ব্রেকফাস্টে যা খাচ্ছেন, তা মৃত্যু ডেকে আনছে না তো? সতর্ক হন আজই
আপনি যেসব খাবার ডায়েট ফুড হিসেবে খেয়ে চলেছেন, কিংবা যেগুলিকে সুস্বাদু খাবার বলে মনে করছেন, সেগুলি স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে হয়তো আপনার ওজন হ্রাস পেতে পারে, তবে একইসঙ্গে এগুলি ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে অন্যান্য এক...
এই সময় নিজেকে ফিট রাখা অথবা স্থূলতাজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া অনেকের কাছেই একটা চ্যালেঞ্জের মতো। কিন্তু নিজেকে ফিট রাখার কাজটা মোটেও সহজ নয়! প্রতিদিনের রুটিনে কর্মব্যস্ততার কারণে সময় বের করাই এখন মুশকিল, তার ওপর যদি আপনি খাদ্যরসিক মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে ওজন কমানোর লক্ষ্যে 'ডায়েট করা' একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
তবে শুধু কি হাঁটাচলা আর ডায়েট করলেই মিলবে চর্বির হাত থেকে মুক্তি? ব্যাপারটা যতটা সহজ ভাবছেন, ততটা কিন্তু নয়। এর ওপর আবার আমাদের চারপাশে এমন অনেক খাবার রয়েছে, যা আমাদের কাছে 'ডায়েট ফুড' হিসেবেই গণ্য হয়, তবে এর আড়ালে রয়েছে বহু অজানা তথ্য। আসুন জেনে নেওয়া যাক, এমন বেশ কয়েকটি খাদ্য এবং এদের গুণাগুণ সম্পর্কে।
উল্লেখ্য, যখন আমরা ওজন কমানোর জন্য কথা ভাবি, তখন আমরা স্বাস্থ্যকর খাবারের একটি তালিকা তৈরি করে নিই। একরকম অন্ধভাবেই ডায়েটে এগুলিকে যুক্ত করি আমরা। কিন্তু এর ফলে আমাদের শরীরে কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা সম্পর্কে ভেবে দেখি না আমরা। আপনি প্রতিদিনের যে ডায়েটকে উপযোগী বলে ভাবছেন, তা আদতে উপকারী না-ও হতে পারে। আমাদের শরীরে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, অথচ বিবেচনা না করেই আমরা তা স্বাস্থ্যকর বলে মনে করি।
আরও পড়ুন: ডায়েটে আসলে বাড়ছে ওজন! কোন কোন ডায়েট ফুড আসলে মরণফাঁদ?
সম্প্রতি নিজের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে পুষ্টিবিদ প্রাচী শাহ এমন কয়েকটি ব্রেকফাস্টের কথা উল্লেখ করেছেন, যা আপাতভাবে স্বাস্থ্যকর মনে হলেও আসলে তা নয়। ওজন কমানোর পাশাপাশি এই ধরনের খাবার বেশ কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও ফেলে।
মোট ৫টি অস্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্টের তালিকা:
১. সিরিলস
দুধের সঙ্গে কর্নফ্লেক্স-এর মিশ্রণ আমরা আদর্শ ব্রেকফাস্ট বিকল্প বলেই মনে করি। কিন্তু এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যে, দুধ এবং কর্নফ্লেক্স-এর মিশ্রণে যদি চিনিকে মিষ্টি করার জন্য যোগ করা হয়, তবে তা ওজন কমাতে ব্যর্থ হয়, বরং পরবর্তীতে এর অতিরিক্ত গ্রহণ ডায়াবেটিস রোগকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হন, তবে Cereals জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন, কিন্তু সঙ্গে চিনি একদম নয়।
২. ওয়াফেলস
Waffles-এর চাহিদা বিশ্বজুড়ে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ওজন কমানোর স্বার্থে অনেকেরই ব্রেকফাস্ট টেবিলে ওয়াফেলস থাকাটা বাঞ্চনীয়। এর কারণ, চিনির বর্জন। খাদ্যতালিকা থেকে চিনি বাদ দেওয়াই প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় এক্ষেত্রে। সেই কারণেই সুস্বাদু ওয়াফেলস খেতে চায় সকলে, যা খাদ্যের তালিকা থেকে চিনি (সুগার) দূর করে। তবে এতে উপস্থিত ময়দা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তোলে। পরবর্তীতে, হজমের সমস্যা বৃদ্ধিতে এটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৩. ফ্লেভার্ড দই
ডায়েট ফুডের তালিকায় ফ্লেভার্ড দই অনেকের কাছেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশেষত, দোকান থেকে ক্রয় করা ফ্লেভার্ড দই আমাদের সকলের প্রিয়। তবে দইয়ের বাটিতে প্রিজারভেটিভ এবং ফ্লেভারিং উপাদান আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী নয়। ফলে স্বাদে ভালো এবং ডায়েটে সহযোগী হলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত হন এখনই।
৪. স্যান্ডউইচ/টোস্ট
এখনকার দিনে আমাদের হেঁশেলে স্যান্ডউইচ/টোস্ট বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। সকালের খাবারে ভাত কিংবা রুটি অনেকেই এড়িয়ে চলেন। সেক্ষেত্রে অনেকেই পাঁউরুটির মধ্যে মাখন বা মেয়োনিজের স্তর মাখিয়ে রাখেন। তাদের মতে, এটি ডায়েটে সাহায্য করে আবার মাখনের স্তর খাবারকে বেশ সুস্বাদু করে তোলে।কিন্তু এক্ষেত্রে wheat ব্যবহার করলেও আপনি আপনার খাদ্যতালিকায় একটু একটু করে আরও চর্বি যুক্ত করে চলেছেন, যা শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়।
৫. গ্রানোলা বার
দোকান থেকে ক্রয় করা গ্রানোলা বারগুলিতে প্রিজারভেটিভ, কৃত্রিম স্বাদ এবং রং থাকতে পারে, যা শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
প্রাচী শাহ আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যোগ করেন। তিনি বলেন, "কর্নফ্লেক্স, পাঁউরুটি, ফ্লেভার্ড দই এবং গ্রানোলা বারের মতো ব্রেকফাস্টের বিকল্পগুলি অস্বাস্থ্যকর বলেই গণ্য করা উচিত। কারণ, এতে গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজের পরিমাণ বেশি থাকে। আবার এগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে তা ডায়াবেটিস ডেকে আনতে পারে। ফলে এই জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কিংবা চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া শ্রেয়।"
ফলে, আপনি যেসব খাবার ডায়েট ফুড হিসেবে খেয়ে চলেছেন, কিংবা যেগুলিকে সুস্বাদু খাবার বলে মনে করছেন, সেগুলি স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে হয়তো আপনার ওজন হ্রাস পেতে পারে, তবে একইসঙ্গে এগুলি ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে অন্যান্য একাধিক অসুখ ডেকে আনবে, যা নতুন সমস্যার সৃষ্টি করতে সক্ষম। যে কোনও ডায়েট শুরু করার আগে অন্তত একবার চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে ওজন কমার পাশাপাশি শারীরিক কোনও সমস্যাও দেখা দেবে না, দেহ থাকবে ফিট ও সুরক্ষিত।