এবার সুপ্রিম কোর্টে সশরীরে ডাক পড়ল রামদেবের! কী কী অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে?
Baba Ramdev: এবার সুপ্রিম কোর্ট রামদেবকে সোজা আদালতে ডেকে পাঠাল। শুধু যোগগুরু রামদেবই নয়, পতঞ্জলির ম্যানেজিং ডিরেক্টের আচার্য বালকৃষ্ণকেও মঙ্গলবার সমন পাঠিয়েছে বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি আসাদুদ্দিন আমানুল্লাহের বেঞ...
সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা এসেছিল আগে। রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের বিজ্ঞাপনগুলিকে ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। এমনকী এ ব্যাপারে কেন্দ্রকেও তীব্র ভর্ৎসনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। পতঞ্জলি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই সংস্থার তরফে দাবি করা হয়, যোগগুরু রামদেব নাকি ওই আয়ুর্বেদ সংস্থার কোনও পদেই নেই। তবে তিনি যতই গা বাঁচানোর চেষ্টা করুন না কেন, শেষরক্ষা হল না। এবার সুপ্রিম কোর্ট রামদেবকে সোজা আদালতে ডেকে পাঠাল। শুধু যোগগুরু রামদেবই নয়, পতঞ্জলির ম্যানেজিং ডিরেক্টের আচার্য বালকৃষ্ণকেও মঙ্গলবার সমন পাঠিয়েছে বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি আসাদুদ্দিন আমানুল্লাহের বেঞ্চ। এবার অভিযোগ আদালত অবমাননারও।
অনেক দিন ধরেই যোগগুরু রামদেবের আয়ুর্বেদ সংস্থা পতঞ্জলির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। গত নভেম্বরেই সুপ্রিম কোর্টে জরিমানার মুখে পড়েছিল রামদেবের সংস্থাটি। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর একটি লিখিত আবেদনের শুনানি পর্বে মিথ্যা বিজ্ঞাপনীর প্রচারের জন্য জরিমানা করার কথা মৌখিক ভাবে জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। পতঞ্জলির বিরুদ্ধে অভিযোগ, কোভিড প্রতিরোধী নাম দিয়ে ভুয়ো পণ্য বিক্রি করে আড়াইশো কোটি টাকা মুনাফা করেছিল সংস্থাটি।
আরও পড়ুন: ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দেন রামদেব! বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করল সুপ্রিম কোর্ট
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এই মামলাটি নিয়ে শীর্ষ আদালতে যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছে। গত বছর নভেম্বরেই পতঞ্জলী সংস্থার ভুয়ো বিজ্ঞাপন নিয়ে পদক্ষেপ করেছিল আদালত। সে ব্যাপারে পতঞ্জলি ও সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টের বালকৃষ্ণের অবস্থান স্পষ্ট করে আদালতকে জানানোর নির্দেশ জেওয়া হয়েছিল। পতঞ্জলির বিজ্ঞাপনে রামদেবের ছবি থাকার ফলে তাঁকেও মামলার একটি পক্ষ বলে ধরা হয়েছিল। তবে সে ব্যাপারে আদালতে কিছুই জানানো হয়নি পতঞ্জলি সংস্থার তরফ থেকে। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি ফের আদালতে ওঠে মামলাটি। সেসময় বালকৃষ্ণকে নোটিস পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট। তবে সেই নোটিসের এখনও কোনও জবাব দেননি তিনি। আর তাতেই ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট।
মঙ্গলবার দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, এবার আর উত্তর তলব নয়, সশরীরে আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে খোদ রামদেবকে। একই সঙ্গে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরকেও পরবর্তী শুনানির দিন কোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এই গোটা প্রক্রিয়াটাই সেরে ফেলতে হবে দু'সপ্তাহের মধ্যে। বারবার উত্তর চেয়েও না পেয়ে ক্ষুব্ধ শীর্ষ আদালত। এবার রামদেব ও পতঞ্জলির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনেছে বিচাপতিদের বেঞ্চ।
পতঞ্জলির তরফে মঙ্গলবার কোর্টে সওয়াল-জবাব করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী মুকুল রহোতাগি। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, পতঞ্জলির সঙ্গে যোগগুরু রামদেবের কোনও সম্মন্ধ নেই। শুধু তাই নয়, তিনি আরও দাবি করেছেন যে রামদেবকে শোকজ করার আগে তাঁর বক্তব্য়ও শোনা উচিত কোর্টের। রোহতাগির যুক্তিকে খণ্ডন করে কোর্ট বলছে, 'গত বারও এমন হয়েছিল যে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছিল যে বাবা রামদেব আমাদের আদেশ পাশ করার পরে একটি প্রেস কনফারেন্স ডেকেছিলেন। আমরা শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছি। তাঁকে সাড়া দিতে দিন।’
আরও পড়ুন:আসল নাম রামকিষাণ যাদব! কীভাবে কোটি কোটি টাকার পতঞ্জলির ব্যবসা গড়লেন রামদেব?
ওষুধের ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন প্রচারের অভিযোগে রামদেব ও বালকৃষ্ণকে কাঠগড়ায় তুলেছে অভিযোগ। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ড্রাগস অ্যান্ড রেমেডিস অ্যাক্টের ৩ এবং ৪ নম্বর ধারা লঙ্ঘনে প্রধান অভিযুক্ত রামদেব ও বালকৃষ্ণ। সেসব তো ছিলই, এবার তার সঙ্গে যোগ হল আদালত অবমাননার অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপি-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রামদেব। কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায় রামদেবকে। আবার রামদেবের অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকেন বিজেপির বিশিষ্টরা। সামনেই ভোট। তার আগে সুপ্রিম কোর্টে রামদেবের হাজিরা কতটা অস্বস্তিতে ফেলতে চলেছে বিজেপি সরকার। আগের শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্টের ভালো রকম ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছিল কেন্দ্রকে। কী হতে চলেছে পরবর্তী শুনানিতে? আদালতের নির্দেশ মেনে দর্শন দেবেন রামদেব? নাকি এবারেও হাজিরা এড়াবেন? আপাতত সেটাই প্রশ্ন।