হাতে লং উইকেন্ড! বর্ষশেষ কাটুক পশ্চিমের এই দুর্দান্ত ঠিকানায়

Weekend Trip: একসময় মানুষ সেখানে যেতেন স্বাস্থ্য ফেরাতে। ক্রমে বাঙালিদের প্রিয় ঠিকানা হয়ে উঠেছিল পশ্চিমের স্বর্গরাজ্য শিমুলতলা। অনেকেই নিজেদের হাওয়া বদলের স্থায়ী ঠিকানা গড়েছিলেন বহু বাঙালিই।

দেখতে দেখতে বছর শেষ। হইহুল্লোড়, উৎসবের মেজাজে নতুন বছরকে বরণ করা যাঁদের তেমন ধাতে নেই, ফুরসৎ পেলেই যাঁরা বেরিয়ে পড়েন লোকালয় থেকে দূরে— তাঁদের জন্য এই বর্ষশেষটা যেন একটু বেশিই স্পেশাল। কারণ এই বছরের শেষ আর আগামী বছরের শুরুর মধ্যে পড়েছে একটি লম্বা সপ্তাহান্ত। আর সেই সপ্তাহান্তে বেরিয়ে পড়তেই পারেন নির্জনতার খোঁজে। আসুন ঘুরে আসা যাক চিরন্তন সেই হাওয়া বদলের ঠিকানা থেকে।

একসময় মানুষ সেখানে যেতেন স্বাস্থ্য ফেরাতে। ক্রমে বাঙালিদের প্রিয় ঠিকানা হয়ে উঠেছিল পশ্চিমের স্বর্গরাজ্য শিমুলতলা। অনেকেই নিজেদের হাওয়া বদলের স্থায়ী ঠিকানা গড়েছিলেন বহু বাঙালিই। মুঙ্গের এলাকার এই শিমুলতলাকে বাঙালির দ্বিতীয় ঘরবাড়ি বললেও বোধহয় খুব ভুল হয় না। তরুণ মজুমদার পরিচালিত দাদার কীর্তি দেখতে দেখতে একবারও সেখানে পৌঁছে যেতে ইচ্ছা হয়নি, এমন দর্শক বোধহয় কমই আছে। তবে সেই দিন আর নেই। বাঙালিদের ঠাঁই ক্রমশ কমছে সেখানে। তবে ভ্রমণপ্রিয়দের অভাব নেই সেখানে। আর শীতকালে ঘোরার জন্য কিন্তু আদর্শ এই লাল মাটির দেশ।

আরও পড়ুন: ঘর থেকে দু’পা গেলেই কাশ্মীর! সাধ্যের মধ্যে শিকারা-ভ্রমণ করা যাবে পাহাড়ে-ঘেরা এই জায়গায়

শিমুলতলা পৌঁছনোর জন্য হাওড়া স্টেশন থেকে রয়েছে একগুচ্ছ ট্রেন। রাত থাকতে উঠে পড়ুন মোকামা ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেনে। রয়েছে আপ হাওড়া-রক্সৌল স্পেশাল ট্রেনও। ভোর হতে না হতে ট্রেন থামবে শিমুলতলায়। ছিমছাম স্টেশন, শীতের ঠান্ডা ছোবল আর ঘুম ভাঙা সূর্যকে সঙ্গী করে গলা ভিজিয়ে নিতে পারেন স্টেশন সংলগ্ন কোনও চায়ের ঝুপড়িতে। স্টেশনের পাশেই মিলবে অটো। উঠে পড়ুন যে কোনও একটায়। যা আপনাকে পৌঁছে দেবে হোটেলে।

A weekend Travel to offbeat place shimultala in this year end weekend

রেল স্টেশন থেকে বেরোতেই ডাইনে বাঁয়ে স্টেশন রোডে সেই কবে গড়ে উঠেছিল স্বাস্থ্য গড়ার আনন্দ নিকেতন। টিলায় মাখা শিমুলতলায় পুরনো পুরনো সব বাড়ি। অধিকাংশ বাড়িই আজ পরিত্যাক্ত, ভাঙাচোরা। চারপাশ ঘিরে দিকচক্রবাল রেখা ঢেকে প্রহরী হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাহাড়শ্রেণি। খুবই শান্ত, স্নিগ্ধ, নির্জন পরিবেশে স্বাস্থ্যকর স্থান শিমুলতলা, পাশাপাশি অবকাশ যাপনের জন্যও জায়গা অধুনা মুঙ্গের জেলার এই শিমুলতলার মতো মনোরম জায়গা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

