'আত্মা'ও কথা বলতে চায়! বিজ্ঞান নয়, বিশ্বাসে ভর দিয়ে ভূত খোঁজেন এই গোয়েন্দারা!

Bhoot Chaturdashi 2022: আত্মা প্রথমত ভয় দেখায় না। আমরা অস্বাভাবিক কিছু অনুভব করেই ভয় পেয়ে সরে যাই। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। আত্মাও কথা বলতে চায়। সে তো একাকী। হঠাৎ সঙ্গহীন!

অপরাধের তথ্য তালাশ! তার জন্য মাঝে মাঝেই ডাক পড়ে গোয়েন্দার। কিন্তু ভূত খুঁজতে গোয়েন্দা! শুধু এ রাজ্য নয়, দেশের ভূত-ভবিষ্যত খোঁজার কাজে তাক লাগাচ্ছেন ‘ডিটেকটিভস অব সুপার ন্যাচরাল’ দলের সদস্যরা। এবার ভূত নিয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা থেকে মজা, ভয় থেকে আত্মা- সব বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেবরাজ সান্যাল এবং ঈশিতা দাস সান্যাল।

ভূত চতুর্দশীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা ভূতের বন্ধুদের!

(হাসি) ধন্যবাদ। ধন্যবাদ। আপনার জন্যও ভূতেদের তরফে শুভেচ্ছা!

আলোচনায় আসি। আচ্ছা এই যে, প্যারানর্মাল অ্যাক্টিভিটি। এটা ঠিক কী?

যা কিছু স্বাভাবিক নয়। অর্থাৎ আপনি-আমি আমাদের দেখা, শোনা, চলমানতার সময়ে ঠিক যে যে প্যারামিটারের উপর নির্ভর করে একটা স্বাভাবিক, অস্বাভাবিকের ধারণা করে নিই- তার থেকে অন্য কিছু। অর্থাৎ যা আপনাকে অস্বাভাবিক অনুভূতি দিচ্ছে।

তার মানে ভয় দিচ্ছে এমন কিছু?

হ্যাঁ। খানিকটা তাই। আপনি যখন অস্বাভাবিক কিছু বুঝলেন, অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন, ভয় পেলেন! তখনই এর প্রকাশ।

কিন্তু এর চর্চা কেন করছেন? মানে এরকম অদ্ভুতুড়ে চিন্তাভাবনা কেন এল?

বিশ্বের ভূত ইতিহাসে এই চর্চা কিন্তু আগে থেকেই রয়েছে। হলিউডের একাধিক সিনেমা, কনজিউরিং, এরকম বহু জায়গায় প্যারানর্মাল বিষয়টি দেখা যায়। বলতে পারেন এই বাংলায় বা দেশে সংগঠিতভাবে এটা আমরা করছি। আর ভাবনা এল আসলে শখ থেকে। মনে হত নতুন কিছু করি। নতুন ভাবে কাজটা দেখি। এরকম চ্যালেঞ্জ নেওয়া থেকেই শুরু।

বাড়ির লোক, পরিবার বারণ করেনি?

না। আমাদের কাজে বাড়ির সকলে উৎসাহ দিয়েছেন। আর আমরা দম্পতি।

আরও পড়ুন- বাংলাদেশের কালীমূর্তি চুরি হয়ে রাজস্থানের দুর্গে! যেভাবে পুজো হয় যশোরেশ্বরী কালীর

এই অমাবস্যা, কালীপুজো, ভূত চতুর্দশী- এই সময়ের সঙ্গে ভূতের সম্পর্ক কী?

যে কোনও বিশেষ সময়, গাঢ় অন্ধকার, অমাবস্যা- এই সময়ে অতিপ্রাকৃতিক শক্তির আবহ বাড়ে, শক্তি বাড়ে।

অর্থাৎ ভূত আছেই?

হ্যাঁ আছে। নিশ্চিত একটা সুপার পাওয়ার আছে। থাকতেই হবে।

কেমন দেখতে সেই ভূত?

এখানে একটা বিষয় বলার। মূলত, ঠিক যে যে ভাবে আমরা ভূতের রূপের বর্ণনা পাই বা ভাবি, সেটা কিন্তু ঠিক নয়। ভূত ওই অর্থে নয়। আসলে তা নিরাকার। একটা শক্তি। একটা চেতনা।

চেতনা বলতে কী বোঝাচ্ছেন?

