শহর ছেড়ে অনেক দূরে: মন মাতাবেই সবুজে মাখা পাহাড়ি স্বপ্ন-গ্রাম

Bijanbari, A offbeat place near Darjeeling: শহর আর কাজকর্মের শিকলবন্দি জীবনে একটু অক্সিজেন ফেরাতে আপনার ক'দিনের ঠিকানা কিন্তু হতেই পারে সুন্দরী বিজনবাড়ি।

পুজো মানে প্যান্ডেল-হইচই। কিন্তু পুজোর ছুটি মানে তো অনেকের কাছে বাক্স প্যাঁটরা বেঁধে বেরিয়ে যাওয়া দূরের খোঁজে। নির্জনে নিরালায় প্রকৃতির কোলে দু'দণ্ড জিরিয়ে আসা। পুজো আসতে আর একমাসও নেই। এইটুকু সময়েই চেনা অথচ অচেনা কোথায় বেরিয়ে আসতে পারেন? রইল সুলুক সন্ধান।

দার্জিলিং তো কমবেশি সকলেই গিয়েছেন। ম্যালের মায়াবিতে ধোঁয়া ওঠা মোমোয় ঠোঁট পুড়িয়েছেন। কেভেন্টার্স কিংবা গ্লেনারিজের নস্টালজিয়ায় গা ভাসিয়েছেন। কিন্তু দার্জিলিং থেকে বুড়ি ছোঁয়া দূরত্বে রয়েছে প্রাকৃতিক নিসর্গে মোড়া একেবারে অচেনা একটি ঠিকানা, তার কথা জানেন কি?

উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি গ্রাম মানেই অপার সবুজের হাতছানি আর শান্তির ডাক। বিগত কয়েক বছরে পর্যটকেরা নতুন নতুন উত্তরবঙ্গকে আবিষ্কার করেছেন। খুঁজে এনেছেন নতুন নতুন ঠিকানা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাতে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক হোমস্টে। তবে এখনও যে সমস্ত পাহাড়ি গ্রাম সেই ভিড়ভাট্টা থেকে দূরে রয়েছে এখনও, তার মধ্যে অন্যতম হল বিজনবাড়ি।

আরও পড়ুন: নামমাত্র খরচে পাহাড় ভ্রমণ, দুদিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন এই অফবিট জায়গা থেকে

রঙ্গীতের তিরে পাহাড়ের সবুজ দিয়ে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম বিজনবাড়ি। একদিকে ঘন সবুজ জঙ্গল, অন্যদিকে দুর্বার স্রোতে বয়ে চলা রঙ্গিত, ষোড়শ কিশোর যেন। আর সেই রং-রস উপভোগ করার জন্য হাঁটতে হবে না মাইলের পর মাইল, নামতে হবে না উৎরাইও। বরং হোমস্টে-র নিরালায় বসেই মিলবে সমস্ত সৌন্দর্য।

পাখি দেখার নেশা থাকলে এ জায়গা আপনার জন্য আদর্শ। হয়তো দেখলেন, আপনারই জানলায় এসে সুপ্রভাত বলে গেলে অচেনা-অজানা পাখির দল। সকাল হতেই আলস্য ত্যাগ করে কাজে বেরিয়ে পড়ে ওরা। এ গাছ ও গাছ উড়ে বেরিয়ে চলছে তাদের কর্মকাণ্ড। চাইলে দু'চোখ ভরে দেখুন, চাইলে ক্যামেরাবন্দিও করে রাখতে পারেন তাদের। সন্ধে নামলেই ঘিরে ধরবে ঝিঁঝিঁর ডাক। বিজনবাড়ির অবস্থান প্রায় আড়াই হাজার ফুট উপরে, তবে এই জায়গা অতটা চরমভাবাপন্ন নয়। বরং বেশ মনোরম। শীত এসেও হালকা ছুঁয়ে দেবে অথচ কাঁপিয়ে দেবে না, বিজনবাড়ির মজাটাই সেটা।

