রাম মন্দিরে দ্রৌপদী মুর্মু নেই, কঙ্গনা রানাওয়াত আছেন! কেন?
Kangana Ranaut at Ram Mandir : কঙ্গনা নিজে দ্বারকা থেকে নির্বাচনে লড়ার ইঙ্গিত দিয়ে ফেলেন। দ্বারকায় কঙ্গনা বলেছিলেন, শ্রীকৃষ্ণ চাইলে তিনি নির্বাচনে লড়বেন।
তিনি পদ্মশ্রী। তিনি অভিনেত্রী, তিনি সম্ভাবনাময় জ্বালাময়ী নেত্রীও। পদ্মশ্রী সম্মানের পরে সেই তিনিই একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ১৯৪৭ সালে পাওয়া ভারতের স্বাধীনতা আসলে 'ভিক্ষা'। নরেন্দ্র মোদির অধীনে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে, দেশ সত্যিই স্বাধীন হয়েছিল ২০১৪ সালে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, এত এত মানুষের মৃত্যু, লড়াই সব কিনা অর্থহীন! মোদির স্তাবকতা করতে গেলে এতখানি মিথ্যাভাষণ করতে হয় বুঝি? কঙ্গনা রানাওয়াত এককালে ছিলেন অভিনেত্রী, এখন অভিনয়ের থেকেও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর গেরুয়া রঙ। যে কোনও মানুষ, যে কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করতেই পারেন, তাঁর জায়গা থেকে। কিন্তু কঙ্গনা তো 'যে কোনও মানুষ' নন। তাঁর বিজেপিকে এই উগ্র সমর্থন, মোদিকে এমন অন্ধের মতো ভক্তি কি শুধুই রাজনৈতিক সমর্থন? হঠাৎ এত আগ্রাসীই বা কেন হয়ে উঠলেন কঙ্গনা?
রাম মন্দিরে রাম লালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিনে হনুমান গারভি মন্দিরে ঝাঁট দিতে দেখা গিয়েছে সানগ্লাস সুসজ্জিতা কঙ্গনাকে। মন্দিরের উদ্বোধনে আমন্ত্রিত ছিলেন বহু তারকাই। আয়ুষ্মান খুরানা থেকে শুরু করে ভিকি-ক্যাট, রণবীর-আলিয়া, সকলকেই দেখা গেছে। কিন্তু কঙ্গনা এদের মধ্যে থেকেও আলাদা। তিনি মন্দির সাফাই করছেন। তিনি গলা ফাটিয়ে জয় শ্রী রাম বলছেন। বাকিরা আমন্ত্রিত, তিনি যেন নিজেই আপ্যায়নের দায়িত্বে। কেন রাম মন্দিরের অনুষ্ঠানে নিজেকে এত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছেন কঙ্গনা? দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুরই দেখা নেই অনুষ্ঠানে! তাঁকে আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হয়েছিল ঠিকই কিন্তু আসতে বারণ করা হয়েছিল কিনা ইঙ্গিত মেলে না। শুধু দেখা যায়, দেশের রাষ্ট্রপতি অনুপস্থিত।
আরও পড়ুন- এক তপস্বীর কৃচ্ছসাধন কাহিনি
#WATCH | Ayodhya: Actress Kangana Ranaut says "Ayodhya has been decorated like a bride. Bhajans and Yagya are being organised at several places. It feels like we have reached 'Dev Lok'...We cannot say anything about those who do not want to come...It feels really good to be in… pic.twitter.com/3CgfCw3owJ
— ANI (@ANI) January 21, 2024
কঙ্গনা যে অভিনয়ে পটু তা অস্বীকার করে লাভ নেই। ভারতে নারীকেন্দ্রিক মূলধারার সিনেমায় একটি বড়সড় বাঁক বদল ছিল 'কুইন' সিনেমাটি। কঙ্গনাকে কুইনের পর থেকে বহু মানুষই পছন্দ করতে শুরু করেন। অভিনয়ের জন্য চারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। অভিনয় থেকে রাজনীতিতে আসা অনেকের কাছেই কেরিয়ার বদলানোর মতোই। কিন্তু কঙ্গনা যে সময় বিজেপিকে আপন করে নিচ্ছেন তখন বলিউডে তিনি কিঞ্চিৎ সঙ্কটে এবং ব্যক্তিগত জীবনেও পায়ের তলার মাটি হারানোর মুখে।
