ম্যাকল্যাস্কিগঞ্জ, অ্যাংলো স্মৃতিবেদনার এক হারিয়ে যাওয়া শহর

Mccluskieganj Anglo Town: রাঁচি শহর থেকে মাত্র ৬৫ কিমি দূরে এই ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। শহর কলকাতা থেকেও মাত্র একরাত্তিরের ট্রেন-দূরত্ব।

কঙ্কা- লাপড়া আর হেসালং-এর বসতি নিয়ে ছোট্ট শহর ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। ছোটনাগপুরের এই পার্বত্য অঞ্চলে ভারী সবুজের চাদর বিছানো, মাঝখানে ছাটি নদী আর পাশ দিয়ে সমান্তরালে এগিয়ে চলা রেললাইন। জায়গাটি মনে ধরল আরনেস্ট টিমথি ম্যাকলাস্কির। আইরিশ পিতা ও ভারতীয় মায়ের সন্তান তিনি। জমি-জিরেতের ব্যাপারটা ভালোই বুঝতেন। অনেক চেষ্টার পর ছোটনাগপুরের রাজার থেকে লিজে পেয়েছিলেন ১০,০০০ একর জমি। তবে এই জমির জন্য বিস্তর রাজনৈতিক ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল ম্যাকলাস্কিকে। যদিও তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল বাংলা ও অসমের কিছু জায়গা কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দেয় ঔপনিবেশিক সরকার। একদিকে ব্রিটিশ সংস্কৃতির সাংস্কৃতিক অবিভাবকত্ব, অন্যদিকে অ্যাংলো জীবনে বাঙালিকরণের ছাপ- এসব নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন ম্যাকলাস্কি। আর জাতিসত্তা নির্মাণের আগে সবার আগে প্রয়োজন একটি নিজস্ব ভূখণ্ড ও ভৌগলিক সীমারেখা- এ কথাও অনুধাবন করেছিলেন তিনি।

রাঁচি শহর থেকে মাত্র ৬৫ কিমি দূরে এই ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। শহর কলকাতা থেকেও মাত্র একরাত্তিরের ট্রেন-দূরত্ব। পাশেই রেললাইন থাকায় অনায়াসেই কৃষিকাজের মাধ্যমে উৎপন্ন ফল, তরি-তরকারি পাঠানো যাবে রাঁচিতে। আর মাটি, জমির ঢাল অনুসারে কৃষিকাজের খানিক উপযোগীও ছিল এই জায়গা। ম্যাকলাস্কি ভেবেছিলেন সমবায় প্রথার কথাও। তাই পরে তৈরি হয়েছিল ‘কোলোনাইজেন সোসাইটি’। এর শেয়ার কিনে জমি পাওয়া যেত এ অঞ্চলে। তবে সদস্যপদ শুধুই সংরক্ষিত ছিল না ব্রিটিশ অ্যাংলোদের জন্য। জমি নিতে পারতেন ফ্রেঞ্চ এবং পর্তুগিজরাও।

একসময় এখানে ঘর বেঁধেছিল প্রায় ৪০০ টি অ্যাংলো পরিবার। লাল মাটির পার্বত্য ঠান্ডার রাতে মাঝেমাঝেই বেজে উঠত চার্চের ঘণ্টা, মুখরিত হতো ক্রিসমাস ক্যারোল। জঙ্গলের মাঝেই তৈরি হলো লম্বা টানা হাতাওয়ালা সাহেবি কায়দার বাংলো, সামনে বেতের চেয়ার। শীতকালের রাম, কেক আর মরসুমি ফলের বাজার। কোনও এক অবসন্ন গরমের বিকেলে রাইফেল শ্যুট। অন্যদিকে ‘মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন’ প্রনয়ণের পর থেকেই সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ শুরু হয় দেশিয়দের। তাই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের জন্য একটি ‘হোমল্যান্ডের’ ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন ম্যাকলাস্কি। আগেই বলেছি, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের ‘হাফ অ্যান্ড হাফ’ অবস্থার কথা। না তারা ছিল ব্রিটিশ সংস্কৃতির অংশ, না মিশতে পেরেছিল সমকালীন ভারতীয় সামাজিক কায়দায়।

আরও পড়ুন- অ্যাংলো বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন ভাগ করা ছিল মানা…

এখানকারই এক অধিবাসীর কথায়, “আমদের তো কোথাও যাওয়ার ছিল না। না এদেশে না ওদেশে। আমরা আসলে কোনও জায়গারই অধিবাসী ছিলাম না। তাই আমাদের প্রয়োজন ছিল একটি মাতৃভূমি। একটি নিজস্ব জাতীয় জীবনছন্দ”।