ধরা যাক, আপনি বা আমি, আমরা কথা বলতে বলতেই কেউ মারা গেলাম। এই মাত্র জীবিত ছিলাম! এই যে মুহূর্তেই মৃত হয়ে যাওয়া। এই সময়ে আমার যে চেতনা, যে শক্তি তার কী হবে?

তার মানে এই শক্তি, চেতনা এসব মৃত নয়, সেখান থেকেই ভয়?

খানিকটা সেরকম, তবে এর যুক্তি আলাদা। এক বিদেশি গবেষক বারবার বলছেন, আমাদের ব্রেন নয়, চেতনা তৈরি হয় ভিন্ন জায়গা থেকে। তাই ব্রেন বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মৃত্যুর পরেও সেই চেতনা থেকেই যায়।

বিজ্ঞান মঞ্চ তো এর বিরোধ করে। আপনার লোকজনকে ভুল বোঝাচ্ছেন! বুজরুকি করছেন!

বিজ্ঞান তো একটা বন্ধ বাক্সের মতো। যা লেখা সেটাই। যা বলা সেটা দিয়েই সব। এর বাইরে কিছু থাকতে পারে না? ব্ল্যাক হোলের ছবি দেখলেন কয়েকদিন আগেই। এর আগে তো কল্পনায় ছিল! এরপর যদি দেখেন, একদিন বলা হল এই চেতনার কথা, আত্মার কথা। তখন?

আত্মা জীবিত, ভয় দেখায়। কীভাবে হয় সবটা?

আত্মা ভয় দেখায় না।

অর্থাৎ?

হ্যাঁ, আত্মা প্রথমত আপনাকে ভয় দেখায় না। আমরা অস্বাভাবিক কিছু অনুভব করেই ভয় পেয়ে সরে যাই। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। আত্মাও আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায়। সে তো একাকী। হঠাৎ সঙ্গহীন!

ভূতের বন্ধুত্ব! এ তো সিনেমার মতো!

খানিকটা তাই। একটা সুপার পাওয়ার। সেটা যদি খারাপ থেকে হয় খানিকটা চেষ্টা করবে। আবার ভালোর থেকে হলে করবে না। আবার অনেক ক্ষেত্রেই এই জগতেই থাকবে না কোনও অস্তিত্ব।

স্বর্গ-নরক বলছেন?

এসব টার্ম ব্যবহার করা যায় কী না জানি না। তবে সেই শক্তি, সকলের মৃত্যুর পরেই আবর্তিত হবে। এটাও নিশ্চিত করা যায় না।

বুঝব কীভাবে? ভূতের খপ্পরে পড়েছে আমার বাড়ি?

অস্বাভাবিক কিছু। যদি আপনি একা হন, একাধিক একই জিনিস দেখেন। কারণ আত্মা নিরাকার হলেও এর কিন্তু মুভমেন্ট রয়েছে।

ভূত, ডেভিল, জ্বিনের কবলে পড়েছেন ভূত খুঁজতে গিয়ে?

জ্বিন, ডেভিল নিয়ে চর্চা করিনি। কিন্তু এই যে আত্মার কথা বলছি, সুপার পাওয়ারের কথা বলছি এর খপ্পরে আমরা না পড়লেও অভিজ্ঞতা রয়েছে ভয়ঙ্কর কিছুর।

কেমন?

২০১৯ সাল। ডায়মন্ড হারবার এলাকার একটি বাড়িতে আমরা কাজ করতে যাই। দু’দিন ছিলাম সেখানে। আমাদের দলের সদস্যরা হলেন; অনিন্দ্যম ঘোষাল, উজ্জ্বল গুপ্ত, আয়ুষ মজুমদার, ঋতবান চ্যাটার্জী। অনেকেই ছিলেন। সেদিন ওই বাড়িতে ঢুকেই একটা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়েছিল। কেমন যেন আতঙ্কের লাগছিল সবটা।

তারপর?

বাড়ি ফিরলাম। আমাদের সঙ্গে কিছু না হলেও অনিন্দ্যমের সঙ্গে অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে।

কী কী হচ্ছে?

