ভারতে ইভিএম বিকৃতি সম্ভব? ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারে শাসক দল?

EVM Tampering: মাধব কিন্তু জানাচ্ছেন, ভারতীয় ইভিএমের সঙ্গে যেহেতু ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, ইন্টারনেটের পরিষেবা যুক্ত করা যায় না, তাই এটি হ্যাক করা সহজ নয় মোটেও। তবে অসৎ উপায়ে ইভিএমের ব্যবহার সম্ভব বলেই জানাচ্ছেন তিনি।

ভোট পরবর্তী সময়ে প্রায়শই ইভিএম কারচুপি নিয়ে অভিযোগ তুলতেই থাকেন বিরোধী নেতারা। সম্প্রতি ইভিএম মেশিনের সঙ্গে ভিভিপ্যাট মেশিনের স্লিপ একশো শতাংশ মিলিয়ে দেখার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছিল। যদিও সেই সবকটি আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপ্যাট মেশিনের স্লিপ একশো শতাংশ মেলানো সম্ভব নয়। ইভিএম কারচুপির এই অভিযোগ আজকের নয়। ভোটে যে দল যখনই হারে, তারা ইভিএম কারচুপির অভিযোগ তোলে। তবে সত্যি কতটা সম্ভব এই ইভিএম কারচুপি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।

২০২৪ সালের ৩১ মার্চ নাগাদ ইভিএম বিশেষজ্ঞ মাধব দেশপান্ডের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছিলেন করণ থাপড়। টিউলিপ সফ্টওয়ারের প্রাক্তন সিইও মাধব দেশপান্ডে একসময় আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রশাসনিক পরামর্শদাতা পদেও কাজ করেছেন। সেই আলোচনায় ইভিএম সংক্রান্ত বেশ কিছু কথাবার্তা উঠে এসেছিল। এতদিন ধরে বারবার ইভিএম ব্য়বস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী থেকে শাসকদল, সময় সুযোগ বুঝে সকলেই ইভিএম কারচুপির অভিযোগ তুলে থাকেন।

আরও পড়ুন: ইভিএমের সঙ্গে মেলানো হবে ভিভিপ্যাট স্লিপ? লোকসভা ভোটের মধ্যেই যে বড় সিদ্ধান্ত জানাল সুপ্রিম কোর্ট

মাধব কিন্তু জানাচ্ছেন, ভারতীয় ইভিএমের সঙ্গে যেহেতু ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, ইন্টারনেটের পরিষেবা যুক্ত করা যায় না, তাই এটি হ্যাক করা সহজ নয় মোটেও। তবে অসৎ উপায়ে ইভিএমের ব্যবহার সম্ভব বলেই জানাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানান, অন্যান্য দেশের ইভিএমের সঙ্গে ভারতের ইভিএমের পার্থক্যও রয়েছে। অন্য দেশের ইভিএমের সঙ্গে ওয়াইফাই, ইন্টারনেটের পরিষেবা যুক্ত থাকায় ভোটের পর তাঁদের বায়োমেট্রিক রেকর্ড রাখা সম্ভব হয়। পাশাপাশি সেখানে হ্যাক হওয়ার সম্ভবনাও বেশি।

তিনি জানাচ্ছেন, ইভিএম আসলে গঠিত তিনটি অংশ নিয়ে। কী সেগুলি? সেগুলি হল ব্যালট ইউনিট, কন্ট্রোল ইউনিট, ভিভিপ্যাট মেশিন। তাঁর যুক্তি, এটি "আন্ডার ডিজাইন" একটি সিস্টেম। ১৯৭৭ সালে এই ডিজাইনটি করা হয়েছিল। সে সময়ে দেশে ইন্টারনেট ব্যবস্থা তেমন ভাবে প্রচলিত ছিল না। পরবর্তী কালে প্রযুক্তি এগোলো। রমরমিয়ে এল ইন্টারনেট। কিন্তু ইভিএম থেকে গেল ইভিএমেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইভিএমে যে সব পরিবর্তন আসার প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি।

মাধবের কথায়, মূলত দু'টি উপায়ে ইভিএমে ভোট কারচুপি করা সম্ভব। একদিকে কন্ট্রোল ইউনিট, আরেকদিকে ব্যালেট ইউনিট এবং মাঝখানে ভিভিপ্যাট মেশিন রেখে তা করা যায়। অন্য পন্থাটি হল কন্ট্রোল ইউনিটকে নিয়ন্ত্রণ করা। কারণ, যে কোনও কন্ট্রোল ইউনিট ব্যালট ইউনিটের সাথে কাজ করতে পারে এবং ভোট হয়ে যাওয়ার পরে থিওরিটিক্যালি কন্ট্রোল ইউনিটকে পরিবর্তন করে, নতুন কন্ট্রোল ইউনিট ব্যবহার করে নিজেদের পছন্দ মত ভোট বাড়ানো সম্ভব বলেই মনে করছেন তিনি।

তবে শুধু সমস্যাই নয়, সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে সমাধানও বাতলেছেন মাধব দেশপাণ্ডে। তিনি জানাচ্ছেন, ইভিএমের সঙ্গে যদি একটি 'জিও লোকেশন ট্র্যাকিং' রাখা যায়, তাহলে ভোট কারচুপি ধরা সম্ভব। তবে সে ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, 'জিও লোকেশন ট্র্যাকিং' ইভিএমের ভিতরে প্রোগ্রাম করা থাকলে চলবে না, আলাদাভাবে যুক্ত করে রাখতে হবে যাতে সহজেই ট্রেক করা সম্ভব হয়।

শুধু ভারতবর্ষেই নয়, দেশ-বিদেশ জুড়ে ভারতের ইভিএম সিস্টেম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ২০২৪ লোকসভা ঘিরে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও। নির্বাচনী প্রচার থেকে ইভিএম, সর্বত্রই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্বাচন প্রক্রিয়াটি পক্ষপাতদুষ্ট করে তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে নানা মহলে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভিভিপ্যাট স্লিপ গোনার দাবি জানিয়ে যে মামলা সুপ্রিম কোর্টে করা হয়, তা শীর্ষ আদালত খারিজ করে দিলেও কিছু শর্ত রেখেছে। যা থেকে পরিষ্কার, ইভিএম-কারচুপির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না শীর্ষ আদালতও।

আরও পড়ুন: ইভিএম নয়, একমাত্র ব্যালটে ভোট হলেই শাসককে হারানো যাবে?

অথচ নির্বাচন কমিশন এ নিয়ে নীরব। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, ইভিএম কারচুপি হলেও আদৌ কোনও পদক্ষেপ কি নেবে নির্বাচন কমিশন? দেশে ১৮তম লোকসভা নির্বাচন চলছে। ৪ দফা ভোট শেষ, বাকি ৩ দফা। ইভিএম বিশেষজ্ঞ মাধব দেশপান্ডে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক এবং কারচুপির সম্ভাবনার কথা তুলে আনলেন, তা শুধরে নিতে আদৌ কি কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন। অন্তত ২০২৪ লোকসভা ভোটে তো তেমন কিছু চোখে পড়ে। ফলে সেই সব ফাঁক এবং কারচুপির সম্ভাবনা নিয়েই বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের নির্বাচন চলছে এবং চলবে।

More Articles