A weekend Travel to offbeat place shimultala in this year end weekend

হোটেলে ঢুকে ফ্রেশ হয়েই হেঁটেই দেখুন না চারপাশ। পাহাড়, টিলা, শাল, মহুয়ার অরণ্যে প্রাকৃতজনের গ্রাম দেখতে দেখতে শিশির ভেজা লাল মোরামের পথে হারিয়ে যাবেনই। পাহাড়ি ম্যালের মতো শিমুলতলার এই রেল স্টেশন। রেল স্টেশনের মুখোমুখি দেড় কিলোমিটার দূরেই শিমুলতলার মূল আকর্ষণ লাট্টু পাহাড়। দুর্গাকার পাটনা লজ, নলডাঙার রাজবাড়ি, সেন সাহেবদের লন টেনিস কোর্টকে নিশানা করে মাঠ পেরিয়ে পায়ে পায়ে অভিযান করে ফেরা যায় প্রায় এক হাজার ফুট উঁচু লাট্টু পাহাড়। গাছগাছালিতে ছাওয়া লাট্টুর মাথায় চড়ে দেখে আসতে পারেন আদিবাসীদের দেবতাদের থান। শোনা যায়, সত্যজিত রায়ের ‘মহাপুরুষ’ সিনেমার সূর্য ডোবার দৃশ্যটি নাকি শুট করা হয়েছিল শিমুলতলাতেই। এই লাটটু পাহাড়ের উল্টোদিকেই কিন্তু প্রাচীন শিমুলতলা রাজবাড়ি। বহু সিনেমারই শুটিং হয়েছে এই প্রাসাদটিতে। তবে সেই রাজবাড়ির আজ কাঠামোটুকুই অবশিষ্ট রয়েছে খালি। রাজবাড়ির সিঁড়িতে উঠলে আজও দেখা যায় দিগন্ত ছোঁয়া মাঠঘাট, দূরের বিল। এসমস্ত দৃশ্যাবলী চোখে নিয়েই সূর্য পাটে বসা দেখতে পারেন। এ যেন অনাবিল এক আনন্দমেলা।

A weekend Travel to offbeat place shimultala in this year end weekend

শিমুলতলার কেন্দ্রীয় আকর্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম এখানকার দু'টি ঝর্না। একটি ধারারা, অন্যটি হলদি। গ্রামের পথ ধরে যাওয়া রাস্তা, সেই রাস্তায় সোনার রোদ্দুর মেখে ফুটে ওঠে একের পর এক ছবি। খাড়াই পাথুরে পথ বেয়ে বেশ খানিকটা নামতে পারলেই ধারারা প্রপাত আপনার হাতের কাছেই। হলদি ঝর্নাও কিছু কম মনোরম নয়। শিমুলতলা থেকে হাতে সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন দেওঘরের উদ্দেশে। চলে যান সোজা বৈদ্যনাথ মন্দিরে। মন্দিরটি হনুমানজির। তবে ঈশ্বরের চেয়েও এ আকর্ষনীয় কিন্তু এই মন্দিরের গন্তব্য, আর তা ত্রিকুট পাহাড়। রীতিমতো পাহাড় বেয়ে, গলে এবং চড়ে ভক্তকে পৌঁছতে হয় গর্ভগৃহে। সে এক অভিজ্ঞতা বটে। দেওঘরের কাছেই রয়েছে অনুকূল ঠাকুরের আশ্রম। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকেও। জায়গাটি সুন্দর করে সাজানো এবং শান্ত।

আরও পড়ুন: এই রেলপথগুলিতে পদে পদে বিস্ময়! ভ্রমণপিপাসুদের জন্য রইল খোঁজ

শিমুলতলা থেকে ঘুরে আসতে পারেন চাইলে গিরিডি ও মধুপুরও। তবে তার জন্য হাতে থাকতে হবে সময়। সত্যি কথা বলতে শিমুলতলার মধ্যে আজও এক পুরনো শহরের পুরনো দিনের আদল রয়ে গিয়েছে যেন। সময় এখানে থমকে আছে আজও। পাহাড়, টিলা, শাল, মহুয়ার জঙ্গল ঘেরা মায়াবী পথ দূরে রেখে চলে যায় কু-ঝিক ঝিক ট্রেন। এখানকার পথের আলাদাই মায়া। আর সেই মায়ার টানে বর্ষশেষ আর বর্ষবরণের এই সন্ধিক্ষণটুকু কিন্তু কাটিয়ে আসতেই পারেন শহুরে ক্যাকাফোনি থেকে দূরে, পশ্চিমে, বাঙালির এককালের স্বর্গরাজ্য থেকে।

More Articles