বুলেট ট্রেনের চেয়েও দ্রুত ছুটবে নতুন বন্দে ভারত, চোখ ধাঁধিয়ে দেবে এই ট্রেনের অন্দর

Vande Bharat Express: নতুন বন্দে ভারতে এক্সপ্রেস ট্রেনে আপনারা পেয়ে যাবেন এমন ১৫টি অত্যাধুনিক ফিচার, যা এখনও পর্যন্ত ভারতের কোনও ট্রেনেই উপলব্ধ নেই।

ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের আগে ভারতীয় রেলওয়ের তরফ থেকে উন্মোচন করা হয়েছিল ভারতের তৃতীয় বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন। ভারতে প্রায় তিন বছর আগে এই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর নরেন্দ্র মোদি মুম্বই থেকে গান্ধিনগর বন্দেভারত এক্সপ্রেসের যাত্রার সূচনা করলেন। প্রথম যাত্রায় এই ট্রেনটি চালানো হয়েছিল দিল্লি থেকে বারাণসী পর্যন্ত। নতুন দিল্লি-বারাণসী, নয়াদিল্লি - শ্রী মাতা বৈষ্ণো দেবী কাটরার পর দেশের তৃতীয় বন্দে ভারত ট্রেন এটি। নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটি এই প্রথম ট্রেনটির একটি আপগ্রেডেড সংস্করণ বলা চলে। 

চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরিতেই নির্মাণ হয়েছে এই ট্রেনের। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের চতুর্থ ট্রেনটিও চেন্নাইয়ের এই বিশেষ ফ্যাক্টরি থেকেই তৈরি করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এই মাসের শেষের দিকেই ভারতের চতুর্থ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের নির্মাণকাজ শেষ করবে চেন্নাইয়ের এই বিশেষ ফ্যাক্টরি। সূত্রের খবর, এই নতুন বন্দে ভারতে এক্সপ্রেস ট্রেনে আপনারা পেয়ে যাবেন এমন ১৫টি অত্যাধুনিক ফিচার, যা এখনও পর্যন্ত ভারতের কোনও ট্রেনেই উপলব্ধ নেই। এমনকী, বন্দে ভারতের প্রথম দু'টি ট্রেনের থেকেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নত হতে চলেছে এই নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস।

১. এই নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকবে অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট স্টাইলের বসার আসন, যা আপনাকে অনেকটা আরামকেদারা‌র মতো অনুভূতি দেবে। সিনেমা হলের একেবারে সেরা জায়গাটায় যেরকম সোফা আকৃতির রেক্লাইনার সিট থাকে, অনেকটা সেরকমই সিট থাকবে নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে। ভারতের প্রথম দু'টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের থেকেও ভালো বসার জায়গা রয়েছে এই নতুন ট্রেনে।

আরও পড়ুন: ট্রেন মানেই দেরি, কেন লেট লতিফের শিরোপা পেল ভারতীয় রেল

২. এতদিন পর্যন্ত ভারতে যে দু'টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন চলে, সেগুলিতে ১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগ অর্জন করতে সময় লাগে ১৪৫ সেকেন্ড। তবে নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন এই ১৬০ কিলোমিটারের গতি অর্জন করতে পারবে মাত্র ১৪০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে।

৩. ট্রেনটি কোনওরকম দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে, যাতে যাত্রীদের তাড়াতাড়ি বাইরে নিয়ে আসা যায়, তার জন্য প্রত্যেকটি কোচে থাকবে ৪টি করে এমারজেন্সি উইন্ডো।

৪. নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকছে নতুন কিছু সুরক্ষাব্যবস্থা। এর মধ্যে সবথেকে আধুনিক ব্যবস্থাটি হলো, ভারত সরকার দ্বারা জারি করা কবচ। এই সুরক্ষাব্যবস্থাটি তখনই কাজ করবে, যখন একই লাইনের সামনের দিক থেকে কোনও‌ একটি ট্রেন চলে আসবে। সেরকম যদি কোনও সময় হয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই সিস্টেমটি চালু হয়ে যাবে এবং দু'টি ট্রেনকেই সেই জায়গায় থামিয়ে দেবে। এর ফলে দু'টি ট্রেনের সংঘর্ষ হবে না এবং যাত্রীদের প্রাণহানি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকবে না।

৫. অতিরিক্ত বৃষ্টি হলেও এবং বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলেও এই ট্রেনের ভেতর জল ঢোকার কোনও সম্ভাবনা নেই। এই ট্রেনে থাকবে অত্যাধুনিক আন্ডার-স্লাং ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট। এই ইকুইপমেন্ট থাকার কারণে, প্রায় ৬৫০ মিটার পর্যন্ত জলেও এই ট্রেন ভালোভাবে চলতে পারবে। এতদিন পর্যন্ত যে সমস্ত বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চলত ভারতে, সেগুলিতে ৪০০ মিটার পর্যন্ত জল সহ‍্য করার ক্ষমতা ছিল। তবে নতুন ট্রেনে জলসহনক্ষমতা আরও বাড়িয়েছে ভারতীয় রেল।

