কারাগারে ১০০ দিন! বাংলার রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধ অনুব্রত?
Anubrata Mondal: একাধিকবার কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করলেও সর্বদা রাজনৈতিক ভাবে গরম থাকা বীরভূমের বাঘের এই পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছে শূন্যতা।
অনুব্রত মণ্ডল। বাংলার রাজনৈতিক আবহে তো বটেই, গত ৭-৮ বছরে এই নাম ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। খানিকটা যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলার বর্তমান শাসকদল তৃণমূলের নামোচ্চারণের মধ্যেই বারবার অনুরণিত হয়েছে বীরভূমের কেষ্টর নাম। রবি ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ফের বিখ্যাত হয়েছে মমতার 'প্রিয় ভাই'য়ের কারণে। প্রত্যেকটি মুহূর্ত, রাজনীতির একাধিক টানাপড়েনে জড়িয়েছেন তিনি। একদা সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ মানুষটি আজ যেন মলিন! খানিকটা বিষণ্ণও। পাকা চুল আর স্থূলকায় শরীরের ভাঙনের সঙ্গেই আশঙ্কার বাতাবরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি। আজ যেন থেকেও তিনি নেই। কেষ্টর কারাগার-যাপনের প্রায় ৯৭ দিন কেটে যাওয়ার পরেও উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন, পঞ্চায়েত-উত্তাপ দুয়ারে হাজির হতেই ফের চর্চায় উঠে এসেছেন ভোটের অনুব্রত মণ্ডল। একটা সময়ের 'বীরভূমের রাজা', যাঁর কথায় বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত বলা হয়, যাঁর ধমকে 'গাঁজা কেসে'র ঝঙ্কারে আলোড়িত হত বিরোধীরা। যে অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) ছোঁয়ায় মুশকিল আসান হত নিমেষেই- তিনিই আজ নেই! থেকেও যেন অনুপস্থিত অনুব্রত।
আর এই জল্পনার মধ্যেই শুরু হয়েছে তৃণমূলের ভোট-আতঙ্ক! বীরভূম শুধু নয়, রাঢ়-ভূমের একাধিক জেলা, এমনকী বর্ধমানের একটা বিরাট অংশেও তাঁর প্রভাব ছিল মারাত্মক। শোনা যায়, ওই অঞ্চল থেকে দিদিকে আসন বা সিট জিতিয়ে দেওয়ার মূল হোতা ছিলে তিনি। এবার তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে এই নির্বাচনী চিন্তার মেঘ। একদিকে ইডি, দিল্লির আদালত। অনুব্রত মণ্ডলের দিল্লি যাত্রার সম্ভাবনা। অন্যদিকে একাধিক রাত জেলে কাটিয়ে, মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠার দাবানলে পুড়ে হতাশ অনুব্রতকে গিয়ে দুবিধা তৈরি হয়েছে তৃণমূলে। কারণ হিসেবে রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, ''যে দলটির জন্য একদিকে দুর্নীতির অভিযোগ, অন্যদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতার গ্রেফতারি চূড়ান্ত অস্বস্তি বাড়িয়েছিল, সেই দলই যখন দেখল, অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হচ্ছেন; অস্বস্তি আরও বাড়ে তাদের। কারণ, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে গ্রাম বাংলার একটা বড় অংশের জন্য, বিশেষত ভোট রাজনীতির জন্য তিনি অপরিহার্য।''
প্রসঙ্গত, শুক্রবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজির করানো হয় তৃণমূল নেতাকে। আদালতে তাঁর আইনজীবি জামিনের আবেদন করেননি। অনুব্রত ফের জেল হেফাজতে যান। ঠিক সেই সময় ওই আদালতে দাঁড়িয়েই অনুব্রত বলেন, ''মিঠুনের পাল্টা সভা করতে হবে।'' মিঠুনের জনসভা করার কথা বীরভূমে। আবার সেই কেষ্টকেই বলতে শোনা যায়, ''রাজা বিনা রাজত্ব চলে না!''
আরও পড়ুন- কেষ্টর কতটা ডানা ছাঁটবে দল? বীরভূমের সিংহাসন থাকবে অনুব্রতর দখলেই?
অর্থাৎ অনেকেই বলছেন, এই রাজা আসলে তিনি। আর রাজত্ব হল তাঁর নেতৃত্বাধীন অঞ্চল। যেখানে একদা তিনি ছাড়া তৃণমূল, এমন ভাবাই দুষ্কর ছিল। দলীয় কর্মী থেকে নির্বাচনের টিকিট, অনুব্রত মণ্ডল ছিলেন শেষ কথা! এখনও দাবি করা হয়, জেলবন্দি থাকলেও এই নেতার কথা এখনও শেষ কথা হিসেবেই বিবেচিত হয় বীরভূমে। তিনিই বলে দেন সবটা। শুধু তাঁর নির্দেশই পালন করেন নেতারা। কিন্তু সত্যিই কি তাই?
