অনুব্রত ঘরে নেই! প্রিয় ভক্তকে ছাড়াই সাজছে বোলপুরের কেষ্টকালী

Kalipuja, Anubrata Mandal: নিচুপট্টির বারিপুরের কালীপুজো এখনও কেষ্টকালী বলেই পরিচিত। হবেই বা না কেন! অনুব্রতের কালীভক্তির কথা তো আর অজানিত নয়।

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। কেষ্টর নামে কাঁপত গোটা বোলপুর। বাড়ি থেকে অনতিদূরেই একটি কালীপুজো। সেই কালীপুজোর নামই হয়ে যায় কেষ্ট-কালী পুজো। তার তদারকি থেকে দেখভাল সব নিজহাতেই করতেন তিনি। পুজোর সময় তাঁকে টলানো কঠিন ছিল এলাকা থেকে। কালের নিয়মে কালীপুজো এল, কিন্তু কেষ্ট ঘরে নাই। নাহ, ঘরে তো নেই-ই, এমনকী রাজ্যেও নেই। বাংলা থেকে বহু দূরে কারাগারের অন্ধকারে কাটছে বোলপুরের দাপুটে নেতা অনুব্রতের জীবন। কালীপুজোর সময় যে মণ্ডপ থেকে জীবনেও টলানো যায়নি তাঁকে, সেই পুজো এ বছর কাটছে তার কেষ্টাকে ছাড়াই।

অনুব্রত মণ্ডল, তৃণমূলের দাপুটে নেতা। এককালে সামলেছেন বীরভূম জেলা সভাপতির মতো পদ। তবে ওই যে 'চিরস্থির কবে নীর হায় রে জীবননদে!' অতএব মুহূর্তে ভাঙে দুর্গ। গরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন অনুব্রত। তাঁকে হেফাজতে নেয় ইডি। তারপর আপাতত অনুব্রতের ঠিকানা দিল্লির তিহাড় জেল। সেখানেই অন্ধকার গারদের পিছনে কাটতে চলেছে তাঁর আলোর উৎসব।

আরও পড়ুন: কুখ্যাত মিহির সর্দারের ডেরা থেকে ‘দুর্গেশনন্দিনী’র মন্দির, কেন এত জাগ্রত হুগলির সিদ্ধেশ্বরী কালী?

বোলপুরের নিচুপট্টি এলাকা। সেই নিচুপট্টির বারিপুরের কালীপুজো এখনও কেষ্টকালী বলেই পরিচিত। হবেই বা না কেন! অনুব্রতের কালীভক্তির কথা তো আর অজানিত নয়। প্রত্যেক বছর মহা ধুমধাম করে শক্তির আরাধনায় মাতেন কেষ্ট। আজ থেকে নয়, সেই কোন ছোট্ট বয়স থেকে এই কালীপুজো করে আসছেন তিনি। তখন তাঁর বয়স বছর নয়েক। বাবার বারণ না শুনেই কালীপুজোয় গিয়েছিলেন। বেদম মারও খান তার জন্য। তবে কালীপুজো থেকে সরিয়ে আনা যায়নি অনুব্রতকে। দেখতে দেখতে ৫৬ বছরে পড়েছে বোলপুরের বারিপুরের কেষ্টকালী।

আকাশছোঁয়া কালীপ্রতিমা থেকে শুরু করে আলোর রোশনাই। এত বছর ধরে সে পুজোয় কোনও খুঁত থাকতে দেননি অনুব্রত। সেই কেষ্টা নেই। রামের অনুপস্থিতে তাঁর পাদুকাখানি তুলে নিয়েছেন অনুব্রতের ভাই। আছেন পাড়াপড়শিরাও। না, তার সঙ্গে আছেন আরও একজন। তিনি কাজল শেখ। অনুব্রত মণ্ডল জেলে যাওয়ার পর তাঁর জায়গা নিয়েছেন যিনি।

একসময় অনুব্রতের সঙ্গে সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না কাজলের। বহুবার অনুব্রতকে বিভিন্ন ইস্যুতে নিশানা করতেও দেখা গিয়েছে কাজলকে। যদিও ক্ষমতায় এসে অনুব্রতকেই গুরু হিসেবে মানেন বলে দাবি করেছেন কাজল। শেষের দিকে অবশ্য অনুব্রতও কাছে টেনেছিলেন কাজলকে। আসলে এভাবেই বোধহয় ক্ষমতার হাতবদল হয়। একসময় বোলপুরে যার নামে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খেত, সেই অনুব্রত আজ জেলবন্দি। তার রাজনৈতিক জায়গা তো নিয়েইছেন কাজল। এবার কেষ্টা-কালীর পুজোতেও নিজের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছেন কাজল শেখ। কেষ্ট-অনুরাগীদের বুঝতে দিচ্ছেন না দাদার অভাব।

তবে এতদিন ধরে ভালোবাসার যে দুর্গ গড়েছিলেন অনুব্রত নিজের পাড়ায়, তা কি আর এত সহজে ভাঙে! তাই পাড়াপড়শিদের মন খানিকটা খারাপ। তবে প্রথা মেনেই এ বছরও ৪৫ ফুটের প্রতিমা নির্মাণ হয়েছে নিচুপট্টিতে। পুজো কমিটির লোকেরা জানিয়েছেন, প্রতিবছরের মতোই সারা হয়েছে সমস্ত আয়োজন। অনুব্রতের নিজের হাতে তৈরি পুজো। প্রতিবছর ফিতে কেটে প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজোর উদ্বোধন করতেন তিনিই। তাঁর অভাব তো থাকবেই। তবে পাড়া-প্রতিবেশীরা বলছেন, কেষ্টদা যেন না-থেকেও রয়েই গিয়েছেন।

কেষ্টর অভাব মেটাতে মণ্ডপে একাধিক বার ঘুরে গিয়েছেন কাজল শেখ। অনুব্রতের ভাই প্রিয়ব্রত মণ্ডল জানালেন, পুজোর প্রস্তুতি দেখতে এসেছিলেন কাজল শেখ। পুজোর উদ্বোধন থেকে বাদবাকি অনুষ্ঠানেও থাকবেন তিনি। যে জায়গায় এতদিন চলত কেষ্টর দাপট, সেই জায়গা কি ক্রমে ক্রমে বুঝে নেবেন কাজল!

আরও পড়ুন:খোদ কালীঘাটে কালীপুজোয় পুজো পান না দেবী কালিকা! কেন এই রীতি জানেন?

কালীভক্ত অনুব্রতের কি আর শুধুমাত্র এই নিচুপট্টির পুজোই ছিল! একই সঙ্গে পার্টি অফিসেও তো প্রতিবছর পুজোর আয়োজন করতেন কেষ্ট। প্রতিমাকে গয়না পরানো থেকে শুরু করে যাবতীয় দায়দায়িত্বই ছিল তাঁরই কাঁধে। অনুব্রতের অনুপস্থিতিতে কে দায়িত্ব নেবে সেই পুজোর? গতবছর পুজো উতরে দিয়েছিলেন দলের কর্মীরাই। এ বছর কী হবে! কেষ্টর অভাবে এ বছর কি ভোগ পাবেন না পার্টিঅফিসের কালী! নাকি সে দায়িত্বও অকাতরে সামলে দেবেন অনুব্রতের 'উত্তরসূরী' কাজল শেখ!

More Articles