কেন গ্রেফতার টালা থানার ওসি? সুপ্রিম কোর্টে কী কী প্রমাণ দাখিল করবে সিবিআই?

RG Kar Case: ৯ অগস্ট ওই চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধারের পর ওই সেমিনার রুমে পুলিশের তরফে সর্বপ্রথম পৌঁছেছিলেন অভিজিৎ ও তাঁর সহযোগীরাই। তার পরেই সেমিনার রুমে প্রচুর মানুষের ভিড় জমতে থাকে।

আরজি কর কাণ্ড ঘিরে সময় যত পেরোচ্ছে, মানুষের ক্ষোভ ততই বাড়ছে। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন চলছে। পথে নামছে মানুষের মিছিলও। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৭ তারিখ। তার আগেই মামলার তদন্তে আরও একটু সামনের দিকে এগিয়ে গেল সিবিআই। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে। যে সময় তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়, সে সময় টালা থানায় কর্তব্যরত ছিলেন তিনিই। আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর একাধিক যোগসূত্র ইতিমধ্যেই হাতে এসেছে সিবিআই আধিকারিকদের।

তথ্যপ্রমাণ লোপাট ও সিবিআই আধিকারিকদের বিপথে চালনা করার অভিযোগে শনিবার রাতে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয় টালা থানার ওসি। ইতিমধ্যেই অভিজিতের বিরুদ্ধে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্যপ্রমাণ হাতে এসেছে সিবিআইয়ের। ইতিমধ্যেই অভিজিৎকে আট দফায় প্রায় ৪০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সিবিআই আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার রুম থেকে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে সব চেয়ে বেশি বার কথাবার্তা হয় টালা থানার ওসি অভিজিৎবাবুর। এমনকী টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ীও, সন্দীপ ও অভিজিতের ঘন ঘন সাক্ষাতের তথ্য মেলে। ৯ থেকে ১৪ অগস্টের মধ্যে অভিজিৎ নিয়মিত আরজি করে যাতায়াত করতেন বলেও তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের হাতে।

আরও পড়ুন: সঞ্জয়ের নারকো পরীক্ষায় মিলল না কোর্টের অনুমতি, কেন তীরে এসে তরী ডুবল সিবিআইয়ের?

৯ অগস্ট ওই চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধারের পর ওই সেমিনার রুমে পুলিশের তরফে সর্বপ্রথম পৌঁছেছিলেন অভিজিৎ ও তাঁর সহযোগীরাই। তার পরেই সেমিনার রুমে প্রচুর মানুষের ভিড় জমতে থাকে। তা আটকানোর চেষ্টা করেননি ওসি। যে প্লেস অব অকারেন্সের নমুনা রক্ষার মূল দায়িত্ব  ছিিল অভিজিতবাবুর, তা বিন্দুমাত্র পালন করেননি তিনি। বরং তাঁর বিরুদ্ধে ওই খুন ধর্ষণের মামলায় একাধিক প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের গাফিলতিতেই ঘটনাস্থলের যাবতীয় জরুরি তথ্যপ্রমাণ কার্যত নষ্ট হয়ে যায় বলে মনে করা হচ্ছে। আর তার নেপথ্যে যথেষ্ট পরিকল্পনা ছিল বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।

এমনকী সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের ক্ষেত্রেও টালা থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাস্থলের একটি মাত্র সিসি ক্যামেরার ফুটেজ মেলে, তারও বিভিন্ন জায়গা অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশা মাখা। সুপ্রিম কোর্টেও সিবিআই দাবি করেছিল, ঘটনাস্থলের তথ্যপ্রমাণ লোপাটের কথা। চিকিৎসক পড়ুয়ার বাবা-মা নিহতের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তেমনটা যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন ওসি নিজেই। মৃতদেহ দাহ করার ক্ষেত্রেও অতিসক্রিয়তার অভিযোগ মিলেছে ওসির বিরুদ্ধে। নানা প্রমাণ লোপাট, অভিযুক্তকে আড়াল করার সক্রিয় চেষ্টা ছাড়াও আরজি কর মামলায় একাধিক কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন তদন্তকারীরা তাঁর বিরুদ্ধে।

৯ অগস্টের ওই ঘটনার পরে সিট দখল করে তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশ। তার পরেও লাগাতার কথাবার্তা চলছিল সন্দীপ ও অভিজিতের। শুধু তাঁদেরই নয়, কল রেকর্ডে আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথাবার্তা চলছিল তাঁদের। সেই সূত্র ধরেই প্রভাবশালী যোগের তথ্য ইঠে আসছে সিবিআই গোয়েন্দাদের হাতে। জানা গিয়েছে, ঘটনার চার দিন পরে সন্দীপের বয়ান নথিভুক্ত করেছিলেন সিটের তদন্তকারী অফিসারেরা। কিন্তু সন্দীপের মোবাইল ফোনের 'কল ডিটেলস' পরীক্ষা করা হয়নি। সন্দীপের ক্ষেত্রে এক রকম দায়সারা তদন্ত করা হয়েছিল। কোনও কিছুই গভীরে গিয়ে খতিয়ে দেখা হয়নি।" সূত্রের খবর, সিটের চার জন তদন্তকারী অফিসারকে তলব করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

আরও পড়ুন: শীর্ষ আদালতের বিচারাধীন বলেই লাইভ সম্প্রচারে বাধা? কী বলছেন আইনজ্ঞরা?

ইতিমধ্য়েই লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তাাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। জেরা করা হয় সন্দীপের গাড়ির চালককেও। আর তার পরেই সিবিআই গোয়েন্দাদের দাবি, এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বড়সড় যড়যন্ত্র। যার উপর থেকে পর্দা সরাতে খুব শিগগিরই টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল ও আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চলেছে সিবিআই। প্রাথমিক ভাবে সন্দীপ ঘোষের জন্য আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে বিশেষ হেফাজতের দাবি জানিয়েছিল সিবিআই। সেই অনুযায়ী, প্রেসিডেন্সি জেলে থাকার কথা ছিল সন্দীপের।

তবে অভিজিৎ গ্রেফতার হওয়ার পরেই রাতারাতি সন্দীপকে ৩ দিনের সিবিআই হেফাজতে নেওয়া হয়। হেফাজতে নেওয়া হয়েছে অভিজিৎ মণ্ডলকেও। এবার এই দু'জনের সূত্র ধরে খুব শিগগিরই তদন্তে বড়সড় প্রমাণের দিকে পৌঁছে যেতে চলেছে সিবিআই, তেমনটাই আশা করা হচ্ছে।

 

More Articles