চিনে নিউমোনিয়ার কবলে হাজার হাজার শিশু, করোনার পরে নতুন মহমারীর মুখে বিশ্ব?

China Pneumonia Outbreak: চিনের রাজ্য সরকারি মিডিয়া জানিয়েছে, বেজিংয়ের চিলড্রেন হাসপাতালে দিনে ৭ হাজার করে রোগী এসে জড়ো হচ্ছেন। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

করোনার পর চোখ রাঙাচ্ছে শিশুদের নিউমোনিয়া। ফের নতুন কোনও মহামারির মুখোমুখি বিশ্ব? দীর্ঘ দু'বছরেরও বেশি সময় ধরে অতিমারির দাপট সহ্য করেছে গোটা বিশ্ব। সেই করোনা সংক্রমণের শুরুটা কিন্তু হয়েছিল চিন থেকেই। সেই চিনে এবার নতুন সংক্রমণের খবর। যার নিশানায় এবার মূলত শিশুরাই। নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসকষ্টজনীত অসুখের নতুন ঢেউ দেখা গিয়েছে চিন জুড়ে। চিনে নয়া এই সংক্রমণের খবরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে।

২০১৯ সালে চিনে এমনই ব্যাধির প্রকোপ ছড়িয়েছিল। চিনের সরকারের অবশ্য দাবি, শীতের শুরুতে শ্বাসকষ্টজনীত সমস্যা এমনিতেই বাড়তে থাকে। তারপর কোভিড বিধিনিষেধ উঠে যাওয়াকেও কিছুটা দুষেছেন চিনের সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চিনের ব্যাপারটি নিয়ে। চিনের সরকার ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ভাগ করে নিয়েছে হু-এর সঙ্গে।

ইতিমধ্যেই চিনের হাসপাতালগুলিতে শ্বাসকষ্টজনীত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছে অসংখ্য রোগী। প্রাথমিক ভাবে চিনের তরফে এটিকে রহস্যজনক নিউমোনিয়া বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। পূর্ব ও উত্তর চিনের একাধিক এলাকায় প্রবল সংক্রমণ ছড়িয়েছে। চিনের রাজ্য সরকারি মিডিয়া জানিয়েছে, বেজিংয়ের চিলড্রেন হাসপাতালে দিনে ৭ হাজার করে রোগী এসে জড়ো হচ্ছেন। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: চিনে হু হু করে শিশুরা আক্রান্ত নিউমোনিয়ায়, ফিরছে মাস্ক! নেপথ্যে ফের ‘অজানা ভাইরাস’?

নতুন এই সঙ্কট পরিস্থিতিতেত হাসপাতালগুলিতে না আছে বেড, না আছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা কারণ প্রতিদিন ৭ হাজার করে রোগীর ভিড় সামলানোর মতো পরিকাঠামো হাসপাতালগুলির নেই। নতুন এই সংক্রমণের বেশিরভাগ শিকারই শিশু। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকেই চিন জুড়ে শুরু হয় এই নিউমোনিয়া সংক্রমণ। এই সময়টাই দেশ জুড়ে পর্যটকদের ভিড় বাড়ে।

হাসপাতালে এতটাই মারাত্মক চাপ, যে পৌঁছে গেলেও চিকিৎসা শুরু করতে করতে অনেকটা দেরি হয়ে যাচ্ছে। ৭ বছরের ছেলেরে নিয়ে বেজিংয়ের একটা হাসপাতালে ছুটেছিলেন বাবা-মা। ডাক্তার দেখতে দেখতেই দু-তিন ঘণ্টা লেগে যায়। একই অবস্থা চিকিৎসা করাতে আসা বাদবাকি রোগীদেরও। ক্রমশ পাল্লা দিয়ে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। কীভাবে এই পরিস্থিতি রোখা যাবে, মাথায় হাত চিনা প্রশাসনের।

China Warns of Respiratory Illnesses After Pneumonia Hit Kids

ইতিমধ্যে দেশ জুড়ে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। বাসিন্দাদের সজাগ থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। বেজিং এবং লিয়াওনিং এলাকায় সব চেয়ে বেশি সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। কোথা থেকে এই সংক্রমণের শুরু তা জানা যায়নি। চিনের স্কুলগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে ইতিমধ্যেই।

করোনা-ফাঁড়া কেটেছে কদিনই বা হয়েছে। এরই মধ্যে উঁকি মারছে নয়া বিপদ। কেউ কেউ মনে করেছে, আবহাওয়াজনীত কারণেই এই অসুস্থতা। শীতকাল এসে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। শীতকালে এমনিতে এই ধরনের রোগের প্রকোপ বাড়ে। তারপর কোভিড-১৯ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর একটু ঢিলেমি দেখা গিয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। হু-র তরফে অবশ্য আশ্বাস, কোভিড-১৯-র মতো ভয়ঙ্কর কিছু নয় এটা।

আরও পড়ুন:শিগগিরই ফিরতে চলেছে করোনাভাইরাস! চিনের ‘ব্যাটওম্যানে’র গবেষণা ঘিরে তোলপাড় বিশ্ব

চিনের স্বাস্থ্য দফতর তরফে খবর, মে মাস থেকে মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া এবং অক্টোবর থেকে আরএসভি, অ্যাডেনোভাইরাস এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় চিনে। তবে এবার নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব একটু ভয়াল আকার ধারণ করেছে। সব চেয়ে বেশি যার প্রভাব পড়েছে শিশুদের মধ্যে। এবার সেই সংক্রমণ যাতে কোনও ভাবেই করোনার মতো ভয়াল আকার ধারণ না করে, কোনওভাবেই পৃথিবীর অন্য প্রান্তেও ছড়িয়ে না পড়ে, সেটাই দেখার। এই রোগকে যাতে চিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যায়, এবং কীভাবে দ্রুত এর ছড়িয়ে পড়া আটকানো যায়, সেটাই উদ্বেগের জায়গা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।

More Articles