হিমাচল প্রদেশের বাসিন্দা কঙ্গনা ষোল বছর বয়সে দিল্লিতে চলে আসেন, মডেলিং শুরু করেন। অভিনয় নিয়েই এগোবেন ঠিক করে তিনি থিয়েটারে যোগ দেন। থিয়েটার পরিচালক অরবিন্দ গৌরের কাছে প্রশিক্ষণ নেন। থিয়েটারে ভালো সাড়া পাওয়ার পরেই বলিউডে কেরিয়ার গড়তে মুম্বইতে আসেন এবং চার মাসের অভিনয় কোর্স করেন।
২০০৪ সালে তিনি অনুরাগ বসু পরিচালিত এবং মহেশ ভাট প্রযোজিত রোমান্টিক থ্রিলার গ্যাংস্টারে প্রধান ভূমিকার জন্য অডিশন দেন। সিনেমাটি ব্যাপক সফলও হয়। ২০০৬ থেকে ২০০৯ এর মধ্যে কঙ্গনা অনেকগুলি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যার মধ্যেই ছিল ফ্যাশন। ফ্যাশনে প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকেও ছাপিয়ে অভিনয় করেন কঙ্গনা। এই অভিনয়ের জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। কুইন সিনেমায় অভিনয়ের জন্যও ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তারপর থেকে তেমন বিখ্যাত হয়নি কোনও সিনেমাই। বিশাল ভরদ্বাজের রেঙ্গুন হোক বা হানসাল মেহতার সিমরান, বাণিজ্যিক সাফল্য আসেনি। কিন্তু ২০১৯ এবং ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মণিকর্ণিকা: দ্য কুইন অফ ঝাঁসি এবং পাঙ্গার জন্য চতুর্থবার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি।
#WATCH | Uttar Pradesh: Actress Kangana Ranaut participates in cleanliness drive at Hanuman Garhi Temple in Ayodhya.
— ANI (@ANI) January 21, 2024
She is in Ayodhya to attend the Pran Pratishtha ceremony tomorrow. pic.twitter.com/LpElT3ROdf
২০২০ সালে বলিউডের একজন কাস্টিং ডিরেক্টর কঙ্গনার বিরুদ্ধে বলিউডের বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্য, স্বজনপ্রীতি, মাদকাসক্তি, সাম্প্রদায়িক পক্ষপাত, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শিল্পীদের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা, ধর্মের অবমাননার দাবি সহ বলিউডকে নানাভাবে হেয় করার অভিযোগে একটি আবেদন দায়ের করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়া এবং জনসমক্ষে নানা বিবৃতির মাধ্যমে ভারতীয় বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে টুইট করার অভিযোগে কয়েকজন আইনজীবীও এফআইআর দায়ের করেন। ২০২১ সালের মে মাসে বারবার নিয়মের লঙ্ঘনের জন্য, ঘৃণা ছড়ানোর জন্য টুইটার কঙ্গনার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করে। মুম্বইতে কঙ্গনার অফিস আংশিকভাবে ভেঙে ফেলেছিল বিএমসি। শিবসেনা-নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে নেমেছিলেন কঙ্গনা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কঙ্গনা এবং হৃত্বিকের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। হৃত্বিকের মতো তারকার সঙ্গে এই সরাসরি সংঘাতের ফলে বলিউডে খানিক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিলেন কঙ্গনা। এই সময়েই বিজেপির প্রতি আরও নিবিড় হয়ে পড়েন তিনি। প্রতিশোধস্পৃহা?
