বসবাস করতে পারবেন মানুষ? চাঁদের বুকে খোঁজ মিলল আশ্চর্য গুহার
Moon Cave: নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, চাঁদের বুকে ঠিক যেখানে অবতরণ করেছিল সেই অ্যাপলো ১১ মহাকাশযানটি, চাঁদের এই গুহার খোঁজ মিলেছে তার থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে।
চাঁদ নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই কবে থেকে। মহাকাশজয়ের পাশাপাশি চাঁদে ঘাঁটি গাড়ার স্বপ্ন তাই বিজ্ঞানীদের পেয়ে বসেছে। এক বছর আগেই চাঁদে প্রথম বার সফল ভাবে অবতরণ করেছে ভারত। চাঁদে পৌঁছনোর নিরিখে তারা অবশ্য চতুর্থ দেশ। তার আগেই সফল ভাবে চাঁদের মাটি ছুয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন। এবার মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ব়্যাডারে ধরা পড়ল চাঁদের এক আশ্চর্য রহস্য। চাঁদের পৃষ্ঠদেশ যে সমতল নয়, সে কথা কে না জানে। অসংখ্য গর্তে ভর্তি চাঁদের পৃষ্ঠদেশ। তবে সেখানে যে রয়েছে গুহা, এমন কথা আগে কখনও শোনা যায়নি। এবার নাসার লুনার রিকনেইস্যান্স অরবিটার (এলআরও) নামক একটি ব়্যাডার থেকে এমন দৃশ্যই দেখা গেল। নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, চাঁদের মাটি থেকে অন্তত ১৫০ মিটার গভীর সে গুহা। চাঁদের মাটিতে এমন কয়েকশো গুহা থাকতে পারে বলেই অনুমান বিজ্ঞানীদের।
প্রায় ৫৫ বছর আগে মার্কিন মহাকাশযান অ্যাপলো ১১ নেমেছিল চাঁদের মাটিতে। পৃথিবী পেয়েছিল বিশ্বের প্রথম চাঁদের বুকে পা রাখা মানুষ নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিনকে। যদিও সেই অভিযান নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। অনেকেই মনে করেন, সেই চাঁদ অভিযানের দৃশ্য নাকি আদতে স্টুডিওয় শুট করা। তার পর বিভিন্ন দেশ চাঁদ জয় করেছে। তবে নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, চাঁদের বুকে ঠিক যেখানে অবতরণ করেছিল সেই অ্যাপলো ১১ মহাকাশযানটি, চাঁদের এই গুহার খোঁজ মিলেছে তার থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে। বিজ্ঞানীরা জানান, আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা নির্গত হওয়ার পর তা প্রবাহিত হয়ে পৃথিবীতে যেমন গুহাপথ তৈরি হয়, তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে চাঁদের গুহাপথটিকে। ইতিমধ্যেই 'নেচার অ্যাস্ট্রোনমি' নামে একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে সেই গবেষণা। ইতালির একদল বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে এই নিয়ে গবেষণা শুরু হয়।
আরও পড়ুন: দুর্ঘটনার দুর্বিপাক! মহাকাশের লড়াইয়ে পৃথিবী হারিয়েছে কল্পনার মতো যে সব নভোশ্চরদের
ওই জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাঁদের গুহাটি ৪৫ মিটার চওড়া মুখের এবং প্রায় ৮০ মিটার লম্বা। আয়তনে কম করে হলেও ১৪টি টেনিস কোর্টের সমান। চাঁদের মাটির ১৫০ মিটার নীচ পর্যন্ত গভীর এই গুহা। সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে মনে করা হচ্ছে, কয়েক কোটি বছর আগে চাঁদে লাভা উদগীরণের ফলে এই গুহা তৈরি হতে পারে। গবেষকেরা এ-ও মনে করছেন, গভীর এই গুহা নাকি মানুষের স্থায়ী 'বেজ' নির্মাণের জন্য আদর্শ জায়গা হতে পারে। চাঁদে কি মানুষ থাকতে পারে? আদৌ কি পৃথিবীর মানুষের দ্বিতীয় ঘরবাড়ি হয়ে উঠতে পারে চাঁদ? এ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই দেশবাসীর। বিজ্ঞানীরাও এ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বহু যুগ ধরে। চাঁদের রেডিয়েশন, অত্যাধিক তাপমাত্রা কিংবা আবহাওয়া-- এসব আদৌ মানুষের বসবাসের অনুকূল হতে পারে কিনা, তা-ই নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বহু দেশ। আর সেই গবেষণার পথে বড়সড় মাইলস্টোন হতে চলেছে চাঁদের মাটিতে এই গুহার আবিষ্কার, তেমনটাই মনে করা হচ্ছে।
