লালে অ্যালার্জি! কেন কিমের দেশে নিষিদ্ধ এবার লাল লিপস্টিক?
Ban on Red Lipsticks: লিপস্টিক অধিকাংশ মেয়েরই প্রসাধনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর লাল লিপস্টিকের আবেদনও সেই বাজারে কিছু কম নয়। এবার কিমের দেশে নিষিদ্ধ সেই প্রসাধনীই।
শিবঠাকুরের আপন দেশে যে আইনকানুন সর্বনেশে সে কথা জানা। কিন্তু শিবঠাকুরের সেই দেশের থেকেও কয়েক ধাপ উপর দিয়ে যায় কিমের দেশ। গোটা পৃথিবীর মানচিত্রে এক আশ্চর্যতম দেশ উত্তর কোরিয়া। তবে দেশের চেয়েও অনেক বেশি আশ্চর্য সে দেশের একনায়ক কিম জং উন। তাঁর শাসন যে বড় একটা সহজ কথা নয়, সে কথা অ্যাদ্দিনে গোটা বিশ্ববাসীর জানা। গোটা পৃথিবী জুড়েই রাজরোষের সাজা বড়ই কঠিন কঠোর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই রাজরোষের ধরন বদলায়। বদলায় শাস্তির প্রকারও। তবে শাসক কিম জং উন অবশ্য সেই সব নিয়ম কানুনের ধার ধারেন না। অপছন্দের কাজ করলে চোখের সামনে বিনা বিচারে গুলি করে দেওয়ার নির্দেশ থেকে শুরু করে পিরানহা ভর্তি পুকুরে ঠেলে ফেলে দেওয়া, এমন বহু ভয়ানক শাস্তিই এখনও চালু রয়েছে কিম-সাম্রাজ্যে। সেই উত্তর কোরিয়ায় এবার নিষিদ্ধ হল লাল লিপস্টিক।
আরও পড়ুন: বাচ্চা চাই! কেঁদেকেটে একশা উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম
বহু ইসলামিক দেশেই মেয়েদের সাজগোজ, পোশাকআশাকের উপর বিধিনিষেধ রয়েছে। কিছুদিন আগেই ইরানে হিজাব পরতে না চাওয়ায় নীতিপুলিশের হেফাজতে মৃত্যু হয়েছিল তরুণীর। সেই মৃত্যু ঘিরে আগুন জ্বলে গিয়েছিল দেশ জুড়ে। আফগানিস্তানে তালিবান শাসনেও মেয়েদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে একের পর এক অধিকার। কিমের দেশে এবার নিষিদ্ধ করা হল লাল লিপস্টিক। লিপস্টিক অধিকাংশ মেয়েরই প্রসাধনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর লাল লিপস্টিকের আবেদনও সেই বাজারে কিছু কম নয়। প্রায় নামীদামি সমস্ত লিপস্টিক বিপণন সংস্থার ক্ষেত্রেই লাল লিপস্টিক তারকা প্রোডাক্ট। তবে আপাতত তারা উত্তর কোরিয়ায় সেই সব লিপস্টিকগুলি বিক্রি করতে পারবে না মোটেই।
কমিউনিজমের সঙ্গে লাল রঙের একটা অবিচ্ছেদ্য এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকলেও উত্তর কোরিয়ার শাসক এমন কিছু মনে করে না। বরং লিপস্টিকের এই লাল রঙকেই পুঁজিবাদের প্রতীক হিসেবে দেখে উত্তর কোরিয়া। তবে যত না পুঁজিবাদের প্রতীক, তার চেয়েও অনেক বেশি মেয়েদের সাজগোজের উপর শাসকের কড়া চোখ এই নিষেধ। উত্তর কোরিয়ায় এর আগেও একাধিক মেয়েদের পোশাকআশাক, সাজগোজের জিনিসপত্রকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কিম জং উন প্রশাসন।
জিনস পরিধান থেকে শুরু করে বডি পিয়ার্সিং, এমনকী চুলের বিভিন্ন স্টাইলও নিষিদ্ধ উত্তর কোরিয়ায়। শুধু মেয়েদের জন্য নয়, পুরুষের হেয়ার স্টাইলের জন্যও সেখানে রয়েছে বেশ কিছু বিধিনিষেধ। ওয়াকিবহাল মহলের মত, সেখানকার স্বৈরাচারী শাসক মনে করে, লাল লিপস্টিক মহিলাদের আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। সে কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা। সে দেশে মেয়েদের অত্যাধিক মেকআপও আগেই বেআইনি ঘোষণা করেছে উত্তর কোরিয়া প্রশাসন। এই সবের উপর নজরদারি করার জন্য উত্তর কোরিয়ায় বিশেষ পুলিশবাহিনীও রয়েছে।
আরও পড়ুন: বয়স দশ, যেভাবে উত্তরসূরীকে তিলে তিলে গড়ছেন কিম জং
এই সব নিয়মকানুন ভাঙলে সেই সব নাগরিকদের জন্য কঠোর জরিমানা এবং শাস্তির পর্যন্ত ব্যবস্থা রয়েছে উত্তর কোরিয়ায়। রাস্তাঘাটে কেড়ে নেওয়া হতে পারে পোশাকআশাক। করা হতে পারে সর্বসমক্ষে অপমান। জরিমানা তো রয়েইছে। আসলে রাজনীতি এবং সাজগোজ, নাগরিকদের ক্ষেত্রে এ দুটোর কোনওটাই বিশেষ পছন্দ করেন না সেখানকার স্বৈরাচারী শাসক কিম জং উন। যদিও নিজে রীতিমতো টিপটপ থাকেন উত্তর কোরিয়ার এই একনায়ক। কিছুদিন আগেই একটি অনুষ্ঠানে মেয়েদের সামনে চোখের জল ফেলে তাঁদের সন্তান নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন কিম। আর এবার সেই মহিলাদেরই সাধের লাল লিপস্টির পরার অধিকারটি একেবারে ছিনিয়ে নিলেন তিনি।