'চড়াম চড়াম' ঢাক থেকে 'ভয়ংকর খেলা হবে' || বাহুবল আর অপশব্দের মিশেলে গড়া অনুব্রত সাম্রাজ্য

অনুব্রত মন্ডল কি এবারে সত্যিই ঝুঁকতে চলেছেন? না কি 'ঝুঁকতে অনুব্রত মন্ডল শেখেনি', মন্তব্যকে এখনও একইভাবে কায়েম রাখতে পারবেন তিনি?

 

চড়াম চড়াম বাড়ছে ঢাক। দেদার বিলোচ্ছে গুড়, বাতাসা এবং নকুলদানা। সিপিএম-বিজেপির উৎসবের দিন। যাঁর নামে এতদিন বীরভূমে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত, ভোটের আগে যাঁর দাওয়াই খেয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠতেন, সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সমর্থকরা, আজ তাকেই গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল। একটা সময় তাঁর নামে বীরভূমে পরিবর্তিত হতো বাতাসের দিক। আর আজ তিনিই সিবিআই-এর অতিথি। ২০২১ বিধানসভায় 'খেলা হবে' স্লোগান থেকে, মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প পাড়ায় শিক্ষালয়, এসবের পরিকল্পনাই যাঁর মাথা থেকে বেরিয়েছে, সেই অনুব্রত মন্ডলের থেকেই দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেছে তৃণমূল।

১১ অগাস্ট সকাল দশটা। কেন্দ্রীয় জওয়ানরা ততক্ষণে ঘিরে ফেলেছেন অনুব্রতর বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়িটি। দরজার তালা খুলে ভেতরে ঢুকলেন সিবিআই আধিকারিকরা। আর ঠিক দেড় ঘণ্টার মাথায় অনুব্রতকে বাড়ি থেকে বার করে গাড়িতে বসালেন আধিকারিকরা। অনুব্রত মন্ডলের গাড়ি যখন বোলপুর ছেড়ে বেরোচ্ছে, তখন রাস্তায় দু'ধারে উৎসুক জনতার ভিড়। কেউ কেউ দিচ্ছেন জয়ধ্বনি আবার কারও মুখে কটুক্তি। এরপরই শুরু হলো ঢাকের বাজনা; সঙ্গেই গুড়-বাতাসা বিলি। কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় বিজেপির নেতাকর্মীরা পথে নেমে করলেন উৎসব। কলকাতায় গুড়-বাতাসা উৎসবের পুরোধা হয়ে রইলেন বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবে। অন্যদিকে বউবাজারের ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া মোড়ে সাধারণ পথচলতি জনতাকে গুড় বাতাসা খাওয়ালেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। একই ছবি দেখা গেল জেলাতেও। আসানসোলে বিজেপির তরফে নকুলদানা, গুড় এবং বাতাসা বিতরণ করলেন আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল।

মূলত বিরোধীদের 'শাসন' করতেই যে-সমস্ত বিতর্কিত লব্জের ব্যবহার চালাতেন অনুব্রত, সেই গুড়-বাতাসা, আর চড়াম চড়াম ঢাকের বাদ্যিতেই আজ মুখরিত রইল গ্রামগঞ্জ থেকে শহরের রাজপথ। মানুষের উদ্দেশে বিজেপির আহ্বান, "আপনারাও গুড়, বাতাসা খেয়ে আনন্দে শামিল হন।" অন্যদিকে, বামেদের তরফ থেকে সুজন চক্রবর্তী কয়েক ধাপ এগিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বসলেন। চ্যানেলে চ্যানেলে হেডলাইন এল, অনুব্রত গ্রেফতার! তবু তৃণমূলের মুখে কুলুপ।

আরও পড়ুন: মুদির দোকানি থেকে বীরভূমের বেতাজ বাদশা, অনুব্রতর উত্থান হার মানাবে বলিউডকে

