জলবায়ুর ক্রমে বদলে যাওয়াতে বাড়ছে এইডস! যে বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে মানুষ

Climate Change and AIDS: জলবায়ু সংকট এইচআইভি সংক্রমণ এবং এইডস-সম্পর্কিত মৃত্যু বৃদ্ধির কারণ হতে চলেছে।

জলবায়ু বদলাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে মানুষের স্বাস্থ্যে, প্রকৃতিতে, পশু-পাখিদের উপর। বিভিন্ন রোগের বৃদ্ধির নেপথ্যে যে জলবায়ুর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে, এ কোনও নয়া তথ্য নয়। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, জলবায়ুর ব্যাপক বদলের ফলে বাড়ছে এইডসের মতো মারণরোগের প্রকোপও! সম্প্রতি জয়েন্ট ইউনাইটেড নেশনস প্রোগ্রাম অন এইচআইভি/এইডস (ইউএনএইডস) এবং ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) সতর্ক করেছে যে, জলবায়ু সংকট এইচআইভি সংক্রমণ এবং এইডস-সম্পর্কিত মৃত্যু বৃদ্ধির কারণ হতে চলেছে। কিছুদিন আগেই আজারবাইজানের বাকুতে COP29 জলবায়ু সম্মেলনে প্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদনে এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে, দুর্বল জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা, এইচআইভি সম্পর্কিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, পানীয় জলের ঘাটতি এবং ব্যাপক স্থানচ্যুতির মতো কারণে নতুন করে এইচআইভি সংক্রমণ এবং এইডস-সম্পর্কিত মৃত্যুর বৃদ্ধি হচ্ছে। UNAIDS-এর নির্বাহী পরিচালক উইনি বায়ানিমা বলছেন, এইডস মোকাবিলায় অগ্রগতি নেই তেমন। যে কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সহজেই এইডসের প্রকোপ বাড়তে পারে। এইডস, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ঋণের 'ট্রিপল ফান্ডিং ক্রাইসিস' মোকাবিলার এবং এই সংকটগুলি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দিয়েছেন।

আরও পড়ুন- জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিরপরাধ দ্বীপ রাষ্ট্রগুলি

জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি হিসেবে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, চরম আবহাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বায়ু দূষণ - সবই মানুষের স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। WHO এর মতে, ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর প্রায় ২৫০০০০ অতিরিক্ত মৃত্যু ঘটবে পুষ্টির অভাব, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া এবং তাপপ্রবাহের কারণে। তথ্য বলছে, ৩·৬ বিলিয়ন মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল এমন অঞ্চলে বাস করেন। এই জনসংখ্যার একটা বড় অংশই এইচআইভি আক্রান্ত। বাড়তে থাকা অভিবাসন এবং জনসংখ্যার স্থানচ্যুতি, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, অর্থনৈতিক চাপ, সংঘাত, সংক্রামক রোগ এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ক্ষয়ে এইচআইভি সংক্রমণের হার বাড়ছে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ফলেই বেশি মানুষ যৌনতা বিক্রির পথেও হাঁটছেন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত অনেক দেশেই এইচআইভি ক্রমে অভিশাপ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি তরুণীদের মধ্যে ৪,০০০-এর মধ্যে ৩১০০টি নতুন এইচআইভি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। একেই এই অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং খরা এক জটিল সমস্যা যার ফলে সমগ্র অঞ্চলই ক্রমে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে, এর উপর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এইডসের মতো রোগ! উপরন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় ম্যালেরিয়ার জীবাণু বাহকদের পরিবর্তনগুলি সহজেই জানা যায়, কিন্তু ক্রিপ্টোকক্কাল রোগ, হিস্টোপ্লাজমোসিস এবং ট্যালরোমাইকোসিসের জন্য দায়ী আক্রমণাত্মক জীবাণুগুলির বিস্তারের সম্ভাবনা কমই বোঝা যায়।

আরও পড়ুন- অবশেষে বাস্তব হতে চলেছে অসম্ভব! এইডস এবার সারবে ‘কাঁচি’ দিয়েই?

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সার বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এমন সব দেশে বাস করে যে দেশগুলি স্বাস্থ্যখাতের চেয়ে বেশি ব্যয় করতে বাধ্য হয় ঋণ শোধে। জলবায়ুর সঙ্কট সমাধানে যে টাকা খরচ হয় তার ৭১% আসে ঋণ হিসেবেই, অনুদান নয়। অর্থাৎ জলবায়ু সংকট এই সমস্যাটিকে ক্রমেই আরও খারাপ করে তুলছে।

এইচআইভি, যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিশ্বের অনুদানের ৭০% সবচেয়ে বেশি জলবায়ু সঙ্কটের ঝুঁকিপূর্ণ ৫০টি দেশের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এই দেশগুলি হামেশাই ওই 'ট্রিপল ফান্ডিং ক্রাইসিসের' মুখোমুখি হয় যার মধ্যে রয়েছে জলবায়ুর সঙ্কট মোকাবিলায় অপর্যাপ্ত টাকা, এইচআইভির সঙ্কট মোকাবিলায় ৯.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘাটতি এবং ঋণের বোঝা। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলি জলবায়ু-প্ররোচিত এইডস প্রতিরোধে টাকা না পেলে সঙ্কট বাড়বে আরও।

More Articles