চিরতরে স্তব্ধ হচ্ছেন টাইটানিকের গায়িকা? কোন রোগে আক্রান্ত তিনি?
Céline Dion Stiff-person Syndrome: তাঁর গলায় আর শোনা যাবে না জ্যাক-রোজের সেই প্রেমের গান। এই কথা শুনেই স্তম্ভিত হয়ে পড়েন তাঁর ভক্তরা।
জাহাজের একেবারে একটি প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে নায়ক এবং নায়িকা। রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত দু’দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন সুন্দরী নায়িকা। নায়ক পিছন থেকে এসে তাঁর দু’টি হাত ধরলেন। সমুদ্রের ঢেউ, জাহাজের হাওয়া আর সূর্যাস্তের আলো মিশে তৈরি হল একটি সুর। ‘মাই হার্ট উইল গো অন’। জেমস ক্যামেরনের ‘টাইটানিক’ সিনেমাটি দেখেননি, এমন মানুষ খুব কমই আছেন। অন্যদিকে, সেলিন ডিওনের কণ্ঠে ‘মাই হার্ট উইল গো অন’ শুনে প্রেমে পড়েননি, এমন মানুষের সংখ্যাও কম। এই একটি গান দিয়েই মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন ৫৪ বছর বয়সী এই কানাডিয়ান গায়িকা। নিউ ইয়র্ক থেকে নৈহাটি – বিশ্বের প্রতিটি জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর ভক্ত। টাইটানিকের সেই জাদুকরী মুহূর্তই যেন নিজের গলায় ধরে রেখেছেন সেলিন ডিওন।
সম্প্রতি নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেন সেলিন ডিওন (Céline Dion)। বছর জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় তিনি কনসার্টের আয়োজন করেন। ২০২৩ সালেও সেরকমই বিভিন্ন কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লেখেন, বেশকিছু ট্যুর তিনি বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যান্য কিছু ট্যুরও নতুন করে আয়োজন করা হবে। কবে করা হবে, সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু কেন?
View this post on Instagram
এক কথায় বললে বলতে হয়, চিরদিনের মতো সেলিন ডিওনের গান থেমে যেতে পারে। তাঁর গলায় আর শোনা যাবে না জ্যাক-রোজের সেই প্রেমের গান। এই কথা শুনেই স্তম্ভিত হয়ে পড়েন তাঁর ভক্তরা। নিজের ইনস্টাগ্রামের ভিডিও বার্তায় সেলিন বলেন, তিনি এক জটিল রোগে আক্রান্ত। রোগটির নাম ‘স্টিফ পারসন সিনড্রোম’ (Stiff-person Syndrome)। সেলিন জানান, দীর্ঘদিন থেকেই তাঁর শরীর বিভিন্ন রোগের কবলে পড়েছে। কখনও কানের সমস্যা, ১৯৮৯ সালে একটি কনসার্টের সময় নিজের গলা ভেঙে যাওয়া – সমস্যা লেগেই ছিল। চলতি বছরের শুরুতেও অসুস্থ শরীরের কথা বলে তিনি নিজের ট্যুর বাতিল করেন। তবে স্টিফ পারসন সিনড্রোম যে সেসবের থেকে অনেকটাই জটিল আর বিরল একটি রোগ, সেটা স্বীকার করেছেন পাঁচবারের গ্র্যামি জয়ী এই তারকা গায়িকা। ভিডিওয়ে তাঁর কান্নাও ভক্তদের নজর এড়ায়নি।
আরও পড়ুন : সাবধান! দাঁত থেকে মস্তিষ্কে ছড়াতে পারে কঠিন রোগ, আশঙ্কা বাড়াচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা
কী এই স্টিফ পারসন সিনড্রোম? (Stiff-person Syndrome)
স্টিফ পারসন সিনড্রোম বা এসপিএস মূলত একটি স্নায়বিক রোগ। আরও ভালো করে বললে, এটি একটি অটো ইমিউন রোগ। অত্যন্ত বিরল এই রোগটি ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র একজন কি দু’জনের ক্ষেত্রে দেখা যায়। ঠিক কী কারণে এই রোগ হয়, তা আজও আবিষ্কার করতে পারেনি চিকিৎসা শাস্ত্র। তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের ধারণা, শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। তখনই ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্নায়ুতন্ত্র। তার প্রভাব পড়ে শরীরের বাকি অংশেও।
এই রোগের ফলে কী হয়?
