সমস্ত মহিলারাই ভুগছেন এই সমস্যায়! রক্তাল্পতা কেন অচিরেই ডেকে আনতে পারে মৃত্যুও?

Anemia: গর্ভবতী মহিলারা যদি রক্তশূন্যতার চিকিৎসা না করান তাহলে সন্তানের উপর তার প্রভাব পড়ে।

রক্তাল্পতা, পরিচিত সমস্যা। কিন্তু অনেকটাই আড়ালে রক্তাল্পতার গুরুতর প্রভাবগুলি। বিশেষত ভারতীয় মহিলাদের বড় অংশই রক্তাল্পতায় ভোগেন। অ্যানিমিয়ার নিয়মিত চিকিৎসা না করানোয় পরিস্থিতি গুরুতর হয়, রক্তাল্পতার পাশাপাশি এসে জোটে আরও নানা রোগই। গর্ভবতী মহিলা, শিশু এবং দরিদ্রদের মধ্যে রক্তাল্পতার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। অনেকেই জানেন না যে তারা রক্তাল্পতায় ভুগছেন, ফলে সময়ে চিকিত্সাও করা হয় না। রক্তাল্পতায় ব্যক্তির দেহে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ কমে যায়, এই কণিকা আয়রন সমৃদ্ধ অণু হিমোগ্লোবিন দ্বারা গঠিত। এটি শুধুমাত্র রক্তের রঙ লালই করে না, ফুসফুস থেকে শরীরের বাকি অংশে অক্সিজেন পরিবহনের কাজটিও করে।

হিমোগ্লোবিন মানুষের রক্তে পাওয়া একটি অপরিহার্য প্রোটিন। সারা শরীরে রক্তের চলাচলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হিমোগ্লোবিনের রাখে। রক্তে হিমোগ্লোবিন এবং লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ কম হলে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। শুনতে খুব সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা হলেও এর প্রভাবে কী কী দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে তা জানলে অবাক হতে হয়। দেহে কম হিমোগ্লোবিন কি মৃত্যুর কারণও হতে পারে? আসলে শরীরে কম হিমোগ্লোবিন মানেই দেহে অক্সিজেনও কম। তাই সেক্ষেত্রে ফুসফুসকে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হয়। তা না হলে, শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে আক্রান্তের। গুরুতর আয়রনের ঘাটতি লেফট ভেন্ট্রিকুলার ডিসফাংশন (LVD) এবং ওভারট হার্ট ফেলিওর ঘটাতে পারে, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। যখন রোগীর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ৫ গ্রামের কম হয় তখন লেফট ভেন্ট্রিকুলার ডিসফাংশন ঘটে যা একেবারেই দেহের আয়রনের ঘাটতির ফল।

আরও পড়ুন- শীতে ভোর ৪ টে থেকে ৬ টার মধ্যেই ঘটে বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাক! কীভাবে আটকাবেন?

লেফট ভেন্ট্রিকুলার ডিসফাংশনের লক্ষণ:

শ্বাস নিতে সমস্যা

ক্লান্তি এবং দুর্বলতা

ব্যায়াম করার ক্ষমতা হ্রাস

অবিরাম কাশি

পা, গোড়ালির ফোলাভাব

অ্যানিমিয়ার কারণ ও লক্ষণ

হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম হতে পারে নানা কারণে। দেহে কোনও সংক্রমণ ঘটলে, বিপুল পরিমাণে রক্তক্ষয় হলে এবং দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যসমস্যা অ্যানিমিয়ার কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় দেহে আয়রনের চাহিদা বেড়ে যায়। দেহে নানা সমস্যার কারণে খাবার থেকে আয়রন শোষণেও সমস্যা হতে পারে। রক্তাল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ক্লান্তি, মাথাব্যথা এবং দুর্বলতার মতো উপসর্গ খুবই সাধারণ। এই অ্যানিমিক অবস্থার আরও অবনতি হলে, বুকে ব্যথা, এমনকী শ্বাসকষ্টও দেখা দেয় যার ফলে গুরুতর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেয়। হার্টের অবস্থা খারাপ হলে তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। গর্ভবতী মহিলারা যদি রক্তশূন্যতার চিকিৎসা না করান তাহলে সন্তানের উপর তার প্রভাব পড়ে। যার ফলে কম জন্মের ওজন এবং প্রিটার্ম ডেলিভারি এবং শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশেও ব্যাঘাত ঘটে।

আরও পড়ুন- শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা মানেই মৃত্যুফাঁদ! কীভাবে চিনবেন উপসর্গ

রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ

হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে সহজ ও পরিচিত পথ যা চিকিৎসকরা বাতলে থাকেন তা হলো আয়রন সাপ্লিমেন্ট। শুধু সাপ্লিমেন্টই নয়, দেহে লোহার পরিমাণ বাড়াতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াও অপরিহার্য। রোগীর দেহে রন্তের পরিমাণ মারাত্মক কমে গেলে অনেক সময় রক্ত দেওয়ারও প্রয়োজন হয়। দেহে রক্তশূন্যতা খুব সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা বলে এড়িয়ে যান অনেকেই। কিন্তু মৃদু উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসা দরকার। যে কোনও মুহূর্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে গেলেই ভয়াবহ জটিলতা দেখা দিতে পারে।

অ্যানিমিয়ার চিকিত্সা

দেহে লোহার পরিমাণ বাড়ালে অর্থাৎ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেলে দেহে রক্তের ঘাটতি কমতে পারে। সাধারণত, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা আলসারের মতো ছোটখাটো ক্ষেত্রে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার কাজ করে। তবে শরীরে ভিটামিন বি-১২ এর অভাব হলেও রক্ত লাল রক্তকণিকা তৈরি করতে পারে না শরীর। রক্তে তাই লোহিত কণিকার ভারসাম্য বজায় রাখতে খাদ্যে B-12 থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

More Articles