লড়ে দেখালেন ঐন্দ্রিলা, এভাবেও ফিরে আসা যায়

Aindrila Sharma: একের পর এক কেমো, ওষুধের সঙ্গে লড়াইয়ে আবার উঠে এলেন ঐন্দ্রিলা।

তুমি আসবে বলেই আকাশ মেঘলা, বৃষ্টি এখনও হয়নি,
তুমি আসবে বলেই,
কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো ঝরে যায়নি,
তুমি আসবে বলেই
-নচিকেতা

সে আসবে বলেই! তিনি ফিরেছেন! এভাবেও ফিরে আসা যায়-এর আকস্মিকতাকে সার্থক করে ফের আলোর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি! অতিপ্রাকৃত আর চমৎকারকে বাহবা দিয়ে আবারও যুদ্ধজয়ের পথেই এগোচ্ছেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। গত ১৮ দিন যে মেয়েটির নাম ঝড়ের মতো ছড়িয়ে গিয়েছে সোশ্যাল দুনিয়ায়। যাঁকে ঘিরে তৈরি হয়েছে আবেগ, কথকতা, বিতর্ক, গুজব আর প্রার্থনা! প্রথম কয়েকটি শব্দবন্ধ ছাড়িয়ে যে মানুষটিকে নিয়ে শারীরিক সফলতার পথ প্রশস্ত করেছে প্রার্থনা। সেই তিনিই ফিরছেন ফের! আবারও সাড়া দিচ্ছেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma)। রাতজাগা হাসপাতালের শয্যায় অচেতন অবস্থায় থেকেও নাকি ফিরে আসছেন বছর ২৩-এর মেয়েটি।

হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতাল-সূত্রে খবর, গত ১৪ নভেম্বরের তুলনায় শারীরিক অবস্থার খানিকটা উন্নতি হয়েছে ঐন্দ্রিলা শর্মার। ১৭ নভেম্বরের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল, সেই অবস্থা থেকে খানিকটা ফিরিয়ে আনা গিয়েছে অভিনেত্রীকে। একদিকে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই, অন্যদিকে দিনের পর দিন সংক্রমণ বৃদ্ধি যে সমস্যা বাড়িয়েছিল, তাই-ই একধাক্কায় আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার পরে। প্রায় মৃত্যুর সম্ভাবনা নিশ্চিত হয় এই অভিনেত্রীর। একাধিক চিকিৎসক জবাব দিয়ে দেন প্রায়।

আরও পড়ুন: ঠিক কী হয়েছে ঐন্দ্রিলার, প্রাণঘাতী এই রোগ হানা দিতে পারে যখনতখন, উপসর্গ কী

ফের পরিবর্তিত হলো সব। অন্তত সমস্ত আশঙ্কার মধ্যেও ১৯ নভেম্বরের রাত ৮টা বলছে অন্য কথা! মৃত্যুর গুজবেই যেন আয়ু ফিরেছে ঐন্দ্রিলার। ফের বেড়েছে শরীরের উষ্ণতা, হৃদস্পন্দনের মাত্রা! আবার সমস্ত শঙ্কার মেঘ কাটিয়ে শান্তির বৃষ্টির দিকেই এগোচ্ছেন ঐন্দ্রিলা।

আর এই পরিস্থিতিতেই ভালো খবর দিয়েছেন সব্যসাচী চৌধুরী। ঐন্দ্রিলার কাছের মানুষ, একাধিক আক্ষেপ আর বিরক্তির মধ্যেই তিনি জানিয়েছেন বিস্তারিত। সব্যসাচী লেখেন, 'পরশুদিন সকালে ঐন্দ্রিলার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়, চোখের সামনে দেখলাম ওর হৃদস্পন্দন কমে চল্লিশের নিচে নেমে তলিয়ে গেল, মনিটরে ব্ল্যাঙ্ক লাইন, কান্নার আওয়াজ, তার মাঝে ডাক্তাররা দৌড়াদৌড়ি করছেন।' অভিনেতার কথায়, 'স্থিরভাবে একটা একটা করে স্পন্দন কমছে, কমছে রক্তচাপ, কমছে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস। চিকিৎসকরা জবাব দিয়েছেন, হাসপাতালের নিচে পুলিশ পোস্টিং, বিভিন্ন বিশিষ্ট মানুষ এসে সমবেদনা জানাচ্ছেন।' সঙ্গীতশিল্পী অরিজিৎ সিংয়ের প্রসঙ্গ এনে সব্যসাচীর বক্তব্য, 'একটামাত্র মানুষ আমায় কিছু তথ্য দিয়ে প্রথম আলোর দিশা দেখায়, যার সঙ্গে সারাদিন নির্দ্বিধায় চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করি, তিনি অরিজিৎ সিং (Arijit Singh)।' সব্যসাচী। বিস্তারিত জানিয়েই এই লেখার শেষে জানিয়েছেন, ঐন্দ্রিলার খানিকটা ভালো থাকার কথাও।

