পাকিস্তানে ভয়াবহ স্বাস্থ্য-ঝুঁকির মুখে ১১ মিলিয়ন শিশু, শিশু-মৃত্যু ঠেকাতে পারবে পাক-সরকার?

Pakistan air pollution: পাকিস্তানে ইউনিসেফের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ ফাদিল পাক-পঞ্জাব প্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, পঞ্জাবের বিপজ্জনক বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে এমন ১১ মিলিয়ন শিশুর স্বাস্থ্য গুরুতর ঝুঁকির মুখে।

প্রতিবার শীত আসতে না আসতে দিল্লির পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। বায়ুদূষণের প্রকোপ এতটাই বাড়তে থাকে, যে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বহু বছর ধরেই তাই দিল্লির রাস্তার বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে মাস্ক। তবে এবার আর দিল্লি একা নয়, ভারতকে বায়ুদূষণে রীতিমতো টক্কর দিচ্ছে পাকিস্তান। সেখানকার বাতাসের গুণগতমান এতটাই নেমে গিয়েছে যে অন্তত ১১ মিলিয়ন শিশু সেখানে ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তেমনটাই জানানো হয়েছে ইউনিসেফের তরফে।

সম্প্রতি নাসা প্রকাশিত একটি স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গিয়েছে, বিষাক্ত ধোঁয়ার পুরু স্তরে ঢাকা ভারত ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অংশ। বিশেষত দুই দেশেরই ইন্দো-গাঙ্গেয় সমতলভূমির উপরই দেখা গিয়েছে ওই বিষাক্ত ধোঁয়ার স্তর। যা থেকে স্পষ্ট, ক্রমাগত বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে দুই প্রদেশেরই বায়ুর গুণগতমান।

আজ থেকে নয়, দীর্ঘদিন ধরেই দূষণের কবলে দিল্লি। প্রতিবারই দিওয়ালি আসতে না আসতেই বাতাসের গুণগতমান কমতে শুরু করে। শীতের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, চাষের খেতে মাত্রাছাড়া ফসলের নাড়া পোড়ানো, বিভিন্ন কারখানা থেকে সঞ্জাত দূষণ, পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও খামারে আগুন জ্বালানো, ফসলের আগা পোড়ানোর সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়নি। শুধু সোমবারেই অন্তত ৪১৮টি খেত জ্বালানোর নতুন ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে শুধুমাত্র পঞ্জাবেই। যার জেরে চণ্ডীগড়ের এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স (AQI) খারাপ জায়গায় পৌঁছেছে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের চেয়েও দ্বিগুণ! বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ ভারতেই, জানাচ্ছে রিপোর্ট 

শুধু ভারতে নয়, পাক অধিকৃত পঞ্জাব প্রদেশেও পরিস্থিতিটা একই। প্রশাসনিক কড়াকড়ি সত্ত্বেও ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোয় রাশ টানা যায়নি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, দূষণজাত অসুস্থতা রুখতে দোকান, বাজার তাড়াতাড়ি বন্ধ করা হচ্ছে বহু জায়গাতেই। যতটা কম ঘরের বাইরে থাকা যায়, সেই চেষ্টাই করছেন মানুষ। ধোঁয়াশার ভয়ঙ্কর প্রভাব দেখা গিয়েছে লাহৌরে। যেখানে বায়ুর গুণগতমান ছাড়িয়ে গিয়েছে ৩০০-র মাত্রা। বাতাসে PM2.5 কণার পরিমাণ বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। কার্যত আংশিক লকডাউন জারি করতে বাধ্য হয়েছেন সেখানে প্রশাসন। বন্ধ স্কুল-কলেজ। নানা বিধিনিষেধ জারি হয়েছে বাসিন্দাদের চলাফেরায়।

এরই মধ্যে পাকিস্তানের শিশুদের নিয়ে বড়সড় ঝুঁকির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে শিশুদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইউনিসেফ। পাকিস্তানে ইউনিসেফের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ ফাদিল পাক-পঞ্জাব প্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, পঞ্জাবের বিপজ্জনক বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে এমন ১১ মিলিয়ন শিশুর স্বাস্থ্য গুরুতর ঝুঁকির মুখে। ইতিমধ্যেই পাকিস্তান সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে ইউনিসেফের তরফে। একই সঙ্গে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ফাদিল সম্প্রতি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পাঁচ বছর বয়সী প্রায় ১১ মিলিয়ন শিশু এই ধোঁয়ায় ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করছে ইউনিসেফ। তিনি এ-ও জানান, পাকিস্তানে পাঁচ বছরের শিশুদের মধ্যে অন্তত ১২ শতাংশের মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে চলেছে এই বায়ু দূষণ। একই সঙ্গে গর্ভবতী মায়েদের অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়েও সতর্ক করেছেন ফাদিল। অকালজন্ম, শ্বাসকষ্টজনীত জটিলতা, কম ওজনের শিশুর জন্মের মতো একাধিক ঝুঁকি তৈরি করছে এই পরিবেশ দূষণ। এই পরিবেশ দূষণের ফলে লক্ষ লক্ষ শিশুর শিক্ষা-স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে চলেছে এই দূষণ।

বিশুদ্ধ বাতাস প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার। অথচ সেই অধিকার থেকেই আপাতত বঞ্চিত পাকিস্তানে বসবাসকারী অসংখ্য শিশু। অবিলম্বে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে পদক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি Dawn-এর একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, পাক পঞ্জাব প্রদেশে নাকি বাতাসের গুণগতমান একটু হলেও ভালো হয়েছে। শিয়ালকোট-সহ সাতটি জেলার AQI ৭৭৪-এ পৌঁছেছে।

ইতিমধ্যেই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে রাজ্যের স্কুলগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাসিন্দাদেরও পাবলিক পার্ক, চিড়িয়াখানা, খেলার মাঠ বা জাদুঘরের মতো জায়গাগুলিতে যাওয়ার উপরেও বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। ইসলামাবাদের ইউনিসেফ অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, লাহৌর ও মুলতানের মতো শহরগুলিতে বায়ুদূষণের মাত্রা আকাশ ছুঁয়েছে। ইতিমধ্যেই হাসপাতালগুলি উপচে পড়ছে অসুস্থ মানুষের ভিড়ে। যার মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে একাধিক দূষণজনীত সমস্যায় ভুগছে তারা। শুধুমাত্র লাহৌরেই মঙ্গলবার ৯০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গার ক্লিনিকগুলিতে রোগীদের সাহায্য করতে ধোঁয়াশা কাউন্টার স্থাপন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ভারতে এক বছরে ১৬ লাখ মানুষের মৃত্যু দূষণে! যেসব ভয়াবহ সত্য প্রকাশ রিপোর্টে

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের তরফে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে, এই বায়ুদূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং অন্যান্য শ্বাসজনীত সমস্যার কারণ হতে পারে। ইতিমধ্যেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে পাকিস্তানে। ইতিমধ্যেই দূষণ মোকাবিলায় কৃত্রিম বৃষ্টিপাত তৈরি করার পদ্ধতিগুলিও খতিয়ে দেখছে পাক-প্রশাসন।

More Articles