দীপক চ্যাটার্জি মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই
Badami Haynar Kobole : ১৯৫০-এর দশকে এই 'বাজপাখি' সিরিজের উত্থান ছিল লক্ষ্যণীয়। সদ্য জন্মানো পশ্চিমবঙ্গের বুকে তখন দেশভাগের দগদগে ক্ষত, পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তুদের ঢল তখনও চলছে।
দেবালয় ভট্টাচার্য প্রণীত, আবীর চট্টোপাধ্যায়, পরাণ বন্দোপাধ্যায়, গৌতম হালদার, শ্রুতি দাস অভিনীত 'বাদামি হায়নার কবলে' মোটেই শ্রীস্বপনকুমারের দীপক চ্যাটার্জি সিরিজের কোনও আদি নির্মাণের হুবহু অকৃত্রিম সিনে-টুকলি নয়। বরং, এই সিনেমাকে দুই হাতে পিস্তল ও একহাতে টর্চ ধরা দুর্ধর্ষ নায়কের, তার শাগরেদ রতনলালের, তার চির-দুশমন ড্রাগন, বাজপাখি, কালনাগিনীদের এবং অতি অবশ্যই সেই শহরটার- যার আলোআঁধারি রাস্তায়, বর্ষার কাদাজলে দীপক চ্যাটার্জির পায়ের শব্দে বৃষ্টি নামে- এই সমস্ত পারিপাশ্বির্কেরই পুনর্নির্মাণ বলা যেতে পারে। যেকোনও প্রকৃষ্ট উত্তরাধুনিক শিল্পের মতোই, 'বাদামি হায়নার কবলে' সাম্প্রতিক জনরুচির উৎপাদন-কাঠামো ও টালিগঞ্জের সংস্কৃতি-কারখানাকে সংলাপে সংলাপে প্যারোডি ও কালো কৌতুকে মোড়া 'প্যাস্টিস'-এ রূপান্তরিত করেছে। এবং প্রয়োজনে পথের পাঁচালীর দৃশ্য থেকে ভারতীয় সিনেমার আদিকালে ফ্রেমবন্দি করা চুম্বনদৃশ্যকে সিনেমার আখ্যানকাঠামোর ভিতরে জাক্সটাপোজ করে দিতেও পরিচালক ভয় পাননি।
একথা স্মরণীয় যে, 'পাল্প ফিকশন' নামক ক্লাসিকটি যখন ট্যারান্টিনো প্রসব করেন তখন তিনি হাত পেতেছিলেন পুরনো ভিডিওস্টোরে পাওয়া ব্লাড মেলোড্রামা এবং পঞ্চাশ-ষাট দশকের এক্সপ্লয়েটেশন সিনেমার কাছে। সেসব 'এলিট' সিনেমা বিশ্বে দীর্ঘদিন অবধি অপাংক্তেয় ছিল। এমনকী সে ছবিতে পপুলার কল্পনায় জনপ্রিয় অথচ তত্ত্ববিশ্বে পাত্তা না পাওয়া কার্টুন 'ক্লাচ কার্গো'-কে অবধি শ্রদ্ধার্ঘ্য দেওয়া আছে, যেমন দেবালয় এখানে ধুঁয়াধার অ্যাকশনের মাঝে টেনে এনেছেন সুকুমার রায়ের 'হযবরল'-কে, একেবারে সশরীরে। দার্শনিক বাচালতার প্রতিভূ স্লাভয় জিজেক তার 'কান্টিয়ান ব্যাকগ্রাউন্ড অফ দ্য নয়ার সাবজেক্ট' প্রবন্ধে, নয়ারের নায়ক সম্পর্কে বলছেন, যদিও সেই নায়ককে দেখে মনে হবে সে সচল ও সক্রিয় কিন্তু সে নিজেও আসলে সেই ঘটনাপ্রবাহের নির্মোহ দর্শক, যে ঘটনাপ্রবাহ, যে আখ্যানকাঠামোর ভিতরে সে ফেঁসে গেছে, অসহায়, সহায় সম্বলহীন। ছবিতে এই সৃষ্টি ও স্রষ্টার দ্বন্দ্ব, স্বপনকুমার