শেষের শুরু তবে? মানুষের তোলা নয়, AI-এর ছবি জিতল সেরার সম্মান!

AI Photography: এই প্রথম কোনও AI চিত্র মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় জিতেছে।

ধরা যাক মানুষের ছুটি, ধরা যাক মানুষের সৃজনশীল চোখে দীক্ষিত হয়ে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এবার মানুষের ছুটি। মানুষের কাজ করে দেওয়ার কৃতিত্ব পাচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, এআইকেই তুলে দেওয়া হচ্ছে অস্কার, এআই পাচ্ছে বুকার, দু'চারটে নোবেলও জুটে যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাদের! বিষয়টি হাসির নয় মোটেও। শিল্পনৈপুণ্যের দিক থেকে এই পুরস্কার এআই পেতেই পারে, পেয়েওছে! ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে বিশ্বের একটি বিখ্যাত পুরস্কার জিতেছিলেন একজন ফটোগ্রাফার। পরে তিনি ওই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি সত্যিটা জানিয়ে বলেন, ওই ছবি তিনি তোলেননি মোটেও। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে পুরস্কার বিজয়ী ওই ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। জার্মান শিল্পী বরিস এলডাগসেন জানিয়েছেন, সৃজনশীল বিভাগে সোনি ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি পুরস্কারটি গ্রহণ করছেন না তিনি। কারণ ছবিটি তাঁর তোলাই নয়।

সাদাকালোতে ভিন্ন প্রজন্মের দুই নারীর ছবিটি সোনি ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফির সম্মান জেতে। কিন্তু এই ছবিটি কোনও মানুষের তোলা নয়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এটি ধরতেও পারেননি বিচারকরা। আলোকচিত্রী এলডাগসেন মেইঞ্জের আর্ট আকাডেমিতে ফটোগ্রাফি এবং ভিজ্যুয়াল আর্ট, প্রাগের আকাডেমি অব ফাইন আর্টসে কনসেপচুয়াল আর্ট এবং ইন্টারমিডিয়া, হায়দরাবাদের সরোজিনী নাইডু স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড কমিউনিকেশনে ফাইন আর্ট বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। নিজের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতিতে তিনি জানান, AI-এর ছবিগুলিও আস্তে আস্তে প্রতিযোগিতায় নামবে কিনা তা জানতেই এমন আবেদন করেছিলেন তিনি।

"আমাদের, ছবির বিশ্বে খোলামেলা আলোচনা হওয়া দরকার। কোনটাকে আমরা ফটোগ্রাফি হিসেবে বিবেচনা করব, কোনটাকে করব না সে সম্পর্কে একটি আলোচনা দরকার। ফটোগ্রাফির ছাতার তলায় কি AI-এর ছবিগুলিও প্রবেশের যোগ্য- নাকি একদমই না," প্রশ্ন তুলেছেন এলডাগসেন।

আরও পড়ুন- ভয়াবহ! সারা দিন-রাত দীর্ঘ কথাবার্তা, ব্যক্তিকে যেভাবে আত্মহত্যায় বাধ্য করল AI চ্যাটবট!

এলডাগসেন বলছেন, এটি একটি 'ঐতিহাসিক মুহূর্ত'। কারণ এই প্রথম কোনও AI চিত্র মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় জিতেছে। দর্শক তো দূর অস্ত, বিচারকরাও বোঝেননি ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি। “এআই ইমেজ এবং ফটোগ্রাফির একে অপরের সঙ্গে এই ধরনের পুরস্কার প্রতিযোগিতাতে আসা উচিত নয়। তারা ভিন্ন সত্তা। AI আর যাই হোক ফটোগ্রাফি নয়। তাই আমি পুরস্কার গ্রহণ করব না,” জানিয়েছেন এলডাগসেন।

আরও পড়ুন- সৃজনশীল মানুষ আর বুদ্ধিমান মেশিনের লড়াই! ঠিক কতটা এগিয়ে ChatGPT?

চ্যাটবট, চালকবিহীন গাড়ি, গান লেখার সফটওয়্যার এবং ফার্মাসিউটিক্যালস উন্নয়নে এআই-এর ব্যবহারে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন আলোচনার জায়গা খুলে দিয়েছে। গুগলের প্রধান কার্যনির্বাহী সুন্দর পিচাইও বলেছেন, এআই বিষয়ে তিনি এতটাই উদ্বিগ্ন যে রাতের পর রাতে জেগে থেকে ভেবেছেন। এই প্রযুক্তি ভুলভাবে ব্যবহৃত হলে তা কতটা মারাত্মক হতে পারে তাও জানিয়েছেন পিচাই।

ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি অর্গানাইজেশনের একজন মুখপাত্র অবশ্য জানিয়েছেন, এলডাগসেন বিজয়ী ঘোষণা হওয়ার আগেই জানিয়েছিলেন যে ছবিটির সহ সৃষ্টিকর্তা হচ্ছে এআই। এলডাগসেন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, দুই দশকের ফটোগ্রাফি নিয়ে চর্চার পরে, তাঁর শৈল্পিক লক্ষ্য AI-এর সৃজনশীল সম্ভাবনার অন্বেষণে তাঁকে আগ্রহী করে তোলে আরও বেশি।

ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি অর্গানাইজেশন জানিয়েছে এই প্রতিযোগিতার সৃজনশীল বিভাগ সায়ানোটাইপ এবং রেয়োগ্রাফ থেকে আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতি- ছবি তৈরির বিভিন্ন পরীক্ষামূলক পদ্ধতিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। মানুষ ফটোগ্রাফার এবং মানব শিল্পীদের শ্রেষ্ঠত্ব এবং দক্ষতাকেই মান্যতা দেবে এই সংগঠন তবে এআইদের বিচক্ষণতাকেও এড়িয়ে যাবে না।

More Articles