মহিলাদের জন্য কতটা নিরাপদ সারভাইক্যাল ক্যান্সারের টিকা? আতঙ্ক বাড়াবে ভ্যাকসিনের এই রহস্য
Cervical cancer Vaccination : এই ভ্যাক্সিনের ট্রায়ালের পরীক্ষায় মারা যান সাতজন কিশোরী। যার মধ্যে পাঁচ কিশোরী অন্ধ্রের এবং বাকি দুইজন গুজরাতের।
দিন কয়েক আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক পোস্ট দেখে জানা যায় অভিনেত্রী ও মডেল পুনম পান্ডে মারা গেছেন। মাত্র ৩২ বছর বয়সেই সারভাইক্যাল ক্যান্সার তাঁর জীবন কেড়ে নিয়েছে। বিভিন্ন বয়সি মহিলাদের মধ্যে এই খবর খুব স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক জাগিয়ে তোলে। ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই পুনম পান্ডেরই ‘ভেরিফায়েড’ ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে একটি পোস্ট দেখা যায়, যেখানে তিনি নিজের একটি ভিডিওতে স্পষ্ট বলছেন, তিনি বেঁচে আছেন এবং সুস্থ আছেন। কোনও ডিপফেক ভিডিও নয়। তিনি ভিডিওতে বলতে থাকেন, “আমি সারভাইক্যাল ক্যান্সারে মারা যাইনি কিন্তু এই কথা আমি হাজার হাজার মহিলা, যারা সারভাইক্যাল ক্যান্সারে মারা গেছেন, তাঁদের সম্পর্কে বলতে পারি না। তাঁরা নিজেদের গাফিলতিতে মারা যাননি। বলতে পারি, তাঁরা মারা গেছেন কারণ তাঁদের কোনও ধারণাই ছিল না, এই নিয়ে কী পদক্ষেপ করা যায়… আমি বলতে চাই সারভাইক্যাল ক্যান্সারকে রোধ করা যায়, যেটা অন্যান্য ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আর তার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান এবং অবশ্যই এইচপিভি-প্রতিরোধী টিকা গ্রহণ করুন।”
এদিকে ১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ২০২৪ সালের অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করেন। বাজেট পেশ করার সময়ে তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সি মেয়েদের এইচপিভি টিকাকরণের জন্য সরকার থেকে সবসময় উৎসাহ দেওয়া হবে।
সারভাইক্যাল ক্যান্সার ও এইচপিভি
পৃথিবীতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সারভাইক্যাল ক্যান্সারের জন্যে এইচপিভি অর্থাৎ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস দায়ী। জরায়ুর একদম নিম্নবর্তী যে অংশটি যোনির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে, সেই অংশটিই সারভিক্স। মূলত যৌন সংসর্গের মাধ্যমেই একজন এইচপিভি-আক্রান্ত মানুষের দেহ থেকে আরেকজন এইচপিভি-মুক্ত মানুষের শরীরে ছড়ায় এই ভাইরাস।
সারভাইক্যাল ক্যান্সারের মূল লক্ষণগুলির মধ্যে রজঃস্রাব ছাড়াও অন্যান্য সময়ে রক্তপাত হওয়া, যৌন সংসর্গের পরে ব্যথা অনুভব করা এবং যোনিদ্বার থেকে দুর্গন্ধময় তরল বেরনো অন্যতম। পাশাপাশি তলপেটে কিংবা পিঠের নীচের দিকে ব্যাথাও অনুভব করতে পারেন আক্রান্ত মহিলারা। আবার অনেক ক্ষেত্রেই কোনও লক্ষণ ছাড়া অর্থাৎ অ্যাসিম্পটম্যাটিক্যালিও, দেহের মধ্যে বাসা বাঁধতে পারে সারভাইক্যাল ক্যান্সার। ঠিক যেভাবে শরীরে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটলে কোনও লক্ষণ না-ও দেখা যেতে পারে। তবে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে, অনেকক্ষেত্রেই যোনি বা পায়ু সংলগ্ন অঞ্চলে ছোট ছোট আঁচিলের মতো মাংসপিণ্ড বা ওয়ার্টস দেখা যেতে পারে।
আরও পড়ুন- ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কার করেন তিনিই! ‘কালো ভারতীয়’ এই চিকিৎসককে ফিরিয়েছিল হাভার্ড!
