একাধিক অনিয়ম থেকে ধর্ষণের অভিযোগ! মুম্বইয়ের হোর্ডিং বিপর্যয়ের ‘নাটের গুরু’ প্রভুদাস আসলে কে?

Mumbai Billboard Collapse: প্রবল হাওয়ার দাপটে একটি পেট্রোল পাম্পের ভেঙে পড়ে মুম্বইয়ের একটি বিশালাকার বিলবোর্ড। যার নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় অন্তত ১৪ জনের। জখম হন অন্তত ৭৪ জন।

রাস্তার ধারে কত হোর্ডিং, ব্যানার তো আমাদের দিবারাত্র চোখে পড়ে। কিন্তু সেই বিশালাকার ধাতব বিজ্ঞাপনের বোর্ড যে এত বড় দুর্ঘটনা ডেকে আনতে পারে, তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ের বাসিন্দারা। সোমবার আরব সাগর তীরবর্তী শহরে হঠাৎ করেই শুরু হয় ধুলোঝড়। আর সেই প্রবল হাওয়ার দাপটে একটি পেট্রোল পাম্পের ভেঙে পড়ে একটি বিশালাকার বিলবোর্ড। যার নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় অন্তত ১৪ জনের। জখম হন অন্তত ৭৪ জন।

সূত্রের খবর, ঘাটকোপরের ওই বিলবোর্ডটির আকার ছিল প্রায় ১৪,৪০০ বর্গফুট। সেই ধাতব কাঠামোটি বাতাসে ধাক্কা খেয়ে পেট্রোল পাম্পটিতে এসে পড়ে। যার জেরে বিরাট দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় মুম্বই। প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ জানিয়েছেন, তাঁর ভাই অটোচালক, পেট্রোল পাম্পে গিয়েছিলেন গাড়িতে সিএনজি ভরাতে। সেসময় তাঁর উপর এসে পড়ে হোর্ডিংটি। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটির মৃত্যুতে অথৈ জলে গোটা সংসার। কেউ হয়তো কাজ করতেন ওই পেট্রোল পাম্পেই। বিলবোর্ডের নিচে শেষ হয়ে গিয়েছেন তিনিও। প্রায় ২১ ঘণ্টা পরেও অভিযান চালিয়ে গিয়েছে উদ্ধারকারী দল। উদ্ধারে নামে এনডিআরএফ। বিএমসি থেকে ছুটে যায় আর্থ-মুভার, অ্যাম্বুল্যান্স। নিয়ে যাওয়া হয় গ্য়াস কাটারও।

আরও পড়ুন: করমণ্ডলের পর ফের বড়সড় রেলদুর্ঘটনা বিহারে! ঠিক কত হাজার মরলে টনক নড়বে কেন্দ্রের?

জানা গিয়েছে, সোমবারের দুর্ঘটনার জন্য় দায়ী এই বিলবোর্ডটি তার আকারের জন্য় জায়গা পেয়েছে লিমকা বুক অব রেকর্ডস। তবে বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের রেকর্ডে আদতে এই সুবিশাল বিজ্ঞাপন বোর্ডটি ছিল অবৈধ। বৃহন্মুম্বই কর্তৃপক্ষ কোনও বিজ্ঞাপন সংস্থাকেই সেখানে বিলবোর্ড বা ওই ধরনের কাঠামো তৈরি করার অনুমতি দেয়নি। বৃহন্মুম্বইয়ের বেঁধে দেওয়া ৪০ ফুট বাই ৪০ ফুটের সীমার বাইরে গিয়ে অবৈধ ভাবে বানানো হয়েছিল ওই হোর্ডিংটি। যার মালিকানা রয়েছে ভবেশ প্রভুদাস ভিন্ডে নামে ৫১ বছরের এক ব্যক্তির নামে। যিনি কিনা ইগো মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর। সংস্থাটি দশ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিল হোর্ডিংটিকে। ইতিমধ্যেই ভবেশ প্রভুদাসের বিরুদ্ধে পান্ত নগর থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে।

