শহর জুড়ে আধার জালিয়াতি, কী ভাবে বাঁচাবেন আপনার সঞ্চয়?

Aadhaar Card Fraud: শুনলে অবাক হবেন, জমি, বাড়ি রেজিস্ট্রির অফিস রয়েছে সেই সমস্ত জায়গা থেকেও নাকি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, সরকারি জমি বাড়ি রেজিস্ট্রি অফিসগুলোই হয়ে উঠছে সাইবার অপরাধের রসু...

ওটিপি শেয়ার করেননি। ফাঁস করেননি কোনও এসএমএস বা মেইলও। অথচ অ্যাকাউন্ট থেকে হাপিস লক্ষ লক্ষ টাকা! কীভাবে ঘটল এই ঘটনা। মাথার চুল ছেঁড়ার উপক্রম পুলিশের। এদিকে শহর জুড়ে একের পর এক জালিয়াতি, প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়ছে থানায়। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, আধার জালিয়াতি। কেন ভুলে গিয়েছেন, কিছু দিন আগেই ঘটা করে আধার কার্ডের সঙ্গে ভোটার কার্ড জুড়েছেন, জুড়ে ফেলেছেন প্যান কার্ডও। অবশ্য জুড়েছেন বললে ভুল হবে, জুড়তে বাধ্য হয়েছেন। এক দেশ এক ভোটের মতোই মোদি সরকার নিদান দিয়েছে এক ব্যক্তি এক কার্ডের। ঠেলা ভুগুন এবার। সাইবার অপরাধীদের হাতে তুলে দিন নিজের কষ্টোপার্জিত টাকা, সারা জীবনের সঞ্চয়।

দুনিয়া এখন অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। ডিজিটাল ভারতে একসুতোয় বাধা আমাদের পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে গোটা জীবন। ইতিমধ্যেই তো আধারকার্ডের সঙ্গে ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড-সহ যাবতীয় তথ্য জুড়তে বাধ্য করেছে সরকার। ফলে আধার এখন ভ্রমরের প্রাণ। যা একবার হ্যাকারদের হাতে পড়লে আর রক্ষে নেই। এক ক্লিকে তারা পেয়ে যেতে পারে আপনার জীবনভরের সমস্ত তথ্য, ব্যাঙ্ক, বাড়ি থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যক্তগত তথ্য। আর সেই সুযোগটাই নিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। প্রতারণার নয়া মাধ্যম এখন তাই আধার কার্ড।

আরও পড়ুন: ভারতীয়দের তথ্য হাতিয়ে চড়া দামে বিক্রি! কোন ‘ষড়যন্ত্রের’ আভাস দিচ্ছে চ্যাটজিপিটি?

সম্প্রতি আধার এনেবল পেমেন্ট সিস্টেম (AePS)চালু হয়েছে দেশে। কী সেটা। আধার কার্ডের মাধ্যমে পাওয়া একটি বিশেষ সুবিধা এটি। গ্রাহকদের কাছে সহজে আর্থিক পরিষেবা পৌঁছে দিতে এইপিএস পরিষেবা চালু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই AePS-র মাধ্যমে যে কোনও রকম অর্থনৈতিক লেনদেন সম্ভব, তাও আবার কোনও রকম এটিএম কাউন্টার ছাড়াই। লাগবে না ওটিপি-ও। শুধুমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে আধার অথেন্টিকেশন ব্যবহার করে যে কোনও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লেনদেন করা যায় এই AePS-র মাধ্যমে। এতে যেমন টাকা জমা দেওয়া এবং তোলার ক্ষেত্রে সুবিধা, তেমনই এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে পাঠানো টাকা এবং অ্যাকাউন্টে জমা টাকার খোঁজও নেওয়াপ সোজা। ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন তথা এনপিসিআই চালু করেছিল এই পরিষেবা। আর সেটাই হয়ে উঠেছে প্রতারকদের নয়া অস্ত্র। এখনও পর্যন্ত কলকাতা থেকে অন্তত ৩৭টি আধার প্রতারণার খবর মিলেছে। বিশেষত AePS প্রতারণাই বেশি তার মধ্যে। পুলিশের সন্দেহ, দক্ষিণ কলকাতায় একটি বিশেষ সাইবার চক্র কাজ করছে। এই প্রতিটি ঘটনার নেপথ্যে তাদেরই হাত রয়েছে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ। প্রতি সপ্তাহেই প্রায় তিন থেকে চারটি করে এই ধরনের অভিযোগ জমা হচ্ছে পুলিশের কাছে।

Aadhaar Card Biometric related fraud is increasing in India How to prevent misuse of Aadhaar card details