ভারতে এইচপিভি ভ্যাক্সিন
পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট ইন্ডিয়াই ভারতবর্ষে প্রথম এইচপিভি টিকা তৈরি করেছে। সারভাভ্যাক নামের সেই এইচপিভি-প্রতিরোধী টিকা ২০২২ সালে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া বা ডিসিজিআই-এর থেকে অনুমোদন পায়।
সারভাভ্যাক বাজারে আসার আগে, ভারতবর্ষে এইচপিভি ভ্যাক্সিন সরবরাহ করে এসেছে মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা মার্ক অ্যান্ড কো এবং ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন। যাদের তৈরি এইচপিভি-প্রতিরোধী টিকা গার্ডাসিল এবং সারভারিক্স (যথাক্রমে) ভারতে বিপুলভাবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষজ্ঞদের একদলের মতে সেরাম ইনস্টিটিউট ইন্ডিয়ার তৈরি সারভাভ্যাক বাকি দুই বিদেশি সংস্থার তৈরি এইচপিভি-রোধী টিকার মতোই কার্যকারী এবং সুরক্ষিত।
পিছিয়ে যাওয়া যাক ঠিক বারোটা বছর আগে। যখন সারভারিক্স এবং গার্ডাসিলের 'সুরক্ষা' নিয়ে চমকে গেছিল সারা পৃথিবী এবং সেই 'সুরক্ষার' মূল্য দিতে হয়েছিল খোদ ভারতবর্ষের নানান গ্রামের নাবালিকাদের। ২০০৬ সালের ১ জুন মার্কিন ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা, ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন,
সংক্ষেপে এইএসএফডিএ, মার্ক অ্যান্ড কো-এর তৈরি প্রথম এইচপিভি-প্রতিরোধী ভ্যাক্সিন গার্ডাসিলকে সাধারণ মানুষের শরীরে প্রয়োগের অনুমোদন দেয়।
আইসিএমআর এবং ডিসিজিআই-এর কারচুপি
ঠিক সেই মাসেই প্রোগ্রাম ফর অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টেকনোলজি ইন হেলথ বা পাথ নামের এক মার্কিন সংস্থা পাঁচ বছরব্যাপী এক প্রকল্প শুরু করে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল এইচপিভি ভ্যাক্সিনের ব্যবহার ও কার্যকারিতার সঙ্গে জনস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে পরিচিত করা। সোজা কথায়, এই ভ্যাক্সিনগুলিকে বালিকা এবং কিশোরীদের শরীরে প্রয়োগ করে ভ্যাক্সিনগুলি আদৌ কার্যকর কিনা তা বোঝা। আর সেই জন্য ভারত, উগান্ডা, পেরু এবং ভিয়েতনামকে বেছে নিয়েছিল পাথ। এই প্রকল্পে অর্থনৈতিকভাবে পাথকে সাহায্য করেছিল বিল ও মেলিন্ডা গেটস-এর সংস্থা গেটস ফাউন্ডেশন।
প্রসঙ্গত, কোনও ভ্যাক্সিন মানুষের শরীরে ব্যবহার করার সম্মতি পায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পাশ করার পরেই। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মূল উদ্দেশ্যই হলো কোনও ভ্যাক্সিন কতটা কার্যকরি এবং মানুষের শরীরে কতটা সুরক্ষিত, তা যাচাই করা। এই ধরনের একটি সেটের পরীক্ষার জন্য একই জাতির মানুষদের বেছে নেওয়া হয় কারণ জাতির বিভিন্নতায় জেনেটিক মেকআপ, সোজা কথায় সামগ্রিক জিনগত গঠনের ভেদ দেখা যায়। আর এই ভিন্নতার কারণে এক এক জাতি এক এক ধরনের অসুখে বেশি ভোগে। কিংবা কোনও অসুখের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে, যে ক্ষমতা জিনগত। ফলেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের একটি সেটে যদি বিভিন্ন জাতির মানুষের উপর ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে যাওয়া হয়, তাহলে পরীক্ষার ফল ত্রুটিপূর্ণ হয়। এ বিষয়টি ভ্যাক্সিন নিয়ে যারা কাজ করেন, তাঁদের খুব ভালোভাবেই জানা।
অথচ এখানে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, মার্কিনসংস্থা পাথ বেছে নিয়েছে চারটি আলাদা আলাদা জাতির মানুষকে। যাদের একে অপরের সঙ্গে জেনেটিক মেকআপের তুমুল পার্থক্য। পাথের এই সিদ্ধান্তে মদত দিয়েছে গেটস ফাউন্ডেশন। এখানেই শেষ নয়। এই প্রকল্পে পাথ এবং গেটস ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ ওঠে। ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক ও ডিপার্টমেন্ট-রিলেটেড পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটি অন হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার পাথের এই কারচুপি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে। অভিযোগের আঙুল উঠেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া বা ডিসিজিআই-এর বিরুদ্ধেও। আইসিএমআর এবং ডিসিজিআই-এর অনুমোদন ও সাহায্য ছাড়া ভারতে এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্ভব হতো না। ভারতে দাঁড়িয়ে তা আইনবিরুদ্ধ। এমনকী আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি বিরুদ্ধ এই কাজ, জানাচ্ছে