आज भारत की महामहिम राष्ट्रपति आदरणीया श्रीमती द्रौपदी मुर्मू जी को 22 जनवरी को श्री राम मंदिर की प्राण प्रतिष्ठा का निमंत्रण सौंपा। उन्होंने इस पर अत्यंत हर्ष व्यक्त किया तथा कहा कि अयोध्या आने व दर्शन करने का शीघ्र समय तय करेंगी।
— विनोद बंसल Vinod Bansal (@vinod_bansal) January 12, 2024
इस अवसर पर राष्ट्रीय स्वयंसेवक संघ के अखिल… pic.twitter.com/ceO6Gwuvbc
এই কঙ্গনা রানাওয়াতের পরিবার কিন্তু শুরুতে ছিলেন কংগ্রেস সমর্থক। নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে কঙ্গনা বারবারই নিজেকে গর্বিত হিন্দু হিসেবে ঘোষণা করেছেন। মুম্বই পুলিশ এবং সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর বিষয়ে মন্তব্য করে মহারাষ্ট্রের তৎকালীন শাসকদলের রোষে পড়েন কঙ্গনা। তিনি বলেছিলেন যে মুম্বইকে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মতো মনে হচ্ছে তাঁর কারণ তিনি মুম্বই পুলিশের সমালোচনা করেছিলেন। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২০ সালেই কঙ্গনাকে ওয়াই প্লাস নিরাপত্তা দিয়েছে।
শোনা যায়, অভিনেতা হৃত্বিক রোশনের সঙ্গে কিছুকাল প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন তিনি। হৃত্বিক তাঁকে অ্যাসপারজারে আক্রান্ত একজন অসংলগ্ন 'স্টকার' বলে অভিযুক্ত করেছিলেন। বলিউডে নানাদিক থেকে যখন তিনি কোণঠাসা তখনই বিজেপির হাত ধরেন কঙ্গনা। কঙ্গনা 'নেপোকিড' ছিলেন না। বলিউডে বহিরাহত কঙ্গনা উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্রের শাসকদলের সুনজরে ছিলেন না। শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত তাকে বলেছিলেন 'হারামখোর'। মারাঠারা মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতি, নিজেদেরকে ক্ষত্রিয় বা রাজপুত হিসাবে পরিচয় দেন তারা। কঙ্গনাও একজন ক্ষত্রিয়। কিন্তু হিমাচলি ক্ষত্রিয় আর মারাঠা ক্ষত্রিয়র দ্বন্দ্বতে পড়েছেন তিনি। রামমন্দিরের নানা কাজে তাঁর সরাসরি এভাবে জড়িয়ে থাকার নেপথ্যে এই সংঘাতগুলিকে মাথায় রাখতেই হবে।
#WATCH | Ayodhya, UP: On Ram Mandir Pran Pratishtha, actor Kangana Ranaut says, "People who visit Ayodhya Dham, earn a lot of virtue. It is our biggest 'Dham' like Vatican City has importance in the world, similarly, Ayodhya Dham is important for us. We are fortunate that Lord… pic.twitter.com/5E8yPunOe7
— ANI (@ANI) January 20, 2024
আরও পড়ুন- রাম ভগবান না কি ইতিহাসপুরুষ? যে প্রশ্ন গুলিয়ে দিচ্ছে রামমন্দির
তাহলে কি এবার সরাসরি নির্বাচনে? এর আগে শোনা গিয়েছিল কঙ্গনা মান্ডি আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে লড়বেন। তবে কঙ্গনা নিজে দ্বারকা থেকে নির্বাচনে লড়ার ইঙ্গিত দিয়ে ফেলেন। দ্বারকায় কঙ্গনা বলেছিলেন, শ্রীকৃষ্ণ চাইলে তিনি নির্বাচনে লড়বেন। মান্ডি লোকসভা আসন থেকে কঙ্গনা রানাওয়াত নির্বাচনে লড়লে বিজেপিতে অনেক সমীকরণ তৈরি হবে।
সম্প্রতি মান্ডি থেকে জয়রাম ঠাকুরকে ভোটের মাঠে নামানো নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। বিজেপিতে জয়রাম ঠাকুরের চেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী কমই থাকলেও তিনি এবার নির্বাচনে লড়তে খুব একটা আগ্রহী নন। তিনি রাজ্য রাজনীতিতেই থাকতে চান, তবে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ এলে তাঁর আর কোনও উপায় থাকবে না। বর্তমানে বিজেপি বিধায়করা মান্ডিতে দশটি বিধানসভা আসনের মধ্যে নয়টিতেই জয়ী। প্রতিভা সিং বর্তমানে মান্ডি লোকসভা আসনের সাংসদ, তবে এখানে কংগ্রেসের চেয়ে বিজেপির প্রভাবই বেশি।
কঙ্গনার নির্বাচনে নামার ইস্যুটিকে বিজেপি কর্মীরা কেমনভাবে নেবেন? চলচ্চিত্র তারকারা গ্ল্যামারের জোরে নির্বাচনে জয়ী হতেই পারেন কিন্তু জনগণের যোগাযোগের বিষয়ে তারা কাজ করতে পারেন না। বিজেপি কি এই 'রিস্ক' নেবে?