গোদি মিডিয়ার জুজু! HMPV সংক্রমণ নিয়ে কেন চিন্তিতই নন চিকিৎসকরা?

HMPV in India: পরীক্ষা বেশ খরচসাপেক্ষ বলে সহজে এইচএমপিভি রোগ নির্ণয় করা যায় না। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য প্রায় ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা খরচ হয়।

HMPV নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। বিশ্বব্যাপী কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই, কোনও বিবৃতি নেই, কোনও আশঙ্কার পূর্বাভাসও নেই। অথচ ভারতের মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলি বছরের শুরু থেকে টিআরপি ঊর্ধ্বে রাখতে, এই ভাইরাস নিয়ে প্রায় মহামারীসম আতঙ্ক ছড়াতে কোনও কসুর করছে না। চিনের উত্তরাঞ্চলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর সামনে এসেছে। এর কয়েক সপ্তাহ পরেই দেখা যায়, ভারতেও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে এই ভাইরাসে। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রক কর্ণাটকে হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভির দু'টি ঘটনা নিশ্চিত করেছে। বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে দু;টি শিশু এই ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সংবাদমাধ্যম জুড়ে হইহই! চিকিত্সক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেঙ্গালুরুতে যে শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে, তা এই ভাইরাসের ফলে ঘটা 'প্রথম সংক্রমণ' নয়।

চিকিৎসকরা বলছেন HMPV কোনও নতুন ভাইরাস নয়। এই দুই শিশুরই বিদেশ ভ্রমণের কোনও ইতিহাস নেই। ফলে বোঝাই যাচ্ছে এই সংক্রমণগুলি চিনে ভাইরাসের বৃদ্ধির সঙ্গে সংযুক্ত নয়। বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, পাঁচ বছর আগে চিনের উহানে প্রথম ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনাভাইরাসের থেকে HMPV যথেষ্ট কম প্রাণঘাতী। চিনের সরকার বলছে, বর্তমানের এই সংক্রমণ বৃদ্ধি শীতজনিত ঘটনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এখনও চিনের HPMV সম্পর্কে জনস্বার্থে কোনও সতর্কতাও জারি করেনি।

আরও পড়ুন- HMPV: গুজব না কি আতঙ্ক? বাস্তবে কতটা বিপজ্জনক এই ভাইরাস?

HMPV নতুন ভাইরাস নয়

HMPV ভাইরাসটি ভাইরাসের নিউমোভিরিডি পরিবারের অন্তর্গত। ২০০১ সালে প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল এই ভাইরাস। এটি সমস্ত বয়সের মানুষেরই ঊর্ধ্ব এবং নীচের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তবে অল্পবয়সি শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং অন্যান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে এটি খানিক বেশি সমস্যার।

ভাইরাসটি গলা ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নাক বন্ধ এবং জ্বরের মতো উপসর্গ নিয়ে প্রকট হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে HMPV নিউমোনিয়া এবং ব্রঙ্কাইটিসও ঘটাতে পারে। সাধারণ ফ্লুর মতো সংক্রমণ সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যেই সেরে যায়, গুরুতর ক্ষেত্রে ছাড়া। এই HMPV সংক্রমণে মৃত্যুর হার কম এবং সামান্য কিছু ক্ষেত্রেই একমাত্র হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

কোভিড-১৯-এর মতোই HMPV অ্যারোসলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অর্থাৎ কোনও সংক্রামিত ব্যক্তির কাশি এবং হাঁচির মাধ্যমে একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। সংক্রামিত কোনও জায়গা স্পর্শ করলেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রথম লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় তিন থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। শীতকালে এই ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। HMPV নিউক্লিক অ্যাসিড অ্যামপ্লিফিকেশন পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যেতে পারে।

ভারতে HMPV সাধারণ এক ভাইরাস

স্বাস্থ্য মন্ত্রক ৬ জানুয়ারি জানিয়েছে, কর্ণাটকের দু'টি সংক্রমণ নিয়ে আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। "ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ এবং ইন্টিগ্রেটেড ডিজিজ সার্ভিল্যান্স প্রোগ্রাম নেটওয়ার্কের বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে, দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতা বা শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর তীব্র অসুস্থতার (SARI) ক্ষেত্রে কোনও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেনি,” জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বেঙ্গালুরুতে দু'জন রোগীর মধ্যে একজন তিনমাসের এক শিশুকন্যা এবং অন্যজন আট মাসের পুত্রসন্তান। দু'জনেরই ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া হওয়াতে তাঁদের ভর্তি করা হয়। শিশুকন্যাটিকে ইতিমধ্যেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং ছেলেটিও হাসপাতালেই সুস্থ হয়ে উঠছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় তিন মাস আগেই মুম্বইয়ে HMPV-র সামান্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছিল। তবে তা কোনও অস্বাভাবিক উত্থান নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, তারা নিয়মিতই HMPV সংক্রমণের রোগীর চিকিৎসা করেন। তবে এই রোগের পরীক্ষা বেশ খরচসাপেক্ষ বলে সহজে এইচএমপিভি রোগ নির্ণয় করা যায় না। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য প্রায় ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা খরচ হয়। সাধারণত, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের যখন একাধিক পরীক্ষা করা হয় তখনই এই পরীক্ষাটিও করা হয়।

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, যদি না HMPV এমন একটি মিউটেশনের মধ্য দিয়ে যায় যা গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে, ততক্ষণ চিন্তা করার কোনও দরকারই নেই।

আরও পড়ুন- শিগগিরই ফিরতে চলেছে করোনাভাইরাস! চিনের ‘ব্যাটওম্যানে’র গবেষণা ঘিরে তোলপাড় বিশ্ব

কীভাবে সম্ভব HMPV-র চিকিৎসা?

HMPV ভাইরাসের কোনও ভ্যাকসিন নেই। উপসর্গ দেখেই এর চিকিৎসা করা হয়। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল এবং নাক বন্ধের জন্য গার্গেলের পরামর্শই দেন চিকিৎসকরা। এই মুহূর্তে একমাত্র প্রতিরোধ সম্ভব নিয়মিত হাত ধোয়া এবং ভিড়ের জায়গায় মাস্ক ব্যবহার করার মাধ্যমেই। মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক সরকার এই ধরনের নির্দেশও জারি করেছে। যেহেতু রোগটি সাধারণ তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রক প্রতি বছর সংক্রমণের তথ্যও রাখে না।

টাটা ইনস্টিটিউট ফর জেনেটিক্স অ্যান্ড সোসাইটি জানাচ্ছে, HMPV শনাক্ত করার জন্য কিট সংগ্রহ করেছে তারা। ভাইরাসের চিহ্ন পরীক্ষা করার জন্য নর্দমার নিকাশী জল পরীক্ষা করা শুরু হবে। ভাইরাসের সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাবের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য বর্জ্য জলের উপর নজরদারি অত্যন্ত কার্যকরী হাতিয়ার। তবে এখনও অবধি বেঙ্গালুরুর বর্জ্য জলের নমুনায় অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেননি বিশেষজ্ঞরা।

More Articles