তবে ভাগ্যের উত্থানপতন কাকে বলে, তা হয়তো অনুব্রত মন্ডলকে না দেখলে বোঝাই যায় না। একদা বীরভূমের বেতাজ বাদশা কেষ্টদা যে রাতারাতি এমনটা হয়ে উঠেছেন, তা নয়। একটা সময় তিনি ছিলেন সামান্য একজন মুদিখানার দোকানের মালিক। সেখান থেকে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকাবুকো এবং ক্ষমতাবান একজন জেলা সভাপতি হিসেবে উত্থান। তিনি না বিধায়ক, আর না সাংসদ। এমনকী, জেলা পরিষদের কোনও কর্তাও নন। সবসময়ই দলকে পিছন থেকে সাপোর্ট দেওয়া তার কাজ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন অন্ত নেই। তবুও তিনি নির্বিকার। তাঁর বক্তব্যের সারমর্ম, একেবারেই মানুষের পাশে থাকা একজন রাজনীতিক তিনি। গুড়-বাতাসা থেকে শুরু করে পুলিশকে বোমা মারা, অনেক ধরনের মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। যখনতখন হুমকি দেওয়া তাঁর কাছে ছিল একেবারে নস্যির মতো। এমনকী, বিজেপি কর্মীকে মিথ্যে গাঁজা কেস দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।

বাহুবলী অনুব্রত
বীরভূমের বাহুবলী তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডল এই মুহূর্তে শাসক দলের সবথেকে বিতর্কিত কয়েকজন নেতার মধ্যে একজন। ৬১ বছর বয়সি এই তৃণমূল নেতার জন্ম খুবই সাধারণ একটি কৃষক পরিবারে। সেই কংগ্রেসের আমল থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক। দলীয় কাজে বীরভূমে এসে অনুব্রত মন্ডল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচয় হয়। তখন থেকেই তাঁর ডাকাবুকো স্বভাবের জন্য অনুব্রত মন্ডল আলাদাভাবে নজর কেড়েছিলেন মমতার। পরে অনুব্রত মন্ডল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থা লাভ করেন মমতার আপ্ত সহায়ক গৌতম বসুর মাধ্যমে। ধীরে ধীরে এই অনুব্রত মন্ডল পরিণত হন মমতার আদরের কেষ্টতে।

১৯৯৮ সালে জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করলে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি হন প্রয়াত চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে জেলার যুব তৃণমূল সভাপতি দায়িত্ব লাভ করেন অনুব্রত মন্ডল। ২০০১ সালে সূচপুরের ঘটনায় আলাদাভাবে নজর কেড়ে ২০০৩ সালে তৃণমূল জেলা সভাপতি দায়িত্ব পেয়ে যান অনুব্রত। সেই সময় দলের সঙ্গে মতবিরোধ তৈরি হলে সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে দেন।

জেলা সভাপতি দায়িত্ব পাওয়ার পরেই বামেদের লাল দুর্গ হিসেবে পরিচিত বীরভূমে নিজের দাপট দেখাতে শুরু করেন অনুব্রত মণ্ডল। ২০১১ সালে নিজের ক্ষমতায় বীরভূম থেকে তৃণমূলকে জিতিয়ে এনেছিলেন অনুব্রত। রাজ্যের ক্ষমতার শীর্ষে তৃণমূল আসার পরেই বীরভূমের শেষ কথা হয়ে ওঠেন অনুব্রত।

তবে বিতর্ক কখনওই পিছু ছাড়েনি তাঁর। সময়ে সময়ে গরু পাচার, কয়লা পাচার, ভোট-পরবর্তী হিংসা- সমস্ত মামলাতেই নাম জড়াতে শুরু করে অনুব্রত মন্ডলের। কিন্তু অনুব্রত মন্ডলের ক্ষমতা তখনও কায়েম। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে অন্যান্য জেলায় হতাশাজনক ফলাফল সত্বেও বীরভূমের ১১টি আসনের মধ্যে ১০টিতে তৃণমূলকে জিতিয়েছিলেন অনুব্রত। রাজ্য রাজনীতিতে অন্যতম একজন নিউজমেকার হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। বারংবার তাঁকে দেখা গিয়েছে, নানা রকম বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে উঠে আসতে। নির্বাচনের আগে স্থানীয় পুলিশকে অনুব্রত হুমকি দিয়েছিলেন, যদি তাঁর কথা না-মানা হয়, তাহলে তিনি পুলিশকে 'দেখে নেবেন'। বিধানসভার আগে বিজেপি কর্মীকে গাঁজা কেস দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।