সিবিআই-ফাঁদে অনুব্রত
১৯ অগাস্ট, ২০২২। কলকাতার এসএসকেএম (SSKM PG Hospital) হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ড থেকে শুরু করে রামপুরহাট হাসপাতালের চিকিৎসকের কেষ্ট-গৃহে পা। অণ্ডকোষ-পায়ুদ্বারের একাধিক 'সমস্যা' কাটিয়েও সিবিআই জালে বন্দি হন অনুব্রত মণ্ডল। গরু পাচারের দুর্নীতির অভিযোগে প্রথমে আটক, পরে ওইদিনই আসানসোলে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। একাধিকবার হাজিরা এড়িয়েও শেষরক্ষা হয়নি তৃণমূলের বীরভূমের জেলা সভাপতির। শোরগোল পড়ে রাজ্যজুড়ে।
তারপর একাধিক আবেদন-নিবেদনের পরেও জামিন মেলেনি তাঁর। উপরন্তু জেল হেফাজতের মেয়াদ বেড়েছে। সঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন আশঙ্কা। জেরার মুখে পড়েছেন তাঁর একমাত্র কন্যা। অনুব্রতের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে 'লটারি কাণ্ড'। একটার পর একটা অভিযোগের জালে ফেঁসেছেন সিবিআইয়ের খাতায় 'অন্যতম অপরাধী' অনুব্রত মণ্ডল। চেষ্টা করেছেন, কিছু ক্ষেত্রে আদালতের রক্ষাকবচ মিলেছে, কিন্তু অচিরেই বন্দি হয়েছেন নেতা। বহু চেষ্টার পরেও মুক্তি পাননি এখনও।
'অনুব্রতহীন' বীরভূম
একাধিকবার কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করলেও সর্বদা রাজনৈতিক ভাবে গরম থাকা বীরভূমের বাঘের এই পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছে শূন্যতা। তৃণমূলের দাবি, "অনুব্রত মণ্ডলের মাত্র কয়েক মাস জেলে থাকা সংগঠনে প্রভাব ফেলবে না। সবই ঠিক রয়েছে।" কিন্তু তৃণমূলের এই দাবির সপক্ষে যুক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অনুব্রত-গড়ের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, কেষ্ট না থাকায় সেইভাবে আর দাপট দেখাতে পারছেন না আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। একটা সময় বোলপুরের যে বাড়ি থেকেই নিয়ন্ত্রিত হত সব, সকাল থেকে রাত যে দাদার অঙ্গুলিহেলনেই চলত তৃণমূল-প্রশাসন, ভিড় থাকত জনপ্রতিনিধিদের, সেই মমতাময় অনুব্রত-সাম্রাজ্যে ক্ষত তৈরি হয়েছে ফের! ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত যে অবস্থায় ছিল তৃণমূল। লালমাটির দেশের লাল আধিপত্য ছাড়িয়ে ওঠার আগে যে অবস্থায় ছিল মমতার দল। অনেকেই বলছেন, গত তিন মাসে একপ্রকার অনুব্রত ছাড়া দলের এগিয়ে যাওয়ায় তেমনই হয়েছে ফের। কেষ্ট মণ্ডলের আধিপত্য ছাড়া বীরভূম এবং তার পাশের কয়েকটি জেলায় তৃণমূলের বিচরণ আগের মতো আর নাকি দাপুটেও নেই! অর্থাৎ ঝাঁঝ কমেছে ফের।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, ''ঝাঁঝ কমেছে সংগঠনের; এই বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা মহান বানাচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডলকে! ফিরহাদ বলছেন, বাঘ! তো মমতা বলছেন, একটু-আধটু ভুল!" আবার যে পার্থকে নিয়ে সংগঠনের ক্ষতিতে খুব একটা চাপ নেয়নি তৃণমূল! সেই দলই একটি জেলার সামান্য জেলা সভাপতিকে নিয়ে চিন্তিত হয়েছে বেশি?
