ফিরিয়ে দাও কেড়ে নেওয়া জীবনগুলি, হে বাঙালি!
Bangladesh Quota Protest: ১৯ জুলাই, ২০২৪, বাংলাদেশের ওই সব রক্তক্ষরিত দিনের ক্লান্ত এক দিনলিপি।
১
একটা বৃদ্ধ রাত। ঘুমকাতুর মানুষেরা বিছানায় শরীর আর অস্তিত্ব এলিয়ে দিয়ে— কোন অজানায় যেন হারিয়ে গিয়েছে। আমি অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। কেমন যেন কূটকূটে অন্ধকার। ঝিঁঝিঁ পোকাদের দেখা মেলে না ক'দিন ধরে। চোখে ঘুম নেই। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। প্রায় পঞ্চাশ অধিক— মানুষের মৃত লাশের গন্ধে সেই দূর আকাশ থেকে আমার অবস্থানরত এ জমিন, এই মাটি আর এই শহরের বাতাস— ভারি হয়ে উঠেছে। সেখানে কর্পূরের গন্ধ। অর্ধশত লাশের গা থেকে ভেসে আসা— কর্পূরের। এইসব হৃদয়পোড়া বিকৃত গন্ধের তাড়নায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। এখানে আর বেঁচে থাকা যাচ্ছে না। আচ্ছা! কেমন হত— এই অর্ধশত স্টুডেন্ট লাশের সারিতে যদি আমার দেহটাও নিথর হয়ে পড়ে থাকত...
২
গুটি গুটি পায়ে অগ্রসর হচ্ছে একটা বাতাস-ভারি রাত। গন্তব্য— তাকে পৌঁছোতে হবে ভোরের দোরগোড়ায়। যেখান থেকে আঠারো পেরিয়ে উনিশ— অতএব নতুন ভোরকে নিয়ে একটা নতুন দিনের সূচনা। ইন্টারনেট অফ। ডেটা/ওয়াইফাই— কাজ হচ্ছে না কোনওটাতেই। এই অবস্থা গত রাত থেকেই। পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হতে গিয়ে বসলাম টিভির সামনে। সংবাদ প্রচারকারি চ্যানেলগুলোর হেডলাইনে চোখ আতঁকে উঠতে লাগলো প্রতিনিয়ত। গতকাল দিনশেষে বাদ যায়নি মধ্যরাতও। ঢাকার বিভিন্ন মহাসড়কে 'পুলিশের সাথে ছাত্রদের সংঘর্ষ'! এটা কেমন কথা বলো! আজকের যারা পুলিশ— তারা কি জীবনের কোনওকালে ছাত্র ছিল? মনে প্রশ্ন জাগে। দুঃখ জমে।
আচ্ছা! বয়সের অনুপাতে আজকের পুলিশ হয়ে যারা স্টুডেন্টদের বুক বরাবর গুলি ছুড়ছে, লাঠি পেটায় আহত থেকে নিহত করছে— এই স্টুডেন্টরা কি তাদের সন্তানতুল্য নয়!
৩
ওহ হ্যাঁ। আমরা তো আবার বাঙালি। স্বার্থ বিনে অপরকে আপন ভাবা আমাদের দায়। তবে আমরা বাঙালি হয়ে কি এতটাই অনুভূতিশূন্য আজকাল? কী তফাৎ রইল বাংলা থেকে হাজার মাইল দূর অনুভূতিশূন্য জাত-পাশ্চাত্য অনুসারি আমেরিকা ও আমাদের মধ্যে। মধ্যবর্তী দূরত্বে, মায়া, মমতার পর অনুভূতিতে?
আমেরিকানরা কখনও ছাত্র পিটিয়েছে না অধিকার বাজেয়াপ্ত করে বুক বরাবর বন্দুকের নল ঠেকিয়েছে? তারা পেরেছে কিনা আপাতত জানা না থাকলেও প্রচন্ড লজ্জার সাথে মিইয়ে গিয়ে বলতে হচ্ছে, 'এসব আমেরিকানরা না পারলেও — আামাদেরই মাটির জাত হয়ে জন্মানো বাঙালি পেরেছে।' আমাদের বাবার বয়সী হেলমেট বাহিনীরা পেরেছে। তাদের ছেলের বয়সি ছেলেদের বুক বরাবর ট্রিগার চাপতে। মধ্যরাস্তায় তাদের লাশ ফেলতে। এই সভ্য সমাজ, ডিজিটাল বাংলা, আঠারো বছর চেয়ারে বসে হাজার কোটি ঋণে পদ্মসেতু— তোমরা সফল বাঙালি। এই বাংলা তোমার। পদ্মা তোমার। উন্নয়ন তোমার। আমরা এসব চাই না। আমরা চাই না সংলাপ কিংবা সমাধান! আগে আমাদের ভাইদের ফিরিয়ে দাও। শুকিয়ে কাঠ হওয়া তাজা রক্ত আর অর্ধশত বিলীন হওয়া জীবনকে প্রাণ এনে দাও, বাঙালি...