যাচ্ছে স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক ও ডিপার্টমেন্ট-রিলেটেড পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটি অন হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার রিপোর্ট।
ভারতে সাত কিশোরীর অকালমৃত্যু
ভারতবর্ষে পাথ এবং গেটস ফাউন্ডেশন এই পরীক্ষা চালায় অন্ধ্রপ্রদেশ এবং গুজরাতের বিভিন্ন গ্রামে। স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের ৭২ নম্বর
রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, এই পরীক্ষায় মারা যান সাতজন কিশোরী। যার মধ্যে পাঁচ কিশোরী অন্ধ্রের এবং বাকি দুইজন গুজরাতের। এই ৭ টি অকালমৃত্যুর কোনওটিই এইচপিভি ভ্যাক্সিনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, পরবর্তীতে ওষুধনির্মাতা দুই সংস্থা, পাথ এবং গেটস ফাউন্ডেশন ঠিক এমনটাই দাবি করে।
ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরে অসুস্থ হলে বা মৃত্যু ঘটলে, সেই অসুস্থতা বা মৃত্যুর কারণ ভ্যাক্সিন-সম্পর্কিত কিনা, তা পরীক্ষা (অর্থাৎ অ্যানালাইজিং ডেথস অ্যান্ড অ্যাডভার্স ইভেন্টস ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন) করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। গুজরাত এবং অন্ধ্র- এই দুই রাজ্যের অ্যানালাইজিং ডেথস
অ্যান্ড অ্যাডভার্স ইভেন্টস ফলোয়িং ইমিউনাইজেশনের রিপোর্টে কোনও সামঞ্জস্য নেই।
এখানে উল্লেখ্য অন্ধ্রের মৃত পাঁচ কিশোরীদের পাঁচজনের দেহেই গার্ডাসিল প্রয়োগ করা হয়। এদিকে গুজরাতের মৃত দুই কিশোরীকে দেওয়া হয়েছিল সারভারিক্স।
ভ্যাক্সিন দেওয়ার আগে কিশোরীদের অভিভাবকদের থেকে সম্মতি নেয়নি পাথ এবং গেটস ফাউন্ডেশন
যেকোনও ক্লিনিক্যাল স্টাডি ও পর্যবেক্ষণমূলক পরীক্ষা (অবজার্ভেশানাল স্টাডির) জন্য পরীক্ষায় সমস্ত অংশগ্রহণকারীর সম্মতি পাওয়া বাধ্যতামূলক। যদি অংশগ্রহণকারী প্রাপ্তবয়স্ক না হয়, সেক্ষেত্রে তাদের অভিভাবকদের স্বেচ্ছায় সম্মতি দান এবং তাঁদের সই পাওয়া একটি বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ। বিনা সম্মতিতে কোনও ব্যক্তিকেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অন্তর্ভুক্ত করা মানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা।
অথচ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, অন্ধ্রপ্রদেশে ৯,৫৪৩-টি কনসেন্ট-ফর্মের মধ্যে মাত্র ১,৯৪৮ টি ফর্মে টিপসই রয়েছে এবং ২,৭৬৩ টি ফর্মে লিখিত সই রয়েছে। অর্থাৎ বাকি ৪,৮৩২ টি কনসেন্ট ফর্মে লিখিত বা টিপসইয়ের কোনও চিহ্ন নেই। এদিকে গুজরাতের ৬,২১৭ টি ফর্মের মাত্র ৩,৯৪৪ টি ফর্মে টিপসই রয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের ১০০টি কনসেন্ট ফর্মের মধ্যে ৬৯ টি ফর্মে সাক্ষীর সই নেই। অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্য সরকার কিশোরীদের অভিভাবকদের বদলে তাদের সরকারি/বেসরকারি স্কুল কিংবা আশ্রমের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকাদের কেন সই করার নির্দেশ দিয়েছে, সেই বিষয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এদিকে কোনও কনসেন্ট ফর্মেই অভিভাবক, বাবা-মা, কিংবা নিদেনপক্ষে ওয়ার্ডেনদের ছবি নেই। বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাবা-মা কিংবা অভিভাবকের সইয়ের সঙ্গে তাঁদের
নামের মিল পাওয়া যায়নি। কিছু ফর্মে দেখা যাচ্ছে, বাবা-মা কিংবা অভিভাবকদের সইয়ের তারিখ, টিকাকরণের তারিখের অনেক পরে রয়েছে।
