কলকাতার হাতের কাছেই ইতিহাসের শহর, একদিনেই দেখে আসুন পোর্তুগিজদের ঘরবাড়ি
Historical Hooghli: ঐতিহাসিক শহর হুগলি কিন্তু আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না মোটেই। রয়েছে একাধিক দেখার জায়গা, ঐতিহাসিক চিহ্ন লেগে রয়েছে যার গায়ে সর্বোত্র।
হাতে সময় নেই তো কী হয়েছে। তাই বলে কি বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছা থাকতে পারে না। শহর থেকে একটু দূরে বেরিয়ে আসতে চান একমাত্র ছুটির দিন। সেই মুশকিল আসানও রয়েছে হাতের কাছেই। চট করে ঘুরে আসুন কলকাতা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের এই ঐতিহাসিক শহর থেকে।
কলকাতা থেকে মাত্র চল্লিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত প্রাচীন এই শহর। ঔপনিবেশিকতার আগে এ শহর ছিল দেশের বাণিজ্যের জন্য প্রধানতম একটি নদীবন্দর। কোনও এককালে সুদূর ইউরোপ থেকে সেই বন্দরে এসে ভিড়েছিল নাবিক ভাস্কো-দা-গামার জাহাজ। ১৫৩৬ খ্রিস্টাব্দে পোর্তুগিজ ব্যবসায়ীরা এই এলাকায় বাণিজ্য করার অনুমতি পান তৎকালীন সুলতান মাহমুদ শাহের কাছ থেকে। ক্রমশ অন্যতম জরুরি বাণিজ্যবন্দরের রূপ নেয় কলকাতার ঠিক পাশের শহর হুগলি। ক্রমশ এই জায়গাটিতে বাড়তে থাকে পোর্তুগিজদের আধিপত্য। গজিয়ে ওঠে পোর্তুগিজ কলোনি। আজ সেই বসতি লাটে উঠলেও তার চিহ্ন রয়ে গিয়েছে বহু ক্ষেত্রেই। আর এই হুগলিই কিন্তু হয়ে উঠতে পারে আপনার সপ্তাহান্তের শ্বাস নেওয়ার গন্তব্য।
আরও পড়ুন: সস্তায় বিশ্বদর্শন! এক যাত্রাতেই মিটবে পাহাড়-জঙ্গল-সমুদ্রের স্বাদ
ঐতিহাসিক শহর হুগলি কিন্তু আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না মোটেই। রয়েছে একাধিক দেখার জায়গা, ঐতিহাসিক চিহ্ন লেগে রয়েছে যার গায়ে সর্বোত্র। মজার কথা কি জানেন, এই হুগলি জেলার প্রতিটি জনপদেরই রয়েছে আলাদা আলাদা ধরনের ইতিহাস। গঙ্গার তীরবর্তী নিচু এলাকায় একসময়ে প্রচুর হোগলা পাতার ঝোপ হয়ে থাকত, সেখান থেকেই জায়গাটির নাম হয়ে ওঠে হুগলি। আগে বর্ধমানের সঙ্গেই জুড়ে ছিল এই অংশটি। পরে প্রশাসনিক প্রয়োজনে ইংরেজরা বর্ধমানের দক্ষিণাংশ ভেঙে তৈরি করে হুগলি জেলা, তখনও তারই অংশ ছিল হাওড়া। যা আবার পরে ভেঙে আলাদা জেলার মর্যাদা লাভ করে।
হুগলি ভ্রমণে বেরোলে যে জায়গাটি আপনাকে দেখতেই হবে, তা হল ব্যান্ডেল চার্চ। পশ্চিমবাংলার প্রাচীনতম চার্চগুলির মধ্যে একটি এটি। জানা যায়, মধ্যাখানে নাকি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল প্রাচীন এই চার্চটি, আর ১৬৬০ সাল নাগাদ ফের নতুন করে গড়ে তোলা হয় সেটিকে। সেই নবনির্মীত চার্চটির বয়সও যে কম নয়, তা বলাই বাহুল্য।