নির্বাচনী-কেষ্ট
২০১৬
রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। একাধিক অভিযোগ আর দাবিতে ভরলেন অনুব্রত। অসুস্থ স্ত্রী এবং নিরাপত্তারক্ষীর ঘাড়ে ভর দিয়ে হাঁটাচলা করতে করতেই একাধিক নিদান দিয়ে বিখ্যাত হলেন অনুব্রত মণ্ডল। একরকার হাঁপাতে হাঁপাতেই স্পেল বাউন্ড করলেন বিরোধীদের। মমতা তো দূর, অনুব্রত আটকাতেই হিমশিম খেলেন বিরোধী নেতারা। এদিকে বারবার বোমা, গুলি আর রক্তের ইতিহাসের সাক্ষী হল কবিগুরুর সাধনা ভূমি। নাম জড়াল অনুব্রত মণ্ডলের। সাম্প্রতিক বগটুই গণহত্যা, ভাদু শেখের খুনেও নাম উঠেছিল সেই তারই। বিপুল ভোটে বিভিন্ন আসনে জিতল তৃণমূল! দিদির আশীর্বাদে আরও প্রভাব বাড়তে শুরু হল ভাইয়ের।
২০১৮
দিকে দিকে শোরগোল। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে সন্ত্রাসের অভিযোগে বিদ্ধ হল সরকার। একাধিক জায়গায় প্রার্থীই দিতে পারল না বিরোধীরা। তখন বঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে শক্তি বাড়াচ্ছে বিজেপিও। রক্তাক্ত হল বীরভূম। আর তার মধ্যেই উঠে এলেন দাদা অনুব্রত। যেন তিনিই সব! সমস্ত অভিযোগ তাঁর কাছে নস্যি। নির্দল প্রার্থী থেকে শুরু করে, জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও স্লোগানে মুখরিত হলেন তিনি। বলে দিলেন পুলিশের গাড়িতে বোম মারতে!
কেষ্টর মাথায় অক্সিজেন কম যাওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিন্তা প্রকট হলেও এই কেষ্টর হাত ধরেই রাজ্যজুড়ে প্রায় ৯৫ শতাংশ আসন জেতার সঙ্গে সঙ্গেই বীরভূমে ৯৮ শতাংশ আসন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। যেখানে প্রায় ৯০ শতাংশ আসনে নাকি প্রার্থীই দিতে পারেনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো!
অনুব্রত বলতেন, "বিরোধীরা প্রার্থী দিতে না পারলে কী করব!'' কিন্তু শোনা যেত ভিন্ন, এই অনুব্রত বাহিনীর কবলে পড়ে, ভয় আর সন্ত্রাসের বাতাবরণে নাকি সাড়া দেয়নি গণতন্ত্র! অভিযোগ ওঠে বিস্তর। দলের একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে কোন্দল। কেষ্ট-বিরোধী গোষ্ঠীর হলেও বিপদ! মনিরুল ইসলামের 'পায়ের তল দিয়ে মেরে দেওয়া'র আবহে সেই পঞ্চায়েত ভোট ছিল অভিনব। অভিযোগ আর রক্তের হোলিতে বিপর্যস্ত হয়েছিল বীরভূম! যে ধারা বজায় ছিল বারবার। আদালতের দ্বারস্থ থেকে শুরু করে অনুব্রত 'দাদার কীর্তি'তে ব্যতিব্যস্ত হয় বিরোধীরা।
২০১৯
লোকসভা নির্বাচনে বঙ্গের কোণায় কোণায় মোদি-বাতাসের ছড়িয়ে পড়ার মধ্যেও অনুব্রত ছিলেন খোশমেজাজেই। সেইভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি বিরোধীরা। রামচন্দ্র ডোম, দুধকুমার মণ্ডলদের খানিকটা প্রতিরোধেও পিছপা হননি অনুব্রত। বরঞ্চ পাঁচন আর চড়াম-চড়াম দাওয়াইয়ে উত্তপ্ত হয়েছে বাংলা। কিন্তু কে কাকে সামলায়! অনুব্রত ছাড়া নির্বাচন আর তিনি থাকতে তৃণমূলের হার ভাবাই যায়নি সেদিন!
২০২১
রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দু-মুকুল অস্বস্তির মধ্যেও বীরভূম জুড়ে খুব একটা ভালো ফল করতে পারেনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। বরঞ্চ দিদির সম্মান রেখেছেন ভাই অনুব্রত। জেলাজুড়ে খুব একটা খারাপ ফল করেননি তিনি। কিন্তু এখানেও উঠেছে সন্ত্রাসের অভিযোগ। অনুব্রত-অস্বস্তিতে বিদ্ধ হয়েছে তৃণমূল।
তবে তাঁকে রুখবে কে? একাধিক অভিযোগে বিদ্ধ হয়েও সংগঠন আর নির্বাচনের রাজনীতিতে দিনের পর দিন আরও দক্ষ হয়েছেন এই তৃণমূল নেতা। তবে বেশিদিন আর যায়নি। গরু-কয়লা পাচার আর একাধিক অভিযোগে তাঁর জীবনেও নেমে এসেছে জেলের ছায়া। রাতারাতি লটারি পাওয়া কোটিপতি অনুব্রত ফেঁসেছেন ফের। একদা বিরাট পরাক্রমশালী কেষ্ট, মুক্তবাতাস ছেড়ে অক্সিজেন নিতে পৌঁছেছেন আসানসোলের জেলে!
