মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীদের কি পিরিয়ডস হয়?

Animal Menstruation : একমাত্র মানুষ হয়ে জন্মালেই কি এই ভোগান্তি? পৃথিবীর এত এত প্রাণীর মধ্যে যে স্ত্রীপক্ষ আছে, তাদের পিরিয়ডস হয় না?

পিরিয়ডস। ঋতুস্রাব। শব্দটি শুনলে কোনও মহিলাই যে খুব খুশি হন তা নয়। কম বেশি সকলের কাছেই মাসিক ঋতুচক্র অত্যন্ত বিরক্তির, অনেকের কাছে ভয়াবহ যন্ত্রণার। মাসের ৩/৪ দিন (কারও কারও ক্ষেত্রে আরও বেশি) নানা ধরনের সমস্যাই চলে মহিলাদের সারা শরীরে। কিন্তু একমাত্র মানুষ হয়ে জন্মালেই কি এই ভোগান্তি? পৃথিবীর এত এত প্রাণীর মধ্যে যে স্ত্রীপক্ষ আছে, তাদের পিরিয়ডস হয় না? জানলে আশ্চর্য হবেন, মানুষ সেই কতিপয় প্রাণীদের মধ্যে একজন যাদের পিরিয়ডস হয়।

কুকুরের কি পিরিয়ডস হয়?

নাহ। হয় না। কুকুরের ঋতুস্রাব নিয়ে নানা কথা থাকলেও আসলে কুকুরের ঋতুচক্র নেই। স্ত্রী কুকুরদের যৌনতার পর্ব চলাকালীন ইস্ট্রাস চক্রের নির্দিষ্ট কিছু পর্বে রক্তাক্ত স্রাব বেরোতে পারে। তবে যোনি থেকে উদ্ভূত এই রক্তাক্ত স্রাবটি পিরিয়ডসের মতো নয়।

বিড়ালের কি পিরিয়ডস হয়?

মোটেও হয় না! বিড়ালদের মাসিক চক্রের পরিবর্তে ইস্ট্রাস চক্র থাকে। বিড়ালয়ের যৌনতার পর্বে, বছরের নির্দিষ্ট মাসগুলিতে এই চক্র চলে। বিড়ালরা শাবক জন্ম দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে, প্রতি ঋতুতে একাধিক ইস্ট্রাস চক্র থাকে। স্ত্রী বিড়ালগুলির শীতের শেষ থেকে শরতের শুরু পর্যন্ত প্রায় এই চক্র চলে। বিড়ালও মিলনের প্রতিক্রিয়ায় ডিম্বস্ফোটন করে। একবারে জন্ম নেওয়া সমস্ত বিড়ালছানার বাবা আলাদা আলাদাও হতে পারে। একে বলে সুপারফেকন্ডেশন।

আরও পড়ুন- মানুষ নয়, ৩৬ বছর ধরে বিড়াল, ইঁদুরদের জন্য বর্ম তৈরি করেন এই শিল্পী! কেন?

ঋতুস্রাব কেন হয়?

মাসিক এই ঋতুচক্র প্রজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন সহ হরমোনের ওঠানামা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। শরীর ভ্রূণের জন্য জরায়ুতে একটি সুন্দর স্থান তৈরি করে। তারপর যদি সেই ভ্রূণটি কখনও তৈরি না হয়, তাহলে সেটিকে বের করে দেয়। টিস্যুর এই স্তরটিকে এন্ডোমেট্রিয়াম বলা হয়।

ঋতুস্রাব হয় এমন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে সাধারণত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে হেমোকোরিয়াল প্লাসেন্টা। বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাসেন্টার মধ্যে হেমোকোরিয়ালগুলিই সবচেয়ে আক্রমণাত্মক: এন্ডোমেট্রিয়ামের সমস্ত স্তরগুলিই ঢেকে যায়। উদাহরণস্বরূপ, মানুষের গর্ভাবস্থায় অ্যামনিওটিক থলির বাইরের স্তরটি রক্ত প্রবাহের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে থাকে। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের প্লাসেন্টা শুধু জরায়ুর দেওয়াল স্পর্শ করে থাকে।

কোন কোন প্রাণীর পিরিয়ডস হয়?

