আইটির নিশ্চিন্ত চাকরি ছেড়ে সার্ট আপ, কীভাবে তিলে তিলে মন জয় করল বিরিয়ানি বাই কিলো?
Start up food business Biriyani by kilo : হুবহু একই স্বাদের বিরিয়ানি মেলে দেশের সর্বত্র, কীভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করল বিরিয়ানি বাই কিলো?
একটা বড়সড় হাঁড়ি, তার ওপর লাল রঙের শালু জড়ানো, দূর থেকেই নাকে ভেসে আসে একটা পরিচিত গন্ধ। এটুকু পরিচিতিই যথেষ্ট এই খাবারটিকে চিনে নিতে। খোদ মোগলাই খানা হলেও গোটা দেশ জুড়েই জনপ্রিয় এই বিরিয়ানি। বিভিন্ন অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত বছরের সমীক্ষা বলছে সবথেকে বেশি বিক্রি হওয়া খাবার হিসেবেও রেকর্ড গড়েছে এই পদ। এমনকী এর স্বাদ পেতে দূরদূরান্ত থেকেও অর্ডার দিয়েছেন অনেকে। আর এই জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই এখন রাস্তার মোড়ে মোড়ে লক্ষ্য করা যায় লাল শালুতে মোড়া ঢাউস বিরিয়ানির হাঁড়ি।
এবার সেই চাহিদাকে সামনে রেখেই নতুন করে ব্যবসা বাড়াতে চলেছে একটি অনলাইন ফুড চেইন সংস্থা। ম্যাকডোনাল্ডস, স্টারবাক্সের, চিপোটল বা নান্দোর চেয়েও বড় আকারে ব্যবসা করতে চলেছে এই নতুন সংস্থা, এমনটাই জানা গিয়েছে। ব্যবসার মূল মন্ত্র হল চাহিদার আসল রহস্যটা বোঝা, আর ঠিক সেটাই করে দেখালেন একজন ইতালিনায়। জন্ম সূত্রে বিরিয়ানির সঙ্গে বিশেষ যোগ না থাকলেও বিরিয়ানির জনপ্রিয়তা বুঝে নিতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি তাঁর। এই বহুজাতিক খাদ্য ও পানীয়ের চেইনটির নাম হল বিরিয়ানি বাই কিলো।
আরও পড়ুন - মুম্বইয়ে বসে ব্যাঙ্গালুরুর বিরিয়ানি খাওয়ার স্বাদ, জোম্যাটোর অর্ডারে তাজ্জব হবেন আপনিও
কে সবচেয়ে বেশি বিরিয়ানি পছন্দ করে তার যদি কোনো প্রতিযোগিতা হতো, তবে যে সারাদেশের প্রচুর মানুষ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জেতার জন্য দেদার টক্কর দেবে, তা আর নতুন করে বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। বিরিয়ানির প্রতি এই ভালবাসার কারণেই, আমাদের বেশিরভাগেরই এটি রান্না করার নিজস্ব উপায় রয়েছে। এমনকী আমাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু রেস্তোরাঁ যেখানকার স্বাদই আমরা বেশি পছন্দ করে থাকি। সব রেস্তোরাঁ বিরিয়ানির স্বাদ এক রকম হয় না। ঠিক যেমন বিরিয়ানি বাই কিলো (BBK) তার খানসামা মেজাজের তাজা দম হান্ডি বিরিয়ানির জন্য পরিচিত। ইতিমধ্যেই তারা সারা ভারতেই তাদের মেনুতে বিরিয়ানির একটি পরিসর তৈরি করেছে। তাই আপনি যদি দিল্লিতে বসে খাবার অর্ডার করেন, সহজেই কর্ণাটক স্টাইলের বিরিয়ানির স্বাদ নিতে পারবেন এই ফুড চেইনের হাত ধরে!
এই ফুড চেইনটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন বিশাল জিন্দাল। তিনি আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেও নিশ্চিন্ত চাকরির সুযোগ ছেড়ে দিয়ে আনকোরা নতুন ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। পাশাপাশি একটি প্রাইভেট ইক্যুইটি ফান্ডও প্রতিষ্ঠা করেন। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি বুঝেছিলেন মানুষের খাবারের প্রতি প্রেমটাই ব্যবসার চাবিকাঠি হতে পারে ঠিক তাই বিক্রির ব্যবসার পথ বেছে নেন।
বিশাল জিন্দাল এই সাক্ষাৎকারে প্যান-ইন্ডিয়া স্তরে বিরিয়ানির ব্যবসা চালানোর চ্যালেঞ্জগুলি নিয়েও কথা বলেছেন৷ তিনি জানান, ৪০টিরও বেশি শহরে ১০০টিরও বেশি আউটলেট রয়েছে তাঁর এই ব্যবসায়। ফলে এই সবগুলি আউটলেটের মধ্যে পারস্পরিক সামঞ্জস্য ঠিকঠাক থাকলে তবেই গীতা ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া সুষ্ঠ হওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন - মুঘল নয়, খোদ সংস্কৃতে উল্লেখ রয়েছে বিরিয়ানির! জিভে জল আনা এই পদ আসলে কতটা প্রাচীন?
বিরিয়ানি বাই কিলো আপনাকে দেয় আরও একটি বিশেষ সুযোগ, হুবহু একি স্বাদের বিরিয়ানি আপনি পেতে পারেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় বসে। ধরা যাক, আপনি জলন্ধর, গুয়াহাটি, গোয়া, মহীশূর, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ, ব্যাঙ্গালোর অথবা দিল্লির মধ্যে কোথাও না কোথাও আছেন, এবং আপনার নির্দিষ্ট একটি স্বাদের বিরিয়ানিই বিশেষ পছন্দ, আপনার সেই সাধ পূরণ করবে বিরিয়ানি বাই কিলো।
ব্যবসায় সামঞ্জস্য তো থাকতেই হবে পাশাপাশি তিনি আরও যোগ করেন, আগামী কয়েক বছরে এই খাদ্য স্টার্টআপ ব্যবসাটিকে তিনি আরো বড় জায়গায় দেখতে চান। আজকের হিসেবে এটি F&B ক্যাটাগরি ৭০ বিলিয়ন ডলার, যা ভারতে প্রায় 5 লক্ষ কোটি টাকার শিল্প। এখানে তালিকাভুক্ত রয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ রেস্তোরাঁ। সমীক্ষা থেকে জন্য যায়, ভারতে গ্রাহকরা প্রতি মাসে প্রায় ৪ থেকে ৫ বার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করেন, চিনে এই সংখ্যাটা প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বার, আবার সিঙ্গাপুরে ৮০ থেকে ৯০ বার। ফলে বিরিয়ানির ব্যবসার ভবিষ্যত যে উজ্জ্বল, তা বলাই বাহুল্য। আর ঠিক এই মন্ত্রকেই সিঁড়ি হিসেবে বেছে নিয়ে নতুন দিশা দেখাতে চাইছেন বিরিয়ানি বাই কিলোর প্রতিষ্ঠাতা বিশাল জিন্দাল।