স্টারলাইন-দুর্বিপাকে মহাকাশেই আটকে সুনীতারা! আদৌ ফেরা হবে ৯ নভোশ্চরের?

Sunita Williams: গত ৫ জুন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে বোয়িং সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার। সফল ভাবে তা পৌঁছেও যায়। ফেরার কথা ছিল ২৬ জুন। কিন্তু বিপদ ঘটে সেসময়েই।

এর আগে একাধিক বার মৃত্যুকে পাশ কাটিয়ে মহাকাশ থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ফিরেছেন সুনীতা উইলিয়ামস। গত ৫ জুন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল নাসার মহাকাশযান 'স্টারলাইনার'। তাতে সওয়ার ছিলেন সুনীতা উইলিয়াম ও তাঁর অভিযানসঙ্গী বুচ উইলমার-সহ আরও বেশ কয়েকজন। সেখান থেকে ফেরার কথা ছিল গত ২৬ জুন। সেই ফেরার পথেই পড়ে কাঁটা। একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির আর দুর্বিপাকের জেরে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনেই আটকে যান সুনীতারা। বাড়তে থাকে দুর্যোগ। সেই সমস্ত বিপদের মুখে দুয়ো দিয়ে আদৌ কি ঘরে ফিরতে পারবেন তাঁরা? আপাতত সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতার জন্ম ওহাইওর ইউক্লিডে হলেও তাঁর বাবার পরিবার থাকতেন গুজরাটে। মহিলা মহাকাশচারীদের মধ্যে সুনীতাই একমাত্র যিনি সবচেয়ে বেশি সময় মহাকাশে কাটিয়েছেন। গড়েছেন রেকর্ড। নেভাল অ্যাকাডেমিতে পড়াশোনা শেষ করে মার্কিন নৌবাহিনীতে যোগ দেন সুনীতা। নৌবাহিনীতে কাজ করতে করতেই নাসা থেকে ডাক পান তিনি। ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হয় মহাকাশচারী হিসেবে তাঁর প্রশিক্ষণ। সেখান থেকে শুরু করে একের পর এক অভিযান ও সাফল্য। এর আগেও একাধিক বার মহাকাশ অভিযানে বেরিয়ে বিপদের মুখে পড়েছেন সুনীতা। মহাকাশচারী হিসেবে তা কোনও নতুন ব্যাপার নয়।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর দিকে আসছে বিশাল গ্রহাণু! ধ্বংস হতে পারে মানবজাতি? যা জানাচ্ছে ISRO

সাম্প্রতিক কালে মহাকাশে বাণিজ্যিক ক্রু পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাসা। তার আগে পরীক্ষামূলক ভাবে একাধিক উড়ান পাঠানোর কথা ঠিক হয়েছে। সেই প্রকল্পটির পরীক্ষামূলক উড়ানের জন্য ২০১৫ সালেই নির্বাচিত হয়েছিলেন সুনীতা। এর আগে একবার সফল ভাবে সেই উড়ান সম্পূর্ণও করেন তিনি। এই বছর এলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্সের ক্রু ড্রাগন ও বোয়িংয়ের সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার- এই দুটি মহাকাশযান নিয়ে পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্প্রতি স্টারলাইনারের মহাকাশযানটিকে স্পেস স্টেশনে পরীক্ষামূলক ভাবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়, যে অভিযানের অংশ ছিলেন সুনীতা।

গত ৫ জুন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে বোয়িং সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার। সফল ভাবে তা পৌঁছেও যায়। ফেরার কথা ছিল ২৬ জুন। কিন্তু বিপদ ঘটে সেসময়েই। নাসা জানায়, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের কাছেই বিস্ফোরণ হয়েছে 'রিসার্স' নামে রাশিয়ার একটি কৃ্ত্রিম উপগ্রহের। যা টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশ স্টেশনের চারপাশে। শুধু এই একটি বিপদই নয়। এর সঙ্গে দেখা দিতে থাকে স্টারলাইন মহাকাশযানে হিলিয়াম গ্যাস লিক-সহ অজস্র ত্রুটি। যার ফলে মহাকাশ স্টেশনেই বন্দি হয়ে যান সুনীতারা। কবে ফিরতে পারবেন তাঁরা, আদৌ পারবেন কিনা, প্রশ্নের মুখে পড়ে যায় তা-ও। নাসার তরফে জানানো হয়েছিল, তাঁদের ফিরতে ৪৫ দিনও লাগতে পারে, আবার ৯০ দিনেও না ফিরতে পারেন ওই দুই নভোশ্চর। ততদিনের খাবারদাবার, জ্বালানি তাঁদের কাছে মজুত রয়েছে কিনা আদৌ, প্রশ্ন ওঠে তা নিয়েও।

যদিও ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ জানান, আন্তর্জাতির স্পেস স্টেশন জায়গাটি যথেষ্ট নিরাপদ। সুনীতা ও বুচ-সহ মোট ৯ জন নভশ্চর রয়েছেন সেখানে। ফলে তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিত হওয়ার কারণ নেই। তবে সমস্যা অন্য জায়গায়। সুনীতাদের নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে গেলে ওই স্পেস সেন্টারে পাঠাতে পারবে নতুন একটি মহাকাশযান। স্টারলাইনার যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে, তাতে সেই বিষয়টা নিয়ে যথেষ্ট দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। তবে সম্প্রতি নাসা স্পেস স্টেশনে আটকে পড়া মহাকাশযান সংক্রান্ত বেশ কিছু আশার খবর ভাগ করে নিয়েছেন। গত সপ্তাহে একটি সম্মেলনে নাসা জানায়, মহাকাশযানটি কক্ষপথে মোটামুটি ভালো অবস্থাতেই রয়েছে। এখন যা পরিস্থিতি, তা সেটি ৪৫ দিন বাইরের কক্ষপথে থাকতে পারবে।

আরও পড়ুন: ৩৭১ দিন কক্ষপথে ঘুরপাক! অবশেষে বাড়ি ফিরলেন ৩ মহাকাশচারী

তবে স্টারলাইন মহাকাশযানটির একের পর এক ব্যর্থতা যেভাবে সামনে এসেছে, তাতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে নির্মাণকারী সংস্থাটি। ইতিমধ্যেই মহাকাশযানটির রিয়াকশন কন্ট্রোল সিস্টেমের ২৮টি থ্রাস্টার খারাপ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে বিপদ বাড়ে। তবে আশার কথা, স্টারলাইনারের ক্রু মডিউল ব্যাটারিগুলো ঠিকমতো কাজ করছে, এবং স্পেশ স্টেশনে সেগুলি রিচার্জও হচ্ছে। ব্যাটারিগুলি যে কক্ষে রয়েছে, তারও তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। স্টারলাইনের এটি তৃতীয় মহাকাশ অভিযান হলেও এর আগেও মহাকাশচারী নিয়ে কখনও অন্তরীক্ষে যায়নি তাদের যান। স্টারলাইনের প্রথম দুটি মিশনের মধ্যে প্রথমটি হয়েছিল ২০১৯ সালে। কিন্তু সেসময় আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি স্টারলাইনের মহাকাশযানটি। ২০২২ সালেও থ্রাস্টার সমস্যার মুখোমুখি হয় ওই সংস্থার মহাকাশযান। তা সত্ত্বেও কেন স্টারলাইনের মহাকাশযানে চাপিয়ে পাঠানো হল সুনীতাদের, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। আপাতত কত তাড়াতাড়ি সুনীতা ও বাকি নভোশ্চরদের উদ্ধার করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা যায়, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।

More Articles