দার্জিলিং, ঘুম, কার্শিয়াং- প্রায় সমস্ত জায়গা দিয়েই আপনি বিজনবাড়ি পৌঁছে যেতে পারেন। অন্যান্য জায়গার মতোই বিজনবাড়িতেও নেপালী ভাষাভাষীদেরই আধিপত্য বেশি। ঘুম থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটারের পথ ছোট্ট এই গ্রাম। গোটা রাস্তাটাই মায়ায় মোড়া। ঘুম পেরোলেই সবুজে মোড়া চা-বাগান। ইচ্ছা হলে মেরিবং, রিশিহাট, চংটং-এর মতো একাধিক চা বাগানে বেশ কিছুটা করে সময় কাটাতে পারেন। পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে পারেন বিজনবাড়ি গ্রামটিও। সেখানেও দেখা মিলবে চা বাগানের। তবে শুধু বিজনবাড়িই নয়, এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন টাইগার হিল, বাতাসিয়া লুপ, জাপানিজ টেম্পল, দার্জিলিং চিড়িয়াখানা, হ্যাপি ভ্যালি, রক গার্ডেন কিংবা পিস প্যাগোডার মতো জায়গাগুলিও। সময় থাকলে একদিনের জন্য ঘুরে আসুন দার্জিলিং থেকে। ঘুরে আসতে পারেন জামুনির কাছের সেতুটি থেকেও। দু-পাশ ধরে বয়ে যাচ্ছে খরস্রোতা নদী। তার পাশে ছোট্ট একটি পার্ক, সেই পার্কের মাথা আলো করে বসে আছেন দেবাদিদেব মহাদেব। সেই শিবের মুখে রুদ্রচ্ছায়া নেই, বরং সে যেন অন্য শিবমূর্তিদের থেকে একটু বেশিই আদুরে, কাছের। নুড়ি পাথর বুকে নিয়ে ছুটে যাচ্ছে জল-হাওয়া। নদীর তিরে পাখিদের নাচানাচি।

আরও পড়ুন: হাতে দু’দিনের ছুটি? জল-জঙ্গল-পাহাড় একসঙ্গে পেতে আসতেই হবে যে ঠিকানায়

বিজনবাড়িতে বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন হোমস্টে রয়েছে। তাছাড়া থাকতে পারেন বিজনবাড়ির বাঁশবাড়ি রিসর্টে। পাহাড়ের উপর জঙ্গলে ঘেরা বাঁশের বাংলো। তাতে দু'হাত ছড়ানো ব্যালকনি পাহাড়ের ঢাল ছুঁয়ে, তলায় বয়ে চলেছে ছোট রঙ্গীত। আর যদি সেই পাহাড় মাখা জঙ্গলেও শহুরে ছোঁয়া পেতে চান, থাকতে পারেন বিজনবাড়ি ব্যাম্বু রিসর্টেও। যেখানে সুইমিং পুল থেকে শুরু করে একাধিক সব বিনোদনের ব্যবস্থা পাবেন পর্যটকেরা। তবে তুলনামূলক ভাবে এই রিসর্টটির খরচ একটু বেশি। তবে আর দেরি কীসের, ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিয়ে চেপে পড়ুন ট্রেনে। চাইলে পৌঁছে যেতে পারেন গাড়িতেও।

সব মিলিয়ে  বিজনবাড়ি যেন শান্তির নীড়। শহর আর কাজকর্মের শিকলবন্দি জীবনে একটু অক্সিজেন ফেরাতে আপনার ক'দিনের ঠিকানা কিন্তু হতেই পারে সুন্দরী বিজনবাড়ি। সবে বর্ষা গিয়েছে। এখন প্রকৃতির রূপ-রসই আলাদা। আবহাওয়ার মেজাজ ভালো থাকলে দার্জিলিং হয়ে বিজনবাড়ি যাওয়ার পথে দেখা মিলতে পারে স্লিপিং বুদ্ধারও।

More Articles