লিভ-ইন সম্পর্কের রেজিস্ট্রেশন! উপকৃত হবেন মহিলারাই?

Live-In Relationship UCC: যদি লিভ-ইন সঙ্গী প্রেমিকাকে ছেড়ে চলে যায়, তাহলে ওই মহিলা খোরপোষ দাবি করতে পারেন

সারা দেশের মধ্যে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করা প্রথম রাজ্য হয়ে উঠেছে উত্তরাখণ্ড। এক কথায় বলতে গেলে, সম্প্রদায় বা ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য সাধারণ আইনি বিধি স্থাপন করাই এই ইউসিসি-র লক্ষ্য। আর এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নিয়ন্ত্রণ কায়েম হচ্ছে লিভ-ইন সম্পর্কগুলির ক্ষেত্রেও। উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি জারি হওয়ার ফলে এবার সমস্ত লিভ-ইন সম্পর্কের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হচ্ছে। আর শুধুমাত্র অবিবাহিত বিষমকামী দম্পতিরাই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।

সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেছিলেন, বিয়ের বাইরে গার্হ্যস্থ অপরাধ এড়াতে লিভ-ইন সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রয়োজন। উত্তরাখণ্ড UCC অনুযায়ী, লিভ-রিলেশনশিপ হচ্ছে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার মধ্যে একটি সম্পর্ক, যারা বিবাহের মতোই একটি সম্পর্কের মাধ্যমে সহবাস করে। 'সহবাস' শব্দটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা, যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক নয়, তারা ভাড়া করা বাসস্থানে বা যৌথ মালিকানাধীন বাড়িতে বা তাদের কারও একজনের বা অন্য কোনও বাসস্থানে এক ছাদের নীচে থাকেন এমন সম্পর্ককেই বোঝানো হচ্ছে।

লিভ-ইন সম্পর্কে জড়িত ২১ বছরের কম বয়সিদের ক্ষেত্রে, বাবা মায়ের সম্মতি প্রয়োজন হবে। যদি এই দম্পতিরা তাদের লিভ-ইন সম্পর্ক রেজিস্ট্রেশন না করেন বা মিথ্যা তথ্য দেন, তাহলে তিন মাস পর্যন্ত জেল, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা দুই-ই হতে পারে।

আরও পড়ুন-এবার লিভ-ইন রেজিস্ট্রি না করলেই শাস্তি! কী বলা আছে বিজেপি সরকারের প্রস্তাবিত আইনে?

কীভাবে লিভ-ইন সম্পর্ক রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে?

উত্তরাখণ্ডের UCC-র পার্ট ৩ অনুসারে, এই ধরনের সম্পর্কে প্রবেশের এক মাসের মধ্যে "লিভ-ইন সম্পর্কের একটি বিবৃতি" জমা দিতে হবে৷ সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলে আবার একটি বিবৃতি জমা দিতে হবে৷ আইন বলছে, রেকর্ড রাখার উদ্দেশ্যে এই রেজিস্ট্রেশন। পাশাপাশি রেজিস্ট্রাররা এই বিবৃতিগুলি স্থানীয় থানায় পাঠাবেন যে এলাকায় দম্পতিরা থাকছেন।

বিষমকামী, অবিবাহিত দম্পতিরা একটি সদ্য চালু হওয়া পোর্টালের মাধ্যমে তাদের লিভ-ইন সম্পর্কের রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। অফলাইনের ক্ষেত্রে দম্পতিদের সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রারের কাছে সহায়ক নথি সহ একটি ১৬ পৃষ্ঠার ফর্ম জমা দিতে হবে। বিধি ১৫(৩)(ই)-এর অধীনে, আবেদনকারীদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য তাদের ছবি, প্যান নম্বর, ফোন নম্বরের সঙ্গে সংযুক্ত আধার এবং রাজ্যের মধ্যে বসবাসের প্রমাণের মতো নথি সহ আরও নানা প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।

