দির ছিল মিহির সর্দারের ডেরা।
"হাতে লাঠি মাথায় ঝাঁকড়া চুল কানে তাঁদের গোঁজা জবার ফুল"- বীরপুরুষদের চোখে ঠিক যেমন ছিল ডাকাতেরা, বাস্তবের ডাকাতেরাও অবিকল তেমনই ছিল কিনা জানা নেই। তবে তাদের প্রতাপ ছিল সর্বজনবিদিত। ডাকসাইটে সেসময়কার দুর্ধর্ষ ডাকাত ছিল মিহির সর্দার। যার নামে কাঁপত গোটা হুগলি। সেই মিহির সর্দারের ডেরা ছিল হুগলির গোঘাটে। বাদবাকি ডাকাতদের মতোই মিহির সর্দারও ছিল মা কালীর উপাসক। প্রতিরাতে ডাকাতি করতে বেরোনোর আগে গোঘাটের কাঁঠালি এলাকার সেই কালীমন্দিরে ভক্তিভরে পুজো সারত মিহির সর্দার।
কালক্রমে সিদ্ধেশ্বরী কালী হয়ে উঠেছিল ডাকাতদের আরাধ্য দেবী। সেই মন্দিরবক্ষেই আশ্রয় পেত ডাকাতদল। যেমন হুগলির গোঘাটের এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দির ছিল মিহির সর্দারের ডেরা। প্রায় চারশো বছর আগেকার কথা। হুগলি জেলার গোঘাটের সেই সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে এক বুক ইতিহাস নিয়ে। খোদ বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর 'দুর্গেশনন্দিনী' উপন্যাসে লিখেছেন সেই মন্দিরের কথা। সেখান থেকে অনেকেই এই মন্দিরকে চেনেন দুর্গেশনন্দিনীর কালী মন্দির হিসেবেও। আরামবাগ মহাকুমার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী কালীপুজোগুলির মধ্যে আজও অন্যতম জনপ্রিয় এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। প্রায় চারশো বছর ধরে কালীরূপে এই মন্দিরে পুজো পেয়ে আসছেন দেবী সিদ্ধেশ্বরী।
আরও পড়ুন: খোদ কালীঘাটে কালীপুজোয় পুজো পান না দেবী কালিকা! কেন এই রীতি জানেন?
মিহির সর্দার একসময় ছিল হুগলি ও সংলগ্ন এলাকার ত্রাস। গোঘাট থেকে বিভিন্ন দিকে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত রাতের অন্ধকারে হানা দিত মিহির সর্দার ও তার দলবল। ডাকাতির আগে দেবী সিদ্ধেশ্বরীর আশীর্বাদ নিয়ে তবে ডেরা ছাড়ত সে সময়ের ডাকাতেরা। দেবীকৃপা না হলে যে ডাকাতির অভিযান সফল হয় না, এই ছিল বিশ্বাস।
বর্তমান যে সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, তার প্রতিষ্ঠা নাকি করেছিলেন সেখানকার চক্রবর্তী পরিবারের পূর্বপুরুষেরা। আপাতত মন্দিরের ভার তাদের বংশধর শৈলেন চক্রবর্তীর হাতে। জানা যায়, আগে কালী মায়ের থানটি ছিল ঘন জঙ্গলে ঘেরা। মাটির দেওয়ালের উপর ছাউনি দিয়ে সেই দালানেই পুজো করা হত। তবে বর্তমানে পাকা দেওয়াল উঠেছে। মাথায় বসে অ্যাডবেস্টাসের চাল। তার উপর অবশ্য ছাউনি ছাওয়া।
সারা বছর এ মন্দিরে নিত্যপুজো পান দেবী সিদ্ধেশ্বরী। তবে কার্তিক মাসে কালীপুজোর সময় টানা দুদিন ধরে ধূমধাম করে পুজো হয়। এ মন্দিরের কালীর বিসর্জন হয় না। একমাত্র প্রতিমার অঙ্গহানি বা কেউ স্বপ্নাদেশ পেলে তবেই নতুন মূর্তি তৈরির অনুমতি পাওয়া যায়। আর এ বছর তেমনই এক বিশেষ বছর। এ বছর নতুন কলেবর পাবেন দেবী সিদ্ধেশ্বরী। ইতিমধ্যেই প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। কালীপুজোর দিন প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হবে নতুন দেবীমূর্তিতে।
আরও পড়ুন:নামে কালী, অথচ গায়ের রং ধবধবে সাদা! জানেন বাংলার কোথায় রয়েছে বিখ্যাত শ্বেত কালী?
এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের মাতৃমূর্তি খুবই জাগ্রত বলে মনে করেন স্থানীয়রা। শুধু কালীপুজোর সময়েই নয়, সারা বছর ধরেই মন্দির জুড়ে দর্শনপ্রার্থীদের ভিড়। দূরদূরান্ত থেকে মায়ের মূর্তি দর্শন করতে আসেন ভক্তেরা। কেউ আসেন মনস্কামনা নিয়ে। করেন মানত। আজও চক্রবর্তী বাড়ির সিদ্ধেশ্বরী কালী পুজোয় বলির চল রয়েছে। মিহির ডাকাতদের আমলে রীতিমতো নরবলি দেওয়া হত। ডাকাতদের কালীপুজোয় নরবলি সে সময় ছিল এক অবশ্যপালনীয় রীতি। নরবলি না হলেও পশুবলির চল আজও রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী কালীপুজোয়।