এবং দীপক চ্যাটার্জির মধ্যে দেখা দিয়েছে বারংবার। কখনও পেনের নিবে কালি ফুরিয়ে গেছে বলে থেমে গেছে দীপকের বাইক। কখনও ঘটনাপ্রবাহের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ক্ষিপ্ত স্বপনকুমার বলে ফেলেছেন, ব্যাপারটা দেশের অবস্থার মতোই হয়ে যাচ্ছে, পুরো হাতের বাইরে চলে গেছে। শেষ কোন মূলধারার বাংলা ছবিতে এইভাবে আখ্যান ও লেখকের টানাপোড়েন, লিখনবিশ্বের সবচেয়ে জটিল প্রশ্ন- 'কে লেখে?' ইত্যাদিকে প্রয়োগ করতে দেখেছি, মনে পড়ে না।
আরও পড়ুন- সেক্স জার্নাল, জ্যোতিষ থেকে গোয়েন্দা গল্প! বর্ণময় জীবন ছিল স্বপনকুমারের
বিশ শতকীয় বাংলা সাহিত্যের কুলুঙ্গিতে যদি 'গোয়েন্দা' নামক অতি-জনপ্রিয় ধারণাটির স্থানাঙ্ক নির্ণয়ের দায়িত্ব নিতেই হয়, তাহলে বলা চলে ভদ্রবিত্তের মস্তিষ্কে 'গোয়েন্দা' এমন একজন যে আইনের শাসনকে কখনও ভেঙে যেতে দেয় না, যে শহুরে জনতার রক্ষক, ক্ষয়ে যাওয়া সময়েও একরকমের নৈতিক মূল্যবোধ সে ধরে রেখেছে। যদিও বর্তমানের রাজনৈতিক ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার পরিসর ছেড়েও সে বেরিয়ে যেতে চায় না কখনই। এমনকী গোয়েন্দার এই সত্যান্বেষণ, কখনও কখনও ব্যক্তির সীমারেখা পেরিয়ে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অন্তর্গতও হয়ে যায়। নেশন-স্টেটের অভ্যন্তরে সংস্কার-বহিষ্কারের যে রাজনীতি, তার উপরে জনপ্রিয় ডিটেকটিভের শেষ দৃশ্যের নিদান চিরকাল প্রভাব বিস্তার করে এসেছে। দীপক চ্যাটার্জি জাতে বামুন প্রধান চরিত্র হলেও 'এলিট' বাঙালির ড্রয়িংরুমের ঠিকুজি-কুলুজিতে দীর্ঘদিন তার ঠাঁই হয়নি। এমনকী স্বপনকুমারের লেখাও খুব কমই 'সিরিয়াস' বিদ্যায়তনিক পাঠের সৌভাগ্য লাভ করেছে। একথা খুবই মনে রাখার, যে উগ্র জাতীয়তাবাদী সুনামির মুখে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে দীপক চ্যাটার্জির মতো জাতীয় পতাকা, ভূখণ্ডের মানচিত্র এবং সীমান্তকে 'দেশ'-এর প্রতিনিধিসূচক চিহ্ন হিসেবে বোঝা কল্পচরিত্রের পুনর্বার আগমন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারত। বিশেষত, 'চিন-সীমান্তে বাজপাখি'-র মতো বই যারা পড়েছেন তারা আরও ভালো জানবেন। যদিও বাংলা ভাষায় সিরিজ সাহিত্যের সূচনায় স্বপনকুমার ছিলেন না, ছিলেন শশধর দত্ত। গোটা তিরিশের দশক বাংলার আবালবৃদ্ধবনিতার হৃদয় শাসন করেছিল তার ধনীর ভাঁড়ার লুট করে গরিবের কুঁড়েঘরে পৌঁছে দেওয়া 'রবিনহুড' চরিত্র দস্যু মোহন।
