Aditya-L1: আর কিছুক্ষণের অপেক্ষা! সূর্য ছুঁয়ে ফের ইতিহাস গড়ার পথে ISRO

ISRO Aditya L1: ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, শনিবার মোটামুটি বিকেল চারটে নাগাদ তার গন্তব্য কক্ষপথে পৌঁছবে আদিত্য এল ওয়ান।

২০২৩ যদি চাঁদের হয়, তাহলে ২০২৪ সালটা হতে চলেছে সূর্যের। কারণ গত বছরের শেষের ইসরোর তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, নতুন বছরের শুরুতেই সূর্যের এক্কেবারে কাছাকাছি পৌঁছতে চলেছে ইসরোর সৌরযান আদিত্য এল ওয়ান। আর সেই ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টের থেকে মাত্র কয়েক মুহূর্ত দূরে রয়েছে আদিত্য এল ওয়ান।

৬ জানুয়ারি, শনিবার সূর্যের ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টে পা দেওয়ার কথা আদিত্য এলওয়ানের। সূর্য আর পৃথিবীর মাঝখানে যে অংশটিতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে নিরপেক্ষ, সেই ল্য়াগারেঞ্জ পয়েন্টেই শনিবার গিয়ে পাঁচ বছরের জন্য ঘর বাঁধতে চলেছে আদিত্য এল ওয়ান। ঠিকই পড়ছেন। পাক্কা পাঁচ বছর ধরে ওটাই ঘরবাড়ি হতে চলেছে সৌরযানটির।

ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, শনিবার মোটামুটি বিকেল চারটে নাগাদ তার গন্তব্য কক্ষপথে পৌঁছবে আদিত্য এল ওয়ান। গত ২ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করেছিল সৌরযানটি। প্রথম পনেরো-ষোলো দিন পৃথিবীর চারধারে ঘুরপাক খাওয়ার পর গতি বাড়িয়ে আসল যাত্রা শুরু হয় তার। মোটামুটি গন্তব্যের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছতে ১২৬ দিন মতো সময় লেগেছে তার। এই ক'দিনে প্রায় ৩.৭ মিলিয়ন কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে। আর এই রাস্তা কিন্তু মোটেও সরলরৈখিক ছিল না। বরং বৃত্তাকার পথ অতিক্রম করে করে গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছতে হয়েছে তাকে। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সৌরযানটির স্বাস্থ্য একেবারে ঠিক রয়েছে। ইতিমধ্যেই নানা চিত্র, খবরাখবর বিজ্ঞানীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে সে।

আরও পড়ুন: ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টের একেবারে কাছে আদিত্য এল-১, নতুন বছরেই কি তবে সূর্যজয়?

আদিত্য এলওয়ানের গন্তব্যটি ছিস মোটামুটি পৃথিবী থেকে দেড় মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে। কিন্তু বিভিন্ন বৃত্তাকার পথ অতিক্রম করা জন্য যাত্রাপথের দূরত্ব বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। আপাতত যে ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টটিকে নিজের ঘরবাড়ি বানাতে চলেছে আদিত্য় এলওয়ান, সেদি আদতে একটি হলো আকারের কক্ষপথ। সেখানে চুপচাপ বসেই ১,৪৭৫ কিলোগ্রাম ওজনের কৃত্রিম উপগ্রহটি সূর্যের উপর কড়া নজর রাখবে। আমাদের সৌরজগতের প্রধান নক্ষত্রকে সূর্যকে আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করবে আদিত্য এল ওয়ান। আর সেই সমস্ত তথ্য পাঠাতে থাকবে ইসরোর বিজ্ঞানীদের কাছে।

ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টে পৌঁছনোর যে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া, তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ইসরো। আর এই ধাপটিই সবচেয়ে কঠিন। ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ জানিয়েছেন, আদিত্য-এল ওয়ানের যাত্রার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সূক্ষ্ম ধাপ অপেক্ষা করে আছে ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টে। সেখানে পৌঁছলে ইসরোকে ‘ফায়ার’ করতে হবে। অর্থাৎ সৌরযানটিকে ধাক্কা দিতে হবে। তবে তা অত্যন্ত সাবধানে এবং মেপে মেপে। পরিমাপে এক চুল গোলমাল হলেই বিজ্ঞানীদের নিয়ন্ত্রণ ছাড়িয়ে বেরিয়ে যেতে পারে আদিত্য-এল ওয়ান। সে ক্ষেত্রে সূর্যের দিকে আরও এগিয়ে যাবে সৌরযানটি। একসময় তা ধ্বংস হয়ে যাবে। ইসরোর আর কিছুই করার থাকবে না। শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ ওই শেষ মুহূর্তের চূড়ান্ত ‘ফায়ার’ করবে ইসরো। সেটাই এখন তাদের ‘অগ্নিপরীক্ষা’। মাপ অনুযায়ী সঠিক ধাক্কা দিয়ে সৌরযানটিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে বসিয়ে দেবেন বিজ্ঞানীরা। তার পর শুরু হবে তার পেলোডগুলির কাজ।

