রামনামেই রোগমুক্তি! হৃদরোগীদের 'রাম-কিট' বিলোচ্ছে কার্ডিওলজি হাসপাতাল
Ram Kits For Heart Patients: প্রয়াগরাজ জেলার ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শনিবার থেকে বাড়ি বাড়ি বিলোনো শুরু করবে ওই রাম-কিট। শহর জুড়ে অন্তত ৫ হাজার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে সেগুলি।
বিজ্ঞান বলে, রোগ সারাতে চাই চিকিৎসা, ওষুধ ও পথ্য। তার জন্য সারা বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে গবেষণা চলে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ওষুধ, নতুন নতুন চিকিৎসাপদ্ধতির খোঁজে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন বিজ্ঞানীরা। তবে রামরাজ্যে বোধহয় এ সবই তুচ্ছ। ইলাহাবাদ থুড়ি প্রয়াগরাজের একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাই হৃদরোগীদের চিকিৎসায় বেশি ভরসা রাখছেন রাম-কিটের উপরেই।
কানপুরের লক্ষ্মীপত সিঙ্ঘানিয়া ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওলজি অ্যান্ড কার্ডিয়াক সার্জারি হাসপাতালে ও হাসপাতালের বাইরে তাই সমস্ত হৃদরোগীদের হাতে হাতে দেওয়া হবে তাই রাম কিট। এমারজেন্সি কিট হিসেবেই এই কিটটি নাকি সাজিয়ে তুলেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 'আমরা চিকিৎসা করি মাত্র, সারিয়ে তোলেন তিনিই।' এমনই একটি ভাবনা থেকেই তৈরি হয়েছে সেই রাম-কিটটি। কী কী থাকছে সেই কিটে। থাকছে ইয়াব্বড় একটি রামের ছবি। তার সঙ্গে থাকছে ওষুধ, তার প্রেসক্রিপশন ও অ্যালার্জি থাকলে তা না খাওয়ার সাবধানবাণীও। তার সঙ্গে থাকছে হাসপাতালের হেল্পলাইন নম্বরও।
আরও পড়ুন: আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি থেকে কেন ‘সংখ্যালঘু’ তকমা মুছতে চাইছে কেন্দ্র?
কী কী ওষুধ থাকছে সেই তালিকায়? থাকছে রক্ত পাতলা করার ওষুধ ইকোস্প্রিন, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার দাওয়াই রসোভাস্টেটিন এবং হৃদরোগীদের প্রাণদায়ী ওষুধ সরবিটরেট। এই তিনটি ওষুধও হৃদরোগীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তিনটি ওষুধ। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, এর মধ্যে কোনও ওষুধে যদি কারওর অ্যালার্জি থাকে, সেক্ষেত্রে সেই ওষুধটি বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রয়াগরাজ জেলার ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শনিবার থেকে বাড়ি বাড়ি বিলোনো শুরু করবে ওই রাম-কিট। শহর জুড়ে অন্তত ৫ হাজার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে ওই কিট। রাজ্যের প্রথম হাসপাতাল এটি, যারা এমন উদ্যোগ নিচ্ছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করেই এই উদ্যোগ। আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে সাজো সাজো রব দেশ জুড়ে। দেশের প্রতিটা বাসিন্দাকে নিজের ঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে দীপাবলি পালনের নির্দেশ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর সেই আয়োজনেই একটুখানি অর্ঘ্য দিতে চাইছে প্রয়াগরাজের হাসপাতাল এভাবেই।
যে চিকিৎসকেরা বিজ্ঞানের ভরসায় মৃত্যুর সঙ্গে পর্যন্ত লড়াইয়ে নামেন, সেই চিকিৎসকদের হাতে এই রাম-কিট কি নিজেদের চিকিৎসাবিদ্যার উপরেই সন্দেহপ্রকাশ নয়, প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। যদিও ওই হাসপাতালের সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট ড. নীরজ কুমারের দাবি, সকলেরই রাম-নামে ভরসা রয়েছে। আর সে কারণেই এই কিটের নাম রাখা হয়েছে রাম-কিট। না, এখানেই শেষ নয় তাঁ ব্যাখ্যার। তাঁর দাবি, 'রাম-বান' নামে শব্দটির উল্লেখ রয়েছে ওই কিটে। অযোধ্যাপতি রাম কোনওদিনও লক্ষ্যচ্যুত হতেন না। অর্থাৎ সমস্ত সমস্যার তিনি করেই ছাড়তেন। লক্ষ্মীপত সিঙ্ঘানিয়া ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওলজি অ্যান্ড কার্ডিয়াক সার্জারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতে, এমন একটি জীবনদায়ী কিটের এর চেয়ে ভালো নাম আর কী-ই বা হতে পারত!
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রামভক্ত হৃদরোগীদের কথা ভেবে এই রাম-কিট বিলোচ্ছেন বটে। তবে তা কিন্তু মোটেই বিনামূল্যে নয়। এই রাম-কিটটির দাম ধার্য করা হয়েছে ৭ টাকা করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্রদের কথা মাথায় রেখেই এই ন্যূনতম দামটুকু রাখা হয়েছে। কারওর হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে যাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়টুকু পাওয়া যায়, সে জন্যই এই কিট। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, কারওর বুকে ব্যথা এবং ওই ধরনের সমস্যা অনুভূত হলে তাঁরা ওই কিটটি ব্যবহার করতে পারেন। আর তার পরেই তাঁকে নিয়ে যেতে হবে নিকটবর্তী হাসপাতালে। যাতে চিকিৎসকেরা তাঁদের প্রাণ বাঁচানোর সুযোগটুকু পান।
আরও পড়ুন: ৩২ বছর পর মৌন ভাঙছেন ধানবাদের বৃদ্ধা! কারণ জানলে অবাক হবেন
উদ্য়োগটি যে নিঃসন্দেহে ভালো, তাতে সংশয় নেই। তবে সেই সংশয়ের নেপথ্যে যেভাবে হিন্দুত্ববাদী প্রতাপ বড় হয়ে উঠেছে, তার উদ্দেশ্য নিয়ে স্বভাবতই প্রস্তাব উঠে গিয়েছে। যেখানে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে ধর্মীয় তকমা হঠাতে এতটা তৎপর কেন্দ্র সরকার, সেখানে একটি হাসপাতালের সমস্ত উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকাটা কি কাম্য নয়! প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।