এরপরে হুগলির অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল ইমামবাড়া। ইমামদের থাকার জন্য ১৮৪১ সালে এই ইমামবাড়া নির্মাণ করেন হাজী মহম্মদ মহসিন। তবে কাজ শেষ হতে হতে লেগে গিয়েছিল নাকি ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দ। শিয়া মুসলিমদের মহরম উদযাপনের জন্য ২২ বিঘা জায়গা জুড়ে গঙ্গা নদীর পাড়ে তৈরি হয়েছিল জায়গাটি। আজও এখানে মহরম পালন হয় এখানে। চট করে ঘুরে আসুন ঐতিহাসিক সেই জায়গা থেকে।
এর পরে আপনার হুগলিতে অবশ্য গন্তব্য হংসেশ্বরী মন্দির। ত্রিবেণী ও ব্যান্ডেলের মধ্যে হুগলি নদীর তীরে বাঁশবেড়িয়ায় অবস্থিত এই মন্দির। ১৯ শতকের মূলে নির্মিত মন্দিরটিতে একটি অপূর্ব এবং অনন্য ধরণের স্থাপত্য রয়েছে যার ১৩টি টাওয়ারের প্রতিটির আকৃতি একটি পদ্মের কুঁড়ির মতো। মস্কোর একটি পবিত্র স্থানের ছায়া রয়েছে নাকি এই মন্দিরে। পুরনো মন্দিরটি ভেঙেচুরে গেলেও সেটিকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। নিত্যপুজোর স্থান উঠে এসেছে পাশের অংশে। নারায়ণ সান্যালের 'হংসেশ্বরী' উপন্যাসে মিলবে এই মন্দিরের ইতিহাস। মা কালীর এই মন্দির দারুণ জাগ্রত বলেও বিশ্বাস স্থানীয়দের।
এই তিনটে জায়গার সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন চন্দননগরের ঐতিহাসিক সংগ্রহশালা থেকে। দেখে আসতে পারেন গঙ্গাতীরের অপূর্ব সৌন্দর্যও। একই সঙ্গে ঘুরে আসুন চুঁচুড়ার ডাচ গোরস্থান থেকেও। পার্কস্ট্রিট সেমেট্রির মতোই ঐতিহাসিক গোরস্থান এটিও। ইতিহাস ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অপূর্ব সুন্দর সমস্ত সমাধি। এখানেই শুয়ে রয়েছেন স্যার কর্নওয়ালিস জং, শেষ ওলন্দাজ গভর্নক ড্যানিয়েল অস্থানি-সহ ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ইতিমধ্যেই হেরিটেজ আখ্যা পেয়েছে এই গোরস্থানটি।
একই সঙ্গে দেখে আসুন শ্রীরামপুর রাজবাড়ি। বেশ কয়েকটি বিখ্যাত রেস্তোরাঁ কাম রিসর্ট রয়েছে গঙ্গার তীরে। সেগুলোরও রয়েছে আলাদা ইতিহাস। সেখানেই সেরে ফেলতে পারেন দুপুরের খানাপিনা। বিখ্যাত মাহেশের রথও চাইলে চাক্ষুষ করতে পারেন সচক্ষে।
একই সঙ্গে চাইলে আপনি ঘুরে আসতে পারেন কামারপুকুর থেকেও। হুগলি থেকে খুব বেশি দূরে নয় কামারপুকুর ও তারকেশ্বর। রামকৃষ্ণ ও সারদা মায়ের জন্মস্থান এবং রামকৃষ্ণ মিশন রয়েছে, যা দর্শনীয় স্থান বটে। কামারপুকুরের বিখ্যাত সাদা বোঁদে চেখে দেখতে ভুলবেন না যেন। তারকেশ্বর মন্দিরের জনপ্রিয়তার কথা তো সকলেই জানেন। চাইলে সেখানে পুজোও দিয়ে আসতে পারেন সপরিবারে।
আরও পড়ুন: অ্যাংলো সাহেবের বাংলোয় কাটুক ছুটি, ঘুরে আসুন মিনি বিলেত থেকে
হুগলি যাওয়ার অসংখ্য ট্রেন পেয়ে যাবেন কলকাতা থেকে। চেপে বসার অপেক্ষা খালি। যেতে পারেন গাড়িতে করেও। এমনকী নদী পার হয়েও হুগলির পথ কিন্তু খুব দূরে নয়। চাইলে কাটিয়েও আসতে পারেন সেখানে দিন দুয়েক। এখন দেরি শুধু ছুটি খুঁজে বের করে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ার।