HMPV কতটা মারাত্মক? অবশেষে যা জানাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

HMPV Infection: বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেহেতু শীতকালে শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ভারতে এবং সারা বিশ্বে সাধারণ, তাই একটি দেশ যত বেশি পরীক্ষা করবে, সংক্রমণের সংখ্যা তত বেশি সামনে আসবে।

হ্যাপি নিউ ইয়ার বললেও, ২০২৫ সালের গোড়ার দিন থেকে মূলধারার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম যেভাবে আতঙ্ক ছড়ানোর কাজে নেমে পড়েছে তাতে, বর্ষশেষের বা নতুন বছরের আনন্দের চেয়ে, নতুন শুরুর উত্তেজনার থেকে ভারী হয়ে উঠেছে ভয়, আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা। ভারতে একটি 'নতুন' ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে চলেছে মূলধারার মিডিয়া। আবারও চিন থেকে চড়িয়ে পড়ার ভয়, আবারও কোভিডের মতো ভয়াবহতা, আবারও স্বজন হারানোর আতঙ্ক! দেশে হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (HMPV) সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হইচই মিডিয়াতে। গত ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশে পাঁচটির মতো HMPV সংক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে একথা সত্য। বেশিরভাগই আক্রান্ত শিশুরা। কর্ণাটক, গুজরাত এবং তামিলনাড়ুতে রোগীদের মধ্যে এই সংক্রমণ দেখা গেছে। কিন্তু HMPV যে আদৌ ভয়ের কারণ নয়, সেই সত্যটি উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে। না তো ভাইরাসটি নতুন, না এটি বিপজ্জনক, না তো এটি 'রহস্যময়'!

২০২৩ সালের নভেম্বরেও একবার এই 'রহস্যময়' ভাইরাসের আগমন নিয়ে মিডিয়াকুল উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। তবে সেবার, বা এবারও চিনে 'নতুন' ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেনি। দুই সময়েই যা ঘটেছে তা হলো, একটি এমন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যা শ্বাসযন্ত্রের রোগ ঘটায় আর যা শীতকালে হামেশাই ঘটে থাকে। এর মধ্যে সম্ভাব্য মহামারীর ভবিষ্যদ্বাণী করার কিছুই ঘটেনি বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। Sars-Cov-2 অর্থাৎ কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী ভাইরাস এবং HMPV-র মধ্যে মৌলিক পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই যথেষ্ট।

আরও পড়ুন- HMPV: গুজব না কি আতঙ্ক? বাস্তবে কতটা বিপজ্জনক এই ভাইরাস?

Sars-CoV-2 ভাইরাসের উৎস ছিল অজানা। এই ভাইরাস আবির্ভূত হওয়ার আগে কোনও বিজ্ঞানী এটি সম্পর্কে জানতেনই না। তাই এটিকে একটি নোভেল (বা নতুন) করোনভাইরাস বলা হয়েছিল। ২০২০ সালে সর্বপ্রথম Sars-Cov-2-এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। HMPV প্রথম পাওয়া গিয়েছিল ২০০১ সালে। Sars-Cov-2 হলো একটি আরএনএ ভাইরাস। HMPV একটি ডিএনএ ভাইরাস। এর অর্থ এই যে করোনাভাইরাসের রূপান্তর এবং তার রূপগুলিকে দ্রুত পরিবর্তন করার ক্ষমতা রয়েছে। HMPV-র ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা বেশ কম। এখনও পর্যন্ত এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই যে দাবি করা যাবে, HMPV এই সময়ে দ্রুত বা আরও প্রাণঘাতীভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কোনও প্রাদুর্ভাবকে তখনই মহামারী হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে যখন এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি কোনও নতুন ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। বর্তমান 'প্রাদুর্ভাবে' এই দু'টি শর্তের কোনটিই পূরণ হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) কোনও বিপদ সংকেত দেয়নি।

কী জানাল হু?

সম্প্রতি, দ্য ওয়্যার-এর একটি প্রশ্নের উত্তরে হু জানিয়েছে, "বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ চিন থেকে শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির রিপোর্ট পায়নি। হু জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও মিউটেশনের খবরও পাওয়া যায়নি যা এই সময়ে বড় প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে। জাতিসংঘও জানিয়েছে, “চিনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (চায়না সিডিসি) ১৬-২২ ডিসেম্বর ২০২৪ সালের তথ্যানুসারে, ঋতুগত ইনফ্লুয়েঞ্জা, হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি), রাইনোভাইরাস সংক্রমণ, সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য সংক্রমণ সহ শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ বেড়েছে- বিশেষ করে চিনের উত্তরাঞ্চলে।"

হু জানাচ্ছে, এই ভাইরাসগুলি আগেও ছিল এবং কয়েক বছর ধরেই তা ছড়িয়ে পড়ছে। WHO এও জানিয়েছে যে, চিনে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবের 'মাত্রা এবং তীব্রতা' গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই বছর কম ছিল। অর্থাৎ এখনই উদ্বেগের কোনও সম্ভাব্য কারণ নেই।

মজার বিষয় হলো, ভারতীয় মূলধারার মিডিয়াতে যখন 'আতঙ্ক' ছড়ানো শুরু হয়েছিল তখন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বা আন্তর্জাতিক প্রকাশনাগুলির কোনওটিই চিন সম্পর্কে অস্বাভাবিক কিছুই জানায়নি। রয়টার্স ২৭ ডিসেম্বর জানিয়েছিল, চিন অজানা ভাইরাস ট্র্যাক করার জন্য একটি নতুন মনিটরিং সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে কিন্তু রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখযোগ্যভাবে অসাধারণ কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।

শীতকালে ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট 'সাধারণ সর্দিকশি' বৃদ্ধির ঘটনা ভারতে স্বাভাবিক। চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেহেতু শীতকালে শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ভারতে এবং সারা বিশ্বে সাধারণ, তাই একটি দেশ যত বেশি পরীক্ষা করবে, সংক্রমণের সংখ্যা তত বেশি সামনে আসবে। তবে এই মরশুমে সংক্রমণের জন্য যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিত তবে আতঙ্কের কিছুই নেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন, HMPV ভারতে এত দিন ধরে রয়েছে যে অনেকেই ইতিমধ্যেই সংক্রামিতও হয়েছেন এটি না জেনেই যে ভাইরাসটি HMPV।

আরও পড়ুন- গোদি মিডিয়ার জুজু! HMPV সংক্রমণ নিয়ে কেন চিন্তিতই নন চিকিৎসকরা?

HMPV-র বৈশিষ্ট্য

HMPV ভাইরাসের 'Paramyxoviridae' পরিবারের অন্তর্গত, শ্বাসযন্ত্রের আরেকটি ভাইরাস RSV-র মতো। দুই ভাইরাসেরই একটি সাধারণ ঋতু আছে। লক্ষণগুলিও একই রকম। লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, কাশি, নাক দিয়ে জল পড়া এবং শ্বাসকষ্ট। শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে তারা HMPV আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মুখে আছেন।

ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, HMPV কাশি এবং হাঁচির মাধ্যমে ছড়ায়। সংক্রামুত পৃষ্ঠ যাতে ভাইরাস রয়েছে সেখানে হাত দিয়ে সেই হাত মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করলেও সংক্রমণ ছড়ায়। এই ভাইরাসের জন্য কোন নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল নেই। এর জন্য কোনও প্রতিরোধমূলক ভ্যাকসিনও নেই। সংক্রামিত রোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়ানো এবং প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করা HMPV সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।

More Articles