আরেকজন আবার বললেন, “...ভারতে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা ছিল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, এক ভৌগলিক-সাংস্কৃতিক সূত্রে না বাঁধলে একটি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব জীবনস্পন্দন তৈরি হতে পারে না”।

ম্যাকলাস্কিগঞ্জের প্রথম দিকের অবিভাবকরা যেহেতু ছিলেন ঔপনিবেশিক নির্মাতারাই, তাই এর নগর পরিকল্পনা ছিল সুচিন্তিত। শুরু হলো ‘নেমিং-চার্টইঙ’। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ইতিহাসের ক্ষেত্রে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাকলাস্কিগঞ্জ? শহর কলকাতায় তারা কোনওদিনই গৃহসুখের আস্বাদ পায়নি। ম্যাকলাস্কি নিজেই এক চিঠিতে লিখেছেন, “এই গঞ্জ নির্মাণ ছিল আমাদের মুক্তির রাস্তা। জাতীয়স্তরে এবং গৃহাভ্যন্তরেও”।

তবে কেউ কেউ এই জায়গার নির্মাণকে উপনিবেশবাদের প্রতিফলন হিসেবেই দেখেছেন।

কেন? ম্যাকল্যাস্কিগঞ্জের বাড়িগুলির গঠন একেবারেই বঙ্গদেশের গৃহের মতো নয়। এক সাঁওতালি জনবসতিতে ঘেরা রুক্ষ পার্বত্য এলাকায় কেন গড়ে উঠল সাহেবি বাংলো, ফায়ারপ্লেস? যেহেতু অ্যাংলোরা ‘হোমল্যান্ড’ হিসাবে মনে-প্রাণে ধরে রেখেছিল বরফ-ঘেরা এক দেশকে। তাই তাঁদের নিজস্ব নির্মিত বাড়িগুলিও তৈরি হয়েছিল পশ্চিমি ধাঁচেই। “হোমল্যান্ড মানে তো শুধুই বাসস্থান নয়। হোমল্যান্ড এক আত্মপরিচিতি”।

আবার এই শহর নির্মাণে খানিক স্বস্তিই পেয়েছিল ঔপনিবেশিক সরকার। ‘সাইমন কমিশনের’ রিপোর্ট (১৯৩০) জানায়, এক নতুন জায়গা ও জীবিকা খুঁজে নেওয়ায় সরকারি চাকরির উপর খানিক চাপ কমে। বিশেষ করে ১৯১৯ সালের পর সরকারি চাকরিতে ভারতীয়করণ সবে শুরু হয়েছে। এর ফলে ‘নার্সিং’, যা ছিল ব্রিটিশ ভারতে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মহিলাদের এক মুখ্য পেশা, তার সুযোগ কমতে থাকে।

আরও পড়ুন- সাংস্কৃতিক নির্জনতা কি শুধুমাত্রই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদেরই?

“...সমস্ত কাজের জায়গা যখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, পিঠ ঠেকে গেছে আমাদের। আমাদের হাতে আর কিছুই ছিল না, তাই আমরা চলে এলাম এখানে। আদিম পৃথিবীর কাছে। বেছে নিতে হলো মাচা তৈরি, ফলের গাছ লাগানো, চাষবাস”- বলেছিলেন বেনেডিক্ট।

ম্যকলাস্কি লিখেছেন, “...অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরাই সম্ভবত এমন সম্প্রদায় যারা নিজের দেশেই গৃহহীন যাযাবরের মতো। কলকাতা শহরের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা যখন অস্থির, সেই সময় এই সবুজ ভূমিতে খানিক আশ্বাস খুঁজছিল তারা”। স্বাধীনতার লড়াইয়ে তখন এমনিতেই উত্তাল হয়ে রয়েছে রাজধানী নগর কলকাতা। প্রবল অর্থনৈতিক অস্থিরতা। ব্রিটিশরা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথায়, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খানিক চিন্তিতও ছিল অ্যাংলোরা। দেশজুড়ে এই জাতিগঠন আর স্বাধীনতার লড়াই তাদেরকেও এক স্বাধীন ভূমির স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিল।

- প্রশ্ন করি, স্বাধীনতা চান কার থেকে?

- “সমগ্র দেশের থেকেই। তুমি জানো এখনও ‘অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান’ দেখব বলে এখানে আসে পর্যটকরা”।

‘দ্য কোলোনাইজেশন অবসারভার’ (১৯৩৪) দেখিয়েছে, স্বাধীনতা সংগ্রামে কোন পক্ষ নেবে ঠিক করে উঠতে পারেনি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা। আর এদিকে ক্রমাগত বাঙালি সংস্কৃতির আগ্রাসন বাড়ছিল কলকাতার অফিস-কাছারিতে। তাই তারা বেছে নিল ঢিলে-ঢালা এক নিরিবিলি পরিবেশ। চাষবাস ছাড়াও এখানে হতো পশুপালন। কলকাতায় থাকতে অনেক সময়ই জাতি-হিংসার শিকার হয়েছিল অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা। চামড়ার রঙ, ইংরেজি ভাষার উচ্চারণ নিয়ে চলত মশকরা। ‘দ্য কোলোনাইজেশন অবসারভার’-এর তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের নিজস্ব নামে জমি রেজিস্ট্রি হতো না। ব্যক্তিগত বা সম্প্রদায়গতভাবে কোনও আর্থিক পুঁজিও তৈরি করতে পারেনি এরা। আর এ জায়গা ছিল, যে কোনওরকম অভিভাবকত্ব থেকে মুক্তি।

বুদ্ধদেব গুহ তাঁর 'একটু উষ্ণতার জন্য’ উপন্যাসে ম্যাকলাস্কিগঞ্জের ছবি দেখিয়েছেন, কোলাহলহীন, সহজ আর আন্তরিকতায় ভরপুর এক জায়গা। এখানকার চরিত্ররা সবাই সাবলীল। যাবতীয় সাংসারিক হিসেব-নিকেশ নিয়ে উদাসীন। জীবন চলছে ধীর গতিতে। পারস্পরিক সহযোগিতায় উষ্ণ। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ছাড়াও এখানে মাঝে মধ্যেই ঘুরতে এসেছেন পশ্চিমি দেশের মানুষরা। তাদের লেখা চিঠিপত্র থেকেও অনেকটাই জানা যায় ম্যকলাস্কিগঞ্জের কথা। ম্যাকলাস্কিগঞ্জের কথা বেশিরভাগটাই পড়া বা লেখা মৌখিক ইতিহাসের মধ্য দিয়ে। যেখানে ইতিহাস ধরে রেখেছে দৃশ্য আর স্মৃতি দিয়েছে তার ভাষ্য।

মিসেস বেরিল লারকিন নামে এক মহিলা লিখেছেন,

“ট্রেন যাতায়াতে ম্যাকলাস্কিগঞ্জ খুব বেশি দূরের পথ নয়। যাত্রাপথের পরিবেশ মনোরম। লাপড়া পাহাড়ের জঙ্গল-উপত্যকা যেন সবুজ মখমলের চাদরে ঢাকা। এখানে প্রতিটা দিন আশ্চর্যের ও সুখের। সবাই বেশ মিলেমিশে থাকে, যেন সব মিলিয়ে এক বৃহত্তর পরিবার। একেবারেই ‘অন্যরকম’ মনে হয়নি সেই জায়গাকে। বরং মনে হয়েছিল এসে থেকেছি এক ‘স্যুইট হোম’-এ”।

একসময় ম্যাকলাস্কিগঞ্জে বাড়তে থাকে পর্যটকদের সংখ্যাও। তাহলে কেন হঠাৎ শেষ হয়ে এল ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ের এই ‘মিনি-ইংল্যন্ড’? ম্যাকলাস্কিগঞ্জে রয়েছে হাতে গোনা কুড়িটি অ্যাংলো পরিবার। ম্যাকলাস্কি স্যর মারা যান ১৯৩৫ সালে। এর পর থেকেই খানিকটা অসংগঠিত হয়ে পড়ে এই সমাজ। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা বরাবরই শহুরে পরিবেশে থেকে অভ্যস্ত ছিল। তাই এই গ্রামীণ পার্বত্য পরিবেশে কৃষিকাজে মন লাগেনি তাদের। শহুরে সুবিধেয় থাকা অ্যাংলোদের প্রয়োজন ছিল স্কুল, হাসপাতাল, থিয়েটারহল ইত্যাদির। এছাড়াও হয়েছিল অভিবাসন। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যন্ড ও ফ্রান্সে। এছাড়াও ঝাড়খণ্ডের পার্বত্যভূমিতে ছিল খানিক সামাজিক সুরক্ষার অভাব। রাঁচি যাওয়ার পথে প্রায়ই ঘটত ডাকাতির ঘটনা। ছিল জীবিকার অভাব। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না চাষবাস।

যারা রয়ে গেলেন, তারা রয়ে গেলেন স্মৃতিবেদনা থেকে। স্মৃতিবেদনা? খানিকটা আনন্দ আর হুল্লোড়ের, আবার খানিকটা হারিয়ে যাওয়ার। আস্তে আস্তে কমে গেল ম্যাকলাস্কিগঞ্জের তৃণভূমি। ১৯৯৭ সালে এখানে তৈরি হলো ‘ডন বস্কো আকাডেমি’। এতে প্রত্যক্ষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন আলফ্রেড রোজারিও। স্কুল তৈরি হওয়ায় অনেক অ্যাংলোরাই চালাতে শুরু করে হোস্টেল। আবার পর্যটন বেড়ে আসায় তৈরি হলো প্রচুর ‘হোম স্টে’। তাতে গৃহসহায়ক, মালী ও রাঁধুনি হিসাবে যোগ দিল আশেপাশের গ্রামের আদিবাসী মানুষরা। এতে ম্যাকলাস্কিগঞ্জের অবিমিশ্র, ভিন্ন সংস্কৃতিতে এল আঘাত। এখানকার ভীষণ পরিচিত এক মুখ ‘কিট্টি মেমসাহেব’। হাসিখুশি কিট্টি সাইকেলে চেপে ফল বিক্রি করে বেড়াতেন রেল স্টেশনের বাজারে। এ শহর সম্পর্কিত অনেক লেখা, ভ্রমণপত্রিকাতে পাওয়া যায় ‘কিট্টি মেমসাহেব’-এর নাম। কিন্তু আজ বড়ই নীরব হয়ে পড়েছেন স্বতঃস্ফূর্ত, সুন্দরী কিট্টি।

আরও পড়ুন- ডার্ক লিপস্টিক, ছোট স্কার্ট! অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মেয়ে মানেই যৌন উন্মাদনা?

“ছবির মতো সুন্দর এই শহরের সঙ্গে মলিন হয়েছে আমার ঘর-আমার ছবিও।” বাড়ির অর্ধেক অংশে নিজের মেয়ে, নাতনি আর কিছু হাঁস নিয়ে বেঁচে আছেন কিট্টি। বাড়ির বাকি অংশ বেচে দিয়েছেন অন্যর কাছে।

“থেমে গেছে তো সব কিছুই। এখন আমাদের স্থানীয় রাম আর পাওয়া যায় না। বহুদিন বন্ধ হয়েছে নিউ ইয়ার ইভ বল। ক্রিসমাসের সময় এখন আর আগেকার মতো অনুষ্ঠান হয় না। এমনকী বেকারিগুলোও তো উঠে গেল প্রায়। এখন আমরা রাঁচি থেকে আনাই প্রতিদিনের কেক-বিস্কিট। আসলে নতুন কেউ আর এখানে থাকবে না। চাষবাস থেকে আর কতই বা আয় হয়”?- বলছিলেন স্মিথ।

-“জানো, আগে আমরা সাইকেল চালাতাম। তারপর সরকার বড় বড় রাস্তা বানিয়ে দিল কিন্তু হারিয়ে গেল সেই ঘন সবুজ জঙ্গল- যার নিরিবিলি ছায়ায় আমরা লালিত”।

-তাহলে থেকে গেলেন কেন?

-“...আমার বাবা ছিলেন এই ম্যাকলাস্কিগঞ্জের প্রথম দিককার বাসিন্দা। তারা একজোট হয়ে হাতে করে এই শহর সাজিয়েছিলেন। তখন জীবন থেকে মানুষের প্রত্যাশাও কম ছিল। বাবা সারাদিন গান গাইতেন। আমি শুনতে পাই, ওই জামুন গাছের আমার বাবার মৃদু বেহালার বাজনা। আজকাল আর কেউই তেমন গান গায় না”।

মনে পড়ে, বুদ্ধদেব গুহর লেখায় প্যাট সাহেবের কথা। জীবনে অসফল প্যাট কখনও গান গাইত। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে বোমার টুকরোয় তার একখানা পা গিয়েছে। তবে কারও অনুকম্পার অপেক্ষা করেনি প্যাট। জীবন মানেই তো এই স্মৃতিবেদনা। ম্যাকলাস্কিগঞ্জ পথভোলা সেই পাগলের দেশ। নাগরিক অসহায়তা, বিষাদবেদনা ধূসর হয়ে মিলিয়ে যায় ছাটি নদীর জঙ্গলে। নেমে আসে বিকেল। দেশিয় চার্চের মলিন হলুদ আলো আরও মায়াময়। রোজকুকির মিষ্টি গন্ধে ভরে ওঠে পাহাড়িয়া শীতের জঙ্গল। জামুন গাছের নিচে বাবার বেহালা হাতে বসে থাকেন স্মিথ। হারিয়ে যাওয়া শহরে এক শূন্য নিঃশ্বাস ঘুরপাক খায়।

More Articles