পাথরে লেখা পৃথিবী ধ্বংস হবে কবে, কীভাবে? সান স্টোনের রহস্য ভেদ বিজ্ঞানীদের...

When World Will End: গর্ভবতী মহিলারা গ্রহণের সময় বাড়ির ভিতরেই থাকতেন কারণ তাঁরা মনে করতেন তাদের সন্তানরা ভয়ঙ্কর বিকৃতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করবে।

ক্লাসিক্যাল মেসোআমেরিকান অ্যাপোক্যালিপস মিথ। মানে, পৃথিবী কবে কীভাবে ধ্বংস হবে সেই সম্পর্কে এক ভবিষ্যদ্বাণী, এক মিথ। মায়া সভ্যতার বাসিন্দারা নাকি বলে গিয়েছিল, পৃথিবী ২০১২ সালে শেষ হয়ে যাবে। তারপর সেই নিয়ে বিস্তর বাক বিতণ্ডা। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিশ্লেষণ করে জানান, মায়া সভ্যতার মানুষরা পৃথিবীর শেষ মোটেও কল্পনা করে যাননি। তবে কয়েক হাজার মাইল উত্তরে আরেকটি সভ্যতা ছিল যারা পৃথিবীর আসন্ন সর্বনাশ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিল মায়া সভ্যতার মতোই। অ্যাজটেক সভ্যতার নানা রহস্য নিয়ে আজও গবেষণা অব্যাহত। অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে পৃথিবীর শেষ সম্পর্কে তাঁদের ধারণা এবং সর্বনাশ থেকে বাঁচার জন্য নিজস্ব উপায়।

অ্যাজটেকরা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া নিয়ে এতটাই উদ্বিগ্ন ছিল যে তারা, প্রতি বছর এই ধ্বংস আরও এক বছরের জন্য পিছিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে নিয়মিতভাবে মানুষের বলি দিত! ফ্লোরিডা মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির লাতিন আমেরিকান শিল্প ও প্রত্নতত্ত্বের কিউরেটর সুসান মিলব্রাথ সানস্টোন নামে পরিচিত বিশাল এক ধ্বংসাবশেষের পাঠোদ্ধার করেছেন। এই সানস্টোন আসলে ২৪ টন ওজনের, বৃত্তাকার, ব্যাসাল্ট পাথরের তৈরি ক্যালেন্ডার।

বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘকাল ধরে ভেবেছিলেন, পাথরের এই ক্যালেন্ডারের কেন্দ্রে যে চিত্রটি আছে তা অ্যাজটেকের সূর্য দেবতা টোনাটিউহ। মিলব্রাথ ২০১৭ সালের গ্রহণের একটি উদাহরণ বিশ্লেষণ করে বললেন, এই ছবির ব্যাখ্যা অন্য। দেবতার মুখ নয়, সম্ভবত চিত্রটি সূর্য গ্রহণের সময় তাদের মৃত্যুর প্রতীক। অ্যাজটেকরা বিশ্বাস করেছিল যে, বিশ্বব্যাপী এবং পৃথিবী-কাঁপানো এক সূর্য গ্রহণই সবাইকে সর্বনাশের দিকে নিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা, ধ্বংস হবে পৃথিবী! ২০২৩ নিয়ে যে ভয়ংকর ভবিষ্যদ্বাণী নস্ট্রাদামুসের

টোনাটিউহর আশেপাশে আঁকা নখর বলে এটি গ্রহণ দানবের ছবি। ২৬০-দিনের ক্যালেন্ডারে বৃত্তাকার প্রতীক চিহ্ন পুরোহিতরা ভবিষ্যতের ঘটনার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য ব্যবহার করে। আধুনিক পণ্ডিতরা বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছেন, ঠিক কোন সময় পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করেছিল অ্যাজটেকরা, ৪ অলিন। কী এই ৪ অলিন?

ধরা যাক, সবাই জানেন যে ১৫ অগাস্ট পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মানে ১৫ অগাস্ট শুধুই একটা তারিখ, যে তারিখ প্রতি বছরই আসবে। যদি আমরা ধ্বংসের মুখোমুখি না হতে চাই তাহলে তা আটকাতে মোটামুটি মাস খানেক আগে থেকে নানা আচার উপাচার করতে হবে। অ্যাজটেকদের কাছে এই আচার-উপাচার ছিল মানুষের বলিদান। সান স্টোন ছিল খানিক জনসাধারণের আচার-অনুষ্ঠানের মঞ্চের মতো। প্রতি ৪ অলিনে বন্দিকে সূর্য দেবতার উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া হবে যাতে গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পৃথিবী অন্য দিকে ঘুরে যায়।

গর্ভবতী মহিলারা গ্রহণের সময় বাড়ির ভিতরেই থাকতেন কারণ তাঁরা মনে করতেন তাদের সন্তানরা ভয়ঙ্কর বিকৃতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করবে। মিলব্রাথ ব্যাখ্যা করেন, আজটেকরা কীভাবে সূর্যগ্রহণের মোকাবিলা করত তার বেশিরভাগ বিষয়টিই বিশদে জানা যায় না। তবে তারা সূর্যকে গিলে খাওয়া দানবকে ভয় দেখানোর যে চেষ্টা করত তা নিশ্চিত করে বলা যায়। সম্ভবত আজকের সমাজের মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরও অনেক ভবিষ্যদ্বাণীই করেছে অ্যাজটেকরা। ৪ অলিন তাদের পৃথিবীতে কখনই একটি গ্রহণেই ঘটবে না এটুকুও নিশ্চিত ছিল অ্যাজটেকরা।

More Articles