খিঁচুনি, মৃগী কিংবা ফিট লাগার মতো রোগের সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। প্রায় সেরকমই উপসর্গ দেখা যায় স্টিফ পারসন সিনড্রোমের ক্ষেত্রে। এই রোগে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হলে তার প্রভাব এসে পড়ে শরীরের বিভিন্ন অংশের পেশিতে। তখনই বিভিন্ন পেশি অসাড় হয়ে যায়। অনেক সময় নড়াচড়ার ক্ষমতাও চলে যায় মানুষের। শক্ত হয়ে থাকে পেশিগুলি। ইনস্টাগ্রামের ভিডিওয়ে সেলিন নিজেই বলেছেন, এই রোগের ফলে মানুষ এক প্রকার পাথরের মতো হয়ে যায়। নড়াচড়া, কথা বলার ক্ষমতাও থাকে না। গান গাওয়ার ক্ষমতাও তখন দূরঅস্ত।
এছাড়াও ডাক্তারদের বক্তব্য, এই রোগের ফলে যখন তখন পেশি শক্ত হয়ে যায়। হঠাৎ করে একটু নড়াচড়া করলে, জোরে চিৎকার করলে বা কথা বললে, ঠাণ্ডা আবহাওয়া ইত্যাদি জিনিসগুলি থাকলে সঙ্গে সঙ্গে এই রোগ নিজের খেল দেখাতে আরম্ভ করে। এমনকী, অবসাদ, স্ট্রেস ইত্যাদিও এই রোগের বৃদ্ধির সহায়ক। এই রোগে যারা আক্রান্ত হন, তাঁদের সবসময় হুইলচেয়ার অথবা লাঠি, ওয়াকার নিয়ে চলার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। কারণ, কখন এই রোগ নিজের মূর্তি ধারণ করবে, তা কেউ জানে না।
আরও পড়ুন : ধোঁয়ার জেরে জাঁকিয়ে বসছে অবসাদ! চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনলেন বিজ্ঞানীরা
কাদের হয় এই রোগ? প্রতিকারই বা কী?
এই রোগটি ঠিক কতটা বিরল, সেটা আগেই বলা হয়েছে। অবশ্য ডাক্তারদের বক্তব্য, যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়, সেটি সর্বাংশে সঠিক নয়। কারণ, স্টিফ পারসন সিনড্রোমের লক্ষণের সঙ্গে অন্যান্য বেশকিছু রোগ মিলে যায়। সেজন্য সঠিক চিকিৎসাও করা হয় না। মূলত মধ্য বয়স থেকে এই রোগ নিজের থাবা বিস্তার করে। পরিসংখ্যান বলছে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এই রোগ তুলনায় বেশি হয়।
আর প্রতিকার? এই পর্যায় এসে এখনও অবধি পরাজয় স্বীকার করেছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। ডাক্তারদের বক্তব্য, এই রোগের কারণ ও প্রতিকার, দু’টোই এখনও অজানা। ফিজিও থেরাপি, ডিপ টিস্যু থেরাপির মতো কিছু চিকিৎসা আছে। তাতে এই রোগের উপসর্গগুলি কমানো যেতে পারে। পুরোপুরি সুস্থ হয়তো করা যায় না।
আপাতত এই রোগেরই শিকার সেলিন ডিওন। ইনস্টায় নিজের এই রোগের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙেও পড়েন তিনি। চোখে জল আসে তাঁর আপামর ভক্তদেরও। আর কি শোনা যাবে না গ্র্যামি জয়ী গায়িকার কণ্ঠ? টাইটানিকের সেই প্রেম যে জড়িয়ে আছে ভক্তদের মধ্যে। সেটাও কি এভাবেই ডুবে যাবে জলে? প্রার্থনা শুরু করেছেন সবাই। একটাই বক্তব্য, সুস্থ হয়ে যান সেলিন।