ছাত্রীদের স্কুটি, আদিবাসীদের স্বাধীনতা- ত্রিপুরায় এবার যে মন্ত্রে জিততে চাইছে বিজেপি
Tripura Election BJP Manifesto: বিজেপি সংকল্প পত্রে জানাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনার অধীনে মেধাবী কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীদের বিনামূল্যে স্কুটি দেবে বিজেপি!
ত্রিপুরাকে 'নতুন প্রাণ' দিয়েছে বিজেপি। একদা বামেদের মজবুততম ঘাঁটিকে ছিনিয়ে সেখানে 'আচ্ছে দিন' এনে দিয়েছে গেরুয়া নেতাকর্মীরা। তবে আচ্ছে দিনের সবটা এখনও রাজ্যবাসী পাননি। পাবেন, এবারের নির্বাচনেই। চূড়ান্ত আশাবাদী গেরুয়াদল তাই ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনী ইস্তেহারে আরও বিবিধ প্রতিশ্রুতির সারি বাড়িয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা বৃহস্পতিবারই আগরতলায় ত্রিপুরা নির্বাচনের আগে দলের ইস্তেহার, যাকে 'সংকল্প পত্র' নামেই ডাকেন তারা, প্রকাশ করেছেন। জেপি নাড্ডা এই ইস্তেহারটিকে বলছেন 'ভিশন ডকুমেন্ট'। বলছেন, এই সংকল্প পত্র "স্রেফ কাগজের টুকরো নয়, জনগণের প্রতি বিজেপির প্রতিশ্রুতি।" ‘পাইয়ে দেওয়ার' রাজনীতির ধারা এখানেও অব্যাহত। বিজেপির পাখির চোখ এবারে পাহাড়ি উপজাতির মানুষরাই।
উত্তরপূর্বের পার্বত্য অঞ্চলে দ্রুতই ছড়াচ্ছে গেরুয়া রঙ। প্রথমে ২০১৬ সালে এবং তারপর ফের ২০২১ সালেও অসমে বিজেপি ক্ষমতায় আসে। মণিপুরেও ২০১৭ এবং ২০২২ সালে বিজেপি সরকারই নির্বাচিত হয়। ত্রিপুরাতেও ২০১৮ সালের পর যে গেরুয়া ঝান্ডা অক্ষত রইবে তা নিয়ে বিজেপি গোড়া থেকেই আশাবাদী। আর তাই যস্মিন দেশে যদাচার! উত্তর পূর্বের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাতে ভোট জিততে আদিবাসী উন্নয়নের টোপ যত্ন করে তৈরি করছে বিজেপি। আদিবাসীদের স্বীকৃতির পাশাপাশি আদিবাসীদের কল্যাণ। উত্তর-পূর্বের উপজাতির মানুষদের উন্নয়ন বিজেপির এবারের সংকল্প পত্রের মূল জায়গা। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার 'অ্যাক্ট ইস্ট' নীতির মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এই অঞ্চলে কম করে ৫০ বার এসেছেন।
আরও পড়ুন- ত্রিপুরা নির্বাচনে লড়বেন না আর! কেন এত বড় সিদ্ধান্ত প্রবীণ বামনেতা মানিক সরকারের?
৬০-সদস্যের ত্রিপুরা বিধানসভার নির্বাচন হবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি। হাতে মোটে ৭ দিন। ২ মার্চ ভোট গণনা করা হবে। এই ৬০ টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৫৫ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে, বিজেপির জোটসঙ্গী আদিবাসী পিপলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা পাঁচটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। নাড্ডা বলছেন, ত্রিপুরা রাজ্যটি একসময় (বলাই বাহুল্য বাম জমানায়) অবরোধ এবং বিদ্রোহের জন্যই পরিচিত ছিল। বিজেপি আসার পর থেকে রাজ্যের চতুর্দিকে কেবলই শান্তি, সমৃদ্ধি এবং উন্নয়ন।
বিজেপি তাদের সংকল্প পত্রে জানিয়েছে, ত্রিপুরাবাসীদের ১৩ লক্ষ আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই কার্ডে স্বাস্থ্যসেবা বাবদ ১০৭ কোটি টাকা খরচও হয়েছে। গত পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে ত্রিপুরায় ৩.৫ লক্ষ বাড়ি তৈরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সংকল্প পত্রে। রাজ্যে নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহের জন্য জল জীবন মিশনের অধীনে ত্রিপুরায় ৫৫% পরিবারে পানীয় জলের সুবিধা পৌঁছনো হয়েছে। ২০১৮ সালে এই হার ছিল মাত্র ৩%। সংকল্প পত্র অনুযায়ী, ত্রিপুরার মানুষের মাথাপিছু আয় ২০১৮ সালে ছিল ৯০,০০০ টাকা। বিজেপির আমলে তা এখন মাথাপিছু ১.৫৮ লক্ষ টাকা হয়েছে। আগরতলায় একটি আঞ্চলিক ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস হাসপাতাল স্থাপনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বিজেপি।