শুধু এ রাজ্যেই নয়, দেশ জুড়েই বেড়েছে আধার প্রতারণার সংখ্যা। সম্প্রতি কর্ণাটকে এক মহিলার ব্যাঙ্ক থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছে ২০ হাজার টাকা। জানা যায়, সেই চুরিও হয়েছে আদতে ওই আধার এনেবল পেমেন্ট সিস্টেম বা AePS-এর মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত ৬টি রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলই আপাতত সাইবার অপরাধীদের নিশানায়। সেসব জায়গা থেকেই বারবার বায়োমেট্রিক তথ্য চুরি এবং প্রতারণার অভিযোগ উঠছে। পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটকের পাশাপাশি রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানাও রয়েছে তালিকায়। পাশাপাশি দিল্লি থেকেও বেশ কয়েকটি এমন সাইবার প্রতারণার অভিযোগ এসেছে।

কীভাবে কাজ করছে এই চক্র। প্রাথমিক ভাবে, সাধারণ মানুষকে এটা বিশ্বাস করানো হচ্ছে. যে ওটিপি যখন চাওয়া হচ্ছে না, তবে কোনও মতেই এর সঙ্গে প্রতারণার যোগ থাকতেই পারে না। আধারের ক্ষেত্রে আধার নম্বর এবং বায়োমেট্রিকই যেহেতু সবচেয়ে বড় প্রামাণ্য বিষয়, ফলে AePS আদৌ ওটিপি, এসএমএস বা ইমেলের মতো সতর্কতাগুলির ধার মাড়ায় না। আর সেটাকেই প্রতারণার হাতিয়ার করছে হ্যাকাররা।

কিন্তু কীভাবে মানুষের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করছে সাইবার অপরাধীরা। ধরুন আপনার টাকার দরকার, এদিকে আপনার এটিএম নেই। কিংবা আপনার একটা সিম কার্ড প্রয়োজন। আপনাকে তার জন্য আপনাকে এমন কোনও জায়গায় যেতে হবে যেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে আপনি সেই সব কাজগুলি সারতে পারবেন। আর সেই সুযোগটাই ব্যবহার করছে কয়েকজন অসাধু ব্যক্তি। আপনার আঙুলের ছাপ পাচার হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সাইবার অপরাধ চক্রের কাছে। যারা ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি সেজে ব্যাঙ্কের তরফে লেনদেনের ছাড়পত্র অথোরাইজ করছে। ফলে আপনার ওটিপি বা অনুমতি ছাড়াই আপনার টাকা চলে যাচ্ছে সেই অসাধু চক্রের কাছে। যে কোনও জায়গা থেকে সেরে ফেলা যেতে পারে এই দুষ্কর্ম। শুনলে অবাক হবেন, জমি, বাড়ি রেজিস্ট্রির অফিস রয়েছে সেই সমস্ত জায়গা থেকেও নাকি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, সরকারি জমি বাড়ি রেজিস্ট্রি অফিসগুলোই হয়ে উঠছে ঘুঘুর বাসা।

Aadhaar Card Biometric related fraud is increasing in India How to prevent misuse of Aadhaar card details

যারা বাড়ি ঘর রেজিস্ট্রির কাজ করেছেন কখনও না কখনও, তারা জানবেন কীভাবে আপনার প্রতিটি আঙুলের ছাপ নথিভুক্ত রাখা হয় এই সব অফিসের রেকর্ডে। সেই রেকর্ডের নাগাল যদি একবার কোনও অসাধু চক্র পায়, তাহলেই তো কেল্লাফতে। স্বাভাবিক ভাবেই শহর জুড়ে এই প্রতারণা চক্রের বাড়বাড়ন্তে কপালে ভাঁজ সাইবার বিশেষজ্ঞ মহলের। চাপ বেড়েছে পুলিশেরও। কিন্তু কীভাবে বাঁচবেন এই প্রতারণা চক্রের হাত থেকে। তার হদিস দিচ্ছেন খোদ সাইবার বিশেষজ্ঞেরাই। তাঁদের পরামর্শ, বায়োমেট্রিক লক ব্যবহারের।

আরও পড়ুন: কেন এমন রঙের হেরফের? জানেন আসলে কী এই ব্লু আধার?

কীভাবে ব্যবহার করবেন সেটি। তার জন্য প্রথমেই গুগল প্লেস্টোর বা অ্যাপল স্টোরে গিয়ে আপনাকে ডাউনলোড করতে হবে mAadhar নামক অ্যাপটি। সেই অ্যাপটিতে ঢুকে আপনাকে যেতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন অপশনে। এবং সেখান থেকেই আপনি লক করে দিতে পারবেন আপনার বায়োমেট্রেক। ভবিষ্যতে দমি রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত অথবা অন্য কাজের প্রয়োজন হলে এটি আবার খুলে দিতে পারবেন। কাজ মিটে গেলে ফের লক করে দিন। ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল লেনদেন চাইলে বন্ধ রাখতে পারেন। এক্ষেত্রেও আধার লক করে রাখলে বায়োমেট্রিকের অপব্যাহারের হাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই মেলার সুযোগ থাকে।

More Articles