ভারতের প্রথম সৌরঅভিযান এটি। গত বছরই প্রথম বার চাঁদে পা রেখেছে ভারত। চাঁদে পা রাখা দেশ হিসেবে চতুর্থ স্থানে থাকলেও, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখা দেশ হিসেবে ভারতই প্রথম। সেই সাফল্যের পরে একটুও না জিরিয়ে একের পর এক নতুন অভিযানের কথা ঘোষণা করে দিয়েছিল ইসরো। সেপ্টেম্বর মাসেই সূর্যের উদ্দেশে রওনা হয় আদিত্য এল ওয়ান। এর পরে লাইনে রয়েছে ইসরোর গগনযান মিশন। যেখানে প্রথম বার মহাকাশে মানুষ পাঠাতে চলেছে ইসরো।

Aditya L1, ISRO’s mission to study Sun, set to be placed in final orbit on 6th January

আদিত্য এলওয়ানের এই পাঁচ বছরের সূর্যমিশন, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা হতে চলেছে মনে করা হচ্ছে। কোনও রকম বাধাবিঘ্নহীন ভাবে সূর্যের সমস্ত খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করতে চলেছে আদিত্য এলওয়ান, তা-ও আবার পাঁচ বছর ধরে। এমনকী সৌরঝড়ের মতো ঘটনা সম্পর্কে আগেভাগেই দেশ জানতে পারবে বলে আশাবাদী ইসরো। আর এ সবই হবে আদিত্য এল ওয়ানের সৌজন্যে। তেমনটাই জানিয়েছেন ইউ আর রাও স্যাটেলাইট সেন্টার বেঙ্গালুরুতে আদিত্য এল ওয়ান মিশনের প্রজেক্ট ডিরেক্টর নিগর শাজি।

সৌরঝড় আসলে সূর্যের উপরে এক একটি বড় আকারের চৌম্বকীয় বিস্ফোরণ, যা সমগ্র সৌরজগতের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। ইসরো জানিয়েছে, যেহেতু আদিত্য এলওয়ান বিরতিহীন ভাবে নজর রাখবে সূর্যের দিকে, তার ফলে পৃথিবীতে আসন্ন ইলেক্ট্রো-চৌম্বকীয় প্রভাবগুলি সম্পর্কেও আগেভাগেই আমাদের সতর্ক করতে পারবে সেটি। যার ফলে আগে থেকেই আমাদের অন্যান্য় উপগ্রহ ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক ও যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলিকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।

Aditya L1, ISRO’s mission to study Sun, set to be placed in final orbit on 6th January

ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ জানিয়েছেন, ভারতের মহাকাশে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে ইসরোর। যার মধ্যে রয়েছে ৫০টিরও বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ। যারা সৌরঝড়ের মতো সমস্যায় নষ্ট হয়ে যায় বহু সময়েই। আদিত্য এলওয়ানের সৌজন্যে সেই ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো যাবে বলে আশা করছেন ইসরোপ্রধান। কারণ আগে থেকে জানা থাকলে প্রয়োজন মতো সেগুলিকে নিরাপদ মোডে পাঠিয়ে ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো যাবে।

আরও পড়ুন: আজ সূর্যের নাকের ডগায় পৃথিবী! কী ঘটতে চলেছে জানেন?

আপাতত ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টে পৌঁছনোর যে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া, তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ইসরো। সকলেই এখন রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছেন, কতক্ষণে নিজের গন্তব্যে পৌঁছে পাঁচ বছরের জন্য পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে নিতে পারে আদিত্য এলওয়ান। আর সেই সাফল্যের জন্যই এখন প্রার্থনা করছে গোটা দেশ। আর তার পরেই আরও একবার ইতিহাস রচনা করবে ইসরো।

More Articles