ওঁর বাড়িতে কেউ নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বাড়ি তছনছ। রাতে অদ্ভুত আওয়াজ শুনছেন ওঁরা। ওঁর দেওয়ালে লাগানো একাধিক কাগজ আচমকা খুলে যাচ্ছে। এসবের পর থেকে আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি খানিকটা।

এসবের পিছনে তো অন্য কারণও থাকতে পারে?

না এর পিছনে অন্য কারণ নেই। তবে এই সমস্ত ঘটনার সঙ্গে দুষ্কৃতী, প্রোমোটার-সহ একাধিক ঘটনাও থাকে।

আরও পড়ুন- খাসি বা ইলিশ নয়! ইছামতির গলদা চিংড়ি ভোগে সন্তুষ্ট কৃষ্ণচন্দ্রের সাধের ইটিন্ডার সিদ্ধেশ্বরী কালী

দেবরাজ সান্যাল এবং ঈশিতা দাস সান্যাল

কেমন?

সম্প্রতি, কলকাতা পুলিশ ডাকল আমাদের। জোড়াবাগান ট্রাফিক গার্ডে নাকি লোক টিকতে পারছেন না। আমরা গেলাম। যাঁরা বলছেন, তাঁরা নাকি অদ্ভুত স্বপ্ন, রাতে বিকট আওয়াজ শোনেন। কিন্তু আমরা দেখলাম, ওই অঞ্চলের ঠিক কাছেই একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মোবাইল ফোনের টাওয়ার রয়েছে। সেটার জন্য এই পরিস্থিতি হতে পারে বলে মনে হয়েছিল। আবার...

আবার কী?

আমরা ফুলবাগান এলাকায় একটি কাজ করতে যাই। সেখানে নাকি এক বিজ্ঞানী থাকতেন। তিনি নানা কাজ করতেন। লোকে তাঁকে ‘কালো জাদু’ করার অভিযোগে পিটিয়ে খুন করে। তারপর থেকেই উপদ্রব। আমরা যখন গেলাম আমাদের নির্দিষ্ট যন্ত্র, মেশিনে সব রেকর্ড করছি। একটা অদ্ভুত শব্দ এল। সেখানে কেউ বলছেন, আমি মুক্তি চাই!

সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, খানিকটা তেমন?

হ্যাঁ খানিকটা। সেটা হয়। কিন্তু সুশান্ত কেন ওই ব্যক্তির কাছে বলবেন।

কারণ?

আত্মা কেন আসবেন ডাকলেই? অত সহজে এসব করা যায় না। আমরা নির্দিষ্ট পদ্ধতি এবং যেখানে সমস্যা বা উপদ্রব রয়েছে, সেখানেই অনুসন্ধান করি। অনেক সময় ওই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের কাছের কাউকে দিয়ে প্রশ্ন করাই।

প্রশ্নের উত্তর পান?

হ্যাঁ। বেহালায় একটি জায়গায় গিয়ে একটি মানুষের অবয়বের মতো দেখা যায়। অনেকেই বলেন, ক্যামেরায় ফ্ল্যাশের জন্য হয়েছে। কিন্তু সেটাও অতিপ্রাকৃতিক কিছু।

ভূত তো সবসময় আসে না। আপনারা এত জন লোক, এত মেশিন। ভূত আসবে?

আসবে। সবকিছুর সঠিক পদ্ধতি রয়েছে যদিও। অনেক ক্ষেত্রেই গুজবের রহস্য সন্ধান করি আমরাই।

গুজব?

হ্যাঁ। কেউ চক্রান্ত করে গুজব ছড়ান। দীর্ঘমেয়াদি কোনও লক্ষ্য নিয়ে। কারও প্রতি শত্রুতা, আক্রোশও থাকে এর পিছনে।

তাহলে ভূত ভয়ঙ্কর নয়। ভূতের খপ্পরে পড়লে কী করণীয়?

ভূত ভয়ঙ্কর কিনা জানি না। তবে এর খপ্পরে অর্থাৎ ওই সুপার পাওয়ারের খপ্পরে পড়লে অবশ্যই ভয় পাবেন না। চেষ্টা করুন সামলে নেওয়ার। দেখবেন ভালো কিছুও হতে পারে! বিশ্বাসে মিলায় বস্তু! তর্কে বহুদূর হেঁটে যাওয়ার তাড়না ছেড়ে খানিকটা যুক্তি দিয়েই ভেবে দেখুন না, তারাও তো আমাদের লোক ছিলেন! থাকুক আর একটু...!

More Articles