প্রায় এক যুগ আগে চাঁদের মাটিতে অবিষ্কার হয়েছিল একাধিক গহ্বরের। যে আবিষ্কার শোরগোল ফেলে দিয়েছিল মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে। এর পর চাঁদের গায়ে মিলল গুহাপথ। মনে করা হচ্ছে, আগামী দিনে নভোশ্চরদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে ওই গুহাই। ইতালির ইউনিভার্সিটি অফ ত্রেন্তোর অধ্যাপত লরেঞ্জো ব্রুজোন মনে করছেন, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত লাভার স্রোত থেকেই ওই গুহাপথের সৃষ্টি। চাঁদের আবহাওয়া পৃথিবীর মতো নয়। বরং বহু সময়েই সেখানে প্রতিকূল পরিস্থিতির তৈরি হয়। সেই সময় চাঁদের বুকে গিয়ে পৌঁছনো নভোশ্চরেরা আশ্রয় নিতে পারেন ওই গভীর গুহাগুলিতে। সেক্ষেত্রে চাঁদে থাকার জন্য নতুন করে কোনও থাকার জায়গা গড়ার তৈরি হবে না তাদের। তবে বিষয়টা কিন্তু এতটাও সহজ নয় মোটেই। কারণ মহাকাশচারীদের পৌঁছতে হবে চাঁদের মাটির নিচে অত গভীরে। তবেই গুহার সন্ধান মিলবে। তার পর সেই গুহার পরিবেশ কেমন, কোনও বিষাক্ত গ্যাস রয়েছে কিনা, তা-ও জানা প্রয়োজন। সবার আগে প্রয়োজন চাঁদের মাটির গঠনের ব্যাপারে জানা।
তবে যতদূর জানা গিয়েছে, গুহার অন্দরে তাপমাত্রা তুলনামূলক স্বাভাবিক। ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মি, সৌর বিকিরণ এবং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উল্কাপাত থেকে রক্ষা পেতেও কার্যকরী হতে পারে গুহাপথটি। এর আগে নাসা-র লুনার রিকনেইস্যান্স অরবিটারে ধরা পড়েছিল চাঁদের বুকে মেয়ার ট্রানকুইলিটাটিসের যে ছবি তুলেছিল, তাতে দেখা গিয়েছিল, চাঁদের গহ্বরের নীচে বড় বড় পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। গহ্বরের নীচের অংশগুলি কোনও গুহাপথের সঙ্গে সংযুক্ত কিনা, বোঝা যায়নি তখন। নাসার বিজ্ঞানীরা জানান, লুনার রিকনেইস্যান্স অরবিটার থেকে পাওয়া তথ্য ও কম্পিউটার সিমুলেশনস থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখা যায় গহ্বরটি ১০০ মিটার চওড়া, যার নীচে আরও একটি ধাপ রয়েছে এবং পশ্চিম দিক বরাবর এখটি গুহাপথের সঙ্গে সংযুক্ত।
আরও পড়ুন:চাঁদ এখন শ্মশান! কেন চাঁদের মাটিতে মানবভস্ম, ডিএনএ পাঠানোর এমন ধূম জানেন?
ওই গহ্বরের মধ্যে থাকা পাথরগুলিও পরীক্ষা করে দেখতে চান বিজ্ঞানীরা। চাঁদের সৃষ্টি এবং অগ্ন্যুৎপাতের ইতিহাস বোঝার জন্য তা জরুরি বলেই মত তাঁদের। ওই গহ্বরের মধ্যে জলীয় বরফের খোঁজ মিলতে পারে বলেও আশাবাদী বিজ্ঞানীদের একাংশ। এখনও পর্যন্ত চাঁদের বুকে এমন দুশোরও বেশি গহ্বরের খোঁজ মিলেছে। ফলে আগামী দিনে আরও গুহাপথের হদিশ মিললেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ব্রিটিশ মহাকাশচারী হেলেন শারমান অবশ্য দারুণ উত্তেজিত এই আবিষ্কার নিয়ে। তাঁর কথায়, চাঁদে যে গুহা পাওয়া গেল, এটি একটি দারুণ খবর। এরকম আরও গুহা চাঁদে থাকতে পারে বলেই মনে করছেন তিনি। শারমানের আশা, আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে মানুষ চাঁদে বসবাস শুরু করতে পারবে। ফলে এই খোঁজ যে মহাকাশ গবেষণা বিশেষত চাঁদ জয়ের ক্ষেত্রে বিরাট একটা মাইলস্টোন, তাতে সন্দেহ নেই বলেই দাবি বিজ্ঞানীমহলের।