মণিপুর ঢাকতে বিজেপির চাই একটা শরীর? রাজা তোর কাপড় কোথায়!

Manipur Woman Molested: অমিত মালব্যর দাবি, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী হিংসার অংশ হিসেবে নগ্ন করে হাঁটানো হয়েছে পঞ্চায়েত প্রার্থীকে!

অন্যের বাড়ির আমগাছের ডাল কেন আমার বাড়িতে এসে পড়বে? উচিত শিক্ষা দরকার। অন্যের বাড়ির মেয়েটিকে ধর্ষণ করে 'সবক' শেখানো যাক। কেন বেপাড়ার কুকুর আমার গলি দিয়ে হেঁটে যাবে? শিক্ষা দেওয়া দরকার, বেপাড়ার কোনও মেয়েকে হেনস্থা করা যাক। দেড়শো বছর আগে কেন সম্পত্তি সমান ভাগ হয়নি, দেড়শো বছর পরে এসে বেশি সম্পত্তি পাওয়া পরিবারের মেয়েটিকে নগ্ন করে হাঁটানো যাক। যাইই ঘটুক না কেন, মেয়েটিকে/মেয়েদেরকে যুতসই ধর্ষণ, লাগসই হেনস্থা করতে পারাটাই যুগপোযুগী 'শাস্তি', চিরকালীন 'সবক'। এপাড়া যদি অন্যায় করে, ওপাড়ার মেয়েদেরই শাস্তি পেতে হবে। এটাই স্বাভাবিক, তারপর সভ্য দেশের দোহাই দিয়ে বলতে হবে, আমি একা করিনি, উত্তরের পাড়া, দক্ষিণের পাড়া, গ্রহান্তরের পাড়া সর্বত্রই তো এটাই শাস্তির দস্তুর! এতে অবাক হওয়ার কী আছে? গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে বলতে হবে, একা আমি করিনি, আরও অনেকেই মেয়েদের এভাবেই 'শাস্তি' দিয়েছে। অতএব, হে গণতন্ত্র বিচার করুন কে বেশি দোষী! এভাবেই 'বিচার' চেয়েছেন অমিত মালব্য। এভাবেই মণিপুরের মেয়েদের নগ্ন করে হাঁটানোকে 'স্বাভাবিক' করে তুলতে চেয়েছে বিজেপি। বিজেপি বলতে চাইছে, বিজেপি শাসিত মণিপুর একা নয়, যেখানে বিজেপির শাসন নেই, সে যে ধনধান্য পুষ্পভরা বসুন্ধরা, এমনটা নয়। অন্যত্রও তো মেয়েদের সঙ্গে এমনই হয়। এই বাংলাতেও তো হয়েছে!

বিজেপির দুর্দান্ত চতুর আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যর দাবি, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী হিংসার অংশ হিসেবে নগ্ন করে হাঁটানো হয়েছে পঞ্চায়েত প্রার্থীকে! এ রাজ্যের সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ওই মহিলা। ৮ জুলাই ভোটগ্রহণের সময় হাওড়াতে নাকি তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করা হয়, তাঁর পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয়। ব্যাস, মিটে গেল! মণিপুরের পাশেই বাংলাকে দাঁড় করিয়ে বিজেপি বনাম তৃণমূল খেলা গেল বেশ। একটি ঘৃণ্য ঘটনার পাশে আরেকটি এনে ঘটনার ঘৃণাকে 'স্বাভাবিক' করে দেওয়ার চেষ্টা। বাংলায় আসলে কি এমনই ঘটেছে? পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বিজেপির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ডিজিপি বলছেন, ১৩ জুলাই একটি শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া যায় এবং সেই অনুযায়ী একটি এফআইআরও দায়ের হয়েছে। তবে ওই মহিলার অভিযোগের সমর্থনে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে তাঁকে নগ্ন করা হয়েছে এবং গ্রামে হাঁটানো হয়েছে।

আরও পড়ুন- মণিপুর: পাহাড়ে স্বায়ত্ত্বশাসনই কি একমাত্র রাজনৈতিক সমাধান?

