রাজনীতি থেকে ছোট্ট বিরতি! কী জানালেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড?

‌Abhishek Banerjee: সম্প্রতি ইন্ডিয়া জোটের ভোটপরবর্তী বৈঠকেও প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা গিয়েছিল অভিষেককে। তবে এবার সেই অভিষেকই একটু থামছেন।

লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন তিনি। সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে দিয়ে লোকসভা ভোটে সর্বোচ্চ ভোটে জয় পেয়েছেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিনিই যে যোগ্য সভাপতি, প্রমাণ করে দিয়েছেন তা-ও। সম্প্রতি ইন্ডিয়া জোটের ভোটপরবর্তী বৈঠকেও প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা গিয়েছিল অভিষেককে। তবে এবার সেই অভিষেকই একটু থামছেন। বুধবার তিনি জানিয়েছেন, শারীরিক অসুবিধার কারণে আপাতত রাজনীতি থেকে বিরতি নিচ্ছেন তিনি।

কতদিনের বিরতি, কবে ফের রাজনীতিতে ফিরবেন, এ নিয়ে কোনও রকম ইঙ্গিত দেননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেন অভিষেক। সেখানে নিজেই এই সাময়িক বিরতির কথা লেখেন তিনি। জানিয়েছেন, তিনি চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। সেই কারণেই এই বিরতি।

বুধবার সকালে নবজোয়ার যাত্রা থেকে শুরু করে লোকসভা ভোট, একাধিক ইস্যু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন অভিষেক। এক্স হ্যান্ডেলে অভিষেক লেখেন, “চিকিৎসার জন্য আমি সংগঠন থেকে সাময়িক বিরতি নিচ্ছি। এই সময় সাধারণ মানুষের চাহিদা কী, তা আরও ভালোভাবে অনুধাবনের সুযোগ আমি পাব। আমি বিশ্বাস করি, রাজ্য সরকার দ্রুত এবং ভালোভাবে মানুষের সমস্যার সমাধান করবে এবং মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায় তা নিশ্চিত করবে।” বিরতির কথা ঘোষণার পাশাপাশি অভিষেক কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের জেরে বাংলার মানুষের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন নিজের এক্স পোস্টে। তিনি জানান, বাংলার মানুষ তাঁদের আবাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তৃণমূল ইতিমধ্যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে তা পূরণ করা হবে। আর তা পূরণ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। রাজ্য সরকার নিজের দায়িত্ব পালন করবে বলেও ওই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানান অভিষেক।

আরও পড়ুন: ভাঙল অনিল বসুর ‘অজেয়’ রেকর্ড! সব বাধা ঠেলে ডায়মন্ডহারবারে হ্যাটট্রিকের পথে অভিষেক

লোকসভা ভোটে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে প্রায় সাত লক্ষ ভোটে জেতেন অভিষেক। এই নিয়ে তিনবার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ হলেন তিনি। এর আগে বাংলার রাজনীতিতে এই বিপুল সংখ্যক ব্যবধানে আর কেউ জিতেছে বলে মনে পড়ে না। এত বড় সাফল্যের পরে পরেই কেন রাজনীতি থেকে বিরতি নিতে চাইছেন অভিষেক, স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছে প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ধরেই অভিষেক চোখের সমস্যায় ভুগছেন। সে জন্য অস্ত্রোপচারও করিয়েছেন। সেই চোখের চিকিৎসার জন্যই এই সাময়িক বিরতি নাকি অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি সাংসদ।

