সেপটিক ট্যাংকে দেহ! কোন সংবাদের শিকড় খুঁজতে গিয়ে খুন হলেন এই সাংবাদিক?

Journalist Mukesh Chandrakar Murdered: একজন সড়ক নির্মাণের ঠিকাদারের বাড়িতে সাংবাদিকের দেহ উদ্ধার? কী এমন শত্রুতার জেরে খুন হলেন মুকেশ?

বছরের শুরুর দিনেই নিখোঁজ হয়ে গেছিলেন মুকেশ চন্দ্রকর (৩৩)। পেশায় একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। ঠিক দুই দিন পরে মুকেশের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ৩ জানুয়ারি ছত্তিশগড়ে বিজাপুর শহরের চত্তনপাড়ার বস্তিতে একটি সেপ্টিক ট্যাঙ্কে মেলে এই সাংবাদিকের দেহ মেলে। যেখানে দেহ উদ্ধার হয় সেই জায়গাটি শহরের একজন সড়ক নির্মাণ ঠিকাদারের। এই একই জায়গায় ২ তারিখেও পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছিল, দেহ মেলেনি। ৩ তারিখ দেহ উদ্ধার হয়। একজন সাংবাদিকের পেশাগত শত্রু কম হওয়ার কথা না, বিশেষ করে তিনি যদি কোনও অনুসন্ধানমূলক সংবাদের পিছনে পড়ে থাকেন বা গভীর কোনও দুর্নীতির শিকড় খুঁজে থাকেন। কিন্তু একজন সড়ক নির্মাণের ঠিকাদারের বাড়িতে সাংবাদিকের দেহ উদ্ধার? কী এমন শত্রুতার জেরে খুন হলেন সাংবাদিক?

পুলিশ জানিয়েছে, নববর্ষের দিনে মুকেশ চন্দ্রকর নিখোঁজ হওয়ার পরে তাঁর পরিবার পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ মুকেশের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে শুক্রবার বিজাপুরের অকুস্থলে মৃতদেহ খুঁজে পায়। এই মৃত্যুর ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে মুকেশেরই দুই আত্মীয়ও রয়েছেন বলে জানা গেছে। ৩ জানুয়ারি সুরেশ চন্দ্রকারের ব্যাডমিন্টন কোর্টের কাছে সেপটিক ট্যাঙ্কে মুকেশের মৃতদেহ আবিষ্কার করে পুলিশ। ট্যাঙ্কের উপরে কংক্রিটের নতুন স্ল্যাব বসানো দেখেই সন্দেহ হয় তাদের। পুলিশ জানিয়েছে, মুকেশের শরীরে ভোঁতা কিছু দিয়ে আঘাত করে হয়েছে।

আরও পড়ুন- মিডিয়ার স্বাধীনতা দমনকারী শাসকদের জনতা ক্ষমা করেনি

মুকেশ ছিলেন এনডিটিভি নিউজ চ্যানেলের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। পাশাপাশি, ‘বাস্তার জংশন’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালাতেন তিনি যার প্রায় ১.৫৯ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। বিজাপুরে একটি রাস্তা নির্মাণের কাজকর্মের নেপথ্যে দুর্নীতি নিজে তথ্য অনুসন্ধান করছিলেন মুকেশ, দীর্ঘদিন ধরেই। ২৫ ডিসেম্বর এনডিটিভিতে এই নিয়ে তাঁর প্রতিবেদন দেখানোও হয়। পুলিশের ধারণা, মুকেশ চন্দ্রাকরের হত্যার পিছনে এই প্রতিবেদনটিই মূল উদ্দেশ্য। ওই দুর্নীতিগ্রস্ত নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ছিলেন সুরেশ চন্দ্রকার। সাংবাদিক হত্যার প্রধান অভিযুক্ত সুরেশ চন্দ্রকারকে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল হায়দরাবাদ থেকে গ্রেফতার করে। সুরেশ চন্দ্রকরের ভাই রিতেশ চন্দ্রকার এবং দীনেশ চন্দ্রকার এবং তত্ত্বাবধায়ক মাহেন্দ্র রামতেকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

ছত্তিশগড়ের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় শর্মার দাবি, সুরেশ চন্দ্রকার কংগ্রেস নেতা ছিলেন। বিরোধী দলগুলি অবশ্য দাবি করেছে, অভিযুক্তরা সম্প্রতি ক্ষমতাসীন বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। অভিযুক্তের অবৈধ সম্পত্তি এবং দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, বিজাপুর-গ্যাঙ্গালুর রোডের পাশের বনভূমি দখল করার পরে সুরেশ চন্দ্রকার যে নির্মাণভূমি তৈরি করেছিলেন তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সুরেশ চন্দ্রকার এবং অন্যান্য অভিযুক্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে পুলিশ।

বিজাপুরে টাকালগুড়া নকশাল আক্রমণের পরে ২০২১ সালের এপ্রিলে মাওবাদীদের হাত থেকে কোবরা কমান্ডো রকেশ্বর সিং মনহাসকে মুক্তি দেওয়ানোর ক্ষেত্রে মুকেশ চন্দ্রকার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ওই আক্রমণে দেবার ২২ জন নিরাপত্তা কর্মী শহিদ হয়েছিলেন। কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ফর রেজোলিউট অ্যাকশন (কোবরা) কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) একটি বিশেষ জঙ্গল ওয়ারফেয়ার ইউনিট। নকশাল হামলা, এনকাউন্টার এবং বস্তারকে প্রভাবিত করে এমন অন্যান্য বিষয় নিয়ে ব্যাপকভাবে খবর পরিবেশন করে গিয়েছেন মুকেশ। তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে রাজ্য এবং মাওবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষের বিভিন্ন দিক নিয়ে নানা সংবাদ রয়েছে, তুলে ধরেছেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিও।

দুর্নীতি বা পরিবেশগত অবক্ষয় নিয়ে সংবাদ তুলে ধরা সাংবাদিকদের উপর হামলা ভারতে অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। ২০২২ সালের মে মাসে আরেকজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সুভাষ কুমার মাহতো বেআইনি বালি খনন নিয়ে কাজ করছিলেন। এই বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে খবর করার জন্য বিহারে তাঁর বাড়ির বাইরে চারজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি মাথায় গুলি করে হত্যা করে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস জানাচ্ছে, ভারতে প্রতি বছর নিজেদের কাজ করতে গিয়ে গড়ে তিন থেকে চারজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। সংবাদমাধ্যমের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলির মধ্যে অন্যতম দেশ হয়ে উঠেছে ভারত।

More Articles