প্রফেসর শঙ্কুর আবিষ্কার বাস্তব! যেভাবে খিদে না পাওয়ার আশ্চর্য ক্যাপসুল তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা

Weight Control Pill : এই ক্যাপসুলটি না খেলে একজন যতটা পরিমাণে খাবার খাচ্ছে, ক্যাপসুলটি খাবার পরে সেই খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে।

ওজন বেড়ে যাচ্ছে, চর্বি ক্রমেই পরিমাণে বাড়ছে, অথচ খাবারদাবার দেখে নিজেকে আটকানো যাচ্ছে না কিছুতেই? এমন যদি সত্যিই হতো, একটি আশ্চর্য ক্যাপসুলেই মিটে যেত খিদে-তেষ্টা? প্রফেসর শঙ্কুর বটিকা-ইন্ডিয়া সত্যিই যদি আবিষ্কার হতো, শরীরও বাঁচত, এমন হাঁইহাঁই করা খিদেও পেত না! ‘সত্যিই যদি আবিষ্কার হতো' কথাটা আর বলা যায় না। আবিষ্কার হয়ে গিয়েছে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) ইঞ্জিনিয়াররা স্থূলতার সমস্যাকে সামলাতে এমনই এক ক্যাপসুল তৈরি করেছেন।

আমাদের মাথাতেই সমস্ত কিছুর সংকেত গিয়ে পৌঁছয় এবং সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় সংকেত পাঠানোও হয়। পেট ভরে যাওয়া বা খিদে মিটে যাওয়ার সংকেতও একইভাবে কাজ করে। এই নয়া ক্যাপসুলটির লক্ষ্য শরীর যে খাবার পরে প্রাকৃতিকভাবেই এক তৃপ্তির সংকেত পাঠায় সেই সংকেত হুবহু অনুকরণ করে নেওয়া এবং এই সংকেত পাঠানো যে পেট ভরে গেছে। আর খাওয়া যাবে না। পরিমাণের অতিরিক্ত খাওয়া থেকেই আমাদের ওজন বাড়ে। সেই পরিমাণ খাওয়াও যদি হজম না করতে পারে শরীর তাহলে অবস্থা আরই শোচনীয়। সুতরাং খাওয়ার পরে সন্তুষ্টির সংকেত বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

বিষয়টি প্রথম মাথায় আসে শ্রিয়া শ্রীনিবাসনের। প্রাক্তন এমআইটি স্নাতক তিনি। এখন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে বায়োইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। শ্রিয়া জানাচ্ছেন, যখন আমরা যথেষ্ট পরিমাণে খাবার খাই তখন আমাদের পাকস্থলী প্রসারিত হয়, মেকানোরিসেপ্টর সক্রিয় হয়। মেকানোরিসেপ্টর মস্তিষ্ককে সংকেত দেয় পেট ভরে গেছে এমন হরমোন নিঃসরণের জন্য। শ্রিয়া শ্রীনিবাসনের দল এই ক্যাপসুলের মাধ্যমে এই সংকেতটিকেই অনুকরণ করেছে, যা এই রিসেপ্টরগুলিকে কৃত্রিমভাবে উদ্দীপিত করবে পেটের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করে।

প্রাণীদের উপর ইতিমধ্যেই এই ক্যাপসুলের প্রিক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়েছে। খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট আগে ক্যাপসুলটি খাওয়ানো হয়েছিল। দেখা যায়, এই ক্যাপসুলটি না খেলে একজন যতটা পরিমাণে খাবার খাচ্ছে, ক্যাপসুলটি খাবার পরে সেই খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে। ওজন বাড়ার গতিও কমিয়েছে এই ক্যাপসুল।

ক্যাপসুলটি একটি ছোট সিলভার অক্সাইড ব্যাটারির মতো কাজ করে। পেটে পৌঁছনোর প্রায় ৩০ মিনিট পরে কম্পন তৈরি করে। গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড বাইরের স্তর দ্রবীভূত করার সঙ্গে সঙ্গেই সার্কিটটি সম্পূর্ণ হয়, মোটরকে ট্রিগার করে। কম্পনগুলি মেকানোরিসেপ্টরকে স্নায়ুর মাধ্যমে সংকেত পাঠাতে অনুরোধ করে। খাওয়ার পরে দেহে ঘটে যাওয়া হরমোনের পরিবর্তনগুলিকে হুবহু অনুকরণ করে এই ক্যাপসুল।

এই প্রযুক্তিটি স্থূলতার চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটাতে পারে। এখন ওজন কমানোর চিকিৎসা বড়সড় অস্ত্রোপচার বা ব্যয়বহুল ওষুধ ছাড়া সম্ভবই হয় না। জিওভানি ট্রাভার্সো, এমআইটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট, এই গবেষণায় কিছু বিশেষ দিক লক্ষ্য করেছেন। বাইরের দিক থেকে নানা ওষুধ পত্র প্রয়োগের থেকে দেহের ভেতরে এই সিস্টেমের ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছেন।

ট্রাভার্সো এবং অন্যান্য গবেষকরা মানুষের দেহে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের সুবিধার্থে এই ক্যাপসুলগুলির উত্পাদন প্রক্রিয়াকে পরিমার্জিত করার পরিকল্পনা করেছেন। ক্যাপসুল ডিভাইসের নিরাপত্তা, খাওয়ার সবচেয়ে সুবিধাজনক সময়গুলিকে মাথায় রাখা হবে এক্ষেত্রে।

 

More Articles