লড়াই চলছে। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টায় ফের এক যুদ্ধজয়ের পথে এগোচ্ছেন ঐন্দ্রিলা। কিন্তু ঠিক ঘটেছিল সেদিন? অর্থাৎ ১৪ নভেম্বরের সেই 'অতিপ্রাকৃত কিছু, চমৎকার কিছুর জন্য, সব্যসাচীর (Sabyasachi Chowdhury) সেই 'প্রার্থনা' আবেদন এবং আজকের হঠাৎ ভালো সংবাদের নেপথ্যে ঠিক কী ছিল?

১ নভেম্বর। হঠাৎ জ্ঞান হারান অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা। সদ্য দ্বিতীয়বার ক্যানসার-আক্রান্ত হওয়া এবং দীর্ঘ চিকিৎসার মধ্যেই ফের ঘনিয়ে আসে মারাত্মক বিপদ। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা নিয়ে হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় ঐন্দ্রিলাকে। হয় অস্ত্রোপচার। কিন্তু কাজের কাজ তেমন একটা হয়নি। অভিনেত্রীকে দেওয়া হয় ভেন্টিলেশনে। উদ্বেগ আর আশঙ্কা বাড়তে থাকে। বহরমপুরের চিকিৎসক পরিবারের সন্তানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় আরও।

৭ নভেম্বর। সব্যসাচী জানান ভালো খবর। ভেন্টিলেশন থেকে বেরিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। মারত্মক বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা কমেছে।

১২ নভেম্বর। সুখের কথা টেকেনি বেশিক্ষণ। ফের সংক্রমণের জালে বন্দি হন অভিনেত্রী। বাড়ে জ্বর। জ্ঞান আসেনি তখনও।

১৪ নভেম্ভর। আবার আশঙ্কার কালো মেঘ জমে। ঐন্দ্রিলার শরীর আরও খারাপ হয়। ফের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন চিকিৎসকরা। দেওয়া হয় বাইরে থেকে সাপোর্ট। এই দুঃসংবাদ জানান সেই সব্যসাচী। বলেন প্রার্থনার কথাও। দিকে দিকে শুরু হয় শোরগোল।

১৭ নভেম্বর। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে লাগে এদিন। সকাল সকাল হৃদরোগে আক্রান্ত হয় ঐন্দ্রিলার। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হৃদস্পন্দন একদম শূন্য হয়েছে! তখনও হাসপাতালের শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে সব্যসাচী। হৃদস্পন্দনের মাত্রা কমে শূন্য! প্রায় মৃত্যুর পথে এগোলেন ঐন্দ্রিলা। তৈরি হয় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। একাধিক চিকিৎসক, দৌড়াদৌড়ি! অবশেষে ফিরলেন ঐন্দ্রিলা। ফের রক্তচাপ উঠল ৫০-৬০ বাই ২০-৩০। হৃদস্পন্দনের মাত্রা তখনও ওঠেনি ৬০ এ-ও।

অন্য এক হাসপাতাল থেকে এলেন আর এক বিখ্যাত স্নায়ুরোগ-বিশেষজ্ঞ। তখনও একে একে মৃত্যুর দিকেই যাচ্ছেন অভিনেত্রী, একথা বলে দিয়েছেন চিকিৎসকদের একাংশ। কোনও কোনও চিকিৎসক তো নিশ্চিত হয়েই নাকি বলেছেন, 'সম্ভাবনা নেই। ঈশ্বরকে ডাকুন।'

ঈশ্বরকে ডেকেছেন সব্যসাচী। ঐন্দ্রিলার পরিবার। এমনকি সমগ্র মুর্শিদাবাদ, বহরমপুরের মানুষ। সোশ্যাল মাধ্যম ভরেছে ঐন্দ্রিলার আরোগ্য প্রার্থনার পোস্টে। কিন্তু ঐন্দ্রিলা?