আরও পড়ুন- ‘চড়াম চড়াম’ ঢাক থেকে ‘ভয়ংকর খেলা হবে’ || বাহুবল আর অপশব্দের মিশেলে গড়া অনুব্রত সাম্রাজ্য
অনুব্রত ছাড়া পঞ্চায়েত?
কী হবে এবার! ২০১৮ এর সেই জয়জয়কার কি রাজা ছাড়াই তাঁর প্রজারা হাসিল করতে পারবেন? ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আসতেই এই প্রশ্ন উঠেছে ফের। একাধিক ভাবে নানা চেষ্টায় সামিল হচ্ছে দল। আর এই গুছিয়ে নেওয়ার মধ্যেই উঠে আসছে বিরোধীরা। এতদিন অনুব্রত ত্রাসে অনাবৃত সন্ত্রাসের অভিযোগ ছাড়িয়ে অনুব্রতহীন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করছেন নেতারা। এটাই সুযোগ!
কিন্তু তিনি না থাকলেই কি প্রভাব নেই? এই জল্পনার আবহেই উঠে আসছে একাধিক মত। কেউ কেউ বলছেন, "অনুব্রত মণ্ডলের সংগঠনে-প্রশাসনে আধিপত্য রয়েছে। জেলায়, জেলার আশেপাশেও। সেখানে দাঁড়িয়ে মাত্র কয়েক মাস তিনি জেলে বলে যে সবাই সব ভুলে যাবেন অথবা অস্তিত্ব মুছে যাবে এমন নয়! তিনি আপাতত না থাকলেও দলে তাঁর প্রভাব আর নির্দেশ গুরুত্বপূর্ণ এখনও। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই ধারায় বজায় থাকবে।'' আর সন্ত্রাসের অভিযোগ? ওই অংশেরই যুক্তি, "তিনি থাকতে যতটা সন্ত্রাস হত, তার তুলনায় বেশি বলা হয়েছে বারবার। অনুব্রত মণ্ডল ভালো সংগঠক। সেখানে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাস না করেও ভালো ফল হবে।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বীরভূমের এক পরিচিত তৃণমূল নেতা ইনস্ক্রিপ্টকে বলছেন, "অনুব্রত মণ্ডলের সংগঠনে প্রভাব ছিল সর্বাধিক। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, তিনিই শেষকথা। কিন্তু এখন তিনি জেলে। তাঁর যে দলে সবাই কাছের আর বন্ধু ছিলেন, একথাও বলা যায় না। একদিকে সেই দলেই অনুব্রত-বিরোধী গোষ্ঠীর সক্রিয়তা। অন্যদিকে অনুব্রত মণ্ডলের কাছের লোকের জায়গা তৈরি করার চেষ্টা, একটা সমস্যা সৃষ্টি করছে। এর সঙ্গেই কেষ্টদা থাকতে যে জেলায়, দলের মধ্যে উত্তেজনা থাকত, সেটাও এখন নেই। যতই হোক তিনি জেলের ভিতরে। বিরোধী, বিশেষত বিজেপি এই সুযোগ নেবে। বলা যায় না, ঠিকঠাক ভোট হলে আমাদের দলের ফলাফল ঠিক আগের মতো হবে নাকি বেশ খারাপ হবে! জানি না।''
অর্থাৎ একটি মানুষের, একটি নেতার অনুপস্থিতি ঘিরে তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। তাঁকে কেন্দ্র করে একাধিক কথকতার মধ্যেই উঠে এসেছে নির্বাচনী কাটাছেঁড়া। অনুব্রত না থেকেও বঙ্গের রাজনীতিতে উঠে এসেছেন নতুনভাবে। তাঁকে ছেড়ে ঠিক কীভাবে এগোবে তৃণমূল! কীভাবে তৈরি হবে পঞ্চায়েতের আগামী রণকৌশল। ভোটের হালহকিকত অনুব্রত ছাড়া আদৌ সম্ভব কিনা, এই প্রশ্নেই তোলপাড় হচ্ছে বাংলার রাজনৈতিক মহলও।