ভ্যাকসিন-ভীতির ফায়দা তুলে শহর জুড়ে জালিয়াতি! পরের নিশানা আপনি নন তো?

Covid Vaccine Scam: একদিকে ভ্যাকসিন নিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে যখন উদ্বেগ চারদিকে, সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণা চক্র খুলে বসেছে একদল অসাধু ব্যক্তি। এসে গিয়েছে জালিয়াতির নয়া হাতিয়ার।

করোনার ওই দিনগুলিতে কোভিড ভ্য়াকসিন এসেছিল ত্রাতার মতো। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই জানা গেল, কোভিড ভ্য়াকসিনগুলি সম্পূর্ণ রূপে পরীক্ষিত ছিল না। অর্থাৎ সে সব ভ্যাকসিনের যে সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা এক এক করে সামনে আসছে, তা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না প্রতিষেধক প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। এখন একে একে সামনে আসছে একের পর এক কোভিড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা। সম্প্রতি অভিনেতা শ্রেয়শ তলপড়ে কোভিড ভ্যাকসিনতেই দায়ী করেছেন তাঁর হার্ট অ্যাটাকের জন্য। অ্যাস্ট্রোজেনেকা সংস্থার তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনটি নিয়েছিলেন অনেকেই। সেই ভ্যাকসিনের বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা সামনে এসেছে সম্প্রতি। যা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা বিশ্ব জুড়ে। একদিকে ভ্যাকসিন নিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে যখন উদ্বেগ চারদিকে, সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণা চক্র খুলে বসেছে একদল অসাধু ব্যক্তি। এসে গিয়েছে জালিয়াতির নয়া হাতিয়ার।

যে কোভিড ভ্যাকসিন একদিন করোনার সঙ্গে লড়েছিল, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকেই এবার অস্ত্র করছে জালিয়াতরা। করোনাকালীন সময়ে কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ছিল প্রতিটি নাগরিকের জন্য আধার কার্ড। ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের ইতিহাস জুড়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের আধার কার্ডের সঙ্গে। কে কবে কোন কোন ডোজ নিয়েছে, সবই জানা যাবে আধার নম্বরের মাধ্যমেই। আর সেই সুযোগটাই ব্যবহার করতে মাঠে নেমে পড়েছে প্রতারকেরা। ইতিমধ্যেই নাকি কলকাতার বহু বাসিন্দাই এমন ভুয়ো কল পেয়েছেন। যেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক পরিচয়ে নাগরিকদের থেকে আধার নম্বর জেনে নেওয়া হয়েছে তাঁর ভ্যাকসিনটি আদৌ সরকার দ্বারা ভেরিফায়েড কিনা জেনে নেওয়ার অছিলায়।

আরও পড়ুন: কোভিডের ভ্যাকসিন নিয়ে মৃত্যু সন্তানদের! কতটা ভয়াবহ এই কোভিশিল্ড?

ব্যাঙ্কের নথি থেকে প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, আমাদের প্রায় সমস্ত নথিপত্রই এখন আধার কার্ডের সঙ্গে জোড়া। ফলে আধার নম্বর জানা হয়ে গেলেই যে বাকি সমস্ত তথ্য প্রতারকদের হাতের মুঠোয়, তাতে আর আশ্চর্য কী? তাই ভ্যাকসিনের অছিলায় আধার জালিয়াতির বাড়বাড়ন্ত বেড়েছে কলকাতা জুড়ে। কেউ কেউ আবার আইভিআরএস (ইন্টাব়্যাক্টিভ ভয়েস রেসপন্স সিস্টেম)-এ রেকর্ড করা ভয়েস কলও পেয়েছেন, যেখানে নাগরিকদের ভ্যাকসিন সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রথমে কোভিড ভ্যাকসিন নিয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করে এক বা দুইয়ের বোতাম টিপতে বলা হয়। কোভিশিল্ডের জন্য এক, কোভ্য়াক্সিনের জন্য নির্ধারণ করা হয় ২ নম্বর বটনটিকে। এর পরেই ফোনটি কয়েক ঘণ্টার জন্য হ্যাং করে যাচ্ছে। এমনকী অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে নেটওয়ার্কও। কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখা জানাচ্ছে, এ ভাবে আসলে ফোনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে জালিয়াৎরা, যাতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া যায়।

এভাবে নাকি প্রতারণা ক্রমশ বেড়েই চলছে কলকাতা জুড়ে। কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলের তরফে বারবার সতর্ক করা হয়েছে এ নিয়ে। যাতে কোনও ভাবেই অজানা নম্বর থেকে পাওয়া কলে ব্যক্তিগত তথ্য, আধার তথ্য, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য বা ওটিপি শেয়ার না করেন কেউ। ভ্যাক্সিন সংক্রান্ত কোনও ফোন পেলে সেখানে আধার নম্বর শেয়ার না করার ক্ষেত্রেও সাবধান করে দিয়েছে পুলিশ।

কোভিড ভ্যাকসিন এবং তাঁর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সম্প্রতি বেশ হইচই পড়ে গিয়েছে বিশ্ব জুড়ে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা সম্প্রতি সাবধান করে বলেছেন, সমস্ত ধরনের ওষুধ বা ভ্যাকসিনেরই কোনও না কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। চিকিৎসকেদের মতে, লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। আর তাদের শরীরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই ভ্যাকসিন। তার সাপেক্ষে এই ঝুঁকি ন্যূনতম বলেই দাবি করেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। অনেকেই বলেছেন, কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের প্রভাবে থ্রম্বোসিস, থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া সিন্ড্রোম হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে সেই উদ্বেগ অযৌক্তিক। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এসটিএম-এর ক্লিনিকাল এবং পরীক্ষামূলক ফার্মাকোলজির প্রাক্তন প্রধান এবং অধ্যাপক শান্তনু কে ত্রিপাঠী জানাচ্ছেন, প্রায় ৮৫ কোটি লোক কোভিশিল্ডের দু'টি ডোজ পেয়েছেন। তার মধ্যে মাত্র ৩৬টি ক্ষেত্রে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিন্ড্রোম লক্ষ্য করা গিয়েছে। যার মধ্যে মারা গিয়েছেন মাত্র ১৮ জন। ফলে এই কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের থেকে ঝুঁকি যে খুব দুশ্চিন্তা করার মতো, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: সকলে নিয়েছেন এই কোভিড ভ্যাকসিন! ভয়াবহ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা এতদিনে স্বীকার করল সংস্থা

বরং এই ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে আরও বড় ক্ষতিকে দরজা দিয়ে ডেকে আনছেন মানুষ। যার মধ্যে একটি অবশ্যই এই প্রতারণা। যা থেকে বাঁচাতে পারে একমাত্র মানুষের সচেতনতা। তেমন সন্দেহজনক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিচ্ছে অভিজ্ঞ মহল।

More Articles