বাড়ি গিয়ে তল্লাশি, তলব! আরজি কর আন্দোলনের মুখ বলেই হেনস্থা আসফাকুল্লাকে?
Asfakulla Naiya: রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল স্পষ্ট জানিয়েছিল, পিজিটি অর্থাৎ পোস্ট গ্যাজুয়েট ট্রেনি হয়েও ইএনটি সার্জনের পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা করছেন আসফাকুল্লা।
আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে জুনিয়র ডাক্তারদের দীর্ঘ আন্দোলনে একেবারে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তিনি নিজেও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া-চিকিৎসক। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ আসফাকুল্লা নাইয়ার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে চলছিল পুলিশি তদন্ত। পুলিশ একাধিকবার তল্লাশি চালায় আসফাকুল্লার বাড়িতে। কেন এই হেনস্থা?
আসফাকুল্লার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ তোলে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। তাঁদের অভিযোগ, সিঙ্গুরে একটি স্বাস্থ্য পরিষেবা সংস্থার বিজ্ঞাপনে আসফাকুল্লা নিজেকে ‘এমএস’ বলে দাবি করেছেন। এইটি আসলে নিয়মবহির্ভূত। বিতর্ক কেন? ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন প্রশ্ন তোলে, কোর্স শেষ হওয়ার আগে আসফাকুল্লা কীভাবে নিজের পরিচয়ে ‘এমএস’ লিখছেন? আসফাকুল্লাকে এই প্রশ্ন তুলেই নোটিশ দেয় রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলও। কাউন্সিল হুমকিও দেয়, যথাযথ জবাব না পেলে আসফাকুল্লার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপও হতে পারে।
এই বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষও লেখালিখি শুরু করেন। সিঙ্গুরের ওই সংস্থার বিজ্ঞাপনের ছবি পোস্ট করে কুণাল ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘‘তলায় সুলভ মূল্যে ফিজিওথেরাপি লেখা আছে। কিন্তু বিনামূল্যে চিকিৎসাটা লিখতে ভুলে গিয়েছে। এ বার থেকে ওখানে যাঁরা যাবেন, কেউ এক পয়সাও দেবেন না।’’ আরজি কর আন্দোলনের মুখ আসফাকুল্লা যে শাসক তৃণমূলের নেকনজরে থাকবেন না তা প্রত্যাশিতই। কিন্তু সেই কারণেই কি এই অভিযোগগুলি গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূলও?
আরও পড়ুন- ধর্ষণকাণ্ডে শাস্তি ঘোষণা, রাতদখলের আন্দোলন অতীত এবার?
রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের তথ্য বলছে, আসফাকুল্লা নিয়ম বহির্ভূতভাবে এই কাজ করছেন এমন অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে আসফাকুল্লার ডাক্তারি ডিগ্রিও কেড়ে নেওয়া হতে পারে। কাউন্সিলের নোটিশের প্রেক্ষিতে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারের আধিকারিকরাও আসফাকুল্লা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। পুলিশের দাবি, তাঁদের কাছেও এই জুনিয়র ডাক্তারের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে।
রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল স্পষ্ট জানিয়েছিল, পিজিটি অর্থাৎ পোস্ট গ্যাজুয়েট ট্রেনি হয়েও ইএনটি সার্জনের পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা করছেন আসফাকুল্লা। এই আচরণের কারণ দর্শাতে বলা হয় তাঁকে। তারপর আসফাকুল্লার কাকদ্বীপের রামতনু নগর এলাকার বাড়িতে যায় বিধাননগর পুলিশ। বাড়ি থেকে বেশ কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে যায় পুলিশ। আসফাকুল্লার পরিবারের দাবি, পুলিশ আসার বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনওরকমের খবরই ছিল না। সোজা বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি নিয়ে আসফাকুল্লা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করে আবারও আরজি কর আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকাকেই এই পুলিশি হেনস্থার কারণ হিসেবে তুলে ধরেন। আসফাকুল্লা বলেছিলেন, ‘‘যেহেতু আরজি কর আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলাম, তাই পুলিশ-প্রশাসন আমাকে ভয় দেখাচ্ছে।’’ আসফাকুল্লার দাদা অলিউল্লাহ নাইয়াও বলেছিলেন, ‘‘বিধাননগর থানার পুলিশ এসে কিছু নথিপত্র নিয়ে গিয়েছে এবং একটা নোটিশও দিয়ে গিয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু বলেনি।’’ আসফাকুল্লাকে তলবও করে পুলিশ।
এই পুলিশি তল্লাশি এবং তলবের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আসফাকুল্লা। এই জুনিয়র ডাক্তারের বিরুদ্ধে তদন্তপ্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি জানিয়ে দেন, তদন্ত করার মতো উপযুক্ত কোনও তথ্য বা নথি দেখাতেই পারেনি পুলিশ। ফলে ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করে আদালত। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ পুলিশকে স্পষ্ট প্রশ্ন করেন, "একপাতার অভিযোগেই তদন্ত শুরু হয়ে গেল, প্রমাণ কোথায়? তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে তদন্ত শুরু করলে কি ক্ষতি হতো?” কোনও তথ্য না পেয়ে তাহলে কেন এফআইআর করা হলো? শুধুমাত্র হেনস্থাই যে এর উদ্দেশ্য নয় তা কি নিশ্চিতভাবে বলা যায় আর? খোদ বিচারপতিই এই বিষয়টিতে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিচারপতি প্রশ্ন করেছেন, "অভিভাবক হয়ে সাধারণ মানুষের উপর ক্ষমতার প্রদর্শন করছে রাজ্য সরকার।অভিভাবক হয়ে রাজ্যই ক্ষমতার প্রদর্শন করলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? এখনও পর্যন্ত অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই।"
তৃণমূলের অতিসক্রিয় নেতা কুণাল ঘোষ ফেসবুকে যা লিখলেন তাতে কি স্পষ্ট হয়ে গেল না যে, শাসকের বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলনে অংশ নেওয়ারই প্রতিশোধমূলক আচরণ ছিল এই সম্পূর্ণ হেনস্থাপ্রক্রিয়া? আদালতের স্থগিতাদেশে আখেরে প্রশাসনেরই মুখ পুড়ল না তো, প্রশ্ন উঠছেই।