লোকসভা ভোটের ময়দানে উদয়স্ত খেটেছেন অভিষেক। তার ফলাফলও মিলেছে হাতে-হাতেই। লোকসভা ভোটে নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর মমতার সাংবাদিক বৈঠকে যথেষ্ট ক্লান্ত দেখিয়েছিল অভিষেককে। তবে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে কিন্তু যোগ দিয়েছিলেন পুরনো মেজাজেই। দিল্লিতে বৈঠক সেরে বাড়ি না ফিরে সোজা মুম্বইও উড়ে যান অভিষেক। তবে এই বিরতি যে খুব বেশিদিনের নয়, সেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন অভিষেক। জানিয়েছেন, সাময়িক বিরতির সময় সাংগঠনিক কাজকর্ম থেকে দূরে থাকলেও মানুষের মধ্যেই থাকবেন তিনি। সাধারণ মানুষ কী সুবিধা পাচ্ছেন, কী অসুবিধা আছে, কোথায়-কোথায় উন্নতির প্রয়োজন আছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করবেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কথায়, ‘আমাদের মানুষ এবং বিভিন্ন শ্রেণির কী চাহিদা, সেটা আরও ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে এই সাময়িক বিরতির সময়টা আমার কাছে একটি নয়া সুযোগ হতে চলেছে।’

যদিও এ কোনও নতুন বিষয় নয় তাঁর কাছে, সে কথাও বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা। অভিষেক জানান, গত বছর যখন তিনি নবজোয়ার কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন, তখন সাধারণ মানুষের কী কী সমস্যা হচ্ছিল, তা একেবারে নিজের চোখে দেখতে পেয়েছেন। বিশেষত লাগাতার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ১০০ দিনের কাজের প্রাপ্য অর্থ না দেওয়ার ফলে তাঁদের যে কতটা সমস্যা হচ্ছিল, তা অনুভব করতে পেরেছিলেন। তারপরই মানুষের স্বার্থে তৃণমূল রাস্তায় নেমেছিল। আর লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে অনুদানের অঙ্কটা বাড়ানো হয় বলে জানিয়েছেন অভিষেক।

গত বছর এই সময়েই তৃণমূলের ‘নবজোয়ার’ যাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন অভিষেক। ৫১ দিনের সেই যাত্রায় কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ— সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ যাত্রা করেছিলেন তিনি। রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ১৩৫টি জনসভা, ৬০টি বিশেষ অধিবেশন, ১২৫টি রোড-শো, ৩৩টি রাতের অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে অভিষেকের ‘নবজোয়ার’ যাত্রা তৃণমূলের সংগঠনেও মন্থন তৈরি করেছিল। বিশেষত, গোপন ব্যালটে ভোট নিয়ে প্রার্থী চয়নের যে মডেল অভিষেক দেখিয়েছিলেন, তা তৃণমূলে অভিনবই ছিল। ‘কেন্দ্রের বঞ্চনা’ নিয়ে বাংলার আন্দোলনকে দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন অভিষেক। ইতিমধ্যেই লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের ৫৯ লক্ষ শ্রমিককে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরি মিটিয়েছে রাজ্য সরকার। অভিষেক এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আবাস যোজনার বাড়ির টাকাও দেবে রাজ্য সরকার। তা যাতে নিশ্চিত হয়, বুধবারের পোস্টে তা-ও উল্লেখ করেছেন তৃণমূলের সেনাপতি।

আরও পড়ুন:আদালতের রায়ে নাজেহাল যুবরাজ! কেন ফের সিবিআইয়ের তলব অভিষেককে?

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ঘাড়ে দলের একাধিক সাংগঠনিক ভার রয়েছে। তার অনুপস্থিতে কে সামলাবেন সেই সব দায়িত্ব? ডায়মন্ড হারবার থেকে সদ্য সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এদিকে আগামী ২৪ জুন থেকেই শুরু হতে চলেছে সংসদের নয়া অধিবেশন। সেখানেও কি থাকবেন না অভিষেক? তাঁকে ছাড়া কতটা সমস্যায় পড়তে চলেছে তৃণমূল, এই সমস্ত প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে দলের অন্দরে। ঠিক কতদিনের জন্য বিরতি নিচ্ছেন অভিষেক, তা তিনি এখনও পরিষ্কার করেননি। শরীরের ঠিক কী অসুবিধার জন্য চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন তিনি? তা-ও স্পষ্ট নয়। এর নেপথ্যে অন্য কোনও সমীকরণ রয়েছে কিনা, তা নিয়েও উঠে গিয়েছে প্রশ্ন।

More Articles