স্বপনকুমার সেই অর্থে সত্যিই শেষ বাঙালি 'পাল্প ফিকশন' লেখক যার জ্যালজ্যালে মলাটের তোয়াক্কা কেউ করেনি, কেউ প্রশ্ন করেনি আখ্যানের যুক্তিপরম্পরা নিয়ে। যে বইগুলি ফুটপাতের বইদোকান থেকে বাসস্ট্যান্ড অথবা রেলস্টেশনের ঘুপচি স্টল থেকে কিনে গ্রোগাসে পড়েছে বঙ্গীয় জনতা-জনার্দন। একথা স্মরণীয় যে, ঘোর কংগ্রেসি কালখণ্ডে, স্বাধীনোত্তর ভারতে দীপক চ্যাটার্জি এমন একটি চরিত্র যে 'শখের ডিটেকটিভ' নয়, ছিল নবনির্বাচিত ভারত সরকার নিয়োজিত এক দেশহিতৈষী অগ্রগামী সেপাই। চিন-ভারত যুদ্ধের প্রভাবে বোঝাই যাচ্ছে, জনতার মস্তিষ্কে চেপে বসেছে দেশের সীমান্তে বহিঃশত্রু আক্রমণের ভীতি। এরকম সময়ে, দীপক চ্যাটার্জির যে নায়কসম উত্থান, তার বিপ্রতীপে যারা দাঁড়াবে সেই খলচরিত্রদের নাম তো 'ড্রাগন'-ই হবে। স্বপনকুমারের পাঠকরা জানেন, গড়পড়তা প্রতিটি গল্পই শুরু হয় দীপক ও রতনলালের খবরের কাগজ পড়ার দৃশ্য দিয়ে, যেখানে ছাপা হয়েছে কোনও আন্তর্জাতিক চক্রের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়তে চলেছে ভারতরাষ্ট্র। এরপরই শুরু হতো দেশপ্রেমিক দীপক চ্যাটার্জির নয়া অভিযান, শত্রুদমন প্রকল্প। যেখানে সেই আসলে ভারতরাষ্ট্রের প্রতিভূ, সেই রক্ষাকর্তা এই ভূখণ্ডের যা 'ভারত' নামে চিহ্নায়িত হয়েছে। দেশের শত্রুনিধনের এই প্রক্রিয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ শত্রুদের, যথা স্থানীয় চোর, ছ্যাঁচোড়, গুন্ডা-বদমাইশদের দীপক থুড়ি স্বপনকুমার দেখেছিলেন ডামাডোলের সন্তান হিসেবে। কলকাতার ভূতলনিবাসীদের প্রতি সহমর্মিতা দূর-অস্ত, আসলে তারা দীপকের কাছে দেশে আইন-ভঙ্গকারী কীটপতঙ্গ মাত্র। রেমন্ড চ্যান্ডলারের মতোই, স্বপনকুমারের নায়কও ভীষণ পুরুষ, ভীষণ মাচো। শুনশান গলিপথে তার ভয় নেই কোনও।
১৯৫০-এর দশকে এই 'বাজপাখি' সিরিজের উত্থান ছিল লক্ষ্যণীয়। সদ্য জন্মানো পশ্চিমবঙ্গের বুকে তখন দেশভাগের দগদগে ক্ষত, পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তুদের ঢল তখনও চলছে। চারিদিকে বেকারত্ব আর আইনশৃঙ্খলার জটিল পরিস্থিতির ভিতরে 'বাজপাখির পুনরাভিযান' গল্পে আমরা দেখি, পুলিশ অফিসারও বলছেন দীপক চ্যাটার্জিই এখন একমাত্র সহায়-সম্বল, একমাত্র পরিত্রাতা। 