ক্রিসমাস আর নববর্ষের মাঝেই হার্ট অ্যাটাক? কেন হচ্ছে বিশ্বজুড়ে?

Heart attacks during Christmas, New Year: প্রতিবছরই নাকি ক্রিসমাস ও নতুন বছরের প্রাক্কালে হাজার হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। মৃত্যুও হয় অনেকের।

ডিসেম্বর মানেই ক্রিসমাস, ডিসেম্বর মানেই আরও একটা বছরের শেষ। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এইসময় উৎসবের মেজাজে মেতে ওঠেন গোটা পৃথিবীর মানুষ। উৎসব মানেই ভালো-মন্দ খাওয়াদাওয়া আর পার্টির আমেজ। কিন্তু জানেন কি এই সময়টাই সবচেয়ে বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। তেমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। একটি গবেষণায় সম্প্রতি ধরা পড়েছে এমনই তথ্য।

প্রতিবছরই নাকি ক্রিসমাস ও নতুন বছরের প্রাক্কালে হাজার হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। মৃত্যুও হয় অনেকের। রোচেস্টার জেনারেল হাসপাতালের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. স্কট ফেইটেল জানাচ্ছেন, একে আদতে মরফির আইন বলা যেতে পারে। মানুষ যে জিনিসটি যখন সবচেয়ে কম আশা করে, সেটাই তার সঙ্গে তখন হয়। উৎসবের মরসুমে প্রায় সকলেই নিয়মের বন্ধন থেকে নিজেদেরকে একটু মুক্ত করে আনন্দে মেতে ওঠেন। আর সেই সুযোগেই হানা দেয় হৃদরোগের মতো জটিল অসুখবিসুখ।

আরও পড়ুন: শ্যুটিং শেষ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত শ্রেয়াস তালপাড়ে! কেন কম বয়সেই বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি?

কেন এই সময়টাই হানা দিচ্ছে হৃদরোগের মতো এমন প্রাণঘাতী সমস্যা? কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। এই ধরনের অসুখের প্রাদুর্ভাবের একটা কারণ অবশ্যই শীতকাল। ঠান্ডা আবহাওয়ায় রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়, ফলে রক্ত চলাচলে সমস্যা দেখা যায়। তার উপর উৎসবের মরসুমে অনেকেই সংযম ভোলে। ফলে এমন অনেক অনিয়ন্ত্রিত কাজকর্মই করে বসে, যা তাঁদের শরীরের জন্য ঠিক নয়।

অনেক সময়ই দেখা যায়, শরীরে বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থতা বোধ হচ্ছে। কিন্তু ছুটির মরসুম নষ্ট হওয়ার ভয়ে তাঁরা হাসপাতালমুখো হতে চাইছেন না। ফলে অসুখের উপসর্গগুলিকে অবহেলা করে বিপদ বাড়াচ্ছেন তাঁরা। ফলে এই উৎসবের মরসুমে বিশেষত শীতের সময়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। ঠিক মতো ওষুধপত্র খাওয়া হচ্ছে কিনা নিয়ম করে, সেদিকে অতিরিক্ত যত্নশীল হওয়ার কথা বলছেন তাঁরা।

এখন আর হৃদরোগ কিন্তু বয়স্কদের বিষয় নয় মোটেই। কম বয়সিদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে এই সময়। আর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঙ্কেত দেয় শরীর। অনেকেই মনে করেন, হৃদরোগ বুকে ছুরি বিঁধে যাওয়ার মতো একটা অনুভূতি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সব সময় তা না-ও হতে পারে। অনেক সময়ই হৃদরোগের সবচেয়ে বড় লক্ষণ কিন্তু বুকে চাপবোধ হওয়া। অনেকেই জানিয়েছেন, হৃদরোগের আগে আগে তাঁদের মনে হয়েছে, বুকের উপরে যেন একটা গোটা হাতি বসে রয়েছে। সেই অস্বস্তি হাত, পিঠ তো বটেই, এমনকী চোয়ালে পর্যন্ত অনুভূত হতে পারে। প্রবল ঘাম হওয়া, শরীরে অস্বস্তি, এমন অনেক উপসর্গই কিন্তু বহু সময় আক্রান্তরা বুঝে উঠতে পারেন না, আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। 

উৎসবের মরসুমে আনন্দ তো করবই। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে যা যা প্রয়োজন, সবই করব। কিন্তু তার সঙ্গেই শরীরের যত্ন নিতে কিন্তু ভুললে হবে না। সর্বদা শরীরের নিয়মিত পরীক্ষানিরিক্ষাগুলি করানো প্রয়োজন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধপত্রের বদল- এই সমস্ত প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে থাকা প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা, শরীরে কোনও রকম অস্বাভাবিকতা অনুভূত হলে, তাকে কোনও কারণেই অবহেলা করা উচিত নয়। বড়সড় বিপদ এড়ানোর একমাত্র উপায় সেটিই।

আরও পড়ুন: সুস্মিতা সেনের হার্ট অ্যাটাক! কেন চরম ‘ফিট’ মানুষও আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে?

মনে রাখা প্রয়োজন, সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকলে এমন বড়দিন বা বর্ষশেষ - এমন অনেক আসবে। ফলে শুধু ক্রিসমাসের আনন্দ উপভোগ করার জন্য বা বর্ষবরণের পার্টিতে আনন্দ করার জন্য় এই ধরনের উপসর্গকে এড়িয়ে যাওয়া কিন্তু বোকামো ছাড়া আর কিছুই নয়। ফলে উৎসব উদযাপন করুন, কিন্তু নিজের শরীরকে অবহেলা করে নয় একেবারেই। তেমনটাই মত চিকিৎসা বিশেষজ্ঞেদের।

More Articles