জেপি নাড্ডা ইস্তেহার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জানাচ্ছেন, অনুকুল চন্দ্র প্রকল্পের অধীনে সবাইকে দিনে তিনবার ৫ টাকায় খাবার দেওয়া হবে এবং আদিবাসী অঞ্চলগুলিকে আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হবে। সংকল্প পত্রে বিজেপি আরও জানিয়েছে, ত্রিপুরার সমস্ত কন্যাশিশুকে বালিকা সমৃদ্ধি বন্ডের অধীনে ৫০,০০০ টাকা দেওয়া হবে এবং কোকবরোকের উপজাতি ভাষাকে সিবিএসই এবং আইসিএসই পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বিজেপি সংকল্প পত্রে জানাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনার অধীনে মেধাবী কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীদের বিনামূল্যে স্কুটি দেবে বিজেপি! প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার সমস্ত সুবিধাভোগীদের বিনামূল্যে দু'টি এলপিজি সিলিন্ডার, সমস্ত যোগ্য ভূমিহীন নাগরিকদের জমি পাট্টা বিতরণ, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গ্রাম এবং শহরে সমস্ত সুবিধাভোগীদের সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, বছরে চারবার ভর্তুকিযুক্ত হারে ভোজ্য তেল দেওয়ার পাশাপাশি প্রতি মাসে সমস্ত যোগ্য রেশন সুবিধাভোগীদের বিনামূল্যে চাল এবং গম দেওয়া, ত্রিপুরা জনজাতি বিকাশ যোজনার অধীনে তফশিলি উপজাতি পরিবারগুলিকে বার্ষিক ৫,০০০ টাকার আর্থিক সাহায্য, উপজাতীয় সংস্কৃতি ও গবেষণা, প্রচার, সংরক্ষণের জন্য গন্ডাচেরায় মহারাজা বীর বিক্রম মাণিক্য উপজাতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মৎস্য সহায়ক যোজনার অধীনে সমস্ত জেলেকে বার্ষিক ৬,০০০ টাকার অনুদান, মুখ্যমন্ত্রী যুব যোগযোগ যোজনার অধীনে প্রায় ৫০,০০০ মেধাবী কলেজ পড়ুয়াদের স্মার্টফোন দেওয়া- কী নেই সেই ইস্তেহারে!
আরও পড়ুন- ২০২৪ নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি বনাম কে? এখন থেকেই উত্তর খোঁজার চেষ্টায় বিজেপি বিরোধীরা
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য তীর্থ যোজনা চালু করার কথা জানিয়েছে বিজেপি! অযোধ্যা, বারাণসী, উজ্জয়িনী ইত্যাদি জায়গায় ট্রেনে ভ্রমণ, থাকার ব্যবস্থা এবং ভাতা প্রদান, ঝাড়খণ্ডের দেওঘর এবং উত্তর প্রদেশের গোরক্ষনাথে ভর্তুকিসহ ট্রেন ভ্রমণ, থাকার ব্যবস্থা এবং ভাতা সহ এক বিশেষ প্যাকেজ শুরু করছে বিজেপি। রাজ্যের লোকনৃত্য, সঙ্গীত এবং থিয়েটারকে জনপ্রিয় করার জন্য এসডি বর্মণ পারফর্মিং আর্টস আকাডেমি প্রতিষ্ঠা করা, ১০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ত্রিপুরার পর্যটন অর্থনীতিকে আরও প্রসারিত করা এবং ১ লক্ষ মানুষকে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ত্রিপুরা ট্যুরিজম স্কিল মিশন চালু করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বিজেপি।
বিজেপির এই আদিবাসী উন্নয়নের লক্ষ্যের পথে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টিপরা মোথা। টিপরা মোথা তাদের ইস্তেহারে, 'বৃহত্তর টিপরাল্যান্ড' এবং আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের জন্য এককালীন প্যাকেজের জন্য লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দলের প্রধান প্রদ্যোত দেববর্মা জানিয়েছিলেন, আদিবাসী পরিষদ এলাকায় বসবাসরত আদিবাসী নয় এমন মানুষদের জোর করে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না এবং আদিবাসী উপজাতির সমস্ত 'সমাজপতি'কে প্রতি মাসে ২৫,০০০ টাকা দেওয়া হবে।
ত্রিপুরায় এবার মোট ২৫৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বিজেপির সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫৫ জন প্রার্থী লড়াইয়ের ময়দানে নামছেন। তারপরেই সিপিএমের ৪৩ জন, টিপরা মোথার ৪২, তৃণমূলের ২৮, কংগ্রেসের ১৩, বিজেপির সহযোগী আইপিএফটির ৬, সিপিআই, আরএসপি, ফরোয়ার্ড ব্লকের একজন করে প্রার্থী নির্বাচনে লড়বেন।