৬. নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে রয়েছে আরও ভালো ভেন্টিলেশনের সুবিধে এবং উন্নতমানের এয়ারকন্ডিশনিং কন্ট্রোল সিস্টেম। পাশাপাশি থাকছে উন্নতমানের হাই এফিসিয়েন্সি কম্প্রেসার, যেখানে সংযুক্ত থাকবে অতি-বেগুনি রশ্মি নিঃসরণকারী কয়েকটি ল্যাম্প। এই ল্যাম্পের সুবাদে ট্রেনের বাতাস মুক্ত করা সম্ভব হবে।

৭. আগের দু'টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে ২৪ ইঞ্চির স্ক্রিন ব্যবহার করা হতো প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন এবং ইনফোটেইন সিস্টেম চালানোর জন্য। তবে নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে এই স্ক্রিন হবে ৩২ ইঞ্চির।

৮. EMU ট্রেনের মতোই এই নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের মাঝেও একটি নন ড্রাইভিং ট্রেইলার কোচ থাকবে।

৯. কোচ নিয়ন্ত্রণের মান অনেকটাই উন্নত থাকবে এই নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে। জিপিআরএস এবং জিএসএম ম্যানেজমেন্ট, এয়ারকন্ডিশনিং ম্যানেজমেন্ট, ফিডব্যাক কন্ট্রোল সেন্টার, কমিউনিকেশন সেন্টার, মেনটেনেন্স স্টাফ, সমস্তকিছুর ক্ষেত্রেই উন্নতি সাধন করা হবে। পাশাপাশি, উন্নত কোচ কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করা হবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে।

১০. ট্রেন কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্টের দিক থেকে দেখতে গেলে, এই নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে লেভেল-টু সেফটি ইন্টিগ্রেশন সার্টিফিকেট রয়েছে।

১১. সাধারণত এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচের বাইরে দু'টি করে রিয়ার ভিউ ক্যামেরা থাকে। তবে নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে এই রিয়ার ভিউ ক্যামেরা থাকবে চারটি।

আরও পড়ুন- রাজধানীর থেকেও উন্নত নতুন এই ট্রেন, জেনে নিন কী কী পরিষেবা পাওয়া যাবে 

১২. ফায়ার ডিটেকশন এবং স্মোক ডিটেকশন সিস্টেম ব্যবহার করা হবে প্রত্যেকটি কোচে। মূলত, এরোসলনির্ভর একটি ফায়ার সাপ্রেশন সিস্টেম তৈরি করা হবে, যা ট্রেনের সুরক্ষার সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

১৩. নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে দু'টি সিগন্যাল এক্সচেঞ্জ লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে একটি আলাদা ভেন্টিলেশন ডাক্ট।

১৪. এর আগে পর্যন্ত ভারতীয় ট্রেনে বৈদ্যুতিন সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হতো ক্লাস ২ এবং ৩ সার্জ অ্যারেস্টর। তবে এই নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে ব্যবহার করা হবে ক্লাস ৩ এবং ৪ সার্জ অ্যারেস্টর। পাশাপাশি, ড্রাইভার এবং গার্ডের কথোপকথন এবার রেকর্ড করবে ভারতীয় রেলওয়ে।

১৫. এই নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের প্রত্যেকটি কোচের চারটি করে আপদকালীন আলো ব্যবহার করা হবে এবং যদি কোনওভাবে এই ট্রেনের ইলেকট্রিসিটি কানেকশন বন্ধ হয়ে যায়, তখন এই চারটি আলো কাজ করবে। এতদিন পর্যন্ত ট্রেনে ইলেকট্রিসিটি কানেকশন বন্ধ হয়ে গেলে কোনওরকম অতিরিক্ত আলোর ব্যবস্থা ছিল না। তবে নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা চালু করতে চলেছে ভারতীয় রেল।

২০২৩ সালের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতে ৭৫টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করার ঘোষণা করেছেন। গত বছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেওয়া বক্তৃতাতেই এই ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই ঘোষণার কিছুদিন পরেই ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ঘোষণা করেছিলেন, আর কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতে ৪০০টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করার পরিকল্পনা নিয়ে আসবে ভারত সরকার। তবে ভবিষ্যতে যে সমস্ত বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হবে, সেগুলিতে শুধুমাত্র চেয়ার কার না, থাকবে স্লিপার কোচও। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে প্রিমিয়াম রাজধানী এক্সপ্রেসের একটি আপগ্রেডেড ভার্সন হিসেবেই সামনে আসবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস।

 

More Articles