নোংরা ভাষাতেই 'দক্ষ'! বারেবারে অশ্লীল আক্রমণ বিরোধীদের! কে এই রমেশ বিধুরি?
Ramesh Bidhuri : রমেশ বিধুরি ছোটবেলা থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সঙ্গে যুক্ত।
সংসদে দাঁড়িয়ে পাড়ার মস্তানের মতো হুমকি দিচ্ছেন বিজেপি সাংসদ। সহনাগরিক, বিরোধী নেতাকে গালাগাল করছেন ধর্ম তুলে। নোংরা ভাষায় হেনস্থা করছেন। ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ রমেশ বিধুরি লোকসভায় বহুজন সমাজ পার্টির নেতা দানিশ আলিকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, পাড়া, রাস্তার ঠেক, গোদি মিডিয়ার প্রাইম টাইম শো- এসবের মধ্যে তেমন ফারাক নেই। চাইলেই একজনকে এই ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে জাত তুলে, ধর্ম তুলে হেনস্থা করা যায়। সংসদে, সাংবিধানিক কাঠামো, ন্যায়কে জলাঞ্জলি দেওয়াই যায় কারণ মাথায় রয়েছে হাত! বিজেপির হাত, শাসকের ছত্রছায়া। কীভাবে এত সাহস পাচ্ছেন বিধুরী? একজন সাংসদের ধর্ম তুলে নোংরা কথা বলার মতো প্রবৃত্তিই বা হচ্ছে কীভাবে? তা জানতে গেলে বিধুরির উত্থান জানা দরকার।
রমেশ বিধুরি আসলে কে?
দুই মেয়াদের সাংসদ রমেশ বিধুরি ছোটবেলা থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সঙ্গে যুক্ত। কলেজ ছাত্র থাকাকালীন রমেশ RSS-এর ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা ABVP-এর সদস্য ছিলেন। ১৯৮৩ সালে শহিদ ভগত সিং কলেজের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলর এবং সেইসঙ্গে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
রমেশ বিধুরি ১৯৯৩ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে তুঘলকাবাদ আসন থেকে ভোটে লড়ে নির্বাচনী লড়াইয়ের খাতা খোলেন, কিন্তু হেরে যান। ১৯৯৮ সালেও লড়েন এবং হেরে যান। ২০০৩ সালের নির্বাচনে অবশেষে জয়ের মুখ দেখেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবার তিনি তুঘলকাবাদ থেকে জয়ী হন। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রমেশ বিধুরি দক্ষিণ দিল্লি আসন থেকে লড়েন কিন্তু কংগ্রেসের রমেশ কুমারের কাছে হেরে যান। তবে, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে এই আসনেই জয়ী হন।
বিতর্কিত বিধুরি
দানিশ আলিকে অশ্লীল আক্রমণ করেই যে এমন নোংরামির খাতা খুলেছেন তা নয়। রমেশ বিধুরি অতীতেও বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
আরও পড়ুন- নিজের দলের সাংসদকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ, তবু কেন চুপ মায়াবতী?
১. ভারতীয় জনতা পার্টির নয়নের মণি রমেশ বিধুরি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে একবার 'বামন' বলে ডাকেন। “ভাল বলেছেন বামন দুর্যোধন। দিল্লিতে মাত্র তিন দিনের বৃষ্টিতে সমস্ত রাস্তা ভেসে গেছে। স্কুলে ক্লাসরুম তৈরির নামে কোটি কোটি টাকা কেলেঙ্কারি করেছেন, তথাকথিত বিশ্বমানের মহল্লা ক্লিনিক পশু ও মদ্যপদের আস্তানা," এই ভাষাতেই X-এ পোস্ট করেছিলেন রমেশ। বিধুরি কেজরিওয়ালকেও 'ভড়ওয়া' বলে আক্রমণ করেন এর আগে। “আবে, ইয়ে কেজরিওয়াল ভি ভড়ওয়া হ্যায়৷ ইয়ে কব তক রোকেগা?” বলেছিলেন বিধুরি। বলেছিলেন, "জেএনইউ মে ভারত তেরে টুকড়ে করনেওয়ালে গ্যাং, ওহ জো দুসরে কে টুকড়ো পে পলনে ওয়ালে ভড়ওয়ে ওয়াহাঁ পে ব্যায়ঠতে হ্যায়, তুমহারি আওয়াজ সে উনকি চারপায়ি হিল জানি চাহিয়ে।"।
২. কিছুকাল পিছিয়ে যাওয়া যাক। ২০১৫ সালে, পাঁচজন মহিলা সাংসদ- রঞ্জিত রঞ্জন (কংগ্রেস), সুস্মিতা দেব (তখন কংগ্রেসের সঙ্গে ছিলেন), সুপ্রিয়া সুলে (এনসিপি), অর্পিতা ঘোষ (তৃণমূল কংগ্রেস) এবং পিকে শ্রীমতি টিচার (সিপিআইএম) বিধুরির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তৎকালীন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের কাছে তারা অভিযোগ জানান, সংসদের মধ্যেই এই নেত্রীদের গালিগালাজ করেছেন রমেশ বিধুরি। রঞ্জিত রঞ্জন বলেছিলেন, অবিবাহিত মহিলাদের সুবিধা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতেই বিধুরি বলেন তাঁর উচিত আগে স্বামীর সঙ্গে আগে বিবাহবিচ্ছেদ করা এবং তারপরে এসব সুবিধা নিয়ে কথা বলা যেতে পারে।
৩. ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় রমেশ বিধুরি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে আপত্তিজনক মন্তব্য করেন। বিশাল বিতর্ক তৈরি হয় সেই সময়ও। দক্ষিণ দিল্লি থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন আপ নেতা রাঘব চাড্ডা। তাঁর অভিযোগের পর দিল্লির নির্বাচনী প্যানেল রমেশ বিধুরিকে নোটিশ পাঠায়।
৪. ২০১৭ সালে রমেশ বিধুরি প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে অশ্লীল কথা বলেন, সমালোচিতও হন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী রিপোর্ট অনুসারে, বিধুরি বলেছিলেন, ইতালিতে ৫-৬ মাসের মধ্যে নাতি-নাতনির জন্ম হতে পারে তবে ভারতীয় সংস্কৃতিতে এসব হয় না। বিজেপি নেতা বিধুরি বহুজন সমাজ পার্টির প্রধান মায়াবতীর বিরুদ্ধেও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।
৫. স্কুল সম্পর্কিত কোনও বিষয়ে রমেশ বিধুরির সাহায্য চাইতে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন এক পড়ুয়ার অভিভাবক। বিজেপি সাংসদ অভিভাবককে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "সন্তানের জন্ম দেন কেন?"