১৮ নভেম্বর। মধ্যরাতে প্রকাশ হলো গুজব! 'ঐন্দ্রিলা শর্মা মারা গিয়েছেন'। এই খবর ছড়াতেই একের পর এক ফোনকলে বিপর্যস্ত হন সব্যসাচী এবং হাসপাতালে থাকা তাঁর বন্ধুরা। এদিকে ঐন্দ্রিলা নিয়ে ততক্ষণে আশঙ্কার কথা জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরাই। অবশেষে মাঝরাতে মুখ খোলেন সব্যসাচী। তাঁর ওই একটি মন্তব্য বন্ধ করে গুজব। ঐন্দ্রিলা নিয়ে বন্ধ হয় খবরের ঘনঘটাও।

১৯ নভেম্বর। নানা আয়োজনে থাকাকালীন অবিশ্বাস্যভাবে সাড়া দেন ঐন্দ্রিলা জ্ঞানহীন! এদিন রাত আটটা নাগাদ ফের নড়ে ওঠার আভাস দেন ঐন্দ্রিলা। জ্ঞান না থাকলেও অভিনেত্রী হাত নাড়তে থাকেন। সাড়া দিতে থাকেন ফের। কিন্তু পরিস্থিতি প্রায় একই।

এদিন এই পরিস্থিতিতে অবাক হন চিকিৎসকরাও।

২১ নভেম্ভর অভিনেত্রীকে ফের যন্ত্রের সাপোর্ট থেকে ফের বের করা হতে পারে।

অভিনেত্রী অসুস্থ। আর সেই পরিস্থিতে দাঁড়িয়েই তাঁকে ঘিরে আবেগ, জাঁকজমক আর গুজবের প্রাচীর তৈরি হয়েছে ফের। আর এখানেই উঠে এসেছে তীব্র আশঙ্কার কথাও। এবার কি হারতেই হবে! দু'বারের বিপুল জয় কি পিছিয়ে যাবে এবারও?

ঠিক এই পরিস্থিতির মধ্যেই উঠে এল লড়াকু ঐন্দ্রিলার খানিকটা হেরে যাওযার কথাও। আবার সেই হারতে হারতে জেতার সম্ভাবনাও।

যদিও অভিনেত্রীর শারীরিক অবস্থার সামগ্রিক পরিস্থিতি কী? এই বিষয়ে জল্পনা বাড়ছিল বারবার। ফের সমস্ত অসুস্থতার খবরের মধ্যেই এক চিলতে আশার কথা জিইয়ে রাখলেন অভিনেত্রী।

২০১৫ সাল। বহরমপুরের চিকিৎসক উত্তম শর্মার মেয়ের শরীরে বাসা বাঁধে মারণরোগ ক্যানসার। চলে চিকিৎসা। প্রায় দু'বছর পর ঐন্দ্রিলা ফেরেন অভিনয় জগতে। যা তিনি ছোটবেলা থেকেই চাইতেন। এরপর উচ্চমাধ্যমিক। ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও ভর্তি হন তিনি। তবে শরীর বাধ সাধে।

'ঝুমুর' ধারাবাহিকে অভিনয় দিয়ে ঐন্দ্রিলার পথ চলার সার্থক শুরু হয়। সেখানেই বন্ধু হন সব্যসাচী। এরপর একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করেন অভিনেত্রী।

কিন্তু সুখের দিনের মধ্যেই ফের ক্যানসার-আক্রান্ত হন তিনি। এবার চিকিৎসার সময় সঙ্গে সব্যসাচী। একের পর এক কেমো, ওষুধের সঙ্গে লড়াইয়ে আবার উঠে এলেন ঐন্দ্রিলা। ২০২০ থেকে তীব্র টানাপোড়েন আর লড়াইয়ের পর ২০২২-এ এসে ফের অসুস্থতা, এবার আর ক্যানসার নয়, মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত হলেন তিনি।

More Articles