'মহাশূন্যে বাজপাখি' গল্পে বিজ্ঞানী বাজপেয়ীর বাগদত্তা শীলাকে যখন অপহরণ করে বাজপাখি, 'ভারতমাতা'র পরিত্রাতা হিসাবে নেমে আসে দীপক চ্যাটার্জি। সে রাষ্ট্রের দেহের মতোই অপার বলশালী, ধূমকেতুর গতিতে চালায় গাড়ি ও বন্দুক। স্বপনকুমারের 'ভারতবিখ্যাত' গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জি আসলে আজকের ভারতরাষ্ট্রের আদর্শ নাগরিক-নির্মাণ প্রকল্পের কারিগর এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট বাজিরাও সিংঘম অথবা চুলবুল পান্ডেদেরই পুরাতনী আর্কিটাইপ। 'বাজপাখি'র বাসস্থানের দিকেও নজরটান আবশ্যক! 'বাজপাখির পুনরাভিযান' গল্পে বউবাজারের চিনাপাড়ায় আমরা দেখেছি 'বাজপাখি'র আবাসস্থল। পরবর্তীতে জানা যাবে, বাজপাখি আসলে চিনা হোটেল মালিক চ্যাং-ফু এবং তার সহযোগীদের নাম হলো রুস্তমজি, হং-লি, শামসুল এবং মা-তান। স্বপনকুমারের গল্পের 'অপরাধী'দের হয় বস্তি অঞ্চলে নয়তো সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন ঘেটোতে ঠাঁই মিলেছে বারংবার, বিভিন্ন গল্পে। তাহলে এই যদি হয়, স্বপনকুমারের সাহিত্যবিশ্বের 'প্রতিক্রিয়াশীল' প্রেক্ষিত, তবে দেবালয় ভট্টাচার্যের ছবির আলাদা বিশেষত্ব কি থাকছে?
আরও পড়ুন- পাতায় পাতায় রোমাঞ্চ, রক্ত গরম গোয়েন্দাগিরি! কেন স্বপনকুমারকে ভুলে গেল বাঙালি?
এই ছবি বাঙালির দীর্ঘকালীন স্মৃতিভাণ্ডারে স্থান পাবে এই জন্যই কারণ দেবালয় কোনও 'ক্রাইম স্টোরি' বুনতে চাননি। বরং এই বুননপদ্ধতিকে, খুন, অ্যালিবাই ও ক্লাইম্যাক্সের ত্রিমুখী চর্বিতচর্বণের মাধ্যমে শেষমেশ রাষ্ট্রীয় আইন-কাঠামোর গুণকীর্তন গেয়ে যাওয়ার আখ্যানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, অস্বস্তিতে ফেলেছেন মধ্যবিত্ত বাঙালি দর্শকের দর্শনকে। এমন 'নিটোল' প্রথাবিরোধী প্রকল্প এক প্রখর মার্ক্সবাদী আর্নেস্ট ম্যান্ডেল একদা বুনেছিলেন তার 'ডিলাইটফুল মার্ডার: আ সোশ্যাল হিস্ট্রি অফ দ্য ক্রাইম স্টোরি' বইতে। মেন্ডেল, ধ্রুপদী ডিটেকটিভ উপন্যাসগুলি, মূলত এডগার অ্যালান পো এবং আর্থার কোনান ডোয়েলের লেখালেখিতে খুঁজে পেয়েছিলেন সাহিত্যে বুর্জোয়া যুক্তিবাদের প্রায়োগিক আদিকল্প। উচ্চবিত্ত সমাজ-কাঠামো থেকে আসা সত্যানুসন্ধানী নায়ক, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত এবং সংগঠিত ক্রাইমের বাড়বাড়ন্ত মিলিয়ে কোণঠাসা হতে থাকে। রেমন্ড চ্যান্ডলারের মতো লেখকদের হাত ধরে ডিটেকটিভ উপন্যাসের অন্দরে ঢুকে আসে সামাজিক অবক্ষয় এবং হিংসার প্রতিরূপ। গণমাধ্যমের বিকাশ ও বিবর্তনের মাধ্যমে নির্মিত 'পাবলিকে'র