পৃথিবীর দিকে আসছে বিশাল গ্রহাণু! ধ্বংস হতে পারে মানবজাতি? যা জানাচ্ছে ISRO
Asteroid Earth Collision: বেশিরভাগ প্রজাতিই এর ফলে ধ্বংস হয়ে যায়। সম্ভবত এই ধরনের গ্রহাণুর প্রভাবেই ডাইনোসররা বিলুপ্ত হয়ে গেছিল।
সাল ১৯০৮। দিনটা ছিল ৩০ জুন। একটি গ্রহাণু থেকে এক বিশাল বায়ু বিস্ফোরণ ঘটে। প্রায় ২,২০০ বর্গকিলোমিটার ঘন জঙ্গল তাতে শেষ হয়ে যায়। সাইবেরিয়ার গভীরে তুঙ্গুস্কায় এই গ্রহাণুর বায়ু বিস্ফোরণে প্রায় ৮০ মিলিয়ন গাছ ধ্বংস হয়ে গেছিল। অ্যাপোফিস হচ্ছে পৃথিবীর কাছাকাছি একটি গ্রহাণু। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বিপজ্জনক গ্রহাণু এটিই। এই গ্রহাণুর ব্যাস ৩৭০ মিটার। ২০২৯ সালের ১৩ এপ্রিল এবং ফের ২০৩৬ সালে আমাদের গ্রহের দিকে ধেয়ে আসবে অ্যাপোফিস। ১০ কিমি বা তার চেয়ে বড় কোনও গ্রহাণুর প্রভাবে কিন্তু জনজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। বেশিরভাগ প্রজাতিই এর ফলে ধ্বংস হয়ে যায়। সম্ভবত এই ধরনের গ্রহাণুর প্রভাবেই ডাইনোসররা বিলুপ্ত হয়ে গেছিল। পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থাগুলি গ্রহাণু থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য গ্রহের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। এই কাজে জড়িয়ে আছে ISRO-ও। আর ইসরো জানাচ্ছে, অ্যাপোফিস পৃথিবীতে এসে পড়লে ফলাফল ভালো হবে না।
ইসরো প্রধান এস সোমনাথ বলছেন, "আমাদের আয়ুষ্কাল ৭০-৮০ বছর। আমরা আমাদের জীবদ্দশায় এমন বিপর্যয় দেখি না, তাই আমরা বিষয়টাকে গুরুত্ব দিই না, ভাবি এসব হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু বিশ্ব এবং মহাবিশ্বের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে এই ঘটনাগুলি ঘন ঘন হয়। গ্রহের দিকে গ্রহাণুর ধেয়ে আসা এবং এর ফলে বিপর্যয় সাধারণ ঘটনা। আমি একটি গ্রহাণুকে বৃহস্পতিকে আঘাত করতে দেখেছি। পৃথিবীতে এমন ঘটনা ঘটলে আমরা সবাই বিলুপ্ত হয়ে যাব।” সোমনাথ আরও জানান, গ্রহ আর গ্রহাণুর ধাক্কা বাস্তব সম্ভাবনা। আমাদের নিজেদের এর জন্য প্রস্তুত করতে হবেই। তবে পৃথিবীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটুক এমন আশঙ্কার কথাও ভাবতে চান না বিজ্ঞানীরা। মানবজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তবে। অথচ এই ঘটনা আটকানোও সম্ভব না তাই বিকল্প খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন- একটি নয়, সংখ্যায় অনেক! পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে বিশাল গ্রহাণু, শেষের সেদিন কি এসেই গেল?
সোমনাথ জানাচ্ছেন, "আমাদের কাছে একটি পদ্ধতি আছে যার মাধ্যমে আমরা গ্রহাণুকে বিচ্যুত করতে পারি। আমরা পৃথিবীর কাছাকাছি কোনও বস্তু এলে তা শনাক্ত করতে পারি এবং সেটিকে সরিয়ে নিতে পারি। তবে কখনও কখনও সেটাও অসম্ভব হয়ে যায়। সুতরাং, প্রযুক্তির বিকাশ দরকার, পূর্বাভাস করার ক্ষমতা, গ্রহাণুকে সরানোর জন্য আকাশে ভারী বস্তু পাঠানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি, পর্যবেক্ষণের উন্নতির জন্য আরও নিবিড় গবেষণা করা দরকার।"
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গ্রহাণু বোঝার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে বিজ্ঞানের। DART মিশন গ্রহাণু বিক্ষেপণের জন্য নির্দিষ্ট প্রযুক্তির সাম্প্রতিক সফল প্রদর্শনের ফলে এই ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী আগ্রহ বেড়েছে। গত ৩০ জুন ছিল বিশ্ব গ্রহাণু দিবস। ISRO এই উপলক্ষ্যে একটি কর্মশালারও আয়োজন করেছিল। সেখানে JAXA এবং ESA-এর মতো মহাকাশ সংস্থার নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞরা হায়াবুসা-২ গ্রহাণু মিশন, চলমান গ্রহ প্রতিরক্ষা এবং ESA-র গ্রহাণু পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম ও তার ভূমিকা নিয়ে প্রযুক্তিগত আলোচনা করেছেন। IAWN (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্টেরয়েড ওয়ার্নিং নেটওয়ার্ক) এবং SMPAG (স্পেস মিশন প্ল্যানিং অ্যাডভাইজরি গ্রুপ)-এর মতো সংস্থাগুলি গ্রহাণুর প্রভাবের সঙ্কট মোকাবিলায় কাজ করছে।
ইসরো টেলিমেট্রি, ট্র্যাকিং অ্যান্ড কমান্ড নেটওয়ার্কে (ISTRAC) সহযোগী পরিচালক অনিল কুমার জানিয়েছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে কোনও গ্রহাণু আঘাত হানবে কিনা এবং আমরা তা থেকে রক্ষা পেতে প্রস্তুত কিনা তা খুঁজে বের করার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।