বাঙালির ব্যবসার 'আইকন' তিনিই! কেন স্বেচ্ছাবসর নিলেন বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রশেখর?
Chandra Shekhar Ghosh: বন্ধন পরিবারে এখন ৩ কোটি ঋণগ্রাহক এবং আমানতকারী রয়েছেন। আছেন ৭৫ হাজার কর্মী
এক দশক প্রায়। যাত্রাপথ থেকে সরে দাঁড়ালেন বন্ধন ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর চন্দ্রশেখর ঘোষ। স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও চন্দ্রশেখর। বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল চন্দ্রশেখর ঘোষের হাতেই। ন’বছর আগে যাত্রা শুরু হয় বেসরকারি ব্যাঙ্কিং সংস্থা বন্ধন ব্যাঙ্কের। সেই প্রায় দশ বছরের সম্পর্কে ইতি টানলেন চন্দ্রশেখর। ইতিমধ্যেই বোর্ডের কাছে নিজের ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। চন্দ্রশেখরের বন্ধন ব্যাঙ্ক শুধু বাংলার নয়, পূর্ব ভারতের প্রথম বেসরকারি ব্যাঙ্ক। বন্ধনই প্রথম কোনও নন ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থা (এনবিএফসি), যা ব্যাঙ্কে উন্নীত হয়।
বন্ধন ব্যাঙ্ক একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, আগামী ৯ জুলাই দায়িত্ব থেকে অবসর নেবেন চন্দ্রশেখর ঘোষ। ২০১৫ সালের ২৩ অগাস্ট বন্ধন ব্যাঙ্কের যাত্রা শুরু হয়। তারপর থেকে টানা তিন বার বন্ধন ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও পদের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০২৩ সালের নভেম্বরে চন্দ্রশেখর ঘোষকে আরও এক বার তিন বছরের জন্য ওই পদে মনোনীত করা হয়েছিল। সেই মেয়াদ পূরণের আগেই স্বেচ্ছবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চন্দ্রশেখর।
আরও পড়ুন-রিফিউজি মিষ্টি বিক্রেতার ছেলে ১১০০ কোটির ব্যাঙ্কের মালিক, কোন স্ট্রাটেজিতে সাফল্য বন্ধনের?
বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রশেখর তাঁর ইস্তফাপত্রে লিখেছেন, ‘‘প্রায় এক দশক ধরে ব্যাঙ্কের এমডি এবং সিইও হিসাবে দায়িত্ব পালন করার পর এখন মনে হচ্ছে, আমার আরও বৃহত্তর দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে। বন্ধন গোষ্ঠীর নীতি ও কৌশল নির্ধারণকারীর ভূমিকায় কাজ করার সময় এসেছে। তাই আমি আগামী ৯ জুলাই, ২০২৪ আমার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘বহু প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বন্ধন বহু মাইলফলক ছুঁয়েছে এবং এই মুহূর্তে এই ব্যাঙ্কে এক লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকার আমানত জমা আছে। ব্যাঙ্কের পরিবারও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত হিসাব বলছে, বন্ধন পরিবারে এখন ৩ কোটি ঋণগ্রাহক এবং আমানতকারী রয়েছেন। আছেন ৭৫ হাজার কর্মী, আমি তাঁদের প্রত্যেকের কাছে ঋণী আমার নেতৃত্বে ভরসা এবং বিশ্বাস রাখার জন্য। আমি গর্বিত যে আমি পরবর্তী নেতৃত্বের জন্য একটি মজবুত সংস্থাকে ছেড়ে যাচ্ছি।’’
আরও পড়ুন- লাখো গ্রাহকের ভরসা! এবার স্টেট ব্যাঙ্ককেও বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চায় কেন্দ্র?
বাঙালির ব্যবসা নিয়ে কত কথাই হয়। বাঙালি হয়ে ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করে সেই সমস্ত কথার সামনে প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছিলেন চন্দ্রশেখর। নতুন ব্যাঙ্ক গড়ার জন্য ২০১৩ সালে ২৭টি আবেদন জমা পড়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে। পরে টাটা সন্স এবং ভিডিওকন গ্রুপ আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়। এরপরে ব্যাঙ্ক গড়ার লাইসেন্স পাওয়ার প্রতিযোগিতায় ছিল অনিল আম্বানি, আদিত্য বিড়লা, বাজাজ ফিনান্সের মতো বড় বড় সংস্থা। তবে জেতে দু’টি সংস্থা। তাদের মধ্যে একটি চন্দ্রশেখর ঘোষের বন্ধন ব্যাঙ্ক। জাতীয় স্তরে সফল বাঙালি ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন তিনি। গত প্রায় এক দশকে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্তের ব্যাঙ্ক হয়ে উঠেছে বন্ধন ব্যাঙ্ক। আমানতের গড় পরিমাণ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে শুরুর পর থেকেই অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ দিতে আরম্ভ করে বন্ধন ব্যাঙ্ক।
ব্যাঙ্কিং পরিষেবার পাশাপাশি চন্দ্রশেখর স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রেও কাজ করেছেন। সল্টলেকে হাসপাতাল খুলেছেন তিনি। কলকাতা শহরের অন্যতম বিখ্যাত প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরিও কিনেছেন। অবশেষে ৬৩ বছর বয়সে স্বেচ্ছাবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চন্দ্রশেখর।