ডিজিপির কথানুযায়ী, ওই মহিলা ইমেলে অভিযোগ দায়ের করেন যে ৮ জুলাই সকালে তাঁকে একটি পোলিং বুথ থেকে জোর করে বের করে দেয় তৃণমূলের কর্মীরা এবং তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয়। ওই প্রার্থীকে পোশাক ছাড়াই রাস্তায় হাঁটানো হয়। পুলিশ অবিলম্বে তদন্ত শুরু করে এবং ওই দিন যে এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেছে তার কোনও প্রমাণ মেলে না। কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্মীরা কেউ এই ঘটনার সত্যতার প্রমাণ দিতে পারেননি, এমনকী সম্প্রতি ওই অঞ্চলটি পরিদর্শন করা বিজেপির একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দলের কাছ থেকেও এই ঘটনার সপক্ষে কোনও প্রমাণই মেলেনি।

 

ভোট কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যদের কারও এমন ভয়ানক ঘটনা চোখে পড়ল না? বুথের বাইরেও যে বিপুল উপস্থিত ছিলেন তারাপ দেখলেন না? ভোটকর্মীরা দেখলেন না? ঘটনার কোনও ভিডিও ফুটেজও মেলেনি। আশেপাশের এলাকার সিসিটিভির ফুটেজে নাকি কিছুই মেলেনি। বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনিও তো এমন অভিযোগ তোলেননি। আর অভিযোগকারিণীর বয়ান? ডিজিপি জানাচ্ছেন, ওই মহিলা এবং তাঁর স্বামীর সঙ্গে বারংবার যোগাযোগ করা সত্ত্বেও, তাঁরা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিজেদের বক্তব্য রেকর্ড করাতে রাজি হননি। এমনকী মেডিকেল রিপোর্টও পাঠাননি।

আরও পড়ুন- ফের ফিরছে মনোরমার স্মৃতি! এ কোন অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে মণিপুরে?

তাহলে কীসের ভিত্তিতে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া ইনচার্জ এবং পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য এমন ভয়ানক অভিযোগ করলেন? একজন মহিলাকে, একজন পঞ্চায়েত প্রার্থীকে নগ্ন করে হাঁটানো হচ্ছে, পড়শি মণিপুরের ঘটনার প্রেক্ষিতে এমন অভিযোগ করার নেপথ্যে কোনও সত্যতা নেই?

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলছেন, মণিপুরের ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছন তারা। "দুঃখজনক ঘটনা এবং এমন হওয়া উচিত ছিল না," বলছেন সুকান্ত। কিন্তু সুকান্তর দলের শাসনের রাজ্যে তো একা এমনটা হয়নি। বাংলায় যে মহিলা বিজেপি কর্মীকে নগ্ন করে হাঁটানো হলো, এ কি মণিপুরের চেয়ে কম দুঃখজনক? প্রচণ্ড দুঃখে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় তো কেঁদেই ফেলেছেন। মহিলার 'দুঃখে' মহিলার কান্নাকে ব্যবহার করলে ফল কিঞ্চিৎ ভালোই হয়। আর যেখানে একটি অন্যায় ঢাকতে অন্য অন্যায়ের দৃষ্টান্ত গড়তে হয় সেখানে তো বটেই।

মণিপুর ২০২৪ লোকসভা ভোটের ইস্যু হয়ে উঠেছে। 'ইন্ডিয়া' জোটের দলগুলির অন্যতম এজেন্ডাই হয়েছে মণিপুর। অবস্থা বুঝে ৭৮ দিন পর মৌনব্রত ভেঙেছেন মোদি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “মণিপুরের ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের জন্য লজ্জাজনক।" তাই লজ্জাকে দুর্বলতা না করে, আঙুল তোলার যুদ্ধে নেমেছে বিজেপি। দেশকে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে মণিপুরের দিকে তাকিয়ে বসে থাকবেন না। এরম অনেক জায়গাতেই ঘটে, বিশেষ করে যেখানে বিজেপি নেই সেখানে তো ঘটেই। কারণ ঘটাই স্বাভাবিক। মেয়েদের ধর্ষণ করে অন্যকে 'সবক' শেখাতে হয়, এ তো মহাকাব্যেই আছে! একা বিজেপির দোষ?

 

More Articles