তবে তাঁর এই সমস্ত নরমগরম মন্তব্যের মধ্যে সবথেকে বেশি বিতর্কিত ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় করা মন্তব্যটি। সেই নির্বাচনের সময় পুলিশের গাড়িতে বোম মারা এবং সারা বাংলার নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন অনুব্রত মন্ডল। সেই সময় থেকেই জেলার গণ্ডি ছেড়ে রাজ্য তৃণমূলের একজন আইকন হয়ে ওঠেন অনুব্রত। বীরভূমের একজন প্রবীণ তৃণমূল নেতা এক সময় বলেছিলেন, "দলে নিজের গুরুত্ব ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন অনুব্রত মন্ডল। তিনি কখনওই সাংসদ, বিধায়ক বা মন্ত্রী হতে চাননি। কখনও কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি তিনি। অন্যদিকে, অনুব্রত মন্ডলকে ছাড়া বীরভূমে তৃণমূল একেবারে শূন্য। সবার কাছে তিনি ছিলেন একজন গুন্ডা, একজন বাহুবলী, মস্তান। কিন্তু বীরভূম থেকে বামকে সরানোর জন্য তারই মতো একজন দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতার প্রয়োজন ছিল তৃণমূলের।"

অনু-টোটকা
অনুব্রত মন্ডলের বিতর্কিত বাণীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে একাধিক বিস্ফোরক কিছু মন্তব্য। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের কিছু আগেই অনুব্রত মন্ডল নির্দল প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে হুমকি দেন, "কোনও নির্দল প্রার্থীকে ভোট নয়। আর যদি কোনও নির্দল প্রার্থী বাড়িতে হুমকি দেয়, তাহলে তার বাড়িটা ভেঙে জ্বালিয়ে দিন। আর যদি কোনও প্রশাসন বলে, নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করুন। তাহলে সেই প্রশাসনের পুলিশের গায়ে বোমা মারুন।" নির্বাচনের প্রার্থী হওয়া নিয়েও বিরোধী প্রার্থীকে হুমকি দিয়েছিলেন কেষ্ট। বক্তব্য ছিল, "পঞ্চায়েত ভোট করবে এখানকার অঞ্চল সভাপতি, ব্লক সভাপতি, বুথ সভাপতি। ওরাই এখানে যথেষ্ট! অন্য লোকের কোনও দরকার নেই। কেউ সামনে আসবেন না, কেউ ফাইল করবেন না। কেউ ফাইল করতে যাবে না... কোনও চিন্তা নেই।"

কেষ্টর হমকি-হুঙ্কারও একসময় ভোটের ময়দান গরম করে তুলেছিল। পাঁচটার পর ঠান্ডা মাথায় হকি খেলার হুমকিও দিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তার সঙ্গেই দিয়েছিলেন পাঁচন দাওয়াই। "ময়দানে কংগ্রেস, সিপিআইএম, বিজেপি কিছুই নেই। বাজানোর জায়গা নেই। কী বাজাব? কিন্তু বাজাতে তো কিছু একটা হবে। পাঁচ দিন নিশ্চয়ই কিছু একটা বাজাব। পাঁচন ভালো হবে। বীরভূম জেলায় পাঁচন ভালো হয়।"

তবে কেষ্টর গুড়-বাতাসা, নকুলদানা আর চড়াম চড়াম ঢাক, এই তিনটি মন্তব্য এখনও ঘুরে বেড়ায় লোকের মুখে মুখে। পঞ্চায়েত ভোট বাজার গরম করেছিল অনুব্রত মন্ডলের গুড়-বাতাসা দাওয়াই। অনুব্রত বলেছিলেন, "ব্লক অফিসে গুড়-বাতাসা আর জল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে তৃণমূল কর্মীরা। গরমে মনোনয়ন জমা দিতে গেলে গুড়-বাতাসা আর জল খাওয়ানো হবে।" অন্যদিকে বিধানসভা ভোটের আগে অনুব্রতর মুখে শোনা গিয়েছিল 'চড়াম চড়াম' ঢাক বাজানোর কথা। সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, "বিরোধীদের জন্য 'চড়াম চড়াম' করে জন্য ঢাক বাজানো হবে।" এই অনুব্রতই একবার বলেছিলেন, নকুলদানা খেলে আঙুল অন্য কোথাও যাবে না। একুশের বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের খেলা হবে স্লোগানকে আরও একধাপ চড়িয়ে অনুব্রত বলেছিলেন, 'ভয়ংকর খেলা হবে।'