তদন্তকারী কমিটি জানাচ্ছে, কনসেন্ট ফর্মের বেশিরভাগই খুব গা-ছাড়াভাবে পূরণ করা হয়েছে। কিছু কিছু ফর্ম সম্পূর্ণ ভরাও হয়নি। একাধিক ফর্মে একই ব্যক্তির সই করার ঘটনাও চোখে পড়েছে। তদন্ত কমিটি আরও জানাচ্ছে, এইচপিভি ভ্যাক্সিনের সুবিধে এবং খারাপ দিকগুলি সম্পর্কেও ট্রায়ালের আগে
জানানো হয়নি।
আরও পড়ুন- ব্রেস্ট ক্যান্সারের আক্রান্ত মহিমা চৌধুরী, কোন ছোট্ট ভুলে আপনিও ঝুঁকির মুখে, আজই জানুন
ভ্যাক্সিনের গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, আইসিএমআর জানত আগে থেকেই
ভারতে এইচপিভি ভ্যাক্সিনের ট্রায়াল শুরুর আগে থেকেই জানা ছিল এই দুই বিদেশি সংস্থার এইচপিভি ভ্যাক্সিন থেকেই গুরুতর অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, অ্যাজমা, সেন্ট্রাল ডিমায়েলিনেটিং ডিজিজ, অ্যাকিউট ডিসেমিনেটেড এন্সেফ্যালোমায়ালাইটিস, ইডিওপ্যাথিক থ্রম্বোপিনিয়া পার্পিউরিয়ার মতো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। অথচ রেকর্ড থেকে জানা যাচ্ছে, এই দুই ওষুধ নির্মাতা সংস্থার খারাপ প্রচার এবং আর্থিক লোকসানের কথা মাথায় রেখেই আইসিএমআর এই নিয়ে মুখ খোলেনি।
তদন্ত কমিটি প্রশ্ন করেছে,এই দুই ভ্যাক্সিনের ব্যবহার ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিশদে জানার আগেই তা কেন ইউনিভার্সাল ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত করেছে আইসিএমআর?
ট্রায়ালে ভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে মাথা ঘামায়নি পাথ এবং ওষুধনির্মাতা দুই সংস্থা
ওষুধ কিংবা টিকার সমস্ত রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে নথিভুক্ত করা, যেকোনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রোটোকলের মধ্যেই পড়ে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বলছে, ভ্যাক্সিনের গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অর্থাৎ সিরিয়াস অ্যাডভার্স ইভেন্ট সম্পর্কে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামায়নি পাথ। মাথা ঘামায়নি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন এবং মার্ক অ্যান্ড কো-ও। এমনকী ভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলিকে নথিভুক্তকরণের জন্য কোনও ডায়রিকার্ডও ব্যবহার করা হয়নি। সিরিয়াস অ্যাডভার্স ইভেন্ট
ছাড়াও নন-সিরিয়াস অ্যাডভার্স ইভেন্টস সম্পর্কেও কোনও উল্লেখ নেই। তদন্ত কমিটির মতে, এটি গুরুতর একটি ত্রুটি এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের একটি অত্যাবশ্যক নিয়মকে লঙ্ঘন করার মতো অন্যায়।
ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরে হার্টের সমস্যা, সিজার, কিংবা অ্যানাফাইল্যাক্সিসের মতো গুরুতর রোগে আক্রান্ত হতে পারেন অনেকেই। এই ধরনের কোনও বিপদ দেখা গেলে, চিকিৎসার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেয়নি পাথ।
ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশনের লোগোর নীতিবিরুদ্ধ ব্যবহার
এই ট্রায়ালে ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশন অংশগ্রহণ করেনি। তা সত্ত্বেও ন্যাশানাল রুরাল হেলথ মিশন-এর লোগো ব্যবহার করেছে পাথ, যাতে গ্রামের মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা যায়। আর এই লোগো ব্যবহার হয়েছে আইসিএমআর এবং ডিসিজিআই-এর চোখের সামনে।
সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া ও সারভাভ্যাক
ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার তৈরি সারভাভ্যাকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্যও অর্থনৈতিক সাহায্য করেছিল বিল ও মেলিন্ডা গেটসের সংস্থা গেটস ফাউন্ডেশন। দুঃখজনকভাবে, এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কোনও রিপোর্ট এখনও অবধি আমরা হাতে পাইনি।
১ ফেব্রুয়ারি নির্মলা সীতারমণের ঘোষণা, পুনম পান্ডের 'বেঁচে' ফেরা, পাথ, গেটস ফাউন্ডেশন, আইসিএমআর আর ডিসিজিআই এর কারচুপি; আর সেরাম ইনস্টিটিউটের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিন্দুগুলিকে জুড়ে স্পষ্ট ছবিটা খুঁজে নেওয়ার কাজটা আম জনতাই করে নেবে।