যদি কোনও দম্পতি 'নিষিদ্ধ সম্পর্কের' মধ্যে পড়েন, অর্থাৎ তাঁরা যদি রক্তের সম্পর্কের কেউ হন সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাঁদের বিবাহের যোগ্যতা প্রত্যয়িত করে ধর্মীয় বা সম্প্রদায়ের কোনও নেতার কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। 'নিষিদ্ধ সম্পর্ক' শব্দটি হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ থেকে উদ্ভূত। এখানে একই পূর্বপুরুষের বংশধর ব্যক্তিদের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ করা আছে (যদি না এই ধরনের বৈবাহিক মিলন স্থানীয় রীতিনীতি দ্বারা অনুমোদিত হয়)।

দম্পতিদের পূর্বের সম্পর্কের প্রমাণও দিতে হবে, বিশেষ করে যদি তারা আগে লিভ-ইন সম্পর্কে থাকে। তাদের বর্তমান অবস্থাও জানাতে হবে অর্থাৎ তারা অবিবাহিত, বিবাহিত, তালাক হয়েছে কিনা, আলাদা থাকেন কিনা, স্বামী বা স্ত্রী প্রয়াত কিনা। এর জন্য, তাদের সেই প্রমাণ দিতে হবে যাতে বিবাহবিচ্ছেদ বা আলাদা থাকার উল্লেখ আছে, মৃত্যুর শংসাপত্র, বা পূর্ববর্তী লিভ-ইন সম্পর্কের সমাপ্তির শংসাপত্র থাকতে হবে। যদি প্রথাগত ধর্মীয় রীতিনীতির মাধ্যমে কোনও বিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়, তাহলে এই ধরনের বিচ্ছেদের উপযুক্ত প্রমাণ দিতে হবে।

যদি দু'জন ইতিমধ্যেই একসঙ্গে থাকেন, তাহলে তাদের অবশ্যই তাদের একসঙ্গে থাকা পরিবারের প্রমাণ দিতে হবে, যেমন সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ বা জলের বিল। তারা যদি ভাড়াবাড়িতে থাকেন, তাহলে অবশ্যই বাড়িওয়ালার পুরো নাম, যোগাযোগের নম্বর এবং ভাড়ার চুক্তির একটি অনুলিপি জমা দিতে হবে। বাড়িওয়ালাদেরও ভাড়ার চুক্তিতে সই করার আগে ভাড়াটেদের রেজিস্ট্রেশনের শংসাপত্র যাচাই করা বাধ্যতামূলক করে, নাহলে বাড়িওয়ালাদের ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে।

আরও পড়ুন-লিভ-ইন করলেও রেজিস্ট্রি করতে হবে এবার? অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে যা করতে চাইছে বিজেপি

যদি এই দম্পতিরা একসঙ্গে না থাকেন তবে তাদের অবশ্যই একটি অস্থায়ী শংসাপত্র জমা দিতে হবে। শংসাপত্র পাওয়ার পর, অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে বাড়ি খুঁজে নিতে হবে।

এক মাসের মধ্যে লিভ-ইন সম্পর্ক রেজিস্ট্রেশন করতে ব্যর্থ হলে জরিমানা হতে পারে। দোষী সাব্যস্ত হলে, একজন ম্যাজিস্ট্রেট তিন মাস পর্যন্ত জেল, ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা দুই শাস্তিই দিতে পারেন। মিথ্যা তথ্য প্রদান বা সম্পর্কের বিবরণ গোপন করার জন্যও কঠোর শাস্তি রয়েছে - তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, বা দুই-ই।

শাসকের দাবি, এই আইন আসলে মহিলাদেরই ক্ষমতায়ন করছে। যদি লিভ-ইন সঙ্গী প্রেমিকাকে ছেড়ে চলে যায়, তাহলে ওই মহিলা খোরপোষ দাবি করতে পারেন। লিভ-ইন দম্পতির সন্তানের জন্ম হলে সেই সন্তান বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। বিবাহের ফলে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা বৈধ এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হলে এই লিভ ইন সম্পর্কের শিশুর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হতে পারে।

More Articles