প্রাইমেটস বা মানুষের বাঁদরগোত্রীয় পূর্বপুরুষ

ওরাংওটান ফাউন্ডেশন ইন্টারন্যাশনালের মতে, ওরাংওটানদের মাসিক ঋতুচক্র ২৯ থেকে ৩২ দিনের মধ্যে থাকে এবং তিন থেকে চার দিন ঋতুস্রাব হয়। শিম্পাঞ্জিদের মাসিক চক্র ২৮ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে হয়। গরিলাদের মাসিক চক্র প্রায় ৩০ দিন স্থায়ী থাকে।

রিসাস ম্যাকাক এবং বেবুনদেরও মাসিক ঋতুস্রাব হয়। ২০০৮ সালের একটি গবেষণা বলছে, যে বেবুনদের আগে আগেই মাসিক শুরু হয় যায়, দেখা যায় তারা তাদের বাবাদের সঙ্গে বেশি সময় কাটায়।

বাদুড় এবং ইঁদুর

বাদুড় এবং ইঁদুরের মধ্যেও ঋতুস্রাব লক্ষ্য করা গেছে। বায়োলজি অফ রিপ্রোডাকশন জার্নালে প্রকাশিত ২০২০ সালের একটি গবেষণাপত্র বলছে, অন্তত তিনটি প্রজাতির বাদুড় রয়েছে যাদের মধ্যে ঋতুস্রাব দেখা গেছে। ব্ল্যাক মাস্টিফ ব্যাট মোলোসাস অ্যাটার এবং ওয়াইল্ড ফুলভস ফ্রুট ব্যাট রুসেটাস লেসচেনাল্টি হলো সেই ধরনের বাদুড় যাদের মধ্যে সবচেয়ে মানুষের মতো বৈশিষ্ট্য আছে। বিশ্বের ৪,০০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে মাত্র কয়েকটি প্রাণীরই ঋতুস্রাব হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের প্রজনন বিজ্ঞান সম্পর্কে এখনও তাই নিরন্তর গবেষণা চলছে।

আফ্রিকার ইঁদুরের একটি প্রজাতি এলিফ্যান্ট শ্রু-দের ঋতুস্রাব হয়। ঋতুস্রাব হয় এমন আরেকটি ইঁদুরের প্রজাতি হলো কায়রো স্পাইনি মাউস, এরা উত্তর আফ্রিকার অধিবাসী।

আরও পড়ুন- জন্মের পরই অন্ধ হয়ে যায় মানুষ, এমনকী পশুপাখিও! এই গ্রাম ঘিরে এখনও রয়েছে গভীর রহস্য

পিরিয়ডস হলে মানুষের মেজাজ-আচরণ পরিবর্তিত হয়, পশুদেরও তাই?

কিছু প্রজাতি আছে যাদের মাসিক ঋতুস্রাবের নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে আচরণগত পরিবর্তন দেখা গেছে। ১৯৮৫ সালে, কেনিয়ার অ্যাম্বোসেলি ন্যাশনাল পার্কে বেবুনদের পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, স্ত্রী বেবুনরা তাদের পিরিয়ড শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে বিভিন্ন আচরণ করে। তারা গাছে বেশি সময় কাটায়। পুরুষরা যে স্ত্রী বেবুনদের প্রতি আলাদা আচরণ করে, তা না। তবে স্ত্রী বেবুনরা বিশেষ পাত্তা দেয় না এই সময়। ঋতুস্রাবের আগে এই প্রাইমেটরা স্বাভাবিক সময়ের দ্বিগুণ বেশি সময় কাটায় গাছের একেবারে উপরে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি খায়।

স্পাইনি মাউসও ঋতুচক্র শুরুর আগে আগে আচরণ পরিবর্তন করতে পারে। ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষক ডঃ নাটালি কুপার বলছেন, পিরিয়ডস হলে কিছুটা মুষড়ে পড়ে এই স্পাইনি মাউসরা। বেশি ঘোরাফেরা করে না এবং ঋতুচক্রের বিভিন্ন পর্বে তারা বিভিন্ন পরিমাণে খাবার খায়।

তবে অন্যান্য প্রাণীদের পিরিয়ডস নিয়ে এখনও ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। এর ফলে কিঞ্চিৎ উপকার মানুষেওও হতে পারে। বিশেষ করে ঋতুচক্রের সময় যারা মানসিক নানা উথালপাথালের মধ্যে দিয়ে যান তাঁদের সাহায্য করতে পারে অন্য প্রাণীদের ঋতুচক্র বিষয়ক চর্চা।

More Articles