ধারণা জন্মাতে থাকে রাষ্ট্রের উপর হানাদারি আক্রমণ বিষয়ে এবং বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক নীতি প্রসঙ্গে জানাবোঝাও বাড়ে। গ্রাহাম গ্রিন, এরিক অ্যাম্বলারদের হাতে জন্মায় চার্মিং, টেকস্যাভি গুপ্তচরবৃত্তির আখ্যান। আসলে, ইতিহাসের তলদেশ থেকে অপরাধসাহিত্যের এই যাচাইপর্বে, মেন্ডেল ডিটেকটিভ গল্পকে সমান্তরাল সামাজিক ইতিহাস হিসাবে পাঠ করতে চাইলেন। সমকালের আয়নায় চিনে নিতে চাইলেন, আনখশির এক মার্ক্সবাদীর মতোই ব্যক্তিগত সম্পত্তির সামাজিক অধিকার ও সামাজিক অপরাধের আন্তঃসম্পর্ককে।
স্বপনকুমারের আখ্যানকাঠামোর মূলাধারে কিন্তু দেবালয় হাত লাগাননি। আবীর চট্টোপাধ্যায় তার চলনে, বলনে, সংলাপ-কৌশলে খুব সংযতভাবেই দীপক চ্যাটার্জি হয়ে উঠেছেন। নিজের ব্যোমকেশসুলভ ভঙ্গিতে অপরাধের ক্লু-সন্ধান ছেড়ে, সরাসরি চিনাপট্টির মস্তানকে ধাওয়া করেছেন। এ জিনিস অভিনেতা শারীরিকভাবে না ঘটাতে পারলে মগজাস্ত্রে মজে থাকা বাঙালি দর্শকদের প্রতি চিত্রনাট্যে থাকা জোরালো চিমটি মাঠে মারা যেত। দু'টি গান, রবীন্দ্রনাথের 'ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে' এবং মোহিনী চৌধুরীর 'মুক্তির মন্দির সোপানতলে'-কে যেভাবে ভেঙে আবার গড়া হয়েছে, তাতে সত্যিই 'কালচারাল' বাঙালিকে প্রণাম জানিয়ে দিয়েছেন পরিচালক-চিত্রনাট্যকার। বিশেষত, শেষ দৃশ্যে দীপক চ্যাটার্জির 'জাতীয়তাবাদী' অবিনির্মাণ যখন ঘটছে, অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের কায়দায় বইয়ের ভিতরে লুকিয়ে রাখা বন্দুক দিয়ে রাষ্ট্রের নয়, রাষ্ট্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত 'বাদামি হায়না'-কে গুলি করছে স্বপনকুমারের নায়ক, তখন আমরা বুঝি, স্বপনকুমারের ও দীপক চ্যাটার্জির এই প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজন রাজনৈতিক। কারণ, প্রকৃতই রাষ্ট্রের সঙ্গে লড়তে গেলে ওই বটতলার, ছোটলোকের ডিটেকটিভকেই লাগবে। ঠিক যে চোখে একদা সোভিয়েত বিপ্লবী লিও ট্রটস্কি দেখেছিলেন জ্যাক লন্ডনকে, তার মেট্রোপলিসের গোলকধাঁধায় ঘুরে মরা জনতার প্রতি বৈষম্য ও অনাচারের প্রতি ঘৃণা ছুঁড়ে দেওয়া ডিটেকটিভ আখ্যানগুলিকে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন একশো বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড হিসাবে, সেই চোখ দিয়েই স্বপনকুমারের এই সিনেপর্দার পুনর্লিখনকে পাঠ করতে হবে।