সিবিআই জুজু
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা উপভোগ করতেন অনুব্রত মন্ডল। অনুব্রতর বিরুদ্ধে তাঁরা কখনও কোনও মন্তব্য করতে সাহস পাননি। তবে সিবিআই এই সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে। মূলত দু'টি কারণে সিবিআই-এর আতসকাচের নিচে রয়েছেন অনুব্রত মন্ডল। প্রথমটি হলো, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন-পরবর্তী হিংসার মামলা এবং দ্বিতীয়টি হলো গরু পাচার মামলা। তার পাশাপাশি কয়লা পাচার মামলার সঙ্গেও অনুব্রত মন্ডল জড়িত বলে অভিযোগ থাকলেও সেই অভিযোগের সপক্ষে তেমন কোনও প্রমাণ সিবিআই-এর হাতে নেই।

তদন্ত কমিটি গঠনের পর প্রথমেই বীরভূমের আলমবাজার এলাকার একটি হত্যাকাণ্ডের দিকে নজর পড়ে সিবিআই-এর। তারপর ধীরে ধীরে পেঁয়াজের খোলস ছাড়াতে শুরু করে সিবিআই। হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে খারিজ করে সিবিআইকে এই মামলায় তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। অনুব্রত মন্ডল সরাসরি জড়িয়ে পড়েন গরু পাচার কাণ্ডর সঙ্গে। সেই থেকেই সিবিআই-এর সঙ্গে লুকোচুরি পর্ব শুরু।

কখনও এসএসকেএম-এর উডবার্ন ওয়ার্ডে অণ্ডকোষের অসুখ নিয়ে ভর্তি হওয়া তো কখনও আবার অর্শের সমস্যা। সম্প্রতি আবার অসুস্থতার কথা জানিয়ে ১৪ দিনের বেড রেস্টের আবেদন। তবে কিছুই কাজে লাগল না কেষ্টর। রাখিবন্ধনের দিনে হাতে হাতকড়া নিয়েই সিবিআই-এর সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরোতে হলো বীরভূমের বাহুবলীকে।

দূরত্ব বাড়াচ্ছে তৃণমূল
যে সময় অনুব্রত মন্ডল এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সেই সময় সাংসদ শতাব্দী রায় এবং মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা ছাড়া তৃণমূলের অন্য কোন বড় নেতা-নেত্রী তাঁকে দেখতে যাননি। তিনি যেভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলের চোখে ধুলো দিতে শুরু করেছিলেন, সেই বিষয়টা খুব একটা পছন্দ হয়নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বর। তৃণমূলের একজন নেতা নাম উল্লেখ না করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, 'তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সিবিআই একটা ভেন্ডেটা রাজনীতি করতে শুরু করেছে। পুরো ব্যাপারটা একপেশে। বিজেপি যেন কোনওরকম দোষই দেখতে পাচ্ছে না সিবিআই। অন্যদিকে, তৃণমূলের সমস্ত বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেছে তারা। এর আগে তৃণমূলের প্রবীণ নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আটক করেছিল সিবিআই, কিন্তু কিছুই প্রমাণ হয়নি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার স্ত্রীকেও দিল্লিতে তলব করা হয়েছিল। সেখানেও কোন লাভ হয়নি। নেতারা সবসময় সিবিআই-এর নির্দেশ অনুযায়ী সেই জায়গায় তাদের সাহায্য করতে গেছেন।"

হয়তো এই জায়গা থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব শুরু হয়েছিল অনুব্রত মন্ডলের। যেভাবে তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে শুরু করেছিলেন, সেই ব্যাপারটা তৃণমূলের খুব একটা ভালো লাগেনি। শেষমেষ দেখতে গেলে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়ে থাকেন শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইমেজ দেখেই। এটাই তৃণমূলের প্রধান ইউএসপি, যে মুখ হয়তো বিরোধী দলের কাছে এখনও নেই। তাই, মমতার এই ইমেজ নষ্ট হোক, এটা কখনওই চাইবে না তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ইমেজ বাঁচানোর জন্যই পার্থ থেকে অনুব্রত, সকলের সঙ্গেই দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেছে ঘাসফুল।

অনুব্রত মন্ডল কি এবারে সত্যিই ঝুঁকতে চলেছেন? না কি 'ঝুঁকতে অনুব্রত মন্ডল শেখেনি', মন্তব্যকে এখনও একইভাবে কায়েম রাখতে পারবেন তিনি? যদি তিনি ফিরে আসেনও, তৃণমূলে কি তার সেই জায়গা বজায় থাকবে? মেরুদণ্ড সোজা করে কি আর দাঁড়াতে পারবেন? না কি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো তাঁকেও বিশ্রামে পাঠিয়ে দেবে দল?

More Articles