কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির নেপথ্যেও নির্বাচনী বন্ড! কীভাবে?
Arvind Kejriwal Arrest and Electoral Bond: পিনাকা শরৎ চন্দ্র রেড্ডি ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে ৬২ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। যে অনুদানের ৪৪.৫ কোটি টাকাই পেয়েছে বিজেপি।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ইডি আবগারি নীতি মামলায় গ্রেফতার করেছে। দেশ জুড়ে তোলপাড়। সারা দেশের রাজনীতিতে একের পর এক বড় ঘটনা চলছে নতুন বছরের শুরু থেকেই। রামমন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের গ্রেফতারি, সিএএ চালু, নির্বাচনী বন্ড কেলেঙ্কারি! লোকসভা ভোটের মাসখানেক বাকি থাকতেই রাজধানী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি তাই নিঃসন্দেহে এক বড় ঘটনা। তবে কেজরিওয়ালের এই গ্রেফতারির সঙ্গে নির্বাচনী বন্ড বিষয়টিও জড়িয়ে আছে। কীভাবে?
এই আবগারি নীতি মামলার একজন প্রধান অভিযুক্ত হচ্ছেন, অরবিন্দ ফার্মার পিনাকা শরৎ চন্দ্র রেড্ডি। তিনি এই মামলার সাক্ষীও এখন। এই পিনাকা শরৎ চন্দ্র রেড্ডি ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে ৬২ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। যে অনুদানের ৪৪.৫ কোটি টাকাই পেয়েছে বিজেপি।
২০২২ সালের ১০ নভেম্বর অরবিন্দ ফার্মার পিনাকা শরৎ চন্দ্র রেড্ডিকে আবগারি নীতি মামলায় ইডি গ্রেফতার করে৷ এর ৫ দিন পরেই, ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর পিনাকা শরৎ চন্দ্র রেড্ডির অরবিন্দ ফার্মা বিজেপিকে ৫ কোটি টাকা দেয় নির্বাচনী বন্ডে৷ ২০২৩ সালের ১ জুন শরৎ চন্দ্র রেড্ডি এই আগবগারি মামলার একজন সাক্ষী হয়ে যান।
আরও পড়ুন- কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির প্রতিবাদ করতে ১৪ ঘণ্টা সময় কেন নিলেন মমতা?
২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর শরৎ চন্দ্র রেড্ডির অরবিন্দ ফার্মা এবং এপিএল হেলথকেয়ার বন্ডে বিজেপিকে আরও ৩৫ কোটি টাকা দিয়েছে। শরৎ চন্দ্র রেড্ডি গ্রেফতার হওয়ার পর দেখা যায় নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অরবিন্দ ফার্মা এবং এপিএল হেলথকেয়ার মোট ৪০ কোটি টাকা অনুদান দেয়৷
গত ১৫ মার্চ ভারত রাষ্ট্র সমিতি অর্থাৎ বিআরএস নেতা এবং তেলেঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা, কে কবিতাকেও এই আবগারি নীতি মামলায় অর্থ তছরুপের অভিযোগে ইডি গ্রেফতার করে। তারপর ২১ মার্চ গ্রেফতার হলেন খোদ কেজরিওয়াল। ভারতের নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কোন কোন ব্যক্তি এবং কর্পোরেটদের কোন রাজনৈতিক দলকে কত টাকা দিয়েছে সেই বিবরণ পেশ করেছে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করেই নির্বাচনী বন্ডের সঙ্গে দিল্লির আবগারি নীতির মামলার এক অদ্ভুত সংযোগ পাওয়া গেছে। স্ক্রোল ডট ইন, নিউজলন্ড্রি এবং নিউজমিনিট এই নির্বাচনী বন্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানাচ্ছে, হায়দরাবাদের একটি ফার্মা কোম্পানি, যার পরিচালক কে কবিতার সহ-অভিযুক্ত, এবং যিনি শেষ পর্যন্ত এই আবগারি নীতির একজন সাক্ষীও হন, সেই ব্যক্তি ভারতীয় জনতা পার্টিকে ৫ কোটি টাকা দেন নির্বাচনী বন্ডে৷ ইডি তাঁকে গ্রেফতার করার পাঁচ দিন পরে এই অনুদান দেওয়া হয়েছিল।
হায়দরাবাদের ব্যবসায়ী পি শরৎ চন্দ্র রেড্ডি অরবিন্দ ফার্মা লিমিটেডের অন্যতম পরিচালক। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন শরৎ চন্দ্র রেড্ডির বাবা পিভি রাম প্রসাদ রেড্ডি। ইডি ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর আবগারি কেলেঙ্কারির মামলায় শরৎ চন্দ্র রেড্ডিকে গ্রেপ্তার করে। ১৫ নভেম্বর শরৎ চন্দ্র রেড্ডির কোম্পানি অরবিন্দ ফার্মা ৫ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কেনে। নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার দেওয়ার তথ্য অনুযায়ী, সমস্ত বন্ড ভেঙে বিজেপি নগদ টাকা করে ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর।
আরও পড়ুন- অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেফতার! বিজেপির দিল্লি দখলের মোক্ষম অস্ত্র এটিই?
ইডির গ্রেফতারির সাত মাস পর, শরৎ চন্দ্র রেড্ডি ২০২৩ সালের জুন মাসে এই আবগারি মামলার সাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০২৩ সালের নভেম্বরে, অরবিন্দ ফার্মা বিজেপিকে আরও ২৫ কোটি টাকা দেয়। সব মিলিয়ে এই ফার্মটি ৫২ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। এর মধ্যে ৩৪.৫ কোটি পেয়েছে বিজেপি, ১৫ কোটি পেয়েছে ভারত রাষ্ট্র সমিতি বা বিআরএস এবং ২.৫ কোটি টাকা পেয়েছে তেলেগু দেশম পার্টি।
২০২১-২২ সালে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন সরকার যখন কয়েক মাসের জন্য এই আবগারি নীতিটি প্রয়োগ করে, তখন ইডি অভিযোগ করে, 'সাউথ গ্রুপ' লবিতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের মধ্যে শরৎ এবং কবিতা রয়েছেন। এই 'সাউথ গ্রুপ'-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? অভিযোগ, এই লবি আম আদমি পার্টিকে ১০০ কোটি টাকা দিয়েছে বিজয় নায়ারের মাধ্যমে। ইডি অভিযোগ করে, দিল্লিতে মদের ব্যবসার উপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য এই পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালের গোয়া বিধানসভা নির্বাচনের সময় আম আদমি পার্টি এই অর্থ ব্যবহার করেছিল।
দিল্লির একটি আদালত ২০২৩ সালের ১ জুন শরৎকে এই আবগারি মামলায় সাক্ষী হওয়ার অনুমতি দেয়। এই সাউথ গ্রুপের অন্য দুই সদস্য, ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির সাংসদ এম শ্রীনিভাসুলু রেড্ডি এবং তাঁর ছেলে রাঘবও এই মামলায় সাক্ষী হয়েছেন।