তবে এই প্রথম যে পুলিশের খাতায় প্রভুদাসের নাম উঠল, তা কিন্তু নয়। জানা গিয়েছে, এই বছরেরই গোড়ায় গত ২৪ জানুয়ারি তার নামে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের হয়েছিল মুলুন্দ থানায়। ওই মামলায় বম্বে হাইকোর্টে অন্তর্বর্তী জামিন পায় প্রভুদাস। বেআইনি হোর্ডিংয়ের মালিকানা থেকে ধর্ষণ, এখানেই শেষ নয় প্রভুদাসের গুণের তালিকা। ২০০৯ সালে এই প্রভুদাসই মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড়ায়। সেই সময়েই অনুমতি ছাড়াই ব্য়ানার লাগানো এবং নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট (এনআই) সংক্রান্ত দু'টি অপরাধে তাকে জরিমানা করে মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (এমএমসি)। সে বছর ভোটে দাঁড়াতে গিয়ে যে হলফনামা দায়ের করেছিল প্রভুদাস, তাতে জানিয়েছিল, অন্তত ২১ বার সে এমএমসি আইনের ৩২৮ ধারা ও ৪৭১ ধারার আওতায় কাঠগড়ায় ওঠে। তার মধ্যে দুটি ছিল এনআই সংক্রান্ত মামলা। সেই সব মামলায় শেষপর্যন্ত কী হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়।

এবার মুম্বই হোর্ডিং কাণ্ডে তাঁর পালকে থুড়ি পুলিশের খাতায় যোগ হয়েছে আরও বড় বড় সব অভিযোগ। পুলিশ সূত্রের খবর, ভারতীয় সংবিধানের ধারা ৩০৪ (খুন), ধারা ৩৩৮ (ভয়াবহ চোটের কারণ), ধারা ৩৩৭ (অবহেলার দরুণ ক্ষয়ক্ষতি), ধারা ৩৪-এর আওতায় প্রভুদাসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবারই বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের প্রধান ভূষণ গাগরানি জানিয়ে দেন, ঘাটকোপরের ওই হোর্ডিং বেআইনি। সিভিক বডির অনুমতি না মেলা সত্ত্বেও ওই কাঠামো তৈরি করা হয়। যেখানে ওই ঘটনাটি ঘটে, সেখানে রেলওয়ের জমিতে চারটি হোর্ডিং ছিল। তার মধ্যেই একটি ভেঙে পড়েছে। যেগুলি নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে আপত্তি জানিয়ে এসেছে বিএমসি।

আরও পড়ুন: ন্যানো ইভি থেকে শুরু করে মার্সিডিজ! মুম্বইয়ের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ায় রতন টাটার এই গাড়িরা

প্রশ্ন উঠেছে, বেআইনি নির্মাণ দেখলেই নোটিস ধরানো থেকে শুরু করে সেসব ভেঙে দেওয়ার জন্য বিখ্যাত যে বিএমসি, তাদের টনক কেন নড়ল না এই বেআইনি হোর্ডিং নিয়ে। সেই হোর্ডিং নিয়ে পদক্ষেপের জন্য ১৪টি প্রাণকে বেঘোরে কেন যেতে হল? মুম্বইয়ের ওই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবার প্রতি ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচও সরকারের, জানানো হয়েছে তা-ও। পাশাপাশি ওই হোর্ডিং মালিক তথা ভবেশ প্রভুদাসের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তও জানিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এত বড় অবহেলা ঢাকার জন্য সত্যিই কি যথেষ্ট ওই সামান্য ক্ষতিপূরণ। সত্যিই কি শাস্তি পাবে অভিযুক্ত প্রভুদাস ও হোর্ডিং